Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Manik Boiragi

Abstract

4.8  

Manik Boiragi

Abstract

নির্ঘুম প্রহরীর নাম বাবা -

নির্ঘুম প্রহরীর নাম বাবা -

4 mins
947


বাবা ও মা হীন মানব জীবন কল্পনা করা যায়না। বর্তমান বিজ্ঞানের অধিক উৎকর্ষ সাধনের পর কোন নারী যদি মা হতে চায় সংসার সঙ্গম বিহীন, সংসার বিহীন তারপর ও বাবার স্পাম লাগবেই। আজকের বিজ্ঞান আপাতত এত টুকু আমাদের কাছে স্বীকৃত।

এ গল্পের লক্ষ্য বিজ্ঞানবাদ ও জেন্ডারবাদের দিকে নয়।

আমি জন্মেছি একটি একান্নবর্তী পরিবার ও কৌম সমাজে। বাঙ্গালির সেই মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে হাজার বছর পূর্বে। তাই আমি বিংশ শতাব্দীর ক্রান্তিলগ্নে জন্ম নেয়া অজ পাড়া গাঁয়ের সন্তান। এখানে বাবার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত,।

কিন্তু আমার বুদ্ধির বিকাশ কাল থেকে দেখে এসেছি পরিবার ও যৌথ সিদ্ধান্তের প্রতি পরম শ্রদ্ধাশীল একজন পিতা।

বাবার যতদিন ব্যবসা বানিজ্য ভালো ছিলো ততদিন আমার অপরাপর ভাই বোন খুব আনন্দ হৈ হোল্লোড়ে লেখাপড়া, খেলা ধুলা, বিনোদন সবই তাদের জন্য অবারিত ছিলো। ছিলোনা দারিদ্র্যের কালো ছায়া।

বাবা যখন অসুস্থতা ও ব্যবসা থেকে অবসর নিলো, যখন বড় ভাইদের হাতে পরিবারের চাবি কাটি তখন আমার বুদ্ধির বিকাশ ঘটছে। তখন থেকেই আমার অবাধ স্বাধীনতা খর্ব হতে লাগলো, খর্ব হতে লাগলো চাওয়া পাওয়ার চাহিদা। নিজেও দেখতে পাই পরিবারের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন।

কিন্তু আমার বাবা আমাকে ওসব কিছুই বুঝতে দিতেন না।

আমার বাবা বই পড়তেন। যখন তাঁর সাপ্তাহিক দু'দিন বন্ধ থাকতো তখন বাবা রাতভর কেরোসিনের কুপী জ্বালিয়ে বই পড়তেন। আমি বাবা ও মা'র সাথে ঘুমাতাম। আমি ঘুমিয়ে পড়লে বাবা কুপী জ্বালিয়ে বই পড়তেন শব্দ করে করে। আর আমার মা কে সেই বইয়ের কাহিনি আমাদের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় অনুবাদ করে বুঝিয়ে দিতেন।

আমার ঘুম ভেঙে গেলে চুপটি করে আমি বাবার বই পড়ার গল্পের সার্মম পড়া হয়ে যেতো, কারণ মাকে শুনানোর সাথে সাথেই আমার ও শোনা হয়ে যেতো।

যখন বড় হলাম আমার যখন বইয়ের নেশা ধরলো, সাথে বই পড়ে বাম বিপ্লবী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিলাম।

তখন আমার পরিবারে শুরু হলো ভাইদের মধ্যে চাপা যন্ত্রণা। চাপাচাপি, বাধা প্রতিরোধ, লাঞ্জনা, গঞ্জনা। লেখাপড়ার ঠিক মতো খরচ না দেয়া, হাত খরচ না দেয়া, খাবারের সময় বৌদিদের নাক ছিটকানি আরো কতো কি।

কারণ তাদের আমাকে নিয়ে হিমালয়সম অবৈজ্ঞানিক স্বপ্ন। আর দশজন ছাত্রের মতো আমিও নিয়ম মেপে লেখা পড়া করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি উচ্চমানের চাকুরী করবো। পাড়ায় তাদের প্রভাব বাড়বে, বাড়বে প্রতিপত্তি আরো কতো কি।

তখন বাংলাদেশে সামরিক স্বৈরাচারের শাসন চলছে।

আমরা একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। প্রত্যেক সামরিক সরকার বাংলাদেশের একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের উপর চালিয়েছে নির্মম নির্যাতন। নাহয় হত্যা। মামলা মোকদ্দমা।

আমার একান্নবর্তী পরিবার ও সেই নির্যাতনের বাইরে ছিলোনা।

কারণ আমাদের পরিবারের কোন ভাই, বাবা কেউ সেই সব সামরিক স্বৈরাচার সরকারের কাছে আপোষ করে মুছ লখা দিয়ে তাদের রাজনৈতিক দলে যোগদান করেনি। তাই আমাদের ঘরে নিত্য অভাব লেগে থাকতো।

আমিও একটি রাজনৈতিক সচেতন পরিবারের সদস্য হিসাবে ছাত্র আন্দোলনে পুরুদুস্তোর নেমে পড়ি।

রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচি, পরিকল্পনা করতে করতে অনেক সময় আমার বাড়ি ফিরতে গভীর রাত হয়ে যেতো।

আমি যতক্ষণ বাড়ি না ফিরি ততক্ষণ বাবা ঘুমাতো না। বাড়ির ভাইদের চাপাচাপিতে একটু খেলেও তিনি আমি যখন বাড়ি ফিরতাম কপট রাগ করতেন, আদুরে শাসনের পর বাবাই আমাকে আবার গরম তরকারি, গরম ভাত এক সাথে খেতাম।

বাবার চা খাওয়ার খুব শক। কফি মিশ্রিত চা খেতেন। সাথে আমাকেও দিতেন।

তারপর তিনি তার চৌকিতে ঘুমাতেন।

আমি তখন থেকেই ছড়া কবিতা লিখতাম, বাড়ির সবাই আমাকে এসব নিয়ে খুব তিরস্কার করতেন। কিন্তু আমার বাবা কে দেখলাম এদের উল্টো।

আমার স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবসের ভাজ পত্রিকা প্রকাশের খরচ তাঁর ঔষধ খরচ,চা'র খরচ, অন্যান্য খরচ বাঁচিয়ে তা জমা করে আমার হাতে পত্রিকা বের করার সময় তুলে দিতেন।

কাচারি ঘরে আমার সাংস্কৃতিক দলের রিহার্সেল, আড্ডা, সাহিত্য আড্ডার নিরাপত্তা পাহারাদার ছিলেন আমার একমাত্র বাবাই।

আমার বাবাই এক মাত্র আমার মনের চাহিদা বুঝতেন। তাই তিনি বাড়ির বউ ঝি ভাইদের ও কম ভৎসনা সইতে হয়নি। তিনি খুব নিরবেই আমাকে বুঝতে না দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়েছেন এক কালের দাপুটে দিলখোলা ব্যাবসায়ী।

আমার বাবা মায়ের মৃত্যুর সময় তাঁদের পাশে থাকতে পারিনি। পারিনি তাদের আদর, পশ্রয়, ভালোবাসার নুন্যতম ঋণ শোধ করতে। রাজনৈতিক কারণে আমার ফেরারি হতে হয়।

আমার কু সংবাদ শুনেই বাবা হার্ট অ্যাটাক করে। এর কয়েক মাসের মাঝে তিনি মহাপ্রয়াণ লাভ করে স্বর্গলাভ করেন। এর এক বছরের মধ্যে অসাধারণ ভালোবাসার প্রাণের মণি আমার মা ও স্বর্গলাভ করেন। আমি পারিনি তাদের শেষকৃত্যে অংশ নিতে। কারণ আমি ফেরারি ও জেলখানায় রাজনৈতিক বন্দী।

এই আমার বাবা আমার ফেরারি কালেও তিনি আমার জন্য বই কিনে রাখতেন তাঁর পছন্দের বই। ভাজ পত্রিকার জন্য নিজের হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে জমা করে রাখতেন।

আমার রাজনৈতিক কোন সহকর্মীর দেখা হলে আমার জন্যে সিগারেট, চা খরচের টাকা পাঠাতেন। বয়স্ক কাপা কাপা হাতে লাল কালি দিয়ে চিঠি লিখতেন। তিনি যেহেতু চোখে দেখেন না তাই লাল কালি দিয়ে লিখতেন।

বাবা যখন মারা যান তার পূর্বেই তিনি তাঁর সহায় সম্পদ সম্পত্তি সকল সন্তানদের ভাগ করে দিয়ে যান। তখনও আমি ফেরারি।

আমার অন্যান্য ভাই ও বোনেরা বাবার জমি জামা যা ভালো তাই তারা নিয়েছে। আর আমার জন্য যা অকার্যকর তাই ভাগে রেখেছিলো

সেদিন আমার ভাবা খুব হেসে ছিলেন। অট্টহাসি হেসে ছিলেন।

বাবার একটি কাটের আলমিরা ছিলো, সেখানে বাবার প্রয়োজনীয় বই, কাপড় চোপড় রাখতেন।

কিন্তু এই আলমারির প্রতি বাবার একটি মাত্র নির্দেশ ছিলো যেনো এর কোন বই যাতে কেউ না ধরে, না নেয়।

আমার বাবা আমার জন্যে এক আলমারি বই রেখে গিয়েছিলেন। যেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থের পাশাপাশি আমি পেয়েছি লিও তলস্তয়, ম্যাক্সিমগোর্কি, রবীন্দ্রনাথের রচনাবলি।

ফারসি কবি রুমি, খৈয়াম, হাফিজ, ভারতের গালিব সহ আরো কতো কি।

সেই কলকাতার গ্রামোফোন রেকর্ড ও নজরুল রবীন্দ্রনাথের গান (তৎকালিন সময়ে)


Rate this content
Log in

More bengali story from Manik Boiragi

Similar bengali story from Abstract