Scarlett MonaLiza

Horror Fantasy Thriller

3  

Scarlett MonaLiza

Horror Fantasy Thriller

মূর্তির আতঙ্ক

মূর্তির আতঙ্ক

3 mins
234


রেড রোড দিয়ে ফেরার সময় কার্জন পার্কের সামনে পট করে একটা আওয়াজ করে গাড়িটা হঠাৎই থেমে গেলো। অজয় বাবু ইঞ্জিন বন্ধ করে ড্যাশবোর্ডের ওপর থেকে মোবাইলটা হাতে তুলে নিলেন। কিন্তু চার্জ শেষ হওয়ায় সেটা অন করতে পারলেন না। বিধানসভা ভবন আর পাঁচ-সাত মিনিটের পথ হলেও অত রাত্রে গাড়ি থেকে বেরোনোটা ঠিক মনে হলো না অজয় বাবুর। চাকরির সুবাদে তাকে যাতে সুদূর বনগাঁ থেকে যাতায়াত না করতে হয়, সেই কারণেই অফিস থেকে তাকে সপরিবারে বসবাস করার জন্য অ্যাসেম্বলি হাউসের মধ্যেই কোয়ার্টার দেওয়া হয়েছে। বা-হাতের কপজিটা ঘুরিয়ে ঘড়ির রেডিয়াম ডায়ালে একবার সময়টা দেখে নিয়ে কি করবে ভাবছে, এমন সময় একটা গাড়ির হর্নের শব্দ পেলেন। চোখ তুলতেই একটা ট্যাক্সি দেখলো অজয় বাবু। চট করে গাড়ি থেকে নেমে হাত দেখালেন। তারপর ড্রাইভারের জানলার কাছে মুখ নামাতেই আঙ্গুল দেখিয়ে দুশো টাকা বলে উঠলো ড্রাইভার। দেখেই বোঝা যাচ্ছে আকন্থ মদ্যপান করে আছে লোকটা। তবুও অজয় বাবু বললেন, "ভাই দেখো আর মাত্র পাঁচ-সাত মিনিটের পথ। ট্যাক্সিতে আরো কম সময় লাগবে। আমি এই বিধানসভাতেই থাকি। দয়া করে একটু কম করো"। ট্যাক্সিওয়ালা একটা ছোট কাঁচের বোতল দেখিয়ে ঢুলু-ঢুলু চোখে তাতে আর একটু তরল ঢেলে দিতে বললো। অজয় বাবু যদি তার ইচ্ছা পূরণ করেন তাহলে সে ফ্রীতেই তাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে। সরকারি চাকরিজীবী সাদামাটা ছাপোষা কেরানি শ্রীমান অজয় কুমার মজুমদার এবার মহা ফাঁপরে পড়লেন। মদ জিনিসটাই তিনি কখনো ছুঁয়ে দেখেননি আর আজ এই লোক বলে কিনা মদের বিনিময় যাত্রা ভাড়া মুকুব। এ তো ভারী সমস্যা। গাড়িটা ছেড়ে হেঁটেই যাবেন, না দুশো টাকা নষ্ট করবেন এই ভাবতে-ভাবতে কার্জন পার্কের দিকে তাকতেই তার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল। পার্কের দুই ধারের সৌধ মূর্তি দুটো অদৃশ্য মনে হলো। চোখ কচলে আবার সেই একই দৃশ্য। কিন্তু মূর্তি দুটো অদৃশ্য হলেও স্তম্ভ দুখানি নিজের জায়গাতেই অবস্থান করছে। অজয় বাবু আবার চোখ কচলালেন, কিন্তু দৃশ্যের কোনো পরিবর্তন নেই। তিনি ভেবে পেলেন না এই এত বছর ধরে হ্যাট, কোট পড়া ধূসর মূর্তি দুটো হটাৎ কেউ চুরি করলো কেনো। তাছাড়া এই মুহূর্তে তার মাথায় আর কোনোই ভাবনা এলো না। এমন সময় জড়ানো কণ্ঠে ড্রাইভার আবার বলে উঠলো, "কি দাদা দুটো গান্ধী হবে, নয়তো চললাম"। আবার মুখ নামিয়ে কিছু বলতে গেলেন অজয় বাবু, তখনই ড্রাইভার বলে উঠলো, "পিছন দিকের দরজা দুটোই খোলা। চটপট করে উঠে পড়ুন দেখি"। অজয় বাবু আবার খালি স্তম্ভ দুটোর দিকে তাকিয়ে তারপর ট্যাক্সির পিছনের দিকের একটা দরজা খুলতেই দেখতে পেলো ধূসর রঙের একজোড়া মানবয়াবব ট্যাক্সির তলা থেকে ওইপাশে উঠে দাড়ালো। গায়ের রং থেকে শুরু করে পোশাক ও হ্যাট টুপি ধূসর রঙের। অজয় বাবু আর কিছু ভাবতে পারলেন না। এক্স আর্মি অজয় বাবু চুপচাপ ট্যাক্সিতে উঠে বসলেন।

পরের দিন গায় ভালই জর নিয়ে রেড রোড ক্রসিংয়ের ট্রাফিককে গাড়িটা দাড়াতেই অজয় বাবুর চোখ চলে গেল কার্জন পার্কের দিকে। গত রাত্রের দেখা খালি স্তম্ভ দুখানি আজ আর খালি নেই। সৌধ মূর্তি দুটো নিজের-নিজের জায়গায় অবস্থান করছে। ডিসেম্বর মাসের সকাল সাতটায়ও তার কপালে ঘামের বিন্দু ফুটে উঠলো। গত রাত দেড়টার ভয়টা আবার ফিরে এলো অজয় বাবুর।

কথাগুলো কেউ বিশ্বাস না করলেও কথিত আছে এমন ঘটনা এই রাস্তায় প্রাই হয়ে থাকে। সেই জন্যে কোনো পথ চলতি গাড়ি খুব প্রয়োজন না হলে অত রাত্রে এই রাস্তা ধরে না। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror