STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Fantasy Others

3  

Manab Mondal

Abstract Fantasy Others

নারায়ণী

নারায়ণী

3 mins
257

শহরের কৃত্রিমতা মধ্যে লোক-সংস্কৃতির প্রতি একটা অনুরাগ সবার থাকে, সুযোগ পেলে নিজ গ্রামের আশপাশে, লোক-সংগীত শুনেছি বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করেছি বাংলার লোক সংস্কৃতিকে ।বাংলার লৌকিক দেবতা , ব্রতকথা, গ্রামের মানুষদের কাছে শুনে শুনে বড় হয়েছি বার মাসে তের পার্বনের না না কাহিনী। আর তখন শুনতাম হিন্দুদের ৩৩ কোটি দেবতা।  আর এ কথা সত্য মনে হত যখন দূর্গা, কালি, স্বরস্বতি ইত্যাদি বড় পূজার পাশাপাশি এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে এই লৌকিক দেবতার দু একজনের নাম অজানা বিভিন্ন দেবতার পূজা করতে দেখতাম।

লৌকিক দেবতাদের পূজা-পার্বণ মূলত শহর থেকে দূরে পল্লী এলাকায় হিন্দু মানুষদের মাঝে শুধু নয় এদের পূজায় অংশগ্রহণ করেন মুসলিমরাও।  অশাস্ত্রীয় এবং নিম্নবর্ণের দ্বারা অধিক-পূজ্য অতএব ইহারা চাষা-ভূষাদের দেবতা এই সব লোক দেবতার ।।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এ বিষয়ে যে বলেছেন--- দেশের লোক-সংস্কৃতির মধ্যে অতীত যুগের সংস্কৃতির এমন বহু নিদর্শনাদি সংগুপ্ত আছে যেগুলি আমাদের জাতির পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনার মূল্যবান উপকরণ হতে পারে,।ভারতবর্ষে বসবাস রত প্রত্যেক জাতি ছিল ধর্মপ্রবণ । আর অতীত দিনে প্রায় সকল সংস্কৃতি, সমাজ-ব্যবস্থা, শিল্প-সাহিত্য প্রভৃতি ধর্মকে কেন্দ্র বা আশ্রয় করে সৃষ্ট ও পুষ্ট হয়েছে। উচ্চ ভাবাদর্শে অতীতকালের সংস্কৃতির মৌলিক রূপ বর্তমানে উন্নত বা ব্রাহ্মণশাসিত সমাজে মিশ্রিত বা নষ্ট হয়ে গেছে,-পল্লী অঞ্চলেও যে উন্নততর বহিরাগত সংস্কৃতির প্রভাব বিস্তারলাভ একেবারে করেনি, সে কথা বর্তমানে আর বলা যায় না, তবে তা হয়েছে ধর্মেতর (secular) দিকটার উপর। কিন্তু পল্লী-সমাজে ধর্মাচরণ বিষয়ে অতিমাত্রার রক্ষণশীল, বা আপোষ বিরোধী। ধাৰ্মিক ব্যাপারে পল্লীর জনসাধারণ লোকায়ত বিধান বা অনুশাসন মেনে চলেছে বর্তমানেও।

শ্রদ্ধেয় মনীষী শ্রীরাধাগোবিন্দ বসাক বলেছেন,—“যে পর্যন্ত না কেহ এদেশের লৌকিক দেবতার বিষয় লিখছেন সে পর্যন্ত বাংলার সংস্কৃতির একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অলিখিত থাকবে। অনুরূপ মন্তব্য লোক-সংস্কৃতির অগ্রগণ্য গবেষক-শ্রীআশুতোষ ভট্টাচার্য, তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বাংলা মঙ্গল-কাব্যের ইতিহাসে করেছেন।লৌকিক দেবতা ও তাদের পূজাচার প্রসঙ্গে আশুবাবু বলেছেন—“..ইহাদের সহিত পৌরাণিক হিন্দুধর্মেরকোন সম্পর্ক নাই...কিন্তু আলোচনা দ্বারা বাংলার সামাজিক ইতিহাসের একটি মূল্যবান অধ্যায় সংযোজিত হইতে পারে..বাংলার নৃতত্ত্ব, জাতিতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব আলোচনায়ও ইহার মূল্য অপরিসীম।"

আর পল্লিতে প্রচলিত এই সব লৌকিক দেবতারা হলেন---মাকাল ঠাকুর,পাচু ঠাকুর,বনবিবি,আটেশ্বর,কালুরায়,মুণ্ডমুর্তি,ওলাইন্ডি,বাবাঠাকুর,বড় খা গাজি, বাসলি, যোগাদ্যা,বড়াম,জ্বরাসুর,রাজবল্লভী,ঢেলাইচন্ডী,

নারায়নী,হাড়িঝি,সাত বোন,পীর গোরাচাদ,বসন্ত রায়, দেবীউত্তরবাহিনী, ইদপূজা, রংকিনী,টুসু, ভৈরব,করম রাজা, সিনি দেবি, দক্ষিণরায়, ভাদু,মানিক পীর,ক্ষেত্রপাল,ঘাটু দেবতা,ওলাবিবি।মুসলিম সমাজেও প্রচলিত ছিল- হাজার বছর উপন্যাসে এ বিষয়ে এসেছে ধর্মঠাকুর, সত্যনারায়ণ—সত্যপীর মুসলিম সমাজেও প্রচলিত ছিল ।

স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী পটুয়া দ্বারা থানের দেবতার অনুরূপ ক্ষুদ্রাকৃতি মূর্তি গঠন করে আনে এখনো এই সব লোকপূজাগুলো এখনোও কিছু গ্রামে। কোথাও কোথাও আয়োজিত হয় মেলাও।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার হোটেলের পাঁচ পাড়ার নারায়নীর কথা একটু আলাদা। এই মুর্তি কিন্তু কাঠের।

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মুন্সী মোহান্মদ খাতের  মহাশয়ের লেখা, " বনবিবি জহুরানামা "। এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়,১২৮৭বঙ্গাব্দ বা ১৮৮০খীষ্টাব্দ। এখানে সুন্দরবনের লোকদেবী বনবিবির আঠারভাটির দেশ দখলের বৃত্তান্ত ত্রিপদী ছন্দে

পুঁথির আকারে লেখা হয়েছে।এই বইএর বৈশিষ্ট্য হল, এটি আরবী বইয়ের মত পেছন দিক 

থেকে পড়তে হয়।এই পুথিঁতে বাদবনের প্রচীন লোকদেবতা দক্ষিণরায়ের মা নারায়নীর সাথে যুদ্ধও ধোনা মৌলে,দুখের পালায়, বনবিবির জহুরা খ্যাতিবা মাহাত্ন্য প্রচার করা হয়েছে। এই পুঁথি পড়ে বাদাবনের জেলে মৌলে,বাউলে জলজীবীরা বনবিবির হাজোত বা নৈবেদ্য দেয়।

  


কিন্তু এক সময় এই সুন্দর বন অঞলের একছত্র রাজত্ব ছিলো দক্ষিণ রায়ের।বনবিবি ও শাহ জঙ্গলিকে তাড়িয়ে দেবে বলে ঠিক করলেন তিনি। থামালেন তার মা নারায়নী দেবী। তিনি বললেন, একজন মহিলার সাথে একজন পুরুষের যুদ্ধ করা শোভা পায় না। নারায়নীর সাথে বনবিবি আর শাহ্ জঙ্গলির সাথে দক্ষিণ রায়ের তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। দক্ষিণ রায় নিজে যুদ্ধের ময়দানে যেতে চাইলে তার মা নারায়ণী তাকে থামিয়ে দেয়। নারায়ণী নিজের সৈন্যসামন্ত নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। বনবিবি আর শাহ জঙ্গলির সাথে ছিল অলৌকিক ক্ষমতা, কাজেই দীর্ঘযুদ্ধের ফলে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে দেখে । নারায়ণী দয়াপরবশ হয়ে বনবিবিকে সাম্রাজ্যের অর্ধেকটা দান । নারায়ণীর সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে সুন্দরবন অঞ্চলের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেয় বনবিবি, । মাতা বনবিবি জঙ্গলের নৈরাজ্য মুক্তি র জন্য কোন কোন স্থানে এই বনবিবির পাশাপাশি তার সই নারায়ণী দেবীর পুজাও হয়ে থাকে তাই এখনো।

দেবী নারায়ণীকে রায়মনিও বলা হয়। এনার নামে মঙ্গলকাব্য আছে। নারায়ণী মঙ্গল। কবি বারুইপুরের শিখরবালির রাজারাম দাস।


 নারয়নী এবং রায়মনি সম্পর্কিত বিভ্রান্তি সম্পর্কে এটাই বলা যায় বিভিন্ন গ্রন্থে দুটি নাম আলাদা আলাদা ভাবে ব্যবহার করাহয় । যেমন বনবিবি জহুরানামা গ্রন্থে রায়মনী। আবার সতীশ চন্দ্র মিত্রের গ্রন্থে নারায়ণী বলে উল্লেখ আছে। তবে নারায়ণী নামেই এনি জনপ্রিয়।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract