লকডাউনের রোজনামচা ১৬
লকডাউনের রোজনামচা ১৬


ডিয়ার ডায়েরি, ৯ই এপ্রিল, ২০২০... লকডাউনের ষোড়শ দিনে "বিনোদনের চেষ্টায়"
জীবনটা এই লকডাউনে ঠিক যেন আস্ত একখানা লোকাল ট্রেনের ভিড় ঠাসাঠাসি কামরা। সারাক্ষণ কিচিরমিচির, হৈ হট্টগোল... সব আছে তাতে। আর সেই দুলে দুলে চলা লোকাল ট্রেনের কামরাটাই এখন আসলে আমার ঘর যেন। বেঁচে থাকছি রোজ তাতেই। সবাই সর্বক্ষণ একটা কামরাতেই... ফ্ল্যাটের এমাথা ওমাথায় বাঁধা তার গণ্ডী... একেবারে লক্ষ্মণের গণ্ডী। লকডাউন। বিনোদনও কেমন ঘূর্ণিপাকে পড়া নৌকার মতো একটেরে, একঘেয়ে। সর্বক্ষণই কি করি কি করি... মন উচাটন। রাঁধা বাড়া খাওয়া শোওয়া... এইতেই ঘুরপাক খাচ্ছি। মাঝেমধ্যে কানে ঢুকছে টুকরো খবর, সিরিয়ালের শেষাংশ বা বড়োজোর কোনো রিয়ালিটি শোয়ের একঝলক। মন ভরছে না... মন ক্ষুধার্ত... আর ভয়ঙ্কর রকমের মনঃসংযোগের অভাব। সাইকেলের ক্যারিয়ারে দুধের ক্যানের মতো ঝুলছে জীবন। ঠিনঠিন আওয়াজ আছে... গতি নেই। সেই জীবন যেন এখন সবুজ ধানখেতের আলপথে দুলকি চালে হেঁটে যাচ্ছে রোজ... গতি নেই। কাজ আছে... সংসার আছে... গতি নেই। উদ্বৃত্ত সময়ও কেমন যেন অলস শ্লথ হয়েছে। সেই তাড়াহুড়োর সকাল, নাকেমুখে যাহোক গুঁজে কর্মস্থলে ছোটার সকাল, সন্ধ্যায় হাক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরা, রোজ রোজ বাড়তি ছুটির প্রার্থণা... সব যেন বেমালুম হারিয়ে গেছে। রান্না খাওয়া ঘুম আর দৈনন্দিন সাংসারিক গৃহকর্মের জালে ফেঁসে আছি... অখণ্ড অবসরের চূড়ান্ত বিরক্তি মনের মধ্যে ভরে রেখে। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পড়ার বিষয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেওয়া... তাতে আর কত সময় লাগে? ভালোমন্দের চুলচেরা বিশ্লেষণ, ভাবনাচিন্তা ঘেঁটে যাচ্ছে রোজ। এভাবে আর চলছে না। এবার ঠিক করলাম এই আলস্যযাপন আর নয়। বহু অপঠিত বই সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে বুকশেলফে... এক এক করে পড়বো তাদের... ওতেই বোধ করি সঠিক বিনোদন হবে। মন হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে নিঃশ্বাস নিয়ে। দেখবো কিছু না দেখা সিনেমাও। কতকাল সময়ের অভাবে দেখা হয়ে ওঠেনি কত সিনেমা। এবার সময় পেয়েছি... ক্লান্ত অবসরযাপনের পরিসমাপ্তি। শুভস্য শীঘ্রম... শুরু করলাম সিনেমা দিয়ে। আজ দেখলাম "অপু ট্রিলজি"... কোথা দিয়ে চৈত্রের খরতাপে দগ্ধ দুপুর পেরিয়ে গেলো টেরই পেলাম না। মনকে চাঙ্গা রাখার পথ খুঁজে পেয়ে গেছি। এই বিনোদন ভালোভাবে লকডাউন পার করতে মনের রসদ জুগিয়েই যাবে। সময়ের সদ্ব্যবহার!