Rima Goswami

Crime Fantasy Others

3  

Rima Goswami

Crime Fantasy Others

মিথ্যাচার

মিথ্যাচার

4 mins
390


প্রখর সূর্যের তাপ কেও যেমন আচমকা কালো মেঘ এসে ঢেকে নেয় । তেমনই আমার সব সত্যি , আমার সব সততা , আমার সব আশা কে এক টুকরো মিথ্যার ছায়া দিয়ে ঢেকে দিলো রাজা । আমি তো রাজাকে নিজের স্টুডেন্ট বলেই জানি , আমি ওকে কত ভালোবাসি ! আর ও সেদিন আমাকে রেপ করলো ? আমি এক ত্রিশ বছরের মহিলা হয়ে ওই সতেরো বছরের ছেলেটার কাছে শারীরিক জোরে পেরে উঠলাম না ! আমি হেরে গেলাম । আমি পাখি দত্তা সোশ্যাল সাইন্স টিউশন পড়াই আর আমার বেশির ভাগ ছাত্র ছাত্রীরাই মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকের । সব ছাত্র ছাত্রীদেরই আমি ভালোবাসি , স্নেহ করি । আমি ডিভোর্সি , আমার স্বামীর সাথে আমার মিচুয়াল ডিভোর্স হয় বছর খানেক আগে । দাম্পত্য বড্ড কঠিন , একে অপরের সঙ্গে সামলানো না গেলে বেরিয়ে আসাই শ্রেয় কাদা ছোড়াছুড়ি না করে ।


আর্য আমার এক্স হাসবেন্ড আর আমি এখন ভালো বন্ধু ও আমার বাড়িতেও আসে । আমার বাবা মা নেই আমি এখন একা । আমার তাতে অসুবিধা হয়নি কিন্তু দেখেছি আমার আশেপাশের লোকজনের খুবই অসুবিধা । ওদের আমাকে নিয়ে কত চিন্তা! আমি করে এত সহজে আর্য কে ছেড়ে দিলাম আর ডিভোর্স হবার পর আবার কেউ বন্ধু হয় নাকি একে অপরের ? আমি কেন বিয়ে করেছি না আবার ? আমি একা কি ভাবে আছি ? কত প্রশ্ন সকলের উত্তর আমার সত্যি জানা নেই । আমি কোনদিনই ভেবে দেখিনি । বাড়িতে ব্যাচ ব্যাচ পড়তে আসে সকলে । সেদিন ঝড় জল হওয়ার জন্য কেউ আসেনি । কেউ কেউ ফোন করে জানিয়েও দেয় । আমিও কারেন্ট ছিল না বলে চার্জারের আলোতেই ম্যাগাজিন পড়ছি । ইনভার্টার আমার কেনা হয়ে ওঠে নি । ডোর বেল বাজলো আমি নেমে এসে খুলেদিলাম । সামনে দাঁড়িয়ে রাজা আমার এক উচ্চমাধ্যমিক এর স্টুডেন্ট । আমি ওকে ভেতরে আসতে বললাম কারণ আমি ওর পিঠে ব্যাগ নিয়ে আসা দেখে সত্যি ভেবেছিলাম ও পড়তে এসেছে । আমি চাইলে ওকে ফিরিয়ে দিতে পারতাম এই বলে যে কেউ আসছে না আজ , ইলেক্ট্রিসিটি নেই তাই আমি পড়াবো না । কিন্তু আমি নিজের কাছে বরাবরই সৎ তাই ভাবলাম বেচারা যখন পড়তে এসেছে তখন ফিরিয়ে কেনদি ? আমার ছাত্ররা আমার স্নেহের পাত্র তাই অবসরের জন্য যে সময়টা হঠাৎ পেয়ে গেছিলাম তাকে ফেলে আবার রাজা সোশ্যাল সাইন্স পড়াতে বসেই গেলাম । রাজা হয়ত পড়তেই এসেছিল কিন্তু আস্তে আস্তে এডাল্ট হওয়ার পথে এগোনো রাজাও হয়ত ভেবে ছিল ম্যাম একা তাই সুযোগ নেওয়া যেতেই পারে । ও কিছুতেই পড়ায় মন দিচ্ছিল না , আমি ভাবলাম হয়ত চার্জারের ক্ষীণ হয়ে আসা আলোতে ওর অসুবিধা হচ্ছে । আমি ভুল ছিলাম , আমার ধারণার গোটাটাই ভুল ছিল । রাজা আচমকাই আমার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে , আমি হতভম্ব হয়ে প্রাথমিক বাধা দিতে দেরি করে ফেলি । ও খুব তাড়াতাড়ি আমাকে অজগরের মত জড়িয়ে ফেলে । আমি ভাবতাম শারীরিক জোরের থেকে শিক্ষার জোর অনেক বেশি আর সেই আমি ভুল প্রমাণিত হলাম তাও আমারই ছাত্রের কাছে । আমাকে রেপ করে রাজা পালালো , আমি তখনো বসে আছি ঘরে অবিনস্থ্য অবস্থায় । তার পর আমি নিজেকে সামলাই আর ভাবি করা উচিত ?


একজন নাবালক , একজন ছাত্রর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে আমার কমপ্লেইন করায় । আবার ভাবি আমি যদি ব্যাপারটা চেপে যাই আমি নিজের কাছেই অপরাধী হয়ে যাবো । আমি রাজাকে বা রাজার মত ভুল পথে এগোনো ছেলেদের উৎসাহ দেব চুপ করে গিয়ে । তার পর নিজের সাথে হাজার যুদ্ধ করে আমি পুলিশে রিপোর্ট করলাম । রাজা কে ধরে এনে জেরা করা হলো , টেস্ট হলো । ও গিল্টি সেটা প্রমাণিত হওয়াটা সময়সাপেক্ষ । এমন সময় কোর্টে রাজা বললো আমি পাখি দত্তা একজন ডিভোর্সি , আমি নিজেই রাজাকে একা পেয়ে সিডিইউস করি আর ও সেই সময় ভুল করে আমার সাথে আমার সম্মতিতে ইন্টিমেট হয় । আমার পরিচিতরা রাজার হয়ে সাক্ষী দেয় । আমি সবটা শুনে হতবাক কিছুই বলে উঠতে পারিনি । আমার সব সত্যি কে মিথ্যার ছায়া দিয়ে রাজা আর এই সমাজ ঢেকে দিয়েছিল । আমি ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়ে বসে পড়েছিলাম আদালতেই । উকিলের জেরা , জাজ এর কথা কিছুই আমি শুনতে পাচ্ছিলাম না । আমার মৌনতা কে আমার স্বীকারোক্তি ভেবে রাজাকে কয়েকদিন রিমান্ডে রেখে ছেড়ে দেবার রায় দেন মাননীয় জজ । আমি ফিরে আসি বাড়ি , আমি কাঁদি সারারাত জেগে । তার পর ভোরের স্নিগ্ধ হওয়া , পাখিদের কলতান আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে আমাকে বোঝায় আমি তো হারিনি হেরেছে রাজা তার পরিবার , এ সমাজ । যারা রাজা বা তার মত ছেলেদের শিক্ষা না দিয়ে আরো অপরাধমূলক কাজের দিকে এগিয়ে দেয় । না আমি হারবো না , আমি আবার চেষ্টা করবো । এক টুকরো মিথ্যার মেঘ আমার সত্যির সুর্য কে কখনোই ঢেকে ফেলতে পারে না । আমি জিতব , আমাকে জিততেই হবে না হলে তো হাজার হাজার রাজা তৈরি হবে রক্তবীজ অসুরের মত । আমাকে কালী হয়ে ওই অসুরকে বৃদ্ধি পাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে ।



Rate this content
Log in