মা আসছে
মা আসছে


ছোট গল্প
মা আসছে
ডাঃ গৌতম মান্না
মা আসছে ! এই কথা শুনেই গায়ে একটা শ্রীহরণ জাগিয়ে তোলে সারা বাঙালি জাতির কাছে। এই আনন্দের মাতো হারা হয়ে গিয়েছে আপামোর জনগণ। আসুন । আমরা সবাই মিলে একটুখানি পিছিয়ে গিয়ে কিছু ঘটনার সম্মুখীন হতে পারি । আমার কিংবা আপনাদের মধ্যে একটি উৎসুক তৈরী হয়। যখন সেই বিখ্যাত কন্ঠ শিল্পী এবং অভিনেতা,নাট্টকার ও এক জন বিদ্যজনেদের মধ্যে একজন পরিচালক হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন । তার পর তিনি ছিলেন বেতার সম্প্রচারের এক অভিনব আধ্যায়ের সৃষ্টিকারী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের তৈরী করা মহালয়ার গান । সারা দেশে বাঙালী জাতির মনে আড়োলন সৃষ্টি কারী একজন মানুষ। তিনি জন্ম গ্রহণ করেন কোলকাতার অহিরীটোলাতে 04/08/1905 সালে । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী শুভ সূচনা করেন ১৯৩১ সালে আদ্যাবধি মহালয়ার দিন ভোর চারটার সময় শুভ মহড়ায় অনুষ্ঠিত হয়ে ছিলো। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ থেকে আজও পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান প্রতি বছরের ন্যায় মহালয়ার দিন সম্প্রচারিত হয়ে আসছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় সময়ের আগেই এই মহড়া রেকর্ড করে বাজানো হয়ে থাকে। এই সুর মানুষের হৃদয়ের মধ্যে আজও বিচলিত করে তুলেছে বাঙালি জাতির মনের মনিকাকে । এই সুর কোথাও শুনলে মনে হতে থাকে, যে দেবী দশভূজার আগমনের পূর্বে সূচনার সৃষ্টি হয়েছে। মা দূর্গার আগমন মানুষের মনের মধ্যে এক অনবদ্য অভিনয়ের আড়োলন সৃষ্টি হতে থাকে। এই দৃশ্য আজ কালকার দিনে টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে সাম্প্রতিক প্রচার করে থাকেন। আগামী দিনে তখন রেডিও এর মাধ্যমে মানুষের কর্ণকুহরে প্রবেশ করতে থাকে। সেই ভোর চারটা থেকে সকাল পর্যন্ত। দেবী দুর্গার আরাধনা করতে থাকেন মর্তের মানুষ জন। যখন একজন অসুর, তিনি মহাদেবের ভক্ত ছিলেন। আর তিনি পুরুষ দেবতা ছাড়া কোন দেবীর পূজা করতেন না ওই রক্ষোস কুল । এক দিন তার মাথায় ভূত চাপলো। যে আমাকে সারা জীবন এই ভাবে চলতে থাকলে হবে না। আমাকে দেবতাদের থেকে অমরত্বের জন্য বর চাইতে হবে। তা না হলে আমার জীবনের লক্ষ্য পূরণ করতে পারবো না ! এই ভাবনা থেকে তখন তিনি দেব রাজ ব্রহ্মার আরা ধনা করতে থাকেন। দেবতাদের রাজা বলে কথা। কিন্তু তিনি তো যাকে তাকে বর দিতে পারেন না। ওখান থেকে বিমুখ হয়ে তিনি সর্গ রাজ্য গিয়েছেন ! যতো জনের কাছে গিয়েছেন কেউই এই মহিষাসুর রাক্ষুকে বর দিলেন না। এবার তিনি দেবাদিদেব মহাদেবের তপস্যা করতে থাকেন। মহাদেব ধ্যানের ভরে এই ভারতের নিষ্ঠার সহিত তপস্যায় মুগ্ধ হয়ে অমরত্বের বর দিয়ে বসেন । ভ্রম কাটতেই মহাদেব চিন্তায় পড়ে যান। মহিষাসুর সর্গ পুরি আক্রমণ করাতে সমস্ত দেব দেবীগণ চিন্তায় পড়ে যান ! এখন ব্রহ্মা পারেন আমাদের সবাই কে বাঁচাতে ! এদিকে মহিষাসুর বর পেয়ে যখন সর্গ রাজ্য আক্রমণ করেন তখন দেবী দুর্গা কে পাঠানো হয় মহিষাসুর কে হত্যা করার জন্য। যুদ্ধে পরাজিত হয় মহিষাসুর । আর ব্রহ্মার নির্দেশ মেনে দেবী দুর্গা বধ করে থাকেন। সেখান থেকে মর্তে দেবী দুর্গার আরাধনা করতে মর্তের নেমে এসেছিলেন দশভূজা দেবী দুর্গা রুপে । মর্তের নররুপি নারায়ন মানুষ জনদের শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে এবং নিজেদের মনোনিবেশ করতে এই দেবীকে পুজো অর্চনার করে আসছেন । প্রতি বছরের ন্যায় এখনো পর্যন্ত মানুষ এই দেবীকে পুজো অর্চনা করে থাকেন। আমরা সমস্ত বাঙালি জাতি এই অশ্বিন কিংবা কার্তিক মাসের তিথি অনুযায়ী দেবী দুর্গার আরাধনা হয়ে থাকে । দেবীর আগমন ঘটলেই আমাদের বাঙ্গালী জাতির একটি রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে যে, নতুন জুতো, পোষাক আশাক থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাকাটা করে থাকেন। তাই প
ুজো আসার আগে থেকে বাঙালীদের মনে একটা নতুন নতুন ভাবের সৃষ্টি হতে শুরু করে। কখনো কখনো দেবীর আগমনের সময় বর্ষা আবার কখনো মেঘলা আকাশ, কখনো পরিষ্কার আকাশ পাওয়া যায়। এতো কিছুর অসুবিধা সত্ত্বেও মানুষের মনের মধ্যে কখনো মাকে নিয়ে এসেছেন মাটির প্রতিমা রূপে । বাঙালী জাতির আর ও একটি দিক আছে। সেটা হলো সারা বছর ধরে বাড়ী ঘর পরিষ্কার সাধারণত গড়ে ওঠে না কিন্তু দেবীর আগমন কে কেন্দ্র করে সারা বাড়ীর চারিদিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নয়, নতুন ধানের দুধ বের করে বিভিন্ন ধরনের আলপনা এঁকে থাকেন। এই আলপনা এঁকে দেওয়া হয় মহালয়ার দিন কিংবা তার পর দিন থেকে। এই আলপনা গুলি কে শ্যামা পূজোর আগেই মুছে ফেলা হয়। দেবী দুর্গার আগমনী থেকে বিসর্জন পর্যন্ত প্রায় এক মাস খুবই আনন্দের সহিত দিন গুলি পার হতে থাকে। দেখা গিয়েছে দেবী দুর্গা দশভুজা রুপে মাতৃভূমিতে পূজিত হয়ে আসছেন। আমরা বাঙ্গালী জাতি বলেই আমারা বারো মাসে তেরো পার্বণ করে থাকি। তাঁর মধ্যে এই পার্বন হলো একটি আলাদা অনুভুতির সৃষ্টি জাগানো দেবীর আরাধনা । এই পূজো হওয়া আগে থেকে প্যান্ডেল সাজানো, মায়ের পূজো করতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়ে থাকে। তার জন্য এই বিশাল অঙ্কের অর্থ উপার্জনের একটি বড়ো দিক হলো চাঁদা আদায় করা । আর এই চাঁদা তুলতে গিয়ে কতো শত মানুষের সঙ্গে বাক্য বিনিময় করতে হয়। কেউ কেউ ভালো বলে থাকে আবার কেউ কেউ এমন আচরণে সৃষ্টি করে থাকে তখন এইসব ঠাকুর পূজো নিয়ে যেন মাথা ঘামাতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা কখনো মায়ের পূজো অর্চনা করতে ভুলে যেতে পারছিনা। আবার পঞ্চমী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত এই কয়েক দিন যাবত ধূমধাম করে চারিদিকে বিভিন্ন ধরনের গানের মহড়া মাইকের মাধ্যমে শুনতে পাওয়া যায়। আবার এই কয়েক দিন যাবত ব্রাহ্মনের হাতে সেই ধূনুচী নাচ নাচতে দেখা গিয়েছে। এই কয়েক দিনের ব্যাবধানে আমরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে থাকি। এর মধ্যে কোন এক দিন রক্ত দানের মাধ্যমে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য একটি অনুষ্ঠানে সূচনা হয়ে থাকে। বিগত দিনে এই ধরনের কোনো কর্মসূচি ছিল না। দিন যতো এগিয়ে চলেছে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজকর্ম অন্য রকমের প্রাদুর্ভাবের সৃষ্টি হচ্ছে। এই নিয়ে মানুষের মনের মধ্যে যে আড়োলন সৃষ্টি হয়ে থাকে । সেই সময়টা হলো পূজো ,পূজো পার্বন হলো একটি আলাদা শব্দের আওয়াজ । সমস্ত বাঙালীদের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া একটি নাম। আমাদের ধর্মের মানুষ জন নয় সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের মানুষ জন এই পূজো কে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হিসেবে পালন করে থাকেন। পঞ্চমীতে শহরাঞ্চলের মানুষ আগে থেকে দেবী দর্শন করে থাকেন আর গ্ৰামাঞ্চলে শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন থেকে । আর ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে সবাই যখন লাইন দিয়ে মা কে দর্শন করতে যাওয়া যে কী আনন্দের সেই অনুভূতির জন্য বাঙালীরা দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে । কবে আসবে দেবী দুর্গা মায়ের স্মৃতি বিজড়িত সাতটি দিনের গম গম রব চারিদিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢাকের তালে তাল মিলিয়ে চলতে থাকে মায়ের পূজো অর্চনা। করোনা কালে শুধু আমাদের ভারতবর্ষে নয় ,সারা পৃথিবীতে লকডাউনের কারণে পূজো প্যান্ডেলে প্রবেশ নিষেধ করে দিয়েছেন ! তাতে আপামোর জনগণের হৃদয়ে যে কষ্ট তা আর পূরণ করতে পারাটা খুব কঠিন ব্যাপার। আমরা হলাম অভ্যাসের দাস, তাই আমাদের মানিয়ে নিতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। মহালয়ার সম্প্রচারিত প্রবর্তক বিখ্যাত সঞ্চালক , বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের প্রয়ান ঘটে 03/11/1991 সালে। এই দিনটি ছিল আপামর জনসাধারণের কাছে বেদনাদায়ক। তাঁর সৃষ্টি করা এই সম্প্রচার চিরকাল বিরাজ করছে এবং বাঙালীর হৃদয়ে গাঁথা হয়ে রয়ে গিয়েছে। মহালয়ার দিন থেকে মা দেবী দুর্গা কতো আনন্দের সঙ্গে ছেলে মেয়েদের নিয়ে বাবার বাড়িতে এসে থাকেন।।