Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Manasi Ganguli

Classics

4.9  

Manasi Ganguli

Classics

নৈসর্গিক প্রেম

নৈসর্গিক প্রেম

6 mins
834



    "এই চলো না এবার পুজোয় কোথাও বেড়াতে যাই,কতদিন কোথাও যাই না", রিনা তাপসের কাছে ঘনিষ্ঠ হয়ে এসে আবদার করে বলে ওকে। "তা বল কোথায় যাবে? তুমিই তো মেয়ে ছোট বলে কোথাও যেতে চাও না" এক হাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে নিয়ে বলে তাপস। পাশে ঘুমন্ত মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে রিনা বলে,"না না এবার যাবো,মেয়ের তো আড়াই বছর বয়স হলো এখন আর ওকে নিয়ে ঘুরতে অতটা অসুবিধা হবে না। সঙ্গে কাজলকেও নেবো না হয়,মেয়ে ছোটমাসিকে খুব ভালোবাসে আর কাজলও ওকে বেশ ম্যানেজ করতে পারে"। "তাহলে চলো,রঞ্জিতও বলছিল সেদিন একসঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাবার কথা,মাসিমাকেও নিয়ে যাবে সঙ্গে। ও অবশ্য হরিদ্বার,ঋষিকেশ যাওয়ার কথা বলছিল,মাসিমার ইচ্ছে বলে"। "তা যেতে পারি,একসঙ্গে দলবেঁধে মন্দ হবে না, ওদেরও দুটো বাচ্চা রয়েছে,ছোটছেলে টুকানটা তো আমাদের মেয়ের থেকে বছর খানেকের বড়,ওদের সঙ্গে আমাদেরটাও ভালই থাকবে। আর ওদিকটায় তো আমরাও যাইনি কোনোদিন। তুমি বরং রঞ্জিতদাকে বল ওর সঙ্গে মুসৌরিটাও যাবার কথা,ওইদিকেই তো,ওটাও ঘোরা হয়ে যাবে তাহলে"।

   সেইমত দুই বন্ধুতে সব ব্যবস্থা করে ফেলল। পুজোর ঠিক পরেই একাদশীর দিন ওরা রওনা দিলো হরিদ্বারের উদ্দেশ্যে। দলটা বেশ বড়সড়ই হল,আর অনেকজন থাকায় তিনটে বাচ্চা নিয়ে কোনো অসুবিধা রইল না। এদিকে রিনা,তাপস,কাজল আর তুতলি আর ওদিকে রঞ্জিত,বন্দনা,মাসিমা,রঞ্জিতের ছোটভাই সঞ্জিত আর ওদের দুই ছেলে টুকান আর টুবাই। সেসময়ে হরিদ্বারের আবহাওয়া খুব মনোরম,না ঠান্ডা,না গরম। তিনদিন ছিল ওরা,রোজ সন্ধ্যায় গঙ্গায় সন্ধ্যাআরতি দেখে মাসিমা খুব খুশি,ওদেরও সবার খুব ভালো লেগেছে। একদিন সকালে বরফগলা কনকনে গঙ্গার জলে চানও করেছে ওরা,বাচ্চাগুলোকে অবশ্য করায় নি। একদিন রোপওয়ে দিয়ে মনসা মন্দির গিয়েছিল। মাঝে একদিন ঋষিকেশ ঘুরে এসেছে সবাই মিলে। হরিদ্বারে শেষদিন ছিল কোজাগরী পূর্ণিমা। রাতে খাওয়াদাওয়া সেরে,বাচ্চাদের মাসিমার জিম্মায় রেখে ওরা গঙ্গার ধারে গেল,ব্রিজের ওপর উঠে দাঁড়ালো সবাই, জোছনায় ভেসে যাচ্ছে চরাচর,গঙ্গার জল রুপোর মতো ঝকঝক করছে, সন্ধ্যের ভিড়ভাট্টা আর নেই। তাপস,রিনা,রঞ্জিত, বন্দনা,কাজল আর সনজিৎ এই ছয়জন মিলে সেই স্নিগ্ধ জোছনার আলোয় যেন স্নান করল সেদিন। পরদিন পাহাড়ের রানী মুসৌরি।

