লকডাউনের রোজনামচা ১
লকডাউনের রোজনামচা ১
ডিয়ার ডায়েরি, ২৫শে মার্চ, ২০২০... লকডাউনের প্রথমদিনে "আমার গৃহবন্দী স্বামী" -------------------------------------------------------------- ঊনত্রিশ বছরের বিবাহিত জীবনে আমার স্বামীকে কেউ এককথায় প্রকাশ করতে বলা হলে যথাযথ শব্দ আমার ভাণ্ডারে কম পড়বে। তবুও আমার মতে আমার স্বামী "চঞ্চল" ব্যক্তি। ছুটির দিনে এইমাত্র দেখলাম বারান্দায় বসে হেডফোন লাগিয়ে চোখ বুজে তাল ঠুকে ঘাড় দুলিয়ে গান শুনছে, মাঝে মাঝে হুঁহুঁ হুঁহুঁ করে উঠছে। এর মিনিট দশেকের মধ্যেই দেখি কোথাও নেই, কোনো ঘরে নেই, বাথরুমে নেই, বারান্দায় নেই। গেলো কোথায়? মোবাইলটাও সোফায় পড়ে। যাকগে, করে সংসারের তদারকিতে মন দিলাম। ঘন্টাখানেক বাদে দেখি এসে হাজির, মুখে অম্লান যুদ্ধজয়ের হাসি। হয়তো হাতে বিরাট লম্বা পাতাসমেত এক আখ, নয়তো পেল্লায় সাইজের এক কাঁঠাল, বা খানকয়েক হৃষ্টপুষ্ট বাতাবিলেবু, কখনো কাঁদিসুদ্ধ ডাব বা কলা, নিদেনপক্ষে একটুকরি আম বা কমলা, সিজন অনুযায়ী... আর নয়তো উপরি কিছু রকমারি মাছ নিয়ে গৃহপ্রবেশ। নির্মল হাসিমুখে উক্তি, "হঠাৎ মনে পড়লো, সকালে আনা হয়নি।" মেয়ে মাঝেমাঝে বলে, "তুমি একটা গোটাদিন বাড়ীতে থাকতে পারলে তোমার একটা পোর্ট্রেট আঁকবো।" তার উত্তরে, "আমি ঘুষ খাইনা ", বলেই আবার গাড়ীর চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। নিশ্চিত ঘন্টা দুই তিনেকের জন্য ধাঁ। ছুটির দিন... সুতরাং মধ্যাহ্ন ভোজনের বিরতি এবং নিপাট এক ভাতঘুম দিয়ে উঠে এক কাপ সান্ধ্য চা বা কফি, সামান্য টা সহযোগে। তারপরই আবার বেরিয়ে পড়া। কোনোদিন নাটকের রিহার্সাল, তো কোনোদিন দাবার আড্ডা, অথবা কোনো ক্লাবের আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে কোনো অনুষ্ঠানে, নয়তো স্রেফ গঙ্গার পাড়ে পার্কে গিয়ে সিনিয়র সিটিজেনদের সাথে খেঁজুরে গপ্পোগাছা। দিব্য রুটিন... শীত গ্রীষ্ম বর্ষায় বিশেষ হেরাফেরি নেই। আর অফিসের দিন মানে সেই সময়সূচি সকালে নটা থেকে কমপক্ষে রাত নটা... অফিস, মিটিং, যাতায়াত, এবং অবশ্যই বাজারপ্রীতি ইত্যাদি মিলিয়ে আমার স্বামীদেবতাটি কমবেশি বারোঘন্টা বাড়ীর বাইরেই অধিষ্ঠান করেন। এহেন ব্যক্তিটি আপাতত লকডাউনের জেরে গৃহবন্দী, একবার এদিকে মাথা দিয়ে, আরেকবার ওদিকে মাথা দিয়ে বিছানায় গড়াচ্ছে আর বিড়বিড় করছে, "মহা মুশকিল হলো তো!"