STORYMIRROR

Apurba Kr Chakrabarty

Tragedy Classics

4  

Apurba Kr Chakrabarty

Tragedy Classics

কুমারী মা (২য় পর্ব )

কুমারী মা (২য় পর্ব )

13 mins
447


এই সময়টা এগ্রামের ইতিহাসে খুনের আমল বলাই ভালো।দশ বারোটা খুন হয়েছিল,কেউ হতভাগী বাড়ির বধূ ,শাশুড়ি ননদ স্বামীর হাতে তার নৃশংস খুন।কেউ গরীবের সন্তানের সাথে ধনীর কন্যার প্রেম,কন্যার অনড় মনোভাব। কন্যাকে মামার বাড়ি পাঠিয়ে তার গরীব প্রেমিককে বাড়িতে ডেকে হত্যা করে ,মাঠের গাছে ঝুলিয়ে দেয়।কেউ অবাধ্য কিশোর ছেলেকে শাসন করতে এখন কানের গোড়ায় গার্জেন কাকার থাপ্পর ,আর তাকে খাঁড়া হতে হয়নি।আর রাজনৈতিক খুন তো ছিলই। কংগ্রেসের মস্তান মস্তানে মেয়ে ঘটিত কারনে প্রকাশ্য রাস্তায় পিটিয়ে খুন। সবার সামনে মদের নেশায় একজনের হিংস্রতা অন্য জনের করুন আত্মসমর্পণ ক্ষমাহীনতা নির্দয় ক্ষ্যাপা কুকুরকে পিটিয়ে পিটিয়ে মারার মত সে এক দৃশ্য। নাটক সিনেমাকেও হার মানবে।

এমন খুন তখন এ গ্রামের মানুষের মুখে মুখে খুব গোপনে আলোচিত হতো। প্রকাশ্যে এ বিষয়ে বলা আর নিজের বিপদ ডেকে আনা সমান। খুনেরা সবাই ধনী সচ্ছল আর প্রভাবশালী সাহসী মস্তান। এই সব খুনের কেশগুলোতেও পুলিশ এসেছিল বার বার, জেরা তদন্ত কত কী হল! কিন্তু একজন অপরাধী খুনীর এক গাছা লোমও ছেড়া যায়নি। টাকার খেলা সব কেশ পুলিশ ধামাচাপা দিয়েছিল। আর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ভয়ে বা চাপে সব দুঃখ যন্ত্রণা হজম করেছিল। আবার কোথাও সেম সাইড বাড়ির মানুষই এই খুনের অপরাধী।খুন হয়ত বা হঠকারিতায়!

মিতালীর পোস্টমোর্টেম রিপোর্ট এসেছিল, গলা টিপে মারা হয়েছিল, সে কুমারীকালীন গর্ভবতী ছিল। দুর্গাদাসের হঠাৎই নিরুদ্দেশ আর মিতালীর এই কুমারীকালীন গর্ভবতী, পিসতুতো দাদার গৃহের থাকা মানুষ সব অনুমান করেছিল। কদিন পর দুর্গাদাস বাড়ি ফিরেছিল। তার দুটো চকচকে মস্ত মড়াইয়ের ধান বিক্রি হল। এ গ্রামের মানুষ না জানলেও বোনের বাড়ির দুটো মস্ত ধানের মড়াইও বিক্রি হল।পুলিশ আয় বা বেতন তেমন ছিল না।খুনের কেশ, খুনীর আর্থিক অবস্থা, খুনের মেরিট , আর শাস্তির ধরনের উপর পুলিশের ঝাঁপির মাপ নির্ভর করে।


সাতের দশকের প্রথম,দূর্গাদাসের ভাগনার মাসিক বেতন তখন তিনশোর আশপাশ। আর সেই সময়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা দুর্গাদাসকে নির্দোষ প্রমাণে পুলিশের সেবায় দিতে হয়েছিল। ভাগনার স্কুলশিক্ষকের চাকরী সে তুলনায় মাত্র দশ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছিল। তা হোক একটা বড় সমস্যার সমাধান হল। ভগনা না হয় একটু বয়সের দোষে ভুল করেছে! মেয়েদের আরও সতর্ক হতে হবে, দূর্গাদাসের এমনই মানসিকতা।


সচ্ছল মানুষ এক বছর কী দুবছরে আয় গেল আরকী!সে সময় ওদের ঘরে মেয়ের বিয়ে ভালো পণ লাগত, সেটা তো বাঁচল! কিন্তু কলঙ্কিনীর জীবনভর কী হতো! তিনটে বোনের বিয়েরও সময় কলঙ্কিনী বেঁচে থাকলে প্রচার বেশী হত, দিদির বদনামে বোনদের সমস্যা হত। আর আদরের ভাগনা বিলাসের বড় অপমান হত। সে আবার সম্মানীয় গ্রামের স্কুলের শিক্ষক।

 দূর্গাদাস তো এমনটাও চায়নি! আত্মহত্যার ঘটনা বলে চালাতে চেয়েছিল, সে তো ঝুলিয়ে দিয়েছিল! স্বদল,বিরোধী ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতা, উকিল ধরে পুলিশের সাথে একটা রফাও করে ফেলেছিল। কিন্তু সমস্যা হল মিতালীর পা মেঝের উপর যেন দাঁড়িয়েছিল! গলায় রশি দূর্গা মন্ডবের সিলিং থেকে লোহার আংটায় ঝুলে থাকায়,লুটিয়ে পড়েনি। এটা যে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা নয়। মিতালীকে খুন করে যে ঝুলিয়ে দেওয়া, গ্রামের আনাড়ি মানুষ বুঝেছিল।আর বেশী দর হাঁকতে পুলিশ কেন এটা চাপবে! আত্মহত্যার রেট আর খুনের রেট, ধাপা চাপা দেওয়া তো এক নয়!

দুর্গাদাস বিষ্ময়ে হতবাক হয়েছিল কী ভাবে এত পাকাপোক্ত রশির বাঁধনের ফাঁস আলগা হয়ে ঝুলে গিয়ে মিতালীর মৃতদেহ মাটিতে নেমে এসেছিল!

মিতালীকে সেদিন দুর্গাদাস ক্ষোভে ক্রোধে গলা টিপে মেরেছিল। মৃতদেহ যখন ঝুলায় তার চোখে বোজা ছিল, আর সকালে তার চোখ বিস্ফোরিত যেন তাকিয়ে ছিল, ঝোলানো পর নাস্তিক বামপন্থী দুর্গাদাস কন্যাকে নিজ হাতে হত্যা করার দুঃখের চেয়েও , ভয় ত্রাস যেন তাকে বেশী গ্রাস করেছিল।

মিতালীকে সেদিন দেবীর মন্ডবে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাতে বাড়ি ফিরলে,মিতালীর মা মায়া, "মিতালীর কোথায়!" জিজ্ঞেস করলে দুর্গাদাস বলে তোমার মেয়েকে তোমার দূর্গামা আপন করে নিয়েছে।আর কোন কথা না বলে, আমি চললাম বলেই মোটর সাইকেলে চেপে গভীর রাত এগারোটার পর শীতের দিন বাড়ি থেকেই পালিয়েছিল।

মিতালী তখন পনের ষোল বছরের কিশোরী।অবোধ অপরিনত উঠতি বয়সের দোষে আর পিসতুতো দাদার মোহে কদিন আনন্দ ফুর্তি আর আরামে বিনিময়ে এমন ভাবে জীবনে খেসারত দিতে হবে সে হয়ত বোঝে নি।

প্রথম প্রথম তার এ বিষয়ে তার কোন ধারনা ছিল না।কিছুদিন একটা অস্বস্তিকর শারীরিক সমস্যা, দীর্ঘদিন মাসিক বন্ধ সবকিছু মায়ের কাছে গোপন করেছিল। 

দশমশ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার পর পিসতুতো দাদা যখন কদিন স্কুলের ছুটিতে বাড়ি যাবে,একরকম একাকীত্বের ভয়ে মিতালী , বিলাস করে বলেছিল তার শারীরিক সমস্যা আর ভয়ের কথা। বিলাস গুরুত্ব দেয়নি। "ওসব কিছু নয়,আমি বাড়ি থেকে ঘুরে আসি , পরে কী হয় দেখে বলবি।"মিতালীকে বলেছিল।

