STORYMIRROR

Rima Goswami

Tragedy Classics Inspirational

3  

Rima Goswami

Tragedy Classics Inspirational

মরদ কো দরদ নহি হোতা

মরদ কো দরদ নহি হোতা

3 mins
217

অযোধ্যা পাহাড় পর্বতারোহণ শিক্ষার্থীদের কাছে একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল। দুটি পথে অযোধ্যা পাহাড়ে যাওয়া যায়। একটি ঝালদা হয়ে এবং অন্যটি সিকরাবাদ হয়ে। শীতের সময় .. পাকদন্ডী বেয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠছে ছেলের দল । ট্রেকিং করতে এসেছে তারা অযোধ্যা পাহাড়ে । শীতের সময় বেশ জমজমাট থাকে গোটা এলাকাটা । এই সময়টা চিকুদের ভাতের অভাব হয়না । এই সময়টাকে ক্যাশ করে অনেকে সারা বছরের ভাতের জোগাড় করে নেয় । তবে চিকুদের পুঁজি কম তাই রোজগার ও কম হয় । চিকুদের পরিবারে পাঁচটা মানুষ । ওর বাপ , মা , ওরা দুই ভাই আর বোন । বাপটা সেবার পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়লো ট্রেকিং এর ছেলেদের সাহায্য করতে গিয়ে । সবাই ভেবেছিল আর বাঁচবে না মানিক কিসকু । কিন্তু প্রাণে বেঁচে গেলেও পা দুটো সেবার গেলো চিরতরে । গরিবের ঘরে খোঁড়া , কানা হতে নেই । একেবারে প্রাণে মরে যাওয়া ঢের ভালো । যে মানুষটা ছেলেদের ট্রেকিং করিয়ে টাকা রোজকার করত ... গোটা পাহাড়টা যার ছিল নখদর্পণে । সেই মানুষটা আজ শীতের মরসুম এলেই পাহাড়ের নীচে বসে ভিক্ষা করে ।


অযোধ্যার সব থেকে বড় শৃঙ্গ .. গোরগাবুরু শৃঙ্গর উচ্চতা ৬৫৫ মিটার ,সেই শৃঙ্গ মানিক কিসকু তর তর করে চড়ে যেত আবার অনেকটা সময় জিরিয়ে রাত পার করে নেমে আসতে পারত । আজ যেন ওই গোরগাবুরু মুচকি হেসে তাচ্ছিল্য করে মানিককে । যেন ফিসফিসিয়ে বলে , মোরে জয় করা অত সহজ হবেক লাই তুর মানিক ... তু আর পারবিকলাই রে ... হতাশা ভরা দুটো চোখ দেখে চূড়া গুলোকে । কিংবদন্তি অনুসারে, রাম ও সীতা বনবাসের সময় অযোধ্যা পাহাড়ে এসেছিলেন। এখানে এসে সীতা তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়লে রাম নিজের তীরের সাহায্যে মাটি খুঁড়ে জল বের করে আনেন। সেই জায়গাটি সীতাকুণ্ড নামে পরিচিত হয় । বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্থানীয় আদিবাসীরা এখানে বন্য পশু শিকার উৎসবে যোগ দেয়। ওই সময়টা চিকুর বড্ড প্রিয় । পূর্ণিমার আলো যেন ঝর্ণা হয়ে নেমে আসে পাহাড়ের গা বেয়ে । তাড়ি খেয়ে নাচ করে সব আদিবাসী নারীপুরুষ । ধামসা মাদলের সুরে সুরে বিভোর হয়ে যায় সবাই । চিকুর তখন মনে হয় এটা যেন কোন স্বর্গ রাজ্য , যেখানে কোন দুঃখ নেই ... ক্ষিদে নেই ... আছে শুধুই আনন্দ আর আলো ।


বাঘমুন্ডি থেকে বাপ আর মাকে ভ্যান চালিয়ে এতটা টেনে আনতে বড্ড কষ্ট হয় বছর পনেরোর চিকুর । হাপরের মতো ওঠা নামা করা হৃদপিন্ডটা যেন বেড়িয়ে থাকা পাঁজর ঠেলে বেরিয়ে যেতে চায় । ছোট ভাই বোন গুলো ঘরে থাকে একা আর চিকুরা আসে পেটের দায়ে দুটো বিক্রি বাট্টা করতে । মরসুম পেরিয়ে গেলে আর তেমন রোজকার হয় কৈ ? চিকুর মা একটা কেরোসিনের স্টোভ জেলে বসে যায় এদিক ওদিক । ডিম সিদ্ধ করে কাঁচা পিঁয়াজ ,বিট লবন আর মরিচ গুঁড়া দিয়ে বিক্রি করে সে । একটা গাছের তলায় চিকুর বাপ মানিক সানকির বাটি পেড়ে বসে যায় ভিক্ষা করতে । চিকু নিজের হাতে বানানো তাল পাতার বাঁশি , পাখা এসব বিক্রী করে ঘুরে ঘুরে । চিকুর খুব কষ্ট হয় বাপের ওই পাথর কুদে বানানো ভারী শরীরটা টেনে ভ্যানে চাপাতে আবার নামাতে । তবুও খোঁড়া বাপ ভিক্ষা করতে বসলে লোকে তো দু এক সিকি পয়সা দেয় ! এক নরম কাঁধকে বইতে হয় দায়িত্ব আর এক পাহাড় জয়ী মরদকে করতে হয় ভিক্ষা । একজনের শরীরের কষ্ট আর একজনের মনের কষ্ট তবুও ওরা সহ্য করে কারণ বাঁচতে তো হবে ? আর কথায় তো আছে , মরদ কো দরদ নহি হোতা ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy