গরুর গাড়ি
গরুর গাড়ি


গরুর গাড়ি
ডাঃ গৌতম মান্না
আমার খুব মনে আছে। কী সেই রহস্যময় ঘটনা ? জানানোর জন্য আপনাদের কে নিয়ে যাবো একটি প্রত্যন্ত গ্ৰামের দৃশ্য। এটি একটি সত্য ঘটনা । এবং বাস্তব জীবনে কখনো কখনো কাছে আসে। চলুন ঘুরে আসি। আমি তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। আমাদের জ্যাঠা মশাইয়ের বাড়ীতে, পাশের বাড়ির এক দাদা কাজ করতেন। তিনার বয়স আমার থেকে বছর আটেকের বড়ো। গরীব জীবনে ওই দাদার বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেনি। তিনি ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়া শোনার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছে লেখাপড়া। সেদিন ছিল চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দু-তিন দিন আগে গৌর দা আমাকে নিয়ে তিনার মামার বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে হাজির হলেন। আমরা দুজনে মিলে পৌঁছলাম গাজীর মহলেই। ওখানেই দাদার মামা বাড়ী। সেখান থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের রাস্তা। আমরা দুজনে পৌঁছলাম যখন, তখন সূর্য ⛅ পশ্চিম আকাশের দিকে ঢোলে পড়েছে। গাড়ী থেকে নামলাম। দাদা যখন তার ব্যাগ এর মধ্যে হাত ✋ দিয়ে দেখলো টর্চ লাইট আনতে ভুলে গিয়েছে ! কিছুই করার ছিল না। মাটির রাস্তা হেঁটে যেতে হবে ,প্রায় দুক্রোস রাস্তা। অন্ধকার নেমে এসেছে, দেখে দাদা ওর মামার বাড়ীর সামনের কোন পরিচিত ব্যাক্তি আছেন কি না খুঁজে দেখলেন। কিন্তু দূর্ভাগ্য আমাদের, কিছু করার ছিল না আর। দুই ভাই মিলে হাঁটতে শুরু করলাম। ওখানে পৌঁছলাম যখন তখন রাত্রি প্রায় নয়টার ওপর । দাদা কোন রকমে জামা কাপড় না খুলেই বেরিয়ে পড়লাম দুজনে,ওই সেই গাজীর মহলেই। অন্ধকার অবস্থায় খুব একটা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। যে, কোন দিক দিয়ে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে যেখানে মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গাজন গানের লড়াই এর পালা । আর চৈত্র মাসের চড়কগাছ এর খেলা এবং পনিক ঝাঁপ, বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান। সারা দিন রাত ধরে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের আনন্দ রেয়েছ। ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম রাত 🌃 প্রায় দুটো। আসা মাত্রই বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকাল আটটার সময় বেরোলাম। ওখান কার কিছু এইতিহাসিক এবং মূল্যবান জিনিস
পত্র এবং সচারাচর মানুষের প্রয়োজন মতো ব্যবহার করছেন। আর এই গাজীর মহল হলো, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার একটি গ্রামের ঘটনা। যারা কোলকাতা থেকে আসবেন, তিনারা বাসে করে কাকদ্বীপ রুড়ে নিশ্চিন্তপুর বাস স্টপেজ এবং রেলওয়ে করে নামখানা গামী ট্রেন ধরে, আপনাকে নিশ্চন্তপুর মার্কেট স্টেশনে নেমে মেন রোড় এ আসতে হবে। সোজা পশ্চিম দিকে হেঁটে এগিয়ে আসলে মেন রোড় এসে হাজির হয়ে যাবেন। নিশ্চিন্ত পুর বাস স্টপেজ থেকে হুগলি নদীর পশ্চিম দিক বরাবর হেঁটে যাওয়া যায়। এবং এখন কার সময়ে টোটো বা ইঞ্জিন চালিত ভ্যানে যাওয়া যায়। ইতিহাসের পাতায় লেখা যে সব জিনিসপত্র পড়তাম। সেই সব জিনিসপত্র ওখানে তখন কার সময়ে প্রচলন ছিল। যে বিষয়ে আমার নিজ চোখে দেখা । এবং কিছু অজানা জিনিস পত্রের সঙ্গে আলাপচারিতা হলো। তাই তার বিবরণ তুলে ধরলাম। বড়ো বড়ো দুই ধারে কাঠের তৈরী চাকা । উপরে কাঠের পাটাতন কিংবা বাঁশের পাটাতন বিছিয়ে তৈরী করা হয়েছে গাড়ী, আর ওই গাড়ীর মাঝখানে দুটি গরুকে বেঁধে নিয়ে চলতো বিভিন্ন জায়গায়। যেটাকে এক কথায় বলা হয়ে থাকে গরুর গাড়ি। আর ওই সব এলাকায় গ্ৰামের পর গ্ৰাম মেঠো রাস্তা। বর্ষা কালে এক হাঁটু করে কাঁদায় ভরে যেতো। এই গরুর গাড়ি ছিল তখন কার মানুষ জনের যাতায়াত এবং যোগাযোগ এর মাধ্যম। আবার যাদের একটু বেশি রুজি রোজগারের পরিমাণ। তিনারা আবার ঘোড়ার গাড়ি চেপে এই সব কাজ করে চলেছেন। এই সব জিনিসপত্র বর্ষা কালে বেশীরভাগ এই কাঠের চাকা গুলোকে খুলে রাখতেন। আবার প্রয়োজন বোধ করলে সে গুলিকে আবার নতুন করে লাগানো যেতো। এই খোলা লাগানোর ব্যবস্থা ছিল বলে ওই সব জিনিসপত্র বেশী দিন পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারতেন তখন কার মানুষ জন। দাদার সঙ্গে সকালে বেরিয়ে এই সব পুরোনো দিনের স্মৃতি বিজড়িত গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রয় বিক্রয় করার জন্য মালপত্র নিয়ে যেতে দেখলাম। গাজীর মহলের রাজবাড়ীতে বেশ কিছু ঐতিহাসিক সাজসরঞ্জাম পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। এখন ওই সব জায়গা আজও ইতিহাস হয়ে রেয়ে গিয়েছে।।
নমস্কার