লকডাউনের রোজনামচা ১২
লকডাউনের রোজনামচা ১২


ডিয়ার ডায়েরি, ৫ই এপ্রিল, ২০২০... লকডাউনের দ্বাদশ দিনে "ক্লান্ত দুপুর ও অবসন্ন বিকেল"
এই তো বেশ ভালো আছি ভুলেই গেছি কষ্টটা, পড়লে মনে নিচ্ছি মেখে দু হাত ভরে ব্যস্ততা। মানুষের মন যে কত কথা কত বিচিত্র পথে ভাবতে পারে, তার হিসেব রাখা যায় কি? বোধহয় যায়না। এই ভাবনাচিন্তার মধ্যেই যে ঘাপটি মেরে ইচ্ছেরা ডানার ভেতরে মুখ ঢুকিয়ে লুকিয়ে থাকে। ই
চ্ছেগুলো কেনইবা হয়, কীভাবেইবা হয়, কখনইবা হয়... তার হদিস কেইবা দিতে পেরেছে কবে? মন কুঠুরিতে শুধু যখন ইচ্ছেগুলো বন্যার জলের মতো আনাগোনা করে, তখনই কেবলমাত্র মনটা কেমন যেন করে ওঠে। উথালপাথাল হয়। তখন আর তারা ভালো মন্দ বা প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিকতার ধারও ধারে না। শুধুমাত্র যতক্ষণ মন কুঠুরিতে এই ইচ্ছেগুলো তালাবন্দী হয়ে আবদ্ধ থাকে, ততক্ষণই অন্যজনের উপরে এর কোনও প্রভাব পড়ে না।
আর ইচ্ছেরা প্রকাশ পেলেই যত সমস্যা খাড়া হয়... গেলো গেলো রব ওঠে। সারি বেঁধে প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে পড়ে ন্যায়, অন্যায়, উচিত, অনুচিত, সম্ভব, অসম্ভব। নানান মুখরোচক সমালোচনার শিকার, হয়তোবা কখনো গালমন্দ বা অশান্তির ঝড়। আর ফলস্বরূপ শেষ
পর্যন্ত লোকনিন্দার ভয়েই মনের ইচ্ছেগুলো মনেই পুরে রেখে হাসিমুখে সারাটা জীবন কাটানো হয়ে যায়। আজ যেমন আমি ইচ্ছেপাখির ডানা দুমড়ে মন কুঠুরিতে ঢুকিয়ে লুকিয়ে রাখলাম।
আমার পাড়ার রাস্তা দিয়ে গরমের প্রতি দুপুরে হেঁকে যায় ফেরিওয়ালারা... প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় কত কিছু মাথায় ঝাঁকায় বা বাঁকে বা ঠেলাগাড়িতে বসিয়ে নিয়ে। পসরার মেলা... পসারীরা সবাই উধাও লকডাউনে। দুপুরগুলো সচকিত হয়না কিছুদিন যাবত ফেরিওয়ালাদের উচ্চকিত হাঁকাহাঁকি ডাকাডাকিতে। জানি না দেশোয়ালি ভাইয়া আর কখনো মটকা কুলফির লাল কাপড়ে ঢাকা মাটির হাঁড়ি মাথায় নিয়ে হাঁকবে কিনা ফ্ল্যাটের নীচে রাস্তায় দাঁড়িয়ে, "ভাভীজি, কুলফি লিবে নাকি? রশশি বেন্ধে বেগ ঝুলাও।" জানি না। মনটা হু হু করে উঠলো। কাঠের চামচ দিয়ে কেটে একখণ্ড কুলফি মুখে পুরে চোখ বুজে তার স্বাদ নিতে বড়ো সাধ হয়েছিলো আজ নৈঃশব্দ্য মাখানো ক্লান্ত দুপুরে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো... অবসন্ন বিকেল। ফাঁকা রাস্তা, ফাঁকা পার্ক, ফাঁকা গলিতে অবসন্ন বিকেলে এক দোয়াত মনখারাপের কালি ঢেলে দিয়ে সন্ধ্যা নামলো... লকডাউনের দ্বাদশী কিশোরী সন্ধ্যা। -