মোহনা সেন 💞মিউ 💞

Drama Others

3.6  

মোহনা সেন 💞মিউ 💞

Drama Others

ভালোবাসার পঁরশ

ভালোবাসার পঁরশ

4 mins
383


-"ওই একা একা দাঁড়িয়ে এত মন দিয়ে কি ভাবছিস? নিচে তো সবাই এসেছে। চল!" ছাদের কার্নিসের পাশে একা দাঁড়িয়ে থাকা নীলের উদ্দেশ্যে কথাটা বললো মোহনা।

-"আজকে কি এতো লোকজন বাড়িতে নাহ্ আসলে চলছিলো নাহ্?! আজকের দিনটা তো আমার সাথে সময় কাটাতে পারতিস?" নীল করুন মুখে মোহনার দিকে ফিরে তাকালো।

-"ডোন্ট বি সো সেলফিশ নীল। ওরা তোর সেই ছোটবেলার বন্ধু। যাওয়ার আগে একবার ওদের সাথে নাহ্ দেখা করলে তোর কি ভালো লাগবে?" (মোহনা)

-"আর তু্ই?! তোর বুঝি একটুও মনে পড়বে নাহ্ আমার কথা? ভুলে যাবি আমাকে?" (নীল)

-"ধুর বোকা। আমি তোকে ভুলে যাবো এই জন্মে এটা কি সম্ভব নাকি?! কি সব যে বলিস নাহ্ তুই।" মোহনা কথাটা বলে সামান‍্য হাসলো।

-"এতো ক্যাজুয়াল আছিস কিভাবে বলতো? মনে হচ্ছে তোর যেন আমার জন্য কিছুই যায়েই আসে নাহ্। কি হয়েছে?!" নীল বিরক্তি প্রকাশ করল।

-"পাগল একটা! তা আমি কি কেঁদে কেটে একাকার করলে খুশি হতিস তুই?! আর আমি তো মাঝে মাঝে ছুটি পেলেই যাবো তোর সাথে দেখা করতে।" কথাটা বলা মাত্রই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো মোহনা।

-"হুমমম বুঝতেই পারছি আমি..., যেই না চলে যাবো, ওমনি আমায় একেবারে সাইড করে দিবি বল তাই নাহ্?" (নীল)

-"বাহ্! এইটুকু বিশ্বাস তোর আমার ওপর? লং ডিস্টেন্স রিলাশনশিপে কিন্তু ট্রাস্টটাই সম্পর্কের ভীত নীল। সেটা মনে রাখিস।" (মোহনা)

-"জানি আমি...., তাও ভয় করে জানিস তো! ভৌগোলিক দূরত্বটা আমাদের মাঝেও দূরত্ব বাড়িয়ে দেবে না তো?" (নীল)

-"উম্ম হুহ্! দুটো মন কাছাকাছি থাকলে দূরত্ব ম্যাটার করে না নীল। আর এইসব ছাড় তো, আজ আর নো মন খারাপ প্লিজ!" (মোহনা)

-"এই মোহ ভাবছি যাবো নাহ্! ছেড়ে দিই! রিজাইন করে বরং ছোটখাটো কিছু করবো কলকাতাতেই।" (নীল)

-"এইবার কিন্তু তোকে খুব বকবো নীল। কতবার তোকে বলেছি নাহ্ ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ নয়।" (মোহনা)

-"তোকে ছাড়া যে আমার এক দণ্ডও ভালো লাগবে নাহ্ মোহ।" নীল আবেগ প্রবন হয়ে তাকিয়ে রইল মোহনার মুখের দিকে।

-"আমার কি ভালো লাগবে?! তাও মেনে নেবো! সব ভালো লাগা একসাথে পাওয়া যায় নাহ্ নীল।" (মোহনা)

-"কখনো আমাদের সম্পর্কটা তোর বোঝা মনে হবে নাহ্ তো? ভেবে দেখ।" (নীল)

-"একদমই নাহ্। আমি মন প্রাণ থেকে বিশ্বাস করি তু্ই যত দূরেই থাক নাহ্ কেন, তু্ই শুধু আমারই থাকবি।" (মোহনা)

-"এতটা বিশ্বাস?! কি করে পাস এতো মনের জোর।" (নীল)

-"সেই কলেজ লাইফ থেকে আজ সাত বছর তোকে দেখছি। তোর ওপরে আস্থা আছে।" (মোহনা)

-"পাকা বুড়ি আমার! এই মোহ দেখ। আজ মনে হয় পূর্ণিমা। চাঁদটা কি সুন্দর লাগছে তাই নাহ্?! ভাবতো কতদিন তোর সাথে এমন চাঁদ দেখা হবে নাহ্।" (নীল)

-"হুমমমমম! চাঁদের জ্যোৎস্না যেমন কেবল দূর থেকেই অনুভব করা যায়। ধরা যায় নাহ্। আমি তোকেও ওমন করেই উপলব্ধি করবো দূর থেকেই।" (মোহনা)

-"আজ কিন্তু তোকে দারুন লাগছে। কালো শাড়ি আর এই রাতের মায়াবী আলো। একদম পরী।" নীল আলতো করে মোহনার গালটা টিপে দিলো।

-"আপনিও কিছুই কম যান না মিস্টার! লাল পাঞ্জাবিতে একদম বাংলার শাহরুখ খান।" মোহনার কথা বলার এহন ধরন দেখে নীল হেসে ফেলল।

-"কাল সারাদিন সময় পাবো নাহ্। লাগেজ গোছাতেই সময় যাবে। শোন নাহ্ আমার কাছে আয়।" মোহনাকে কাছে টেনে নিলো নীল, আচমকা টানে পাঞ্জাবির কলারটা আঁকড়ে ধরে মোহনা এবং বললো "কি হচ্ছে শুনি?! কেউ এসে গেলে কি হবে তখন?"

নীল চোখ টিপে বললো "কুছ পারওয়া নেহি জান।" মোহনার এক ঢাল খোলা কালো চুলে বিলি কাটতে কাটতে তাকে আরও কাছে টেনে নেয় নীল তারপর হাত দিয়ে টেনে তোলে তার চিবুক..., নিজের পুরুষালি দু'টো ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় মোহনার দু'টো কোমল ঠোঁটের মাঝে। এতো দিন তারা যে বিচ্ছেদ যন্ত্রনা সহ্য করবে তার প্রস্তুতি হিসেবে সব দুঃখ যেন শুষে নিতে চাইছে দুজন তাদের দুই ওষ্ঠের অন্তঃস্থলে।

মোহনা একজন প্রাইমারি স্কুলের ইংলিশ টিচার আর নীল সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। দু'জনের প্রেমটা সেই কলেজ লাইফ থেকে। ডিপার্টমেন্ট আলাদা হলেও তাদের আলাপ হয় কলেজ ক্যান্টিনে। সেখান থেকেই প্রেম। তারপর সাত বছর চুটিয়ে প্রেম করে তারা লিভ ইনে থাকতে শুরু করে একসাথে। যদিও দুজনের পরিবার থেকেই চাপ দেয় বিয়ের জন্য, তবে এতদিন এইসব নিয়ে এতো ভাবে নিই তারা। হঠাৎ নীলের অফিস থেকে নোটিস আসে, যে তাকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বদলি করে দেওয়া হবে দিল্লির ব্রাঞ্চে। নীল তো ভেবেই নিয়েছিল ছেড়ে দেবে কাজটা তাও মোহনাকে ছেড়ে যাবে নাহ্। তবে মোহনাই তাকে বোঝায় ক্যারিয়ারে কোনো সুযোগ বার বার আসে নাহ্। যেতেই হবে নীলকে। কিছুটা মোহনার জোড়াজুড়িতেই রাজি হয়ে যায় সে। আজ সব কলেজ ফ্রেন্ডরা একত্রিত হয়েছে নীলদের ফ্ল্যাটে। বন্ধু যাওয়ার আগে সবাই একটা রিউনিয়ন করতে চায়। নীল ভেবেছিলো আজকের দিনটা মোহনার সাথে কাটাবে, তবে মোহনা সকাল থেকে সব আয়োজন একা হাতে করছে দেখে আর ব্যাপারটায় নাহ্ বলতে পারে নিই নীল। মোহনা আজ খুব ব্যস্ত রাখতে চায় নিজেকে যাতে নীল নাহ্ বোঝে সে চলে যাচ্ছে তাই মোহনার খুব কষ্ট হচ্ছে। তাহলে তো আর যাবেই নাহ্ ও। ভালো করেই চেনে যে মোহনা তার নীলকে।

-"কি রে! ছাড় এবার অনেক তো দুস্টুমি হলো। এবার চল নিচে। নাহলে তো সবাই ভাববে আমরা কপত কপতি ওদের রেখে ওপরে এসে গল্প করছি।" (মোহনা)

-"তা যা বলেছিস। নিচে গেলেই লেগে পুল করবে। চল চল।" নীল হেঁটে যেতে লাগলো ছাদের দরজার দিকে। সেই দিকে তাকিয়ে মোহনা মনে মনে বললো,"খুব মিস করবো তোকে নীল। জানি আমার ক্যাজুয়াল বিহেভিয়ার দেখে হয়তো ভাবছিস মেয়েটা কি হৃদয়হীন, একটুও ফিলিংস নেই?! কিন্তু কি করে বোঝাই তোকে বুকের ভিতরটা অজানা একটা কষ্টে মুচড়ে উঠছে আমার। চোখের জল আর বাঁধা মানছে নাহ্। তবে আমি চাই নাহ্ আমাদের সম্পর্ক তোর ভবিষ্যতের ক্ষতি করুক। তোকে আলোর বৃত্তে যাওয়ার রাস্তায় আটকে দিক। তাই সব কষ্ট বুকে জমিয়ে তোকে যেতে দিতে আমি রাজি।" এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো মোহনার চোখ থেকে, অন্ধকার ঢেকে দিলো সেই মুক্তোর ফোঁটার উপস্তিতি। নীল পেছন ফিরে হেসে বললো "কি রে পাগলী চল। এতক্ষন নিজেই তাড়া দিচ্ছিলিস আর এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবিস চল।"

- আসছি!" আলতো করে চোখের জলটা মুছে, এক গাল হেসে বললো মোহনা।

                    


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama