Ranu Sil

Classics Fantasy Others

3  

Ranu Sil

Classics Fantasy Others

ক্যাস্টর

ক্যাস্টর

18 mins
213



আচ্ছা, কখনো খোলা জায়গায় শুয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন ? কালো আকাশটা ভরে থাকে ঝিকমিকে তারায় । ওদের মধ্যে কেউ জ্বলে, কেউ জ্বলেনা । কতো রহস্য যে লুকিয়ে থাকে ঐ আকাশের বুকে ! কে যে অলক্ষিতে চেয়ে আছে পৃথিবীর দিকে, কষে চলেছে 

হিসেব-নিকেশ মহাকালের খাতায়.... কে তার খবর রাখে....মানুষ ঈশ্বরের ধারনা গড়ে, "ও-ও-ওঁং" বলে, সব দায়ভার তাঁর ওপর চাপিয়ে, নিশ্চিন্ত থাকতেই ভালোবাসে.... 

মনসিজ কিন্তু তা করে না জানেন , ছোটো থেকেই ও নিজের ভার নিজে বইতেই ভালোবাসে। হয়ত তাই ওকে কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে...ওঁং ধ্বনির গুরুদায়িত্ব.....


যে ঘটনা আজ আমি শোনাব আপনাদের, ভবিষ্যতের মানুষ হয়ত পাবে...ডায়রিতে.. 

ডায়রি লেখার অভ্যাসটা তৈরি হয়েছিল ছোটোবেলাতেই । সাধারণ ঘটনাবলী ছাড়া, ওর ডায়েরি যে একটা দলিল হতে পারে, এ ধারণা ছিল না। তবে যে ঘটনার সাক্ষী আজ ও হতে চলেছে, তা ভবিষ্যতের ইতিহাস গড়তে কাজে লাগবে বলেই ওর বিশ্বাস।


********


মনোসিজের ঘুমটা ভেঙে গেল, সেই 

শব্দে । গম্ভীর গমগমে "ওঁং" শব্দ । সাথে একটা রিনরিনে একটানা শব্দ---অনেকটা তানপুরার জোয়রির মতো । ঘড়িতে দেখলো, ঠিক রাত একটা । উঠে পড়লো মনসিজ । ও জানে, এইবার মাথাটা দিপ্ , দিপ্ করতে শুরু করবে। তারপর দুর্বোধ্য ভাষায় কে যেন, কি বলতে থাকবে। মনসিজ যন্ত্র চালিতের মতো বারান্দার দরজা খুলে বেরিয়ে যাবে । 


কালো আকাশে চুপচাপ চেয়ে থাকবে ধ্রুবতারার দিকে । আস্তে আস্তে ওর কাছে ভাষাটা পরিষ্কার হবে । ও ফুলমিনোলজির ছাত্র, তাই বিদ্যুৎ ওর বন্ধু । বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও, বুঝতে পারবে ভাষাটা 'প্রাকৃত' । ওর মস্তিষ্ক চটপট ভাষান্তর করে ওকে পরিষ্কার বাংলায় এবং ইংরেজিতে জানিয়ে দেবে বক্তব্য। মনসিজ ওর ঘরে ফিরে এসে ঘুমন্ত সাগ্নিকের দিকে তাকাবে দুটি মুহূর্ত।


এবার পাশের ঘরে, একটা ড্রয়ার টেনে বার করবে একটা ছোট্টো প্যাকেট। সোজা চলে যাবে ছাদে। ছাদের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে ও প্যাকেটটা খুলে পরে নেবে ধোঁয়া-রঙের এক পোশাক। এরপর পদ্মাসনে বসবে সে। কিছু নির্দেশ দ্রুত সঞ্চারিত হতে থাকবে তার মস্তিষ্কের কোষে কোষে। 


একটা ভাঙচুর শুরু হবে ওর মধ্যে । মস্তিষ্কের নিউরোন অ্যাক্সন টার্মিনাল নব, সাইন্যাপ্স তৈরি করে অদ্ভুত সংকেত পাঠাবে । ওর মনে হবে সাইন্যাপ্টিক ক্লেফট থেকে ধীরে ধীরে আরোও একটা মনসিজ তৈরি হচ্ছে । 

একটা স্বচ্ছ মনসিজ । 


**********

মনসিজের সূক্ষ্মদেহ, বায়ুস্তরের শেষ প্রান্তে পৌঁছেও পাক খেতে থাকবে পৃথিবীকে। গতি আবার বাড়িয়ে সৌরজগতের একটা বিশেষ কক্ষপথে আবর্তিত হতে থাকবে। ঘুর্ণন ছাড়া মহাকাশে টিকে থাকতে পারেনা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কণাও। যেতে হবে ছায়াপথ ধরে রোহিনীতে । সেখানে অপেক্ষা করছে ওর মতোই আরো দুজন। ওরা যাবে অন্য একটি ছায়াপথের এক গ্রহ, পারিজাতে । সেখানে আসবেন কেউ। আকাশ-গঙ্গায় পৃথিবীর অবস্থা নিয়ে ওরা চিন্তিত খুব। এই পৃথিবীর ঘূর্ণন অক্ষ, তার সাড়ে ছেষট্টি ডিগ্রি থেকে এক পয়েন্ট ছয় ডিগ্রি কমিয়ে ফেলতে পারে। যদি কক্ষপথের কোণেও তারতম্য হয়, তবে..... 


পারিজাতে যিনি আসবেন , তিনি পৃথিবীর ধ্বংস দেখেছেন একবার, তারপর এসেছিল হিমযুগ । অর্থাৎ প্যান্থালসায় ভাসবে প্যান্থিয়াম আবার। অথচ এই অবস্থায় আসতে যতদিন সময় লেগেছে , ততটা সময় নষ্ট হবে , পরেরবারও । তাই এবার কিছু মানুষকে বেছে নেওয়া হয়েছে। যা সংরক্ষিত করা হবে, সবটুকু রেখে দেওয়া হবে কোনো অব্যবহৃত মস্তিষ্কে। আর তাকে রক্ষা করবে কোনও তীক্ষ্ণধী মস্তিষ্ক । 


এই পর্যন্তই শুনেছিল মনসিজ আগের বার। এবার আবার ডাক পড়েছে তার। একটা পাথরকাটার মতো শব্দ শোনা গেল। ওর পাশে উড়ে এলো মুরগান , সেরেসের বাসিন্দা । মাকিমাকি থেকে এসেছে ট্র্যাম্পেট। 


মহাকাশের দৃশ্য বড়ো সুন্দর। কালো আকাশে কতশত রঙের খেলা । আগুনের এতো রঙ্ হয় ? জানতো না মনসিজ। নীলচে আলো কোথাও তীব্র ! কোথাও স্নিগ্ধ। কোথা থেকে যেন মহাজাগতিক বিচ্ছুরণ হচ্ছে, সামনেই একটা বড়োসড়ো পাথর, কিছু দেখা যাচ্ছেনা ওটার ওপারে। সুকৌশলে পেরিয়ে গেলেই ম্যাজিকের মতো পট বদল । চারিদিকে ছোটো ছোটো ফুলঝুরি জ্বলে উঠে নিভে যাচ্ছে পরক্ষণেই। চোখের সামনে ঝলমলে কি যেন একটা ঘুরেই চলেছে। এই হল মহাজাগতিক জগৎ ! ক্ষুদ্র মানব জাতি এর কতটুকুই বা জানে ! 


একটা ঘুরন্ত নীল-সাদা গোলক দেখা যাচ্ছে , 

দ্রুত কাছে এগিয়ে আসছে। ঐ গ্রহই ওদের গন্তব্য। ওরা যেখানে পা রাখলো, সেখানে চারিদিকটা বড়ো সুন্দর। বেশ মনোরম সুগন্ধি বাতাসে বুকটা ভরে উঠলো মনসিজের। 

একটা সবুজ-ঘেরা পাহাড়ের নিচে দুধ-সাদা ছোট্টো কুটির । তার ছাদে উঠে গেছে সতেজ কোনো লতানো গাছ । সেখানে অজস্র ছোট্টো ছোট্টো হলুদ ফুল মৃদু হাওয়ায় দুলছে। একজন 'মায়ের মতো' কেউ বেরিয়ে এলেন, বললেন কিছু। মনে হল, ওদের ঘুরে দেখার অনুমতি দিলেন। । মুরগানকে দেখলে, আলাদিনের কথা মনে পড়ে ।ট্রাম্পেটকে অনেকটা অসুরের মতো দেখতে। ওরা ঘুরে বেড়াতে লাগলো। এখানে একটা সরোবর আছে, কাচের মতো জলে ফুটে রয়েছে, নীল পদ্মের মতো ফুল। অজস্র পাখি চারিদিকে, ঠিক যেন বইয়ের পাতায় দেখা স্বর্গ । মনে হওয়ামাত্রই চমকে উঠলো মনসিজ নিজের অজান্তেই ।


ঠিক তখনই ওঁং ধ্বনিতে মাতাল করে, একটা জলের বুদবুদ্ এসে , টুক করে ফেটে গেল ঝলমলে আলো ছড়িয়ে। যাঁকে দেখা গেল , তাঁকে খুব চেনাচেনা লাগলো । চুল চূড়ো করে বাঁধা, মুখ দাড়ি-গোঁফে আচ্ছন্ন । ধবধবে শাদা বসন । হাতে-গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। ঠিক যেন ভারতীয় ঋষি। 


মনসিজ ভাবার চেষ্টা করছিল , কোথায় যেন দেখেছে এ রূপ ! কোথায় ! কোথায় ! আগন্তুকের গুরুগম্ভীর স্বরে , চিন্তা স্রোত ছিঁড়ে গেল । 

------ ভবান ! সুস্বাগতম্ ! 

ওদের সবার হাতে ধাতব ব্রেসলেট পরিয়ে দিলেন তিনি। এবার পৃথিবী, সেরেস আর মাকিমাকি থেকে আসা প্রাণীরা যে যার ভাষা শুনতে পাবে । 


মনসিজ তার মস্তিষ্কে একটা কম্পন অনুভব করলো। দুটো চোখ বন্ধ হয়ে এলো......

---- ধরিত্রী সন্তান, আপনাকে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে ডেকে আনা হয়েছে । পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য আজ বিপদের 

মুখে । আমরা জানি এই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে গেলে, ঐ গ্রহে যে বিরাট পরিবর্তন আনতে হবে, তাতে যুগাবসান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পৃথিবীর কিছু মানবকে রক্ষা করতে

হবে । সেরেস আর মাকিমাকি গ্রহে প্রাণের স্বল্পতা থাকায় কিছু মানবকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে । সেখানে তাদের কিছু পরিবর্তন হবে। আর কিছু মানব এই পারিজাতে থাকবে।


একটু বিরতির পর, আবার ভেসে এলো কথা । 

পৃথিবীর বিজ্ঞান এখন যে অবস্থায় আছে , তার কিছু তথ্য আমাদের দরকার হবে আবার এই গ্রহকে পুনর্নিমাণ করতে । অথচ যদি তীক্ষ্ণধী কোনো ব্যক্তির মস্তিষ্কে রাখা হয় , তবে সে নিজে এর ব্যবহার করতে চাইবে । তাই আমাদের এমন একটি মস্তিষ্ক দরকার, যেখানে মননশক্তি কম হবে। এবং যত কম হবে ততই ভালো। আর ঠিক সেই কারণেই আপনাকে আমাদের প্রয়োজন ধরিত্রী পুত্র মনসিজ। 


মনসিজ এতক্ষণে একটা প্রশ্ন পাঠিয়ে দিল।

-----" কিন্তু, আমি তো আমার মস্তিষ্কের সাথে সম্পূর্ণ মননশীলতায় সংযুক্ত। তবে ? "


একটা তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়লো, এটাকে "হাসি" বলে। জানে মনসিজ। কিন্তু বুঝতে পারলোনা , কারণটা। একটু পরেই যে উত্তরটা এলো, সেটা বুঝতে সময় লাগলো ওর মতো তুখোড় বুদ্ধিমানেরও ।


********


সকাল বেলায় ওর ঘুম ভাঙলো সাগ্নিকের চেঁচামেচিতে। আজ ছুটি ছিল মনসিজের। অন্যদিনগুলো ও এসব শুনতে পায়না। রমাপিসি প্রাণপনে ওকে থামাবার চেষ্টা করছেন।

---- এমনভাবে বায়না করেনা সোনা ! একটু খেয়ে নাও---- দেখো দাদা এলে বলবে, এখনও সানু খায়নি!


মনসিজ ওর পাশে চেয়ারে গিয়ে বসলো । সাগ্নিকের বয়স ওর থেকে মাত্র চার বছর কম । কিন্তু ওর বুদ্ধিটা আটকে আছে সেই, আটবছরে । অঙ্কের হিসেবে ওর বয়স এখন আটাশ । খুব ভালোবাসে ভাইকে মনসিজ ,খুবই ভালোবাসে । ও আস্তে করে মাথায় হাত দিয়ে বললো,

----- খেয়ে নে ভাই ? আমি তোকে বেড়াতে

নিয়ে যাব। 

---- আ-আ-আমি নাগরদোলা চড়বো ও ও!

বায়না করে একেবারে পিঠের ওপর উঠে আসে সাগ্নিক। অন্যদিন ধমক দেয় মনসিজ। আজ বকল না। বললো,

------ হ্যাঁ, নিয়ে যাব। আর কি কি খাবি বল ! খেলনা নিবি ? অনেক খেলনা দেব ।


রমাপিসি একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন মনসিজের দিকে । বলেন ,

----- তোমার চোখদুটো এতো লাল কেন মনসিজ ? রাতে ঘুম হয়নি ?


মনে মনে একটু চমকে উঠলেও সামলে নিল । বললো, 

----- হ্যাঁ , আরোও একটু ঘুমোলে ভালো হত ।


আজ সত্যিই মাথাটা ভার ভার । একটা বিরাট পাথর যেন কেউ মাথায় চাপিয়ে চলতে বাধ্য করছে । ওর কাছে কোনো বিকল্প নেই । ওরা

যা চায়, তাইই করতে হবে । তাছাড়াও একটা আটাশ বছরের ছেলে , বলছে,-----" রমাপিসি ! আমি পটি যাব"----- এই অসহ্য অবস্থা থেকে একটা মানুষকে রক্ষা করা যাবে ।


একটা টেস্ট করাতে হবে সাগ্নিকের। দেহের যন্ত্রপাতিগুলো কেমন আছে দেখা দরকার। মনসিজকেও আরো অনুশীলন করতে হবে। পরীক্ষা বেশ কঠিন। আজ একবার সায়নিকার সাথে কথা বলা দরকার। একটু সাবধানে কথা বলতে হবে। সাঙ্ঘাতিক বুদ্ধি ধরে মেয়েটা। ফোনের তিন নং বোতামটা টিপতেই বেজে উঠলো,-----"ইফ্ ইউ মিস্ দ্য ট্রেন, আই এম অন্"-----বেশিক্ষণ লাগলোনা ।

----"হ্যাল্লো"-----

----- আমি বলছি। একটা এ্যাপয়েন্টমেন্ট দরকার ছিল।

----- কিন্তু এখন তো সময় হয়নি মনসিজ, এগ্রাভেট করলো কি ? বাড়িতে যাব ?


বাড়িতে আসলে ওকে একটু বেশিক্ষণ কাছে পাওয়া যেত ঠিকই। তবে রমাপিসি আছেন। তাড়াতাড়ি বলল, 

----- না না, ব্যাপারটা এ্যাগ্রাভেশন নয় । আর এ্যাপয়েন্টমেন্ট আমার জন্য। আরে ব্রেকফাস্ট তো একসাথে হতে পারে ! নাকি ?


----- হুঁ মমম্ , আমি কিন্তু এ সপ্তাহে খুব বিজ়ি। সিনেমা যেতে পারবোনা।


যাক্, ব্যাপারটা সামলানো গেছে। মেয়েদের সামলে নেওয়া কঠিন কিছু নয়। শুধু একটু গলাটা গাঢ় করা, এই যা.... 

---- নো ডিয়ার ! সিনেমা দেখার সময় আমারও নেই। কিন্তু দেখা করতে হবে । প্রয়োজনটা আমার। আই রিপিট, ইট ইজ মাই নেসেসিটি, এন্ড ইটস্ আর্জেন্ট।


---- কবে আসতে চাও ?


মনোসিজ বিখ্যাত হাসিটা দিয়ে বলল, 

----- এজ় সুন এজ় পসিবল্-----


----- ও-ও-ক্কে ! দেন-ন্ নট টু ডে । টুমরো এট ফাইভ পি. এম ? এট টেম্পটেশন্ ? বুক করে রাখছি টেবল্ । 


---- ওক্কে ! দেখা হচ্ছে কাল।


ফোনটা রেখে রমাপিসিকে বলল, রেডি হয়ে নিতে। আজ সারাদিনটা সানুর। অনেকদিন পরে সানুকে বেশ লাগছে দেখতে, লক্ষ্য করল, ও বেশ মোটা হয়ে গেছ। যাক্ ! তা যাক্ ! অসুবিধে নেই । আর কদিন পর তো ! গাড়ির দরজাটা খুলে ধরতেই, সাগ্নিক লাফাতে লাফাতে উঠে পড়লো.....


**********

পরের দিন সকাল বেলা বেশ খুশি হয়েই বেরোল মনসিজ । একটা ট্যাক্সি নিল। টেম্পটেশন রেস্তোরাঁর গেটে নেমে এগিয়ে গেল। সায়নিকা জানিয়েছে ১৭নং টেবিল। ওটা পুল সাইডেই ছিল। টেবিলের তলার একটা স্যুইচ অন করতেই ফুটে উঠলো মেন্যু। একটা মিক্স-ফ্রুট জ্যুস অর্ডার করল। সায়নিকা কখন আসবে কে জানে।


ওকে কি সবটুকু বলা যায় ? সাগ্নিককে ভালো রাখার মানবিক দায়িত্ব ছাড়াও, যে দায়িত্ব নিয়েছে , সেটা পালন করার জন্য সায়নিকার সাহায্য নিতে মন সায় দিচ্ছে না। ওকে সবটুকু জানাতেও ভালো লাগছেনা....আশ্চর্য, এই সায়নিকার সাথে জীবন কাটানোর কথা ভাবছিল ও ? অথচ ওকে পুরোপুরি নির্ভর করতে পারছে না। সাগ্নিকের শরীর ঠিক রাখতে গেলে তো.... একজন ডাক্তারকে দরকার..... 


সায়নিকা ফোনে কথা বলতে বলতে আসছিল। টেবিলে এসে ফোন অফ করে বসল মুখোমুখি...হাসল ঠোঁট ছড়িয়ে....এতোটা ছড়ানোর দরকার ছিল না। তারমানে ও সেই হাসি নামক অনুভূতি থেকে ঠোঁট ছড়ায়নি। মনোসিজ অল্প করে ঠোঁট ছড়াল। 

সায়নিকার দাঁতের শেপ্ খুব ভালো। কিন্তু চোখ সবসময় খয়েরি কাচের আড়ালে থাকে । কেন ? প্রশ্ন করেও এর কোনও উত্তর পায়নি। দূরত্বটা তাই রয়েই গেছে..... 


সায়নিকা বললো,

----- বলো ! 

কি যেন একটা অস্বস্তি লাগছে , একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল।

----- এই যে, এতক্ষণে সময় হল !


----- বেশি দেরি হয়নি কিন্তু। বল ! কী বলবে !


খুব তাড়া আছে বোধহয় ওর । মনসিজ বলল, 

----- একটু কিছু অর্ডার করি ! 


----- নোওও ! প্লিজ় । বলো কী বলতে চাও..সাগ্নিকের মতো অনেকে আছে মনসিজ, যারা আমার পথ চেয়ে থাকে.... তাই আমার সময় সবটাই ওদের জন্য ! তাই নয় কি ? 

খয়েরি কাচের ভেতর দিয়ে তাকালো সোজাসুজি। চোখদুটো যেন বড়ো তীব্র ওর।

বড় বেশি বাস্তববাদী সায়নিকা। নাঃ জীবন-কাটানোর প্রোগ্রাম ক্যান্সেল.... 

