মেহগনি
মেহগনি


মেহগনি কে আমি নাহলেও কম করে তিরিশ বছর চিনি। ও যখন গড়িয়ার এই পাড়ায় এলো কত হবে ওর বয়স বড়জোর আট মাস আর আমি দশ। কী ফুটফুটে, রাঙা,ফুলের মত ।ওকে দেখার পর আপন ছোট ভাইবোনগুলিকে কেলো-কুচ্ছো মনে হতো।তখন কী ছাই বুঝতাম নীতিমালার বই স্কুল পেরিয়ে ছুঁতে পারেনা মোনোপলি সিস্টেম কে। ভাঙতে পারে না কোন গন্ডি,ভালোবাসলেই দেওয়াল টপকিয়ে কাছের মানুষ হয়ে ওঠা যায়না।
আলোর মত মেয়ে মেহগনি।পড়ে গেলাম প্রেমে। আমার বাবা রিক্সা টানে জেনেও। কিউপিড টার্মস এন্ড কন্ডিশনের ধার কবেই বা ধেরেছে । পাড়ায় আমি তখন মাধ্যমিকের 'ফার্স্ট বয়' রেল্লা আলাদা। প্রেসিডেন্সিতেও চান্স পেলাম পড়াশুনার জোরে। তারপর একদিন দুম করে বলে বসলাম।'মেহগনি তোমাকে ভালোবাসি।' প্রত্যাখ্যানের ভয়ে পিছোবার বান্দা আমি নই। না প্রত্যাখিত হইনি।আশাতীত পেয়েছি। তারপর..
তারপরটাই তো টুইস্ট। আমি যখন মেন্টাল অ্যাসাইলাম থেকে ফিরলাম, বাবা-মা,ভাই-বোন দেখি কেউ নেই,কোথায় গেছে জানিনা। আমি শ বাড়ির সামনের ছোট্ট বারান্দায়টায় রয়ে গেছি।আর রয়ে গেছে মেহগনি। বড়লোকের বৌ এখন, এ পাড়াতেই শ্বশুরকুল-পিতৃকুল।ভালো তো।সুখে থাকুক। আমি রোজ যাই ওদের বাড়ির উল্টোদিকের কৃষ্ণচুড়া গাছটার নীচে।দাঁড়িয়ে দেখি।ভিখিরির-বাচ্চা,বেজম্মা,দু'কান কাটা তো।ওর বাবা এই বলেই তো ডেকেছিল।
দাঁড়িয়ে দেখি ওর ছেলেটাকে। চার বছরের ফুটফুটে শিশু।আর দেখি ঠোঁটের নীচের তিলটাকে।ভাগ্গিস দাড়ির জঙ্গলে আমার মুখটা ঢেকে গেছে।নইলে অমন একটা তিল তো আমারও...
ওই তো বেরোচ্ছে মেহগনির ছেলে....কী যেন নাম ওর, ভুলেই গেছি।