লকডাউনের রোজনামচা ১০
লকডাউনের রোজনামচা ১০


ডিয়ার ডায়েরি, ৩রা এপ্রিল, ২০২০... লক ডাউনের দশম দিনে
এপ্রিলের তিন তারিখ... চৈত্রের মাঝামাঝি। সকালে আটটা বাজতে না বাজতেই রোদ চড়তে শুরু করছে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে গরম। বাড়ির সমস্ত কাজ একা হাতে সামলাতে গিয়ে যাতা কাণ্ড... ঘেমে স্নান করে যাচ্ছি। এইরকম উৎকট পরিস্থিতিতে আজকের বাড়তি অভিজ্ঞতা হঠাৎ পাওয়ার কাট। কারেন্ট অফ, সুতরাং ফ্যান চালিয়ে দুমিনিট বসে একটু ঘাম শুকিয়ে নেবো... সে উপায়ও নেই। ঘামতে ঘামতে ঘামতেই কাজ সারতে লাগলাম। জিভ বেরিয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। দশ মিনিট গেলো... কুড়ি মিনিট গেলো... আধঘন্টা পার হয়ে গেলো, তখনও কারেন্ট আসেনি।
এদিকে নীচের ফ্ল্যাট থেকে শোনা যাচ্ছে ফ্যান চলার ঘড়ঘড় আওয়াজ। চেঁচিয়ে উল্টোদিকের ফ্ল্যাটে জিজ্ঞেস করে জানলাম ওদের কারেন্ট আছে। পাশের ফ্ল্যাটে আছে, নীচের ফ্ল্যাটে আছে... পাড়ার সবারই আছে কারেন্ট, শুধু আমাদেরই নেই। কাজেই ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ের অফিসে ফোন করলাম। যেহেতু একটি সিঙ্গেল ইউনিটের শুধুমাত্র সমস্যা সুতরাং ব্যক্তিগত উদ্যোগে লোক ডেকে সারাতে পারলেই ভালো হয়। কিন্তু বর্তমানে যেহেতু লকডাউন চলছে সেইহেতু মেকানিক পাওয়ার সমস্যা আছে বলে ইলেকট্রিক অফিস থেকেই সার্ভিসিং স্টাফ আসবে। তবে দেরী হবে। ততক্ষণে দুপুর দুটো বাজে।
গরমের ধাক্কায় ঘরে টেকা দায়। আমার হাজব্যান্ড পেশায় মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার। ইলেকট্রিক সম্পর্কে ধারণা কম। তবুও কলিগদের সাথে ফোনে কথা বলে সমস্যাটা বুঝতে চেষ্টা করতে শুরু করলো। তারপর চেকিং শুরু হলো, কি হয়েছে? দেখা গেলো মেন সুইচের সঙ্গে কানেকশন যেখানে আছে সেখানকার ফিউজটা উড়ে গেছে। এবার তার চাই... ফিউজটা জুড়ে দেবার জন্য। খুঁজে পেতে এক টুকরো তারও জোগাড় হলো। মেন সুইচ অফ করে ফিউজ লাগিয়ে দেওয়া হলো। ঘড়ির কাঁটা তখন তিনটের ঘর পেরিয়ে গেছে। কারেন্ট চালু হলো। ফ্যান চালিয়ে একটু আরাম করে বসলাম বিশ্রামের জন্য। আর হাজব্যান্ডের কারিগরি শিক্ষার ব্যবহারিক প্রয়োগ হলো অন্যভাবে। লকডাউনে এও এক প্রাপ্তি।