বিলাস যাবার পর মিতালীর একটা ভয় সংশয় ছিল, তার শরীরস্বাস্থ্য ভালো হলেও পেটের স্ফীত ভাব মায়ের নজর আসে।ঐ যুগে গ্রামের মেয়েরা অনেকেই স্কুল ছাড়াও এবয়সে বাড়িতে শাড়ি পরত।মিতালীর ঢাকা ঢুকি শাড়ি আর শীতের সময় চাদড়ের আড়ালে তার গর্ভের বাচ্চার আয়ুকাল অন্যের নজর এড়িয়ে দিন দিন বাড়ছিল।দিশেহারা নিঃসঙ্গ মিতালী মাকে নিজের অপরাধ বলতে পারেনি।সে যুগে এটা ভয়ানক অপরাধ।মা সেদিন চেপে কিন্তু ধরেছিল, মিতালী কিছুতেই গর্ভবতী হওয়ার কথা স্বীকার করেনি। 

রাতে দেশ উদ্ধারের ব্রত নিয়ে দুর্গাদাস বাড়িতে এলে স্ত্রীর কাছে এহেন ভয়ঙ্কর সন্দেহ কথা শুনে দুর্গাদাস চন্ডাল হয়ে ওঠে। মিতালী রাতে তখনও পড়ছিল। বাকী বোনেরা বার্ষিক পরীক্ষা ফল বের না হওয়াতে এসময় পড়াশোনা তেমন করত না। কিন্তু মিতালীর সামনের বছর হায়ার সেকেন্ডারীর ফাইনাল। বাবা মা জানত মিতালী মা দূর্গার বড় ভক্ত। দুর্গাদাস মেয়েকে টেনে হেঁচড়ে দূর্গামন্ডবে নিয়ে যায়। স্ত্রীর কথা সে মান্যতা কোন দিন দেয়নি। পুরুষ সিংহ,লেলিন স্থালিন মাও এর ভক্ত ভাবশিয্য শাসন কী ভাবে করতে হয়, দূর্গাদাস একটু বেশী শিখেছিল।একে তো তার মেজাজ এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক তর্ক বিতর্কে আজ,উতপ্ত ।আবার মেয়ের এই কান্ড!স্ত্রীকে ভর্সৎসা করেছিল,কী করো সারাদিন ! মেয়েদের দিকে নজর দাও না!

মিতালী বাবাকে ভয় পেতো,আজ বাবার উগ্রমূর্ত্তি দেখে আর হাতের কনুই ধরে টেনে হিচরে নিষ্ঠুর হিংস্র ভাবে দূর্গামন্ডবের দিকে এত রাতে নিয়ে যাচ্ছিল ,তীব্র ত্রাসে শায়া ভয়ে ভিজিয়ে ফেলেছিল।কাঁপছিল,ভয়ার্ত্ত গলায় বাবাকে বলেছিল আমাকে মেরো না।নির্জন নিঃশব্দ পরিবেশ শীতের এতরাত 


দূর্গার খড়বাঁশের কাঠামোর সামনে মিতালীকে দাঁড় করিয়ে দূর্গাদাস জিজ্ঞেস করে তোর গর্ভে কার সন্তান! কাঁপতে কাঁপতে মিতালী তার বিলাস দা নাম করতেই যম দুতের মত দূর্গাদাস কন্যার গলা টিপে ধরে।খুনের ইচ্ছা না ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ! মিতালীর দুবল শরীর,মনের মধ্যে অপরাধবোধ, আর বাবার ভীতি! থর থর কাঁপছিল, হাজার হাতুড়ি যেন তার বুকে ধাক্কা মারছে, আবার এই পরিস্থিতিতে পঁয়তাল্লিশ বছরের বলিষ্ঠ শক্তপোক্ত দুর্গাদাসের হাতে যেন শয়তানের শক্তি সেদিন ভর করেছিল।মিতালীর মুখ দিয়ে অসহায় গোঁঙ্গানী শব্দ বের হতেই দুর্গাদাসের হাতে বাঁধন আলগা হলেও কিশোরীর কোমল নরম গলায় যা ক্ষতি হবার হয়ে গেছিল।

দূর্গা মায়ের খড়বাঁশের কাঠামোর সামনে মিতালীর অচেতন ভুপতিত শরীরটা খানিকক্ষণ ফটফট করেছিল হয়ত তীব্র শ্বাসকষ্টে। চোখ দুটো বুজে গেছিল,আর খোলেনি। বিচলিত দুর্গাদাস। দেবীমন্ডবের দেওয়ালের হুকে, বিসর্জনের সময় প্রতিমা বাঁধনের জন্য রশি রাখা থাকত।তাই দিয়ে আজ সাহসী বলিষ্ঠ নাস্তিক দুর্গাদাস নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে এমনভাবে মন্ডবের ছাদের হুক থেকে মিতালীর শব ঝুলিয়েছিল, যেন মিতালী গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

কৌশল গত পারদর্শীতায় পটু দুর্গাদাস পাশে একটা টুলকে উল্টে রেখেছিল, মিতালী গলায় দড়ি দেবার পর ঠেলে ফেলার মত যেন মনে হয়। তার এই পরাক্রম একক বিপ্লব নির্বিঘ্নে যখন সম্পন্ন হল, রাত এগারটা পেরিয়ে গেছিল। শীতের এত গভীর রাতে কোন মানুষের নজর পড়েনি।

মিতালীর শব পুলিশ নিয়ে যায়, কাটাছেঁড়া করা হল পোস্টমোর্টেম নামে, গ্রামে ফিরল পরদিন সকালে।কিন্তু কী সব অদ্ভুত কান্ড শুরু হয়েছিল ঐ দিন সন্ধ্যার সময় থেকেই। মিতালীদের বাড়িতে ছিল শ্মশানের নীরবতা, মা বোনের, কান্নায় ক্লান্ত। বিলাসের মা ও মিতালীর তিন বড় পিসি এসেছিল। দুর্গাদাসের কোন হদিশ ছিল না।আত্মহত্যা নয় খুন হয়েছে মিতালী প্রচার হতেই তার মনে ভীষণ ভয় ঢুকেছিল। 

অশৌচ বাড়ি বলে নয়! মিতালীর মা ও বোনেরা এদিন প্রতিজ্ঞা করে জীবনে দেবী দূর্গার মন্ডবে যাবে না।আর পূজোয় অংশ নেবে না।যে মেয়েটা এত দূর্গা মায়ের ভক্ত তার মৃত্যু হল কীনা,মায়ের সামনে,তাও নৃশংস ভাবে খুন হল ! এ মন্ডবে মা দুর্গা বা ঈশ্বর নেই।

হয়ত তাই ! না হলে,ঐ দিন পাড়া কজন মেয়ে বৌ যারা মিতালীর মত নিত্য সন্ধ্যায় দেবীর খড়বাঁশের কাঠামোর সামনে ধূপ ধুনো দিয়ে ,প্রদীপ জ্বালিয়ে আসত,তারা গভীর ব্যাথিত হলেও সন্ধ্যার সময় এদিনও দেবীর খড়বাঁশের কাঠামোর কাছে প্রদীপ জ্বালাতে যায়। একটা হালকা হাওয়া অনুভব করে যেন মন্ডবের ভিতর থেকেই হাওয়াটা আসছে, প্রদীপ বাব বার নিভে যাচ্ছিল।সেই সঙ্গে দীর্ঘশ্বাস মত কান খাঁড়া করলে মাঝে মাঝে কিছু যেন শব্দ কানে আসছিল। গায়ে কেমন কাঁটা দিচ্ছিল সঙ্গে একটা আতঙ্ক গা ছম ছমে ভাব।

চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে তারা সেদিন বাড়ি ফেরে।এই অদ্ভুত অলৌকিকতা ভাবতেও সারা গায়ে ভয়ে কাঁটা দিচ্ছিল। পরদিন থেকে দেবীর যে কাঠামোর আর কাছে নয়,দুরে মন্ডবের সম্মুখে প্রশস্ত বারেন্দা তার শেষ প্রান্তে রাস্তা থেকেই কোন রকম প্রদীপ জ্বেলে,দেবীর উদ্দেশ্য প্রনাম জানাত।দেবীমন্ডবে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে সাহস পেতো না।

