Sandip Chakraborty

Abstract Romance Fantasy

3  

Sandip Chakraborty

Abstract Romance Fantasy

নীল রংয়ের সাঁকো/২

নীল রংয়ের সাঁকো/২

8 mins
368



মন খারাপ হলে আমি চিলেকোঠার ঘরে চলে যাই। বাড়ির মধ্যে একমাত্র এই ঘরটা আমার জেলখানা বলে মনে হয় না। অনেকখানি আকাশ চোখের সামনে ঝুঁকে পড়ে। হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চাইলে সে নিজেকে সরিয়ে নেয় না। আমার ডুকরে ওঠা মন একটা সঙ্গী পেয়ে যায়।


 আমাদের ছাদটা বিশাল। দাদুর আমলে ছাদের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত জুড়ে পাখির খাঁচা ছিল। ছোটবেলায় ছাদে এলেই হরেক রংয়ের দোয়েল টিয়া ময়না মুনিয়া আর বুলবুলিরা কিচিরমিচির জুড়ে দিত। আমি ওদের প্রত্যেকের নাম রেখেছিলাম। নাম ধরে ডাকলে দিব্যি জুলজুল করে তাকাত। শুধু পাখিদের দেখাশোনা করার জন্য আলাদা লোক রেখেছিল দাদু। তার নাম ছিল মধুকর। দাদু বলত, তুই যেমন আমার ফ্যামিলি, এই পাখিরাও তেমনি আমার ফ্যামিলি। সেইভাবে ওদের দেখবি। কেউ যেন কষ্ট না পায়। আমি পাখি পুষি একদিন উড়িয়ে দেব বলে। খাঁচায় ওদের বন্দি করে রাখতে আমার ভালো লাগে না।


 একুশে আষাঢ় ছিল দাদুর পাখি ওড়াবার দিন। কারণ একুশে আষাঢ় ঠাকুমার জন্মদিন। ওইদিন দাদু খাঁচার দরজা খুলে যে কোনও একটা পাখি নিজের হাতে উড়িয়ে দিত। সব পাখিই যে চলে যেত তা নয়, কেউ কেউ সুদূরের গোলকধাঁধায় পথ হারাবার ভয়ে ফিরেও আসত। যে বছর উড়িয়ে দেওয়া পাখি আর ফিরে আসত না, দাদু বিশ্বজয় করার আনন্দে নীচে নেমে ঠাকুমাকে বলত, তোমার আয়ু এক বছর বাড়িয়ে দিলাম। ঠাকুমা লজ্জায় লাল হয়ে বলত, আদিখ্যেতা। যদিও দাদুর এই পরিণত বয়েসের পাগলামি খুবই পছন্দ করত ঠাকুমা। সেই খুশি টের পাওয়া যেত দাদুর উড়িয়ে দেওয়া পাখি খাঁচায় ফিরে এলে। আরামকেদারায় গম্ভীর হয়ে শুয়ে থাকা দাদুর হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে বলত, তুমি কী বলো তো! দাদুভাই বড়ো হচ্ছে, সে খেয়ালও কি তোমার নেই? দাদু চুপচাপ। মুখে কোনও কথা নেই। মাঝে মাঝে শুধু চায়ে চুমুক দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর চারপাশে একবার সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে ঠাকুমা চাপাস্বরে বলত, এ বছর আয়ু বাড়ল না তো বাড়ল না। পরের বছর বাড়িয়ে দিয়ো।


 দাদুর পাখি উড়িয়ে দেওয়ার কী মানে তখন বুঝতাম  না। দশ-এগারো বছর বয়েস। যা দেখি সবেতেই বিস্ময় লাগে। পাখি ওড়ানোর ঘটনা ছিল আমার কাছে তেমনই এক বিস্ময়ের খনি। কৌতূহল ধরে রাখতে না পেরে

একদিন কথাটা জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম, তুমি পাখি উড়িয়ে দাও কেন দাদু? কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর দাদু বলল, মুক্তির আনন্দ কেমন তুমি আমি বুঝতে পারব না দাদুভাই। কিন্তু ওই পাখিরা পারে। খাঁচায় বন্দি থাকে তো, তাই। ওদের মধ্যে যে পাখি ছাড়া পেয়ে উড়ে যায় নিজের চেনা জগতে, অনেকদিন পর আকাশ পেয়ে যে আনন্দ পায় তারই ছোঁয়ায় তোমার ঠাকুমার আয়ু বেড়ে যায়।


 সেদিন দাদুর কথার বিন্দুবিসর্গ বুঝতে পারিনি। একটু বড়ো হবার পর যুক্তির অভাবও খুঁজে পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল মুক্তির আনন্দ যদি এত দামি হয় তা হলে বন্দি করা কেন! তখন আমি মুক্ত। আমার ডানা আছে। আকাশ আছে। চাইলেই আমি আকাশ ছুঁতে পারি। তাই বোধহয় যুক্তির ফাঁক খুঁজতে গিয়েছিলাম। গত তিন বছরে প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করেছি আমিও একটা পাখি। খাঁচায় বন্দি পাখি। যখনই চিলেকোঠায় আসি দাদুর মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। দূর থেকে ভেসে আসা চলন্ত ট্রেনের শব্দের মতো দাদুর কথাগুলো আমার কানের কাছে ভিড় করে। আমি পাগলের মতো দাদুকে খুঁজি, তুমি কোথায় দাদু! কতদূরে? একবার এসে আমাকে এই খাঁচা থেকে উড়িয়ে দিতে পারো না? আমার মুক্তির আনন্দে ঠাকুমা অমর হয়ে যাবে। তুমি দেখে নিয়ো।


 হঠাৎ মনে পড়ে গেল ঠাকুমা তো আট বছর আগে মারা গেছে। ঠাকুমা মারা যাবার পর দাদু সব পাখি উড়িয়ে দিয়েছিল। শুধু দুটো টিয়া কিছুতেই গেল না। মধুকরের চাকরি থেকে গেল ওদের জন্য। দাদু মারা গেল তার দু'বছর পর। সারা বাড়ি তখনও শোকের অন্ধকারে ডুবে, একদিন আমি কৌতূহলবশত খাঁচার দরজা খুলে দিয়েছিলাম। পাখিদুটো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। একবারও ডাকল না। মধুকর যেসব কথা ওদের শিখিয়েছিল একটাও বলল না। নিঃশব্দে উড়ে গেল দুটিতে। সেদিন ওদের পিছুটানহীন উড়ান দেখে অবাক হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল এই খাঁচাকে কি ওরা খাঁচা ভাবত না? ঘর ভাবত? ঠাকুমা মারা যাবার পর ঘরের টানেই হয়তো থেকে গিয়েছিল। কিন্তু দাদু না থাকলে যে ঘরটাই মিথ্যে হয়ে যায়! সেই মিছিমিছিকে আঁকড়ে ধরে লাভ কী?


 তুমি আবার কার্নিসের ধারে গেছ! তোমাকে না কতবার বলেছি কার্নিসের ধারে যাবে না। পড়ে গেলে সাংঘাতিক বিপদ হয়ে যাবে। আমার বয়েস হচ্ছে, এখন কী আর অত দৌড়ঝাঁপ করতে পারি!


 রতনকাকার চিৎকারে দাদুর মুখটা ছিন্নভিন্ন হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। অসহ্য রাগ হচ্ছিল।--ছাদের


কার্নিসের ওপর উঠে হাঁটাহাঁটি করলেও আমি পড়ে যাব না রতনকাকা। দেখবে?


 আমার ঘাট হয়েছে। তোমাকে আর কেরামতি দেখাতে হবে না। নীচে চলো। চানের বেলা হয়েছে।


 অগত্যা নীচে নামলাম। স্নান সেরে খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়ে আবার সেই এ ঘর-ও ঘর। কিছুক্ষণ হয়তো বারান্দায়। কিন্তু তারপর? মাঝে মাঝে মনে হয় এই দেওয়াল, এই গরাদ--সব ভেঙেচুরে তছনছ করে দিই। কিংবা নিজের ওপরই গায়ের জ্বালা মেটাই। একবার একটা কাগজ-কাটা ছুরি শক্ত করে চেপে ধরে নিজেকে শাস্তি দিয়েছিলাম। আমার আঙুল কেটে রক্ত পড়ছিল। মঞ্জুদি কীভাবে যেন খবর পেয়ে দৌড়ে আসে। তারপর ডাক্তার, ওষুধ, ব্যান্ডেজ... সে অবশ্য অনেকদিন আগের কথা।


 পৌষের নরম রোদ এসে পড়েছে বারান্দায়। আমি সবেমাত্র বসেছি এমন সময়ে ফোনটা বাজল। যার ফোন তার নামটা স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে। ফাগুন ঘোষ। মন খুশিতে ভরে গেল। ফাগুনের ফোনের জন্য আমি রোজ অপেক্ষা করি। তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে ফোন ধরলাম, বলো ফাগুন, কেমন আছ তুমি? তোমার স্কুল কেমন


চলছে?


 আমি ভালো আছি অনি। স্কুলের বাচ্চারাও ভালো আছে। তোমার খবর বলো। তুমি কেমন আছ?


 আমি! আমিও ভালো আছি।


 ফাগুন হাসল, এক বছর হয়ে গেল ফেসবুকে তোমার সঙ্গে আমার পরিচয়। যদিও দেখা হয়নি এখনও কিন্তু ফোনে কথা হয়েছে অনেকবার। তোমার গলার এই স্যাড টোনটা আমি চিনি। কী হয়েছে, বলো না। ডোন্ট ইউ ডিসক্লোজ দা ট্রুথ টু ইয়োর ফ্রেন্ড?


 তুমি তো সব জানো ফাগুন। সারাদিন দামি কোনও জন্তুর মতো ওভারপ্রোটেকটেড হয়ে থাকতে আমার ভালো লাগে না। আমি কোনও এক পাহাড়ি নদীর ধারে বসতে চাই। খোলা হাওয়ার শ্বাস নিতে চাই।


 তা যদি বলো, আমি তো সেই কবে থেকে তোমাকে ওপেন অফার দিয়ে রেখেছি। মৃগিচামীতে চলে এসো। এখানকার জল জঙ্গল পাহাড় তোমার ভালো লাগবে। বাচ্চারাও তোমাকে পেলে খুব খুশি হবে।


 আর তুমি?


 আমিও


 সত্যি বলছ?


 আমি মিথ্যে কথা বলি না অনি।


 আমি যাব ফাগুন। খুব তাড়াতাড়ি যাব। এরা যদি যেতে না দেয় তা হলে পালিয়ে যাব তোমার কাছে।


 না অনি, কোনও রকম ছেলেমানুষি তুমি করবে না। ওদের বোঝাও। বারবার বোঝাও। দেখবে একদিন ওরাই তোমাকে আমার কাছে আসার পারমিশন দেবেন।


 কোনও এক সুদূরের স্বপ্ন যখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে অসুস্থ মন তাতে খড়কুটো খোঁজে। মাঝ সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে সে ক্লান্ত। এবার সে কিনারায় ফিরতে চায়। ফাগুন জানে কোথায় আছে আমার কিনারা। একমাত্র ফাগুনই জানে। তাই যখনই ফোন করে এমনি করে খড়কুটো ভাসিয়ে দেয়।


 

 

 কিন্তু শচীজেঠু বা অ্যাটর্নি আঙ্কলের মতো মানুষকে

বোঝালে কি ওরা আমায় যেতে দেবে মৃগিচামীতে?


 পড়ন্ত রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে আমি মৃগিচামীর কথাই ভাবছিলাম। সংবিৎ ফিরল পায়ের শব্দে। মঞ্জুদি টেবিলে চায়ের কাপ রেখে বলল, আজ তোমার ডাক্তারবাবুর কাছে যাবার কথা। মনে আছে তো?


 আছে। তুমি প্রকাশদাকে গাড়ি বের করতে বলো। চা খেয়েই বেরোব।


 শচীজেঠুর চেম্বার পার্ক স্ট্রিটে। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ছাড়িয়ে বাঁদিকে। বাড়িটার দু'দিকে দুটো ছাতিমগাছ। ফুল ফোটানোর দিনে গোটা পার্ক স্ট্রিটকে মাতিয়ে দেয়। ছাতিম ফুলের গন্ধ আমার কাছে ওয়াইল্ড আর রোম্যান্টিক দুটোই। কিন্তু কেন জানি না আমার মনে হয় কলকাতায় এই গন্ধ মানায় না। জঙ্গলে মানায়। কিংবা কোনও নদীর ধারে। নয়তো যেখানে ফাগুন থাকে, সেই মৃগিচামীতে।


 প্রকাশ চেম্বারের সামনে গাড়ি থামাল, আমরা এসে গেছি অনিবাবা। কলেজের কাছে গাড়ি পার্ক করব। যদি খুঁজে না পাও ফোন করো।


 ভরসন্ধ্যেবেলায় আমার গাড়ি খুঁজতে অসুবিধে হবে না প্রকাশদা। অযথা চিন্তা করো না।


 চেম্বার একদম ফাঁকা। শচীজেঠুর সেক্রেটারি কাম অ্যাসিসট্যান্ট সুধা সিং গালে টোল ফেলে হাসল, হাই অনি! হাউ আর ইউ?


 আয়াম ফাইন। হোয়াট 'বাউট ইউ?


 আয়াম ফাইন অলসো। ডক্টর রায় ইজ ওয়েটিং ফর ইউ।


 শচীজেঠু কী একটা বই পড়ছিল। আমাকে দেখে বলল, এসে গেছিস। বোস।


 এবার বলো। কী জন্যে ডাকলে?


 ঘোড়ায় জিন দিয়ে এসেছিস নাকি! জেঠুর কাছে দু'মিনিট থাকতে ইচ্ছে করে না?


 আরে বাবা ফিরতে দেরি হলে তো তোমার কাছেই তো একটার পর একটা ফোন আসবে।


 শচীজেঠু কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, বুঝতে পারছি খুব রাগ করেছিস। সকালে মঞ্জুও বলছিল। দ্যাখ অনি, মঞ্জুর ওপর রাগ করিস না। তোর যখন এক মাস বয়েস তখন থেকে ও তোদের বাড়িতে কাজ করছে। তোর মা, সুপ্রিয়া তো অ্যাসথমার টান উঠলে কোনও কাজ করতে পারত না। তখন মঞ্জুই তো তোকে দেখেছে। বলতে গেলে তোকে নিজের সন্তানের মতো বড়ো করেছে। তারপর ধর যখন তোর বাবা-মা দু'জনেই প্লেন ক্র‍্যাশে মারা গেল তখন ও না থাকলে...


 ওসব কথা থাক না জেঠু। মঞ্জুদি কী করেছে আমি কি জানি না? ওর ওপর আমি রাগও করিনি। শুধু খারাপ লেগেছিল। খারাপই লাগে আমার। তোমাকে একটা রিকোয়েস্ট করছি, ওই অ্যাকসিডেন্টের কথা আমাকে মনে করিয়ে দেবে না। আমার ভয় করে।


 সরি অনি। আই বেগ ইয়োর পার্ডন। আর কখনও বলব না। আসলে... না থাক। তোকে বরং অন্য একটা কথা জিজ্ঞাসা করি। আচ্ছা অনি তোর কোনও গার্ল ফ্রেন্ড নেই?


 শচীজেঠুর অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে প্রায় হকচকিয়ে গেলাম। সাধারণত এরকম আলগা কথা কখনও জিজ্ঞাসা করে না


শচীজেঠু। আমার মনকে অন্যদিকে ঘোরানোর জন্যই কি এরকম একটা প্রশ্ন? মুহূর্তের জন্য ফাগুনের মুখটা মনে পড়ল। ও বলেছিল সবাইকে বোঝাতে হবে। বললাম, গার্ল ফ্রেন্ড বলতে যা বোঝায় সেরকম কেউ নেই। তবে একজন বন্ধু আছে।


 কী নাম তোর বন্ধুর?


 ফাগুন


 নাইস নেম। কী করে ফাগুন?


 পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের কাছে মৃগিচামীতে একটা এনজিও চালায়। ট্রাইবাল বাচ্চাদের লেখাপড়া আর হাতের কাজ শেখানোর জন্য ওদের একটা স্কুল আছে। ওর বাবা শুরু করেছিলেন। এখন ফাগুনই দেখে।


 ভেরি গুড। তা, তোর সঙ্গে আলাপ হল কী করে?


 ফেসবুকে। এখন অবশ্য ফোনেও কথা হয়। ফাগুন আমাকে মৃগিচামীতে যেতে বলে। বলে যে নদী জঙ্গল পাহাড়ের কাছে থাকলে আমার মন ভালো হয়ে যাবে। ওখানকার ছবি আমি দেখেছি। খুব সুন্দর। আমারও মনে


হয় ওখানে থাকলে আমার মন ভালো হয়ে যাব। যাব জেঠু?


  যাবি? তা, যা না। দিন সাতেকের জন্য ঘুরে আয়। সঙ্গে রতনকেও নিয়ে যা। ও থাকলে তোর দেখাশোনা করতে হবে।


 মনে হল আমি বৃথাই চেষ্টা করছি। এরা আমায় কোথাও যেতে দেবে না। দাদু থাকলে বলতাম, তুমি আমাকে উড়িয়ে দাও। এরা শুধু গরাদ চেনে, তোমার মতো আকাশ চেনে না।


 কী রে চুপ করে আছিস কেন? রতনকে পছন্দ না হলে মঞ্জুকে নিয়ে যা।


 তোমার অন্য কথা বোধহয় বলা হয়ে গেছে জেঠু। আমি এবার উঠি।


(ক্রমশ)


 


 


  


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract