লকডাউনের রোজনামচা ৭
লকডাউনের রোজনামচা ৭
ডিয়ার ডায়েরি, ৩১শে মার্চ, ২০২০... লকডাউনের সপ্তম দিনে "আমি ও গুগলবাবাজী"
আজ আবার প্রমাণ পেলাম যে শেখার কোনো শেষ নেই। প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে আমরা কিছু না কিছু শিখে চলি আমৃত্যু। তবে আজকের অভিজ্ঞতা আমার কাছে একবারে অন্যরকম। যেদিন লকডাউন শুরু হয়েছে তার পরের দিনই আমাদের দুধ দেয় যে ছেলেটি সে বললো যে কদিন হাফ লিটার মানে এক প্যাকেটের বেশী দুধ দিতে পারবে না। কি আর করা যাবে এইসময়? সবারই সুবিধা অসুবিধা দেখতে হবে। আমিও জানিয়ে দিলাম ওকে যে ঠিক আছে। এক প্যাকেট দিয়েই কোনোভাবে চালিয়ে নেবো। সুতরাং কোপ পড়লো দই পাতার ওপরে। এক প্যাকেট দুধে দুবেলা চা, আর আমাদের মেনি আর পুষির ভাতে একটু খাওয়া যাহোক করে চলবে। তারপর আর দই পাতার মতো দুধ অবশিষ্ট থাকবে না। তাই দই পাতার সাজাটুকুও চেঁচে পুঁছে রান্নায় দিয়ে দিয়েছিলাম সেদিনই। আজ সকালে সাতটার সময় যখন দুধ দিতে এলো তখন দেখলাম আবার দুপ্যাকেট দুধই দিয়েছে আজ। আর অসুবিধা নেই বললো। যাক বাঁচা গেছে। কিন্তু দি পাতবো কি করে? সাজা তো নেই। অবশ্য টাকাই তেঁতুল দিয়ে দই পাতা যায়। নাহ্, আমার ঘরে তাও নেই। এদিকে দোকানপাটও সব খুলছে না, খুললেও ভাই কিই পাওয়া যাবে তার ঠিক নেই, অথচ কেউ চুমুক দিয়েও দুধ খাই না আমরা। তবে কি হবে দুধ নিয়ে এখন? কি করা যায় ভাবতে লাগলাম। আসলে দইটা পাতা গেলেই সবচেয়ে ভালো হয়, কিন্তু কি উপায়ে পাতবো? আমার মেয়ে বললো যে ইন্টারনেটে নাকি পাওয়া যেতে পারে। মেয়েই খুঁজতে শুরু করলো গুগল সার্চ করে, যে সাজা বা তেঁতুল বাদে আর কিভাবে জমাট দই পাতা যায়? কিছুক্ষণের মধ্যে পেয়েও গেলো অভিনব এক দই পাতার উপায়। হাফ লিটার ঈষদুষ্ণ গরম দুধে চারটি কাঁচা লঙ্কা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে কয়েক ঘন্টার জন্য। আমি একেবারে সেই ভাবেই অনুসরণ করলাম পদ্ধতি। সকাল সাড়ে আটটায় দই পাততে দিলাম। ভয়ে ভয়ে ঠিক বারো ঘন্টা পরে ঢাকা খুললাম। বাহ্ বাহ্, অবাক হলাম। কী সুন্দর জমাট দই পড়েছে! আর কাঁচা লঙ্কা গুলিও অবিকৃত আছে, কালকের রান্নায় ব্যবহার করা যাবে অনায়াসে। মনটা খুব ভালো লাগছে আজ, এই চাপের মধ্যেও। নতুন কিছু শেখার আনন্দ, ভারী নির্মল আনন্দ! থ্যাঙ্ক ইউ গুগলবাবাজী। কত কিছু শিখছি এই বয়সে পৌঁছেও... সৌজন্যে অবশ্যই লকডাউন! তবুও মনে প্রাণে চাই করোনামুক্ত দেশ, করোনামুক্ত বিশ্ব... আর এই লকডাউনের ঘটুক পরিসমাপ্তি নির্ধারিত সময়ে।