সন্ধ্যার পর ছেলেদের ক্যারাম আর বয়স্ক দের তাস দাবা খেলা হৈহুল্লোর আপনা আপনি বন্ধ হয়েছিল।আর পান্নালাল মাস্টার সকালে দূর্গামন্ডবে সামনে প্রশস্ত বারেন্দায় বাচ্চা ছেলেমেয়েদের পড়ানো বন্ধ করে দেয়।নিজের সংকীর্ণ বাড়ির বারেন্দায় তাদের পড়াত।

হঠাৎই এমন সব ঘটনা দেবীমন্ডবের সাথে দুরত্ব সাধারণ ভক্তদের মধ্যে বাস্তবে ঘটেছিল। কিন্তু এতটা দুর্গাদাসের বাড়ির মানুষ জানত না। দুঃখী পরিবারকে তারা এইসব আকস্মিক ঘটনা জানায় নি। কিছুদিন পর দূর্গাদাস পুলিশ ম্যানেজ করে তার বাড়ি ফিরেছিল। পুলিশের আনাগোনা বন্ধ হয়েছিল। পাড়ায় দূর্গাদাসের গ্রহনযোগ্যতা তখন তলানিতে,নিজেও দুরে দুরে থাকত। দূর্গাদাসের প্রতি স্ত্রীর ও ছোট তিন কন্যার আচরণ কেমন পাল্টে গেছিল। ভীতি আর সন্দেহের চোখে দেখত। অপরাধী নিষ্ঠুর! নিজেদেরকে দূর্গাদাসের কাছ থেকে কেমন গুটিয়ে রাখত।

তার বৈপ্লবিক সবজান্তা মনোভাব, নাস্তিকতা জেদ ও বামপন্থী অসহিষ্ণুতা ও কঠোরতা, কিছু দেশে শাসক রাষ্ট্রনেতারা সফল হলেও সংসার পরিবারে যে অচল সে অনুভব করছিল ।শুধু কী পরিবার ! পাটির কিছু কমরেড যারা সম্পূর্ণ মগোজ ধোলাই হয়নি।ভারতের ধারায় পারিবারিক ঐতিহ্যে তখনও বিশ্বাস রাখত,তারাও তাকে এড়িয়ে চলত।অবশ্য বাঘা বাঘা নেতাদের তেমন হেলদোল ছিল না।হোক না খুনী! এমন তো কতই হয় !


শ্রেণী সংগ্রামে, শ্রেণী শত্রুদের খতম দোষের নয় বরং গর্বের। আর এমন বীর সাহসী মানুষ জীবনে একটু ভুলচুক করতেই পারে।দুর্গাদাস হয়ত সেটাই করেছিল। একটু শাসন বেশী হয়ে গেছিল। হয়ত মানসিক ভাবে অস্থির ছিল,এটাই ছিল দলের বড় বড় নেতাদের দুর্গাদাসের প্রতি মূল্যায়ন।নিজেদের যেকোন কাজকে যেন তেন প্রকারে সঠিক প্রমাণের প্রয়াস।

দূর্গাদাস চাইলেও মিতালীর মৃত্যুর পর বিলাস আর মামার বাড়িতে থাকত না। দুরের কিছু ছাত্র আর দুজন শিক্ষক স্কুলের বোডিং এ থাকত। বিলাসও সেখানেই থাকতে শুরু করল। মামী, মামাতুতো বোনেদের সাথে বিলাসের সম্পর্ক ভালছিল। সে তো দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, মিতালীর মৃত্যুর পর পরই বিলাস তার মাকে মামার বাড়ি নিয়ে এসেছিল।খুব কেঁদেছিল।মামীর হাত দুটো জড়িয়ে এই অঘটনের কারণ জানতে চেয়েছিল । খুব চাতুরতার সাথে নিজেকে নির্দোষ ধোয়া তুলসীপাতা প্রনাম করার অভিপ্রায়।

চতুর বিলাস এমন ভাব দেখায়,মিতালীর গর্ভবতীর কথা সে যেন জানতই না। আর বিলাসের কাম বাসনায় মিতালী গর্ভবতী, সে ই মিতালীর মৃত্যুর জন্য পরোক্ষে দায়ী কীনা, মামীও ঠিক জানত না।দূর্গাদাস মিতালীর জীবনের শেষ কথা ,তার গর্ভে বিলাসের সন্তান, মা দূর্গার সামনে বলেও ,তা সে বিশ্বাস করুক বা না করুক,অন্য কাউকে এমন কী নিজের স্ত্রীকেও বলেনি।

বিলাস আত্ম অনুশোচনা বা বিবেকের তাড়নায় বিদ্ধ ছিল। আবার যদি তার মোহে গর্ভবতী হয়ে কাঁচা বয়সে মেজ মামাতুতোবোন চৈতালী মামার হাতে প্রান না হারায়! সেই সতর্কতায় খুব দরকারে মাঝে মাঝে দিনের বেলা স্কুল থেকে মামার বাড়ি যদিও আসত , রাত্রিবাস করত না।

বিলাসের মা ,মালতী আদরের ভাইঝি মিতালীর এই মৃত্যুতে খুব দুঃখ পেয়েছিল। মিতালীর মৃত্যুর পরদিন এবাড়ীর দুঃখের সাথী হয়ে মা থাকলেও, বিলাস মামার বাড়িতে রাত কাটায়নি । তখন বার্ষিক পরীক্ষার পর স্কুলের ছুটি চলছিল।পাহাড়া দেওয়ার বাহানায় সে তার গ্রামের বাড়িতে বিকালে মাকে মামার বাড়িতে রেখে চলে গেছিল। মায়ের চোখ ও অন্তর সব বুঝেছিল।পুত্র বিলাসের মন ও মুখচোখে অপরাধবোধ ফুটে উঠেছিল

 মামার বাড়ি থেকে সেই দিনেই পালানো কারন হয়ত যদি পুলিশ জেরা করে,বা মিতালীর স্মৃতি! তার শেষ আবেদন এড়িয়ে, বিপদে ফেলে এত বড় অঘটন সে নিজেও ভাবেনি। নিজেকে অপরাধী সাথে সাথে মনে সুপ্ত ভয় হচ্ছিল, মিতালীর এখনও শব, লাশ কাটা ঘরে, পরদিন সকালে তার অন্তিম দেহ গ্রামে আনার কথা।প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন জ্ঞাতিরা ছিল শহরের হাসপাতাল আর পুলিশের যোগাযোগে।

বিলাস নিজেকে আর জড়ায় নি,মিতালীর কাটা ছেড়া মৃত দেহ, হয়ত দুঃখে দেখতে চায়নি । আবার তার মনে একটা ভয়ের সঞ্চারও হয়েছিল মিতালীর অতৃপ্ত আত্মা এখনও সংক্রিয়!তার প্রতি আক্রোশে আবার প্রতিহিংসা নেবে না তো! মালতী সব বুঝলেও চুপ ছিল,একমাত্র তার ভবিষ্যত ছেলের অপরাধ হজম ছাড়া উপায় কী ! মালতী এটাও হাবেভাবে বুঝেছিল যে তার বৌদি,তার মেয়ের কুমারীকালীন গর্ভধারনের জন্য বিলাসকেই সন্দেহ করছে।কিন্তু মিতালী বলেনি,আর মিতালী মা দূর্গার সামনে বিলাসের জন্য তার এই কুমারীকালীন মাতৃত্ব বললেও সেটা দূর্গাদাস গোপন করেছিল। আর কেউ সাক্ষী ছিল না। কমিউনিস্ট দূর্গাদাস, ঈশ্বর দেবদেবীর প্রতি বিশ্বাসই রাখত না। তাই বেমালুম সত্যটা চেপে গেছিল। সেদিন গ্রামের শ্মশানে ষোল বছরের কিশোরীর কাটা ছেড়া পোস্টমোর্টেমের পর অসাড় শরীরটা দাহ করা হয়েছিল। মা বোনদের সাথে আত্মীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশীরা খুব কেঁদেছিল কিন্ত দুর্গাদাসের কোন হদিশ ছিল না।