টেবিলে তর্জনী ঠুকে বলল , 

----- বেশ ! আগে কাজের কথা । একটা পারমিশন নেওয়ার ছিল সাগ্নিকের ব্যাপারে। 

ওর এ অবস্থার উন্নতি হবে না ? শিওর ? 


----- ইয়েস ! অন্যান্য স্পেশালিস্টদেরও একই মত। জানি তো আমরা । কিন্তু কি ভাবছো ওকে নিয়ে ? 


----- আমি একটু নিজের মতো চেষ্টা করতে চাই... 


----- হুঁ-উঁ-উ-ম-ম্ ! কিরকম ?


ওকে একটু চিন্তিত মনে হল যেন, মাত্র একবছর হল দায়িত্ব নিয়েছে সাগ্নিকের। এর মধ্যেই যেন একটু বেশিই ইনভলভমেন্ট দেখাচ্ছে। প্রথমে মনে হচ্ছিল বোধহয় মনসিজ নিজেই এর কারণ ! কিন্তু... বলল, 

----- প্রাচীন কালে ভারতীয় ঋষিরা মানসিক বলে এতটাই বলীয়ান ছিলেন, প্রকৃতিকেও অনুকূল করে তুলতে পারতেন, অন্যের মস্তিষ্কের চিন্তাও অনুধাবন করতে পারতেন। সেই প্রক্রিয়ায় আমি একটু চেষ্টা করতাম আর কি ! 


----- ও, তা করতে পারো, তবে আমাকে একটু নজর রাখতে হবে । কয়েকটা টেস্টও করাতে হবে। এমনকি তোমাকেও নিজের প্রতি নজর রাখতে হবে । কারণ, অনেক সময় অতিরিক্ত স্ট্রেইন..... 


বেশ একটু অবাক হল মনোসিজ , ভেবেছিল , ওকে এড়িয়ে যাওয়ার এই সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ও ধরতে পারবে । অথবা ইচ্ছে করেই ব্যাপারটা না বোঝার ভান করলো। মনে মনে একটু সাবধান হল.... 

----- বেশ তাই হবে----- এবার একটু অকাজের কথা হোক সায়ন !


নাম ছোটো করে ডেকে হৃদ্যতা বোঝানো যায়।কিন্তু "সায়ন" নামটায় অবশ্য সায়নিকার তেমন কোনও রিয়্যাকশন হলনা। যান্ত্রিক ভাবে বলল, 

----- চল, গাড়িতে যেতে যেতে কথা হবে ।


ওর গাড়িতে উঠতেই একটা সুগন্ধে 'আপ্লুত' হয়ে গেল মনোসিজ। 


*********


কদিন ধরে, মাথায় একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছিল। যদি কোন কারণে মৃত্যু হয় মনসিজের, তবে এই অভিজ্ঞতার কথা কেউ জানতে পারবেনা। সেটা ভালো লাগছিল না। সাগ্নিকের কি হবে জানেনা। কিন্তু যেটুকু জেনেছে, সেটুকু কোথাও রেখে যেতে পারবেনা ? এটা ঠিক না। খুব ভালো হতো যদি লিখে রাখা যেত। এমন কিছুতে, যা সহজে নষ্ট না হয়। যেকোনো লোককে বললে, পাগল ভেবে, ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেবে।


ভাবতে ভাবতে হঠাৎই, ডায়রিটার কথা মনে পড়লো মনোসিজের। ওর চতুর্থতম পূর্ব পুরুষের তৈরী। তিনি বিজ্ঞান-পাগল মানুষ ছিলেন। নানা জিনিস তৈরির বিভিন্ন ফর্মুলা ও অদ্ভুত সব তথ্য লিখে রেখে গেছেন। নিচের বন্ধ ঘরে আবলুস কাঠের আলমারিতে ছিল তো ওটা। ওর বাবা মারা যাওয়ার পর আর খোলাই হয়নি। চাবিটা কোথায় ? খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও গেল। 


ডায়রিটা পেয়ে অবধি, অফিস-টফিস সব মাথায় উঠেছে । সারাদিন ওটার পাঠোদ্ধার করছে আর সানুকে নজরে রাখছে । একটা আতঙ্ক যেন ঘিরে রয়েছে সারাক্ষণ । সবকিছু যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, কাঠের পুতুলের মতো সারাদিন প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কিছুই করতে পারছেনা। সবসময় উৎকর্ণ হয়ে অপেক্ষা করছে.... 

---- ঐ ওঁং ধ্বনির....


প্রায় দিন দশেক কোনো যোগাযোগ করেনি ভিনগ্রহবাসীরা । সন্ধ্যে থেকে ছটফট করছিল মনসিজ । সাগ্নিক ঘুমে অচেতন । আজকাল বেশ শান্ত হয়ে গেছে ও । ওর অপরিণত মস্তিষ্কও হয়তো অনুভব করেছে আসন্ন কোনও সংকেত ।


একবার নিজেই চেষ্টা করবে যোগাযোগের? দেখাই যাক। মনসিজ চোখ বন্ধ করে ডুবিয়ে দিলো নিজেকে গভীরে । ধীরে ধীরে একটা নিকষ কালো অন্ধকারে ডুবে গেল সমস্ত চেতনা । ও সজাগ শুধু অনুভবে। সূক্ষ্ম ধোঁয়ার মতো সংবেদন ছড়িয়ে পড়বে এবার । চোখের সামনে একটা গাঢ় নীল ওড়না যেন। অস্পষ্ট কয়েকটা আলোর বিন্দু নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে । ওগুলো কাছাকাছি এসে একটা অবয়ব তৈরি করছে, একটা স্বচ্ছ ভাসমান অবয়ব । একটা বার্তা এলো,

---- তুমি তৈরি তো ধরিত্রী-পুত্র ? পৃথিবীর হিসেবে আর ঠিক তেইশ ঘন্টা ছাপ্পান্ন মিনিট চার সেকেন্ড সময় আছে তোমার হাতে। তোমার মেমরির নাম হবে 'ক্যাস্টর'। 


এই পর্যন্ত বলে মিলিয়ে গেল অবয়ব। মনসিজ বুঝলো, ও নয়। পারিজাতবাসিরাই যোগাযোগ করেছিল। তারমানে ওরা মনসিজের চিন্তাকে, ইচ্ছেকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে ? কেমন যেন ভয় ভয় করে উঠলো । আবছা হয়ে আসছে অন্ধকার। একটা রাতচরা পাখির ডাক কানে এলো । মনসিজ চোখ খুলে সাগ্নিকের মুখের দিকে তাকলো। সস্নেহে ওর মাথায় হাত রাখতে 

ও গুটিশুটি মেরে একটু কাছে সরে এলো । 


কাল থেকে ও ক্যাস্টর । 

**********


আজকের পর কি হবে জানেনা মনসিজ । তাই 

আজ সকাল থেকে কিছু কাজ সারছিল। প্রথমেই অফিসে একটা মেইল করল, একটা লং লিভ দরকার। অনেকগুলো মিথ্যে সাজাতে হল। উপায় নেই।


টাকা-কড়ির ব্যবস্থা আগেই করা ছিল। আজ একবার ফোন করে জেনে নিল, সব ঠিকঠাক আছে কিনা। রমাপিসিকে তিনমাসের স্যালারি দিল। উনি অবাক হলেন। বলল,---"রাখুন কখন কাজে লাগে"----টেলিফোনের টাকা, ইলেকট্রিক বিল, বাড়ির ট্যাক্স সব বুঝিয়ে দিয়েছে রাখালকাকাকে। উনি বাবার আমলের লোক। ওদের ভালোবাসেন। ওঁর একাউন্টে বেশ কয়েকমাসের টাকাও দিল। আর কি কিছু বাকি রইলো ? হ্যাঁ, নেট কানেকশনের পেমেন্ট, এছাড়াও কিছু প্রিমিয়াম, সেসব ব্যাঙ্কে বলা রইলো। টেলারিং এর দোকানে কিছু বাকি ছিল। মোটামুটি সব কাজ সারতে বিকেল হয়ে গেল মনসিজের । 


মন খুব অস্থির । কোনো কিছুই ভালো লাগছেনা। একটা যুগান্তকারী ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে ও। না না, শান্ত থাকতে হবে। রমাপিসি বাড়ি যাওয়ার আগে সবকিছু গুছিয়ে রেখে যান। উনিই ডাকছিলেন। রুটিন অনুযায়ী সব দৈনন্দিন কাজ সেরে নিল ওরা। মনসিজ দেখল, ঘুমিয়ে পড়েছে ক্যাস্টর। 


তার ঘুম এলো না । রাত তখন গভীর । নিস্তবদ্ধতা ভাঙলো একটানা রিনরিনে ধাতব শব্দে। বুঝলো, সময় হয়েছে । সাগ্নিককে জাগাতে হবে। পোশাকটা পরে নিয়ে ঘুমন্ত সাগ্নিকের মাথায় হাত ছোঁয়ানো মাত্রই চোখ খুললো । খুব আশ্চর্য হলো।

----- তুই ঘুমোসনি ? 

কেমন বোবা চোখে তাকালো ছেলেটা। সঙ্গে সঙ্গেই মনসিজের মাথায় একটা কথা ঝলসে উঠল । ঈসস্ কী বোকা ! কী বোকা ! ও কেন ভাবছিল, ওরা সাগ্নিককে লক্ষ্য রাখছে না ? যদি ওকে খুঁজে বার করতে পারে, সাগ্নিকের প্রতি খেয়াল রাখবেনা কেন ?


---- ওঠ সানু ! যেতে হবে ।

উঠে বসলো সাগ্নিক । চোখের দিকে তাকালে মনে হয় পুতুল যেন। যন্ত্রের মতো সমস্ত কথা পালন করলো অক্ষরে অক্ষরে । 


পোশাক পরে ওরা গিয়ে দাঁড়াল ছাদের একেবারে মাঝখানে । পদ্মাসনে বসে পড়লো। এতদিনে সাগ্নিক বেশ আয়ত্ত করেছে পদ্মাসন। রিনরিনে ধাতব শব্দটা বাড়লো এবার। মাথার মধ্যে আবার ভাঙচুর শুরু হলো। ওদের সূক্ষ্ম শরীর যাত্রা করলো ছায়াপথ ধরে, অন্য এক জগতে। পোশাকের মধ্যে স্থির হয়ে পড়ে রইল ওদের জাগতিক দেহ। 


*************


ঠিক সেই সময়, একটি বহুতলের এক কক্ষে, 

ডেস্কটপ স্ক্রিনে ফুটে উঠেছে একটা অদ্ভুত অবয়ব । হলুদ হলুদ মুখের মধ্যে এমন কিছু নেই, যাকে এই গ্রহবাসী সৌন্দর্য বলতে পারে। তার সামনের চেয়ারে যে বসে আছে তাকে কিছু বোঝাচ্ছিল ঐ মুখটি । 


কথা শেষ হতে স্ক্রিনে ফুটে উঠলো ছায়াপথের ছবি। দুটি চলমান বিন্দু, যারা আকাশ-গঙ্গা ছেড়ে পাড়ি দিল, অন্য ছায়াপথে। খয়েরি কাচের আড়ালে চোখ দুটো বেশ নিশ্চিন্ত হল যেন। এবার তার অন্যকাজ। 


এই পৃথিবীর কয়েকজন মানুষের দায়িত্ব রয়েছে ওর ওপর। দেওয়া হয়েছে কিছু অপরিণত মস্তিষ্কের সন্ধান, যাদের কাছে এমন কেউ আছে, যে সাধারণের থেকে বেশি বুদ্ধি ধরে। কারণ, ঐ অপরিণত মানুষটির খেয়াল রাখতে পারবে তারা। আর সবার অলক্ষ্যে, তাদের সবার ওপর লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব খয়েরি কাচে ঢাকা চোখদুটোর। সে নিপুণ ভাবে তার দায়িত্ব পালন করে চলেছে। 


ওকে সৃষ্টি করা হয়েছে,পৃথিবীর নারীর আদলে, কিন্তু কমনীয়তা তার মধ্যে দেওয়া হয়নি ইচ্ছেঃংঔ করেই। অপরিণত বা পরিণত, যেকোনো প্রাণীরই একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে । আর সেটা ফুটে ওঠে তার মানসিকতায়। কিন্তু এই খয়েরি কাচে ঢাকা চোখের অধিকারিনী শুধুই বুদ্ধি দিয়ে কাজ করে। 


*******

ওরা যখন পারিজাতে গিয়ে পৌঁছলো , তখন আর সেদিনের মতো লাগলো না মনসিজের । একটা বেশ বড়োসড়ো টানেলের মুখে পৌঁছলো ওরা । ভেতর থেকে আবছা গোলাপী আলো ছেয়ে ফেলেছে জায়গাটা । মনসিজ একবার সাগ্নিকের দিকে তাকালো । ওর চোখ স্থির । কি অদ্ভুত ! ওর মস্তিষ্ক এখন পুরোপুরি ওদের আয়ত্তে।


টানেলটা দেখতে অনেকটা স্বচ্ছ কাচের মতো। ভেতরে পা দিতেই গুনগুনে একটা শব্দ কানে এলো। শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে বুঝলো শব্দটা ওর মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ছে। আর চিন্তা শক্তি কাজ করছে না ।


সাগ্নিককে কারা যেন নিয়ে গেল । ডান দিকে একটা দরজা দেখতে পেল। যেন ডাকলো কেউ। ঢুকে গেল মনসিজ। যে গুনগুন শব্দটা পাচ্ছিল সেটা এখানে নেই । তার বদলে মনে হল, দুর্বোধ্য ভাষায় কেউ কথা বলছে। সেই শব্দ লক্ষ্য করে এগিয়ে গেল। দেখলো, অনন্ত শূন্যের মাঝে কিছু অদ্ভুত আকৃতির চেয়ার ঘুরে চলেছে। সেখানে কিছু মানুষ বসে রয়েছেন, যাদের সাজ-পোশাক প্রাচীন ঋষিদের মতো, কিন্তু দেখতে অত্যন্ত বলিষ্ঠ। সবথেকে অদ্ভুত লাগলো গায়ের রঙ। এতো বিভিন্নতা দেখা যায় না মানুষের মধ্যে। 


একটু খেয়াল করলে কিছু শব্দ চেনা যায়। সেই আগের দিনে দেখা ঋষিও রয়েছেন। মনে হল, উনিই প্রধান বক্তা। কেউ তাঁকে ভার্গব বলে ডাকলেন যেন। যতদূর মনে পরে, কোনও পৌরাণিক চরিত্রের নাম । পড়ে নিতে হবে।


এবার সেই গুনগুনে শব্দের সাথে মনসিজ অদৃশ্য আদেশে আবার ফিরে এলো,ঐ গোলাপী আলোর টানেলে । সেখানে সাগ্নিক রয়েছে । মনসিজকে বলে দেওয়া হলো, এখন থেকে সাগ্নিককে 'ক্যাস্টর' বলেও ডাকতে হবে। 


*********

তারপর, প্রায় মাস পাঁচেক কেটে গেছে। 

এই কমাসে একটা অসমাপ্ত কাজ 

শেষ হয়েছে । চতুর্থতম পূর্ব পুরুষের ম্যাজিক ডায়রিটা সম্পূর্ন পড়ে ফেলেছে। কোন সাধারণ কাগজের নয় এটা । এতোদিনেও এর লেখা প্রতিটি অক্ষর উজ্জ্বল। বাবা বলতেন, "শুধু কালির মাহাত্ম্য নয়, এর পাতাগুলোও ম্যাজিক্যাল"। অনেক আয়ুর্বেদিক ফর্মুলা লেখা আছে এতে। এর কিছু পাতা এখনও খালি। মনসিজ ঠিক করল, এ ঘটনা ওতেই লিখে রাখবে। 


ডায়রিতে বলে দেওয়া পদ্ধতিতে, সোনার গুঁড়োর সাথে কষ্ঠি পাথরের গুঁড়ো মিশিয়ে নিয়েছে। এখন অনেক কিছুই আর পাওয়া সম্ভব নয়। তবুও মোটামুটি আন্দাজ করে কিছু কেমিক্যাল জোগাড় করে ডায়রি দেখে, বার পাঁচেক অসফল হয়ে, অবশেষে বানিয়ে নিয়েছে, এক ধরনের কালি। ওর অভিজ্ঞতা লিখে রাখতেও শুরু করেছে। 

***********

প্রায় দিন সাতেক পরের কথা, 

সেদিনও মনসিজ দেখছিল রাতের আকাশ, 

আর মনে হচ্ছিল, এখন আর সাগ্নিক আগের মতো নেই। এই কয়েকটা মাসে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চুপচাপ সব দৈনন্দিন কাজ সেরে শুয়ে পড়ে চোখ বন্ধ করে। আজকাল আর ও নিজের নামে সবসময় সাড়া দেয়না । যেন দেহটা বাঁচিয়ে রাখাই ওর উদ্দেশ্য। সায়নিকা মাঝে মাঝে এসে দেখে যায়। কিছু ওষুধ বুঝিয়ে দিয়ে যায়। আশ্চর্য ! প্রশ্ন করে না কিছু.....দেখে যেন মনে হয় এ পরিবর্তন খুব স্বাভাবিক ওর কাছে। খটকা লাগে মনসিজের। তবে ওসব ভাবার সময় নেই। এখন শুধু অপেক্ষা । অপেক্ষা মহাক্ষণের...... 


হঠাৎই চোখে পড়লো , একটা তারা যেন বড় হচ্ছে ক্রমশ । তারাটা বড় হতে হতে একটা বিরাট বড় রঙিন বুদবুদ্ হয়ে গেল । 

ওর মনে হল যেন ছাদেই নামল। তড়িঘড়ি ছাদে উঠে দেখল , গাঢ় নীলচে পোশাকের কেউ, দাঁড়িয়ে আছে ।


ওকে দেখে ধাতব কণ্ঠ বলল, 

-----সময় এসে গেছে------

মনসিজ ঘরে এসে দেখল , সাগ্নিক বসে আছে। বলল, 

------ ক্যাস্টর, সময় হয়ে গেছে । 

সাগ্নিক ছাদে উঠে গেল।

ও খুব স্পষ্ট ভাষায় আগন্তুককে বললো,

------ আমি ক্যাস্টর ! আদেশ করুন এস ফাইভ ! 


আশ্চর্য ! অবাক হচ্ছে কেন মনসিজ ? এ তো সানু নয় ! জানে তো ! এ ক্যাস্টর। এ সানুর শরীরটা ব্যবহার করছে মাত্র। 

ধাতব কণ্ঠ বলল,

------ আপনার এ গ্রহ ছাড়ার সময় হয়েছে ক্যাস্টর ! 


এবার আগন্তুক এগিয়ে এল ওর দিকে। মাথার আবরণ সরিয়ে দিল। দুটো সবুজ চোখে তাকালো সোজাসুজি । 

চমকে উঠল মনসিজ , 

----- সায়নিকা !


----- হ্যাঁ, ঐ নামই ছিল আমার। কিন্তু এখানকার কাজ শেষ। তোমাকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি

নেই । ভারত ছাড়াও, বিভিন্ন দেশে যেতে হবে আমায়। আমি এস. ফাইভ। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই এই ঘটনার স্মৃতি তোমার মস্তিষ্ক থেকে মুছে যাবে।


মনসিজের চোখের সামনে দুটো রঙিন বুদবুদ্ হয়ে মিলিয়ে গেল তারা। পৃথিবীটা ঘুরেই চলেছে নির্দিষ্ট পথ ধরে....মনসিজ এখন জানে, ভার্গব হলেন দৈত্যগুরু ঋষি শুক্রাচার্য। তবে কি এবার পৃথিবীর মানুষ শুক্রাচার্যকে দেবতা বানাবে ? কিম্বা ক্যাস্টর বসবে দেবতার আসনে ? আবার ইতিহাস লেখা হবে নতুন করে.....হয়তো.....


স্মৃতি মুছে যাওয়ার আগে লিখে ফেলতে হবে সবকিছু। মনসিজ ডায়রিটা খুলে বসলো...হাতে সময় বেশি নেই ।


(স



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics