Partha Pratim Guha Neogy

Fantasy Children

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Fantasy Children

লকডাউনে বিজ্ঞানচর্চা

লকডাউনে বিজ্ঞানচর্চা

3 mins
196


চারিদিকে corona -র ভয় - এই বুঝি সংক্রমিত হয়ে পড়ল। মাস্কমুখে, স্যানিটাইজার ব্যবহার করে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেও যখন ফল লাভ হচ্ছে না । তখন অগত্যা লকডাউন । ফলে স্কুল বন্ধ। সুরজিতের দুষ্টুমিও বেড়েছে সারাদিন বাড়ি থাকতে থাকতে। সবেমাত্র ক্লাস সিক্সে উঠেছে। বিজ্ঞান পড়ার নামে গোটা বাড়িটাই আজকাল ল্যাবরেটরি বানিয়ে ফেলেছে।


বিশ্বজিৎ আর সুরমার এই একটাই ছেলে।সুতরাং কিছুটা স্নেহের ছাড় তো আছেই। বিশ্বজিৎকে অফিস যাওয়ার আগে রোজ ছেলের বিজ্ঞানের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। সে নিজে একটি নামজাদা কোম্পানির চিফ কেমিষ্ট। কিন্তু হলে কি হবে? বিজ্ঞানের সব বিষয়গুলির ওপর ছেলের প্রশ্নবাণে অনেকসময় বাবা নিজেও জর্জরিত হন।এক এক সময় কোনও ক্রমে পালিয়ে বাঁচতে হয়।


আর যেই বিশ্বজিৎ মাস্কমুখে অফিস বাসে উঠলো, ব্যস। বাবাকে রওনা করে দিয়েই সোজা বাগানে। পেছন ফিরেই সুরমা দেখে সামনের বাগানে ঢুকে সুরজিৎ কি সব করছে। সুরমা ভয় পান যে বিশ্বজিতের শখের গাছের কোনও ক্ষতি করে ফেলবে , তাই চেঁচিয়ে ওঠেন ,

সুরজিৎ ওখানে কি করছিস?

মা তুমি ইতিহাসের ছাত্রী এসব বুঝবে না। বায়োলজির প্রোজেক্ট ওয়ার্ক চলছে।

সুরমা দ্যাখে ছোট ছোট চারাগাছ গুলো মাটি থেকে তুলে শেকড়টাকে স্কেল দিয়ে মাপছে।

সুরমা এটকুই শুধু বলে,

-হাত পা কেটো না। আর বড় ফুল গাছে হাত দিও না।

-তুমি নিশ্চিত থেকো মা। আমাকে জীববিজ্ঞানী হতেই হবে।

ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার করবো। দেখছো না সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা কত চেষ্টা করছে।

সুরমা বোঝে এই প্রসঙ্গে সুরজিতের সাথে সে কথায় পারবে না। তাই সে কথা না বাড়িয়ে ভেতর বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।


রাত্তিরে বিশ্বজিৎ এলে সুরমাকে গল্পচ্ছলে হলেও ছেলের সারাদিনের রিপোর্ট জানাতে হয়। সুরজিৎ তখন অন লাইনে শিক্ষকের কাছে পড়ে। সায়েন্স টিচাররা পি টি এমে ওর খুব উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তাই মা বাবা সবটাই মেনে নিয়েছে।

তবে সবটাতেই যে বিজ্ঞানমনস্কতার চিহ্ন ধরা পরে তা ঠিক নয়। কত গুলো খেলার মধ্যেও পড়ে। এসবগুলো বেশিরভাগ সময় ঘরের ভেতরে স্থান পায়। সুরমার নজরে থাকে।


যেমন, লাল কেন্নোগুলো সুতো দিয়ে জুড়ে মালগাড়ি। মাকে ডাকে,

-মা শীগগীর এসো। এই দেখো মালগাড়ি যাচ্ছে। সুরমা হেসে

লুটোপটি । প্রথম কেন্নোটা যেন ইঞ্জিন আর বাকি গুলো বগি।

-দেখো মা লকডাউনে ট্রেন চলছে।

আরেকদিন সুরমার সেলাই মেশিনের সুতো দিয়ে মাকড়সার জাল বারান্দা জুড়ে বানিয়েছে। সুরমা বুঝেছে ঐ সুতোর আর কিছু ফেরৎ আসবে না - পুরোটাই বরবাদ। বিকেল বেলায় দেখে কোথা থেকে একটা বুড়ো মাকড়সা ধরে নিয়ে ঐ জালটার সেন্টারে রেখেছে। মাকড়সাটা মনে হল ভয় পেয়েছে। নড়েও না চড়েও না।

সুরজিৎ একটু মজা করে মাকে বলে,

বুঝলে মা,ওর বাসা ঐ বানাবে। আমি কেন বানিয়েছি তাই ওর রাগ হয়েছে।

সেদিন সকালে ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে বাবার বিষয়ের ওপর সুরজিৎ বাবাকে একটা প্রশ্ন করে।

- আচ্ছা বাবা, জলে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন আছে। হাইড্রোজেন নিজে জ্বলে কিন্তু জ্বলতে সাহায্য করে না। আবার অক্সিজেন নিজে জ্বলে না, জ্বলতে সাহায্য করে।


বিশ্বজিৎ থামিয়ে বলে,

-তোর প্রশ্নটা কি সেটা বল ? বিশ্বজিৎ অফিসের ব্যস্ততা দেখায়। সেটা কি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে সেই আশঙ্কায় কিনা বোঝা যায় না।

রাহুল আবার শুরু করে,

-তাহলে বাবা তুমিই বলো জলের মধ্যে এই ধর্মগুলো কোথায় গেল? উল্টে জল আগুন নেভায়। এটা কেন হবে?

বিশ্বজিৎ উত্তরে এইটুকুই বলে,

-শোন যার যার সাথে মিলে যেটা তৈরি হয় তার মধ্যে ওদের গুণ আর থাকে না, একদম নতুন কিছু তৈরি হয়।

সুরজিৎ সাথে সাথে বলে,

-এবার বুঝেছি চিনি মিষ্টি অথচ চিনিতে যে কার্বন থাকে সেটা তো কালো কার্বন মানে কয়লা।

বিশ্বজিৎ তাড়াতাড়ি উত্তর দেয়,

-একদম ঠিক বলেছিস।

বলেই প্রসঙ্গের ইতি টানে।


কিন্তু আজ সুরজিৎ সত্যিই একটু অন্যায় করে ফেলেছে। গতকাল রবিবার বিশ্বজিৎ বাগানের এক কোনে কত গুলো ভালো ভালো ফুলের বীজ পুঁতে ছিল। রাহুল জানতো না।

ঐ জায়গাতেই বায়োলজির প্রজেক্ট ওয়ার্কের জন্য সুরজিৎ কি সব করেছে। মানে বীজ গুলো নষ্ট হয়ে গেছে।

সন্ধ‍্যেবেলায় সুরজিৎকে বকাঝকা চলছে। হঠাৎ বিশ্বজিৎ বলে ফেলে,

আমি বা তোর মা কেউই ছোটবেলায় তোর মত এরকম ছিলাম না। অন্তত আমাদের মা বাবা তো সেরকমটি কোনদিন বলে নি। আর তুই এমনটি হলি কিভাবে?

সুরজিৎ উত্তরে বলে,

-কেন তুমিই তো বললে? হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনের যা ধর্ম জলের ধর্ম তো আলাদা হবেই।

বিশ্বজিৎ উত্তর শুনে হতভম্ব। সোমার তো মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। এ ওর মুখ চাওয়াচায়ি করে। সুরজিৎ ব্যস্ত হয়ে পড়ে তার বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy