মজিলপুর দোলউৎসব
মজিলপুর দোলউৎসব
মুর্শিদকুলি খাঁ ১৭৭৫ সালে যখন বেতরের কাছে খাল কেটে গঙ্গার মূল ধারা ঘুরিয়ে সরস্বতী নদীর মরা খাত দিয়ে বজবজ, রায়চক, ফলতা, ডায়মণ্ডহারবারের পাশ দিয়ে সাগরের মুড়িগঙ্গায় নিয়ে গিয়ে মিশিয়ে ছিলেন তখনই থেকে কালিঘাট , বারুইপুর, জয়নগর হয়ে ছত্রভোগ বন্দর অবধি যে আদিগঙ্গা বয়ে যেতো, তার মৃত্যু হয়ে যায়।

আর আদিগঙ্গার মজা গর্ভে সতেরো শতকে থেকেই জনবসতি গড়ে উঠেছিল বলে , দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নাম মজিলপুর। মজিলপুরের নাম বলেই পুতুল মেলা আলো করে বিরাজ করা আহ্লাদী পুতুল, বাবু পুতুল, বেনেবউ পুতুল আর নানাধরণের পশুপাখির পুতুলের কথা মনেপরে। বাবু পুতুল তো নিছক পুতুল নয়, বাংলার বাবুদের কৃত্রিমতা ও ঔদ্ধত্যের প্রতি মজিলপুরের পুতুল ব্যঙ্গ করে শিল্পীরা তৈরি করে ছিলো এই পুতুল।
মজিলপুরে পুতুলশিল্প গড়ে ওঠার একটা ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে এখানকার জমিদার দত্ত পরিবার এসেছিলেন ওপার বাংলার যশোর থেকে এই শিল্পীদের।
এক সময় সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বারুইপুরের সাবজুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে আসেন । এ সময় তিনি দত্ত পরিবারে বেশ কিছুদিন ছিলেন । কিছু সমালোচক বলেন, তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘বিষবৃক্ষ’ রচনার পটভূমিকা দত্ত পরিবারের জমিদারি ।এই দত্ত জমিদারদের আটচালার শিব মন্দির, গোপাল মন্দির , একটি দোল মঞ্চ আছে।

যতদূর জানি এরা দূর্গা পূজা উদযাপন করেন।জমিদার দ্বারিকানাথ দত্তের হাত ধরে শুরু হয়েছিল মজিলপুরে দুর্গাপুজো। দ্বারিকানাথের পুত্রবধূ বাপের বাড়ির পুজোয় থাকাকালীন শ্বশুরবাড়িতেই পুজো করার স্বপ্নাদেশ পান।
তবে এদের দোল উৎসব টিও বেশ জনপ্রিয়।

মজিলপুর দত্ত পরিবারের প্রায় দুশত বাঃ তার বেশি বছরের দোল মঞ্চ।জয়নগর মজিলপুরের পাঁচটি উল্লেখযোগ্য দোল উৎসবের প্রথমটি হয় এখানে প্রতিপদে র দিন।তার আগের দিন হয় চাঁচড়।

দোল উৎসব মান, বসন্ত এসে গেছে , উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথেই, ফুল ফলের মুকুল ধরতে থাকে প্রকৃতির উর্বরা শক্তি বাড়তে থাকে ক্রমে । কখনোও কখনো হওয়া খরা পরিস্থিতি ও আসে।যখন মানুষ সভ্য হয়নি তখন এসব দেখে সে ভাবতো প্রকৃতি মানুষের ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছে তাই এমন হয়েছে। তাই তারা বলি দিয়ে প্রকৃতি মায়ের কাছে রক্ত নিবেদন করতো , পুড়িয়ে তার ছাই রক্ত ছড়িয়ে দিত ক্ষেতে।সেই পোড়ানোর অনুষ্ঠান চাঁচড়।যাকে পোড়ানো হত তাকে বলা হত মরা ক্রমে সেই কথাটি তাৎপর্য হারিয়ে হল ন্যাড়া কোনো ক্ষেত্রে । আর পরের দিনে ক্ষেতে ম্যারার রক্ত মাখা ছাই ছড়ানোর অনুষ্ঠান ক্রমে সভ্য সমাজে হল লাল আবীর ।ম্যারাকে দোল দিয়ে পোড়ানো হত তলায় আগুন দিয়ে তাকে বলা হত হিন্দোল। ফাল্গুনের পর চৈত্রে গাজনে এই অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক অবশেষ এখন ও দেখা যায় ।কারন বিশ্বাস ছিল আগুনে ম্যারা যত ঘামবে কাঁদবে তত বৃষ্টি ভালো হবে ফসল ভালো হবে।এসবই তারা করতো সেই সময়ের ধারনা অনুযায়ী সমাজের ভালোর জন্য।দোল তাই শুভ।ক্রমে ম্যারার বদলে রাধা কৃষ্ণের মূর্তি প্রতিস্থাপিত হয়েছে দোলে।ভারতে নান প্রান্তে নানা গল্প তৈরি হয়েছে এসবকে ঘিরে হোলিকা কে পোড়ানো বুড়ির ঘর পোড়ানো ইত্যাদি।সৃষ্টি হয়েছে কিছু ছড়া আজ আমাদের ন্যাড়া (ম্যাড়া)পোড়া কাল আমাদের দোল পূর্ণিমাতে ----বল হরি বোল।