লাল কাঁকড়া
লাল কাঁকড়া
ফুলের মতো নরম বিকালে রৌদ্র। সমুদ্রের অনর্গল কথা বলা। কৃষ্ণচূড়া রঙের লাল কাঁকড়ার লুকিয়ে যাওয়া। জোয়ারে জলে পা ভেজানো। নির্জন সমুদ্র সৈকত।ভোরে চন্দ্রেশ্বর মন্দিরে পূজা দেওয়া । সব কিছু মাটি করে দিলো। উনার হঠাৎ করে অসুস্থতা। নতুন বিয়ে তাই মুখ ফুটে কিছু বলতে চাই নি উনি কিন্তু বললো "মন্দির যেতে নেই আমার।"
এ সব বিষয়ে বেশি কিছু ধারণা নেই আমার। একটু মনে আছে আমার প্রাক্তন প্রেমিকা মাসের পাঁচ ছয়টা দিন অফিস ছুটি করে ঘরে বসে কাঁদতো খুব। পিঠ কোমর ব্যাথা আর পেট ব্যাথা নিয়ে ছটপট করতো। ওর মুখেই শুনে ছিলাম , এই দিন গুলো নাকি মেয়েদের খুব কষ্ট হয়। ইন্দোনেশিয়া না তাইবান কোথায় যেন একটা ছুটিও দিয়ে দেয় মহিলাদের এই দিন গুলোতে। আমাদের দেশের কথা আলাদা। এই বিষয়ে কম্পানি যে পন্যের বিজ্ঞাপন দেয় তাতেও গোপনীয়তা।
এ বিষয়ে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। শুধুমাত্র কয়েকটি বার সাদা কাগজে চিরকুট একটা নাম নিয়ে গেছি মেডিক্যাল স্টোরে। আর অনেক গোপনে একটা কালো প্যাকেটে করে কিছু একটা নিয়ে এসে দিতাম ওকে। এ বিষয়ে আমি কোন কিছু কোন কোথাও আলোচনা করতে দেখিনি।
ব্রেকআপ পর উনার সাথে এক প্রকার জোর করেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে। উনি আরো পড়াশোনা করতে চান। তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে মেয়ে বলেই হয়তো ওর বাবা মা পড়াতে চায় নি। উনি গ্রামের মেয়ে। ওনার পিসির বিয়ে হয়নি নাকি উচ্চ শিক্ষিত বলেই। উনি বেশি কথা বলে না এখনো আমার সাথে। মন্দিরে যেতে পারবে না ঠিক আছে। উনি বিকালে বেড়াতে চাইলেন না। আর বলে দিলেন। " আপনি এ কয়েকটি দিন আমার থেকে দূরে দূরে থাকবেন, না হলে আপনার ক্ষতি হতে পারে।"
দূরে থাকতে আপত্তি ছিলো না। কিন্তু উনি আসতে আসতে আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। সুখ দুঃখ, আনন্দ, অনুভব, সব কিছু ভাগ করতে ইচ্ছে হয় উনার সাথে। তাছাড়া এখানে ঘুরতে আসা উনার জন্য। একটা অচেনা বাড়িতে এসে অচেনা মানুষ গুলোকে আপনা করে। সব কাজ করছেন। মনে কথা খুলে বলতে পারেন না উনি। আমাদের সম্পর্কটা একটু ভালো করার জন্য বৃন্দাবন থেকে মাসি এসে আমাদের দিঘা তালসারি ঘুরতে পাঠিয়ে দিলো। বললো " দিনে আট ঘণ্টা কাজ করে ও শনিবার হাফ ছুটি , রবিবার ফুল ছুটি চাই তোর। মেয়েটা দিনে ১৪- ১৫ ঘন্টা কাজ করে ওর কি ছুটি পাওয়ার অধিকার নেই?"
আমার কোন স্পষ্ট ধারণা নেই মেয়েদের এই দিন গুলোর ব্যাপারে তাই বাড়ি ফিরে এলাম।বাড়ি ফিরে আসতেই সবাই অবাক। মেজাজটা খিটকে ছিলো। মা - মাসিমা একটু আবাক জিগ্গেস বাদ শুরু করলো ফেরার কারণ কি? আবার ঐ সময় মা ওকে পুরীর প্রসাদ দিতে যাচ্ছিলেন। তাই সুযোগ বুঝে উওরটা দিয়ে দিলাম " আরে উনাকে প্রসাদ দিও না । উনি অপবিত্র থাকবেন আরো দুই তিন হয়তো তাইতো ফিরে আসা।"
হঠাৎ মাসিমা বেশ বিরক্ত হয়ে বলে উঠলেন " একটা শিক্ষিত ছেলে হয়ে এ রকম কথা কিভাবে বলছো তুমি?"
আমি একটু অপ্রস্তুতে পরে গেলাম। মা অবশ্য সামলে বললো " না না ওদের কি দোষ।আমরা মেয়েরাই তো পূরুষদের সাথে এ বিষয়ে কোনো দিন কোনো আলোচনা করি নি। তাই ওরা জানবে কি করে এ বিষয়ে।"
মাসি বললেন " তুমি হিন্দু । অম্বুবাচী পালন করো। সেটা আসলে পৃথিবী বা ধরিত্রী মা ঋতুময়ী হয় বলে ধরে নিয়ে পালন করা হয়। অর্থাৎ এটা গোপন করা মতো কোনো অপবিত্র বিষয় নয়। যৌনতা ছাড়া পৃথিবী চলবে না। অথচ যৌনতা নিয়ে প্রকৃত শিক্ষা গ্রহন বা আলোচনা করতে সবাই লজ্জা পায়। এটা আসলে কুসংস্কার। আসলে পবিত্র অপবিত্র কিছু না। মেয়েদের শরীর অজস্র ডিম্বানু তৈরি করে সব সময়। যখন সেই গুলো অতিরিক্ত হয়ে যায় তখন শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তাই তোমার জন্ম হতো না এই তরল পদার্থ যদি মেয়েদের শরীরের না তৈরি হতো। তাই একে অপবিত্র বলা বন্ধ করো। এই সময় মেয়েদের দেহে এক সাথে চার চারটি হরমোন সক্রিয় থাকে। তাই শারীরিক ভাবে দুর্বল এবং বিভিন্ন অসুবিধা মধ্যে পরতে হয় মেয়েদের। মেয়েরা কোন দিন মুখ ফুটে তাদের কষ্টের কথা বলে না। পুরুষদের শরীরকে যদি এই মাসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো। হয়তো এই চার পাঁচ দিন তারা ছুটি ঘোষণা করে দিতো। "
যাইহোক সত্যি এ বিষয়ে আমাদের সচেতনতা দরকার। তাই সারাদিন এ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলাম।রাতে দেখালাম উনি বেশ স্নান করে এলেন।
বেশ মিষ্টি লাগছে উনাকে। স্যাম্পু করেছে চুলে সুন্দর গন্ধ। আমি বললাম "আপনাকে বেশ মিষ্টি লাগছে।"
উনি বললেন " ও তাই। "
আমি বললাম " সত্যি খুব ভালো লাগছে। সকালের শিশির ভেজা ফুলের মতো"
উনার ঠোঁটে একটা হাসির ঝিলিক খেলে গেলো।উনি বললেন " ধন্যবাদ"
আমি আমতা আমতা করে বললাম " স্যাম্পুটার গন্ধটাও বেশ সুন্দর।"
উনি বললেন " এটা আপনিই পছন্দ করে এনে দিয়েছিলেন।"
দেখালাম ক্যাস খেয়েগেছি। এর মধ্যে এ রকম অনেক বার হয়েছে। আমি উনাকে এই মাস দুয়েক অনেক উপহার দিয়েছি। সেই দিন যেমন উনার জন্মদিনে উনি আমার দেওয়া শাড়িটি পড়েছিলেন। আমি বলে ফেললাম "বাহ কে দিয়েছে মা নিশ্চিত। মা তোমার পছন্দ দারুন । মানিয়েছে বেশ উনাকে।"সোনার গহনা থেকে সেন্টে সবকিছুতে প্রমানিত হয়েছে আমি উপহার দিয়েছি ঠিকই। কিন্তু সম্পর্কটা নিয়ে আমি একটু উদাসীন এখনো। উনি মাঝে মাঝে আগে কাঁদতো এজন্য কিন্তু এখন চুপচাপ থাকে। তাই হয়তো বাড়ির লোকজন আমাদের উইকএন্ডের টুরে যেতে বলছে বারবার।
আমি বললাম " ও তাই । ভুলে গিয়ে ছিলাম"
উনি রোজকার মতন পাল বালিশটা মাঝখানে দিয়ে শুয়ে পরলেন। "
আমি বললাম " এ দিকে একটু মুখ ঘুরিয়ে শোবেন কিছু কথা বলতে চাই। "
উনি মুখ ঘুরিয়ে বললেন "বলুন"
একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলাম " আমি সবকিছুতেই একটু উদাসীন। ভুলে যাই সবকিছু তাবলে এই নয় আপনাকে ভালোবাসি না। আপনাকে ভালোবাসে ফেলেছি। আপনার অসুস্থ্য বলে নয়। আমিতো একাই ঘুরতে পারতাম।আপনাকে নিয়ে ঘুরতে পারছিনা বলে চলে এসেছি। আর এখন আপনাকে সত্যি ভালো লাগছে। আদর করতে ইচ্ছে করছে আপনকে। আপনি কাল ধর্ষণের অভিযোগে করুন আপত্তি নেই । আমি আপনাকে এখন আদর করবো। শরীর খারাপ অজুহাত চলবেন না। Google পরে নিয়েছি। এসব দিনেও আদর করা যায় মেয়েদের। তাই আজ জোর করে আদর করতে চাই। আপানার অনুমতি নিয়ে.."
উনি আমার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়ে। জরিয়ে ধরে বললো " আদর করতে দেবো একটা শর্তে । কানে কানে একবার বলো। আমি তোমাকে ভালবাসি,,,"