   মুসৌরি যেতে শাল-ওক-পাইনে ঘেরা পথের শোভা অতুলনীয়। যেদিকে দুচোখ যায়,সবুজ পাহাড়োর ঢেউ,অজস্র রঙিন ফুলের সমারোহ,কে যেন অতীব যত্নে রোপন করে রেখেছে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে সোইসব গাছ। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে গাড়ি এগোয়,মাঝে মাঝো তীক্ষ্ণ বাঁক,সবাই আঁতকে ওঠে। সেদিন পৌঁছিয়ে একটু রেস্ট করে বিশেষ ঘোরা হলো না,সঙ্গে বাচ্চা বুড়ো সবই যে রয়েছে। সন্ধ্যোয় কিছু শপিং হল। কিছু কিছু জায়গা থেকে দূরে দেরাদুন শহর দৃশ্যমান, সেখানে আলো জ্বলছে দেখা যাচ্ছে। রঞ্জিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,"মনে হচ্ছে যেন দেওয়ালি,কারা যেন বাতি দিয়ে সাজিয়েছে পুরো শহর"। সবাই সেদিকে তাকিয়ে উপভোগ করছে সে দৃশ্য। হঠাৎ উড়ে আসা মেঘের চাদর ঢেকে দিচ্ছে সেই আলোকমালা আবার মেঘের ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে বেরিয়ে পড়ছে তারা। ওরা কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে সেই লুকোচুরি খেলা দেখল। আবার অন্য দিকে গেলে,সেখানে আরেকরকম। বন্দনা বলে,"দেখো,পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে যেন প্রদীপ দিয়ে সাজানো মনে হচ্ছে "। সবাই খুব খুশি এবারের বেড়ানোতে। হালকা, মিষ্টি ঠাণ্ডার আমেজ রয়েছে। একটা করে গরম জামা সবার গায়ে। রাত বাড়ার সঙ্গে ঠান্ডাও বাড়তে লাগল,বাচ্চাদের নিয়ে বেশি রাত বাইরে না থেকে সবাই তাড়াতাড়ি হোটেলে ফিরে গেল সেদিনের মত। বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়লে রাত অবধি বড়দের আড্ডা চলল।

    পরদিন মুসৌরি ঘোর়া,তারপর দিন ফেরা। ওরা ঠিক করল মুসৌরি ঘুরে যাবার দিন কেম্পটি ফলস দেখে ফিরবে। সেদিন ওরা লালটিব্বা গেল,সেখান থেকে চারিদিকে পাহাড় আর পাহাড়, উচ্চশৃঙ্গ সব দর্শন করে মিউনিসিপাল গার্ডেন দেখে গানহিল টপের ওপর থেকে দৃশ্যমান সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো একের পর এক হিমালয় পর্বতমালা দেখে ফিরলো ওরা হোটেলে বিকালের দিকে। সেদিন কাজল বলল, "আজ মাসিমার খুব ধকল হল, আজ একদম রেস্ট"। সত্যিই সবাই খুব ক্লান্ত, সন্ধ্যেবেলাতেই খেয়ে বাচ্চাগুলো ঘুমিয়ে পড়ল মাসিমাও শুয়ে পড়লেন। ওরা বড়রা একটু ঘুরতে বের হলো। ওদের হোটেলের লবি থেকেও দেরাদুন খুব সুন্দর দৃশ্যমান। হোটেলটা পাহাড়ের একদম কোলে, সামনে কোনো অবস্ট্রাকশন নেই।

   এসে গেল ফেরার দিন। সকালটা ছিল আমেজ ভরা,গড়িমসি করে বেরোতে একটু দেরিই হয়ে গেল। সঙ্গে গাড়ি আছে, চিন্তা নেই তাই। গাড়িতে ওদের সবার জায়গা নির্দিষ্ট করা আছে, সেইমতো সবাই উঠে পড়ল। চলল গাড়ি। তাপস ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে,"কতক্ষণ লাগবে? কেমন ফলসটা?" সঞ্জিৎ বেড়াতে আসবার আগেই প্রচুর খোঁজখবর নিয়ে এসেছে,এটা ওর অভ্যেস বরাবরই তাই করে। ও বলে,"আমি বলছি তাপসদা, মুসৌরি থেকে ১৩ কিমি দূরে রাম গাঁওয়ে এই কেম্পটি ফলস। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১৩৬৪ মিটার বা সাড়ে চার হাজার ফুট। ১৮৩৫ সালে ব্রিটিশ অফিসার জন মেকিনান এই জলপ্রপাতটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন। কেম্পটি নামটির উৎপত্তি খুব সম্ভবত 'Camp-tea' থেকে। বাংলো-কি- কান্দি গ্রামের কাছ থেকে শুরু হওয়া একটি পাহাড়ি ঝরনা এখানে পাহাড় থেকে ৬০ ফুট নিচে যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছে, সেখানে একটা ছোটখাটো জলাশয় তৈরি করেছে। এরকম কথায় কথায় ওরা এসে পৌঁছালো গন্তব্যে। অনেকটা নিচে নামতে হবে ঝর্ণা দেখতে। ধীরে ধীরে সবাই নামল, দুটো বাচ্চাকে মাঝেমাঝে কোলে নিতে হলো। নিচে পৌঁছাতেই ঝর্ণার মনোরম দৃশ্য,অবিরাম ঝরঝর আওয়াজে,কথা বললে শোনা যায় না,জোরে,চেঁচিয়ে কথা বলতে হয়। জলধারার গা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি জল দূর পর্যন্ত ছেটায়, যেন বৃষ্টি হচ্ছে মনে হয়। রিনা,তাপস,রঞ্জিত,বন্দনা নিচে জলে নামল,কাজল,সঞ্জিৎ,মাসিমা ও বাচ্চারা ব্রিজের ওপর থেকে দেখছে। ছোট্ট মেয়েটা খুশিতে হাততালি দিচ্ছে, সঞ্জিত দেদার ছবি তুলছে।

     ওপর থেকে হঠাৎ কাজলের বন্দনার দিকে নজর পড়তেই চমকে ওঠে, "একি বন্দনাদিকে যে গাড়িতে আমার ব্যাগ আর ক্যামেরা রাখতে গিয়েছিলাম সেসব কই? ওর কাঁধে তো শুধু ওর ব্যাগটাই রয়েছে। আমার ব্যাগে ৪০০০০ টাকা রয়েছে,তাছাড়া দাদার অত দামি ক্যামেরাটা নিয়ে এসেছি ছবি তুলবো বলে। বাচ্চাগুলোকে সামলাতে গিয়ে বন্দনাদির জিম্মায় গচ্ছিত রেখেছিলাম, কোথায় গেল?" ভাল করে সবার কাঁধ দেখল,না কোত্থাও নেই। কাজলের বুকটা ধড়াস ধড়াস করছে, ও আর কাউকে কিছু না বলে হুড়মুড়িয়ে ছুটল জলে। সঞ্জিত মাসিমা,"কি হল,কি হল?" করে উঠল। কাজলের সেসব শোনার অবস্থা নেই তখন। বন্দনা নিচে হাসতে হাসতে ওই ঠান্ডা জল ছেটাচ্ছে ওর বরকে,মজা করছে তখন খুব। ওর কাছে গিয়ে কাজল জিজ্ঞাসা করতেই বন্দনার খেয়াল হলো। জিভ কেটে বলল ও, "এইরে সব তো গাড়িতে পড়ে আছে "। ভাড়ার গাড়ি, সবার মাথায় হাত তখন,সব আনন্দ নিমেষে মাটি।

     সঞ্জিৎ এসে পড়েছিল কাজলের পিছন পিছন, সব শুনে ছুটল ওপরে। চেঁচিয়ে বলল, "আমি দেখছি, তোমাদের আসতে হবে না,তোমরা অপেক্ষা করো"। কাজল থাকতে না পেরে চলল পিছন পিছন। অনেকগুলো সিঁড়ি তবু। সবার আনন্দ উধাও সেই মুহূর্তে, রঞ্জিত বন্দনাকে বকুনি দিতে শুরু করেছে, "কোনো দায়িত্ব নিতে শিখলো না আজও" ইত্যাদি ইত্যাদি। সে বেচারি মুখ চুন করে রয়েছে বকুনি খেয়ে। সঞ্জিৎ পৌঁছে গেছে উপরে, কাজল তখনও অনেকটা নিচে। গিয়ে গাড়ি খুঁজে পায় না,ওদের বড় গাড়ি, ইনোভা, সেও অনেকগুলো রয়েছে তারপর নম্বর মিলিয়ে দেখে গাড়ির কাছে পৌঁছালেও ড্রাইভার নেই গাড়িতে। এদিক ওদিক তাকিয়ে একটু ঘোরাফেরা করে দেখে এক জায়গায় কয়েকজন ড্রাইভার একসঙ্গে গল্প-গুজব করছে। সেখানে পাওয়া গেল তাকে এরপর গাড়ি খুললে সবই পাওয়া গেল। যাক কোন কিছুতে হাত দেয়নি তাহলে। ততক্ষণে হাঁপাতে হাঁপাতে কাজলও এসে গেছে, চোখভরা তার জল। জিনিসগুলো পেয়ে ওর ধড়ে যেন প্রাণ এলো,ওর তখন মুখে হাসি চোখে জল। সঞ্জিতের কাছে পৌঁছাতে সঞ্জিত ওর মাথায় হাত দিয়ে বলে,"cool,baby cool" দুজনে হেসে ওঠে।

     ক্যামেরা ব্যাগ নিয়ে ওরা আবার নিচে নামতে থাকে। সঞ্জিত কাজলের হাতটা ধরে। কাজলের সারাশরীর বেয়ে শিরশিরানি নামে,আপত্তি করে না ও। মৃদু চাপ দেয় সঞ্জিত ওর হাতে,হাসিমুখে ওর দিকে তাকায়,কাজল লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। সঞ্জিত কাজলের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলে, "পাহাড়ের রানী মুসৌরিতে এসে আমি আমার 'দিল কি রানী'র সন্ধান পেলাম।" ওরা দুজন তখন দুজনাতে মগ্ন, নিচে নেমে এসেছে খেয়াল নেই। কাজলের হাত তখনও সঞ্জিতের মুঠিতে ধরা,সবার কাছে পৌঁছে গেছে ওরা। সবাই মুখ টেপাটিপি করে হাসছে তাই দেখে। দূর থেকে মাসীমা এ দৃশ্য দেখে খুব খুশি,মনে মনে ঠিক করেই রেখেছিলেন বেরিয়ে ফিরে কাজলের বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবেন তিনি। এ তো 'সোনায় সোহাগা', ওদের দুজনের দুজনকে ভালো লেগেছে যখন তখন তো আর কথাই নেই। সেই হরিদ্বার থেকেই মাসিমা লক্ষ্য করেছেন ছোটছেলের কাজলের প্রতি নজর। নজরটা ওনারও ছিল প্রথম দিন থেকেই। ভাবেন,"বড়বৌমা বন্দনার ভুলটাই ওদের দুজনকে তাড়াতাড়ি কাছে এনে দিল"। সঞ্জিত ভাবে,"নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মাঝে আমাদের ভালবাসাটাও যেন নৈসর্গিক। কেম্পটি ফলস,তোমায় ধন্যবাদ,আমাদের দুজনকে কাছে আসার সুযোগ করে দেওয়ায়"।


Rate this content
Log in

More bengali story from Manasi Ganguli

Similar bengali story from Classics