নিষিদ্ধ বাড়ি
নিষিদ্ধ বাড়ি
একটা শিয়াল দেখে এত বড়ো গবেষকরা ভয় পেয়ে যাবে আমি ভাবতে পারি নি। তবে শিয়াল টাও একটু অদ্ভুত ধরনের ছিলো। শুধু যে আয়তনে বড়ো ছিলো সেটা নয়। ও পথ আটকে আমাদের দেখছিলো। শিয়াল সাধারণত মানুষ দেখলে পালায়। কিন্তু এ আমাদের দেখ অনেকক্ষণ পথ আটকে দাঁড়িয়ে ছিলো।
রায় চৌধুরীদের এই বাড়িটা পরিত্যক্ত কিন্তু কখনো ভৌতিক নয়। লোকজন মুখে কিছু গুজব শোনা যায়। এ বাড়ির বাগানে ভুলে কোন গরু, ছাগল , মানুষের বাচ্চা ঢুকেছে কি তাকে আর ফিরত পাওয়া যায় নি। কিন্তু সেটার কারণ কখনো ভৌতিক নয়। এটা সুন্দর বন হয়তো এখানে পাইথন আছে কিংবা বাঘ চলে আসে তাঁরা এই কাজটি করে। তাই আমাদের সাথে একজন বন্দুকধারী পুলিশ রাখা হয়েছে। আসলে এই বাড়িতে আমাদের দিন পোনেরো থাকতে হবেই।
মি. স্যামুয়েল সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিলেন। এই বাড়িতে ঢোকার পর ওর এবং আমার দুই সঙ্গীর ভয়টা বেড়ে গেলো। স্থাপত্য রীতি দেখলেই বোঝা যায় এই বাড়ি বয়স কম করে আড়াইশো বছর। ষাট সত্তর বছর হলো এ বাড়ি ছেড়ে কলকাতা চলে গেছেন রায় চৌধুরীরা । রয়ে গেছে ছিলেন রামু চাচা একা এবাড়িতে তার বাবার সাথে। তার বাবা মারা গেছেন বছর তিরিশেক। অথচ একা এতো বড়ো বাড়ি বাগান সামলে রেখেছেন সুন্দর ভাবে।এটা কিভাবে? বৃদ্ধ বয়সে রামু কাকার এতো কিছু করা সম্ভব নয়। এ বাড়ির গায়ে বট অশ্বত্থ গাছ দূরে থাক। বাড়িটা এখনো নতুন বাড়ি মতো চক চক করছে।
মি. স্যামুয়েল এর কোন দোষ নেই। গবেষক হিসাবে বিখ্যাত এই মানুষটি লাইব্রেরিতে বসে বই পড় সময় কাটান সারা দিন ।মি. স্যামুয়েল নিজের কাজের বই ছাড়া ভুতের গল্পের বই পড়ছেন আজকাল।। এখন যে বইটা পড়েছে সেটা ভ্যামপায়ার সম্পর্কিত। তাই শিয়াল দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছেন।আমি অনেক কষ্ট বোঝাতে পারলাম না ওটা ওয়ার উলফ নয় । মানে নেকড়ে নয় শিয়াল। আমি ও এরকম বই পড়েছি। কতকিছু লেখা বইটাতে। ভ্যামপায়ার কি? কেমন দেখতে? কখন বের হয়?
ভ্যামপায়ার কি ভয় পায় ইত্যাদি। আপনি ও হয়তো পড়ছেন এসব বেশ আগ্রহ নিয়ে।সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে যে ভ্যামপায়ার মানুষের রক্ত খায় সে ভ্যামপায়ার রসুন ভয় পায়। বিষয়টা খুবই মজার। ভ্যামপায়ার যে মিথ্যা একটা বানোয়াট জিনিষ তা এসব থেকেই বোঝা যায়। যেমন সে ক্রুস ভয় পায় । তাহলে অন্য ধর্মের মানুষ ভ্যামপায়ারকে ভয় দেখাবে কিভাবে ? ভ্যামপায়ার রসুন ভয় পায়। রসুন হার্টের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে যে কেন রসুনের মত একটা উপকারী জিনিস ভয় পায়। বেচারার মনে হয় হার্টই নেই ।এসব অদ্ভুত চিন্তা নিয়ে কথা বার্তা বলছিলাম । তাছাড়া ভ্যামপায়ার বিদেশি ভুত । পাসপোর্ট ছাড়া আসবে কি কর?
এ সব মাজার কথা উপভোগ করে। মি. স্যামুয়েল ঘুমুতে গেলেন। আর অবাক করা বিষয় অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি ঘুমিয়ে পরলেন।তিনি সচরাচর এত সহজে ঘুমাতে পারেন না। মাঝরাত পর্যন্ত এপাশ-ওপাশ করেন।
মি. স্যামুয়েল একটু পরিচয় করতে হবে আপনাদের সাথে। জাতে খাটি বাঙালি মি. স্যামুয়েল। পুরো নাম শিমুল আহম্মেদ। লন্ডনে থাকেন ইংরেজদের উচ্চারনের বদলাতে বদলাতে আজ তিনি স্যামুয়েল অনেকের তো আবার স্যামুয়েল বলতে ও মুখ ব্যাথা করে। তারা শুধু স্যাম বলে।গায়ের রঙ শ্যামলা,খুব খাটো অথবা খুব লম্বা নন। মাঝারি আকৃতির মানুষ।বয়স ৩০ এর কাছাকাছি।পেশায় একজন রির্সাচার। তিনি প্রাচীন সভ্যতা নিয়ে গবেষনা করেন সুন্দর বন প্রাচিন ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতেই এদেশে এসেছেন।তার যদিও কোন অবসর সময় নেই। সারাদিনই বই ঘাটতে হয়। তবে অবসর সময় পেলে গান শুনতে ভালোবাসেন। বাংলা গান শোনেন। কারন বাংলা ভুলে যাচ্ছেন বলে। কারো সাথেই বাংলা বলতে পারছেন না।তাই বাংলা গান শুনে বাংলাকে আয়ত্তে রাখার চেষ্টা আরকি। সবচেয়ে দুঃখজনক যে তার স্ত্রী-পুত্র কেউ ই বাংলা বলতে পারেন না।স্ত্রী কিছুটা পারলেও তার ছেলে একদমই পারে না।তার স্ত্রী-সন্তান পশ্চিম দেশেই হয়ে গেছেন আদব কায়দায়। তিনি কাজের জন্য দেশে এসেছেন। তাই আপাতত আমার সাথে একাই এসেছেন এখানে।
জেগে থাকলে হয়তো দেখতে পারতেন বাহিরে প্রকান্ড একটা চাদঁ উঠেছে।আর চাদঁটার রঙ লাল.। এটা বাংলা । বাংলার ভুতরা ভয় দেখা , চুরি করে কিন্তু কাউকে মেরে খেলে না। কিন্তু ভ্যামপায়ার ভয়ঙ্কর রক্ত শুষে খায়। এখানে গরীবদের রক্ত চোষা বড়লোকে পাওয়া যাবে। সাধারণ এর রক্ত চোষা মশা পাওয়া যাবে কিন্তু ..ভ্যামপায়ারকে পাওয়া যাবে না।....
রাত গভীর হতে আমিও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
কিন্তু হঠাৎ আসারও মাথার পেছনে তীব্র একটা ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে।চোখ মেলতে পারছেন না । মি. স্যামুয়েল ঠিক এরকম একটা বিপদের কথা বলছিলেন অভিজিৎ দা । হাত-পা শক্ত করে একটা চেয়ারের সাথে বাধা মনে হচ্ছে চিয়ার থেকে আমি উঠে পারলাম না । মাথার উপর একটা আলো আছে অনুভব করছি। কিন্তু চোখটা মেলতে পারছি না।বুকটা ধক ধক করছে। যেন বুকের ভেতর কেউ হাপর টানছে।আমগ অনুভব করতে পারছিলাম কেউ একজন তার কাছে এগিয়ে আসছে কিন্তু আমি চোখ মেলতে পারছি না। সে পেছন থেকে আসছে।
হঠাৎ মনে মনে ইষ্টদেবতার নাম নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে।জয় মা তাঁরা বলে চ্যাচিয়ে উঠবো বলে ঠিক করেছি। হঠাৎ দেখি মানুষ টা একটা বড় বাদুড় হয়ে উড়ে গেলো। পাশের ঘরে তখন শিমুল আহম্মেদ গোংগানীর শব্দ পেলাম । নিচে হটগোলের শব্দটি জোরে হতে হতে কাছে চলে এলো। গ্রামবাসী আমাদের উদ্বার করলো। আগুন নাকি ওদের অস্ত্র। ভয়ঙ্কর এক অভিজ্ঞতা শকুনের মতো বাড়িটার চারিদিকে ঘুরতে থাকলেও একটা বড়ো বাদুড় মানুষ। সূর্যের উঠার আবধি আমরা অপেক্ষা করলাম রূদ্ধশ্বাসে। জীবন আর মুত্য মধ্যে ব্যাবধানটা খুব কাছে থেকে দেখলাম আমি।,,,,