মালতী আর দেরী করেনি,বিলাসের বিয়ে দিয়েছিল বিলাস আর যাইহোক মনমরা থাকত।মনের মত সুন্দরী স্ত্রী পেলো,শিক্ষিত গ্রাজুয়েট আবার ধনীর কন্যা,অনেক পণ,স্ত্রীকে সোনার গহনায় সারা শরীর শ্বশুর ভরিয়ে দিয়েছিল।তার জন্য দামী মোটর সাইকেল। শ্রাবণ শেষে ভরা বৃষ্টিতে বিয়ে হয়েছিল। এবছর দূর্গা পুজা আশ্বিনের একবারে প্রথমে। ভাদ্র মাসের প্রথমে বিলাস নতুন বৌকে নিয়ে নতুন মোটর সাইকেলে মামার বাড়ি আসছিল। ভেবেছিল এবার আর রাত্রিবাস অসুবিধা নেই। সে বিবাহিত স্ত্রী সঙ্গে, মামাতুতো বোনেদের কাছে তার অস্বস্তির আর কারণ নেই।

অনেক পথ,না হলেও ত্রিশ কিমি।বিলাস ভেবেছিল এবার সে দৈনিক মোটর সাইকেলে মামার গ্রামের স্কুল যাতায়াত করবে।নতুন রূপসী বৌকে একা বাড়িতে রেখে সে স্কুলের বোডিং ঘরে আর থাকবে না।ত্রিশ কিমি রাস্তা! বড়জোর মোটর সাইকেলে আধ ঘণ্টার পথ! কিন্তু এদিন তার ভাগ্যই মন্দ। বর্ষায়,পাকা রাস্তার অবস্থা করুণ।এমন হাল রাস্তার গর্তে জল ঘমে ছোট ছোট জলা, দুটো বাস এমন বিপরীত দিক থেকে এসে মুখোমুখি পাশাপাশি ছিল, একদিকে পুকুর অন্যদিকে ড্রেন, নড়াচড়া করলেই উল্টে যেতে পারে। তার জেরে দুদিকে বাস ট্রাক্টর লরি ছোট গাড়ি, মোটর সাইকেল জ্যামে আটকে।

ধীরে সুস্থে রবিবার বিকেলের পর স্ত্রীকে পিছনে বসিয়ে শ্বশুরের দেওয়া গর্বের মোটর সাইকেলে বিলাস মাকে প্রনাম করে রওনা দিয়েছিল,মামার বাড়ির উদ্দেশ্যে। ভাঙ্গাচোড়া পিচ ওঠা বাস রাস্তার হাল এতটা জঘন্য ধারনা ছিল না।এই পথে বাসে যাতায়াত করত তবু সপ্তাহে মাত্র একদিন। প্রায় কর্দ্মাক্ত নামেই পাকা রাস্তা, নতুন মোটর সাইকেল সাবধানে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে কাদা নোংরা যতটা সম্ভব এড়িয়ে পাক্কা তিন কিমি ঘুর পথে এক গ্রামের ভিতর বিকল্প পথে হেঁটে সে বেশ ক্লান্ত,একটা গঞ্জে উঠল, শ্রাবন্তী অনেকক্ষণ হেঁটে সে যেন বেশী ক্লান্ত!রাস্তার ধারে একটা মিষ্টির দোকানে বসে কাটাল অনেকক্ষণ, মিষ্টি খেলো, মামার বাড়ির জন্য মিষ্টি কিনল ।

যেখানে মামার বাড়ি পৌঁছানোর কথা সাড়ে ছটা কি সাতটা,বিলাস ও তার আদুরে বৌ মামার বাড়ি এল, তখন রাত সাড়ে আটটা। নতুন বৌকে আদর আপ্যায়ন যত্ন করতে অনেক সময় গেল।বিয়ে বাড়িতে নিয়ম রক্ষা আর কর্তব্য রাখতে দুদিন মায়া তিন মেয়েদের নিয়ে বিলাসদের বাড়ি গেছিল। মিতালীর মৃত্যুর সাত আট মাস পর এ বিয়ে ! সখ আনন্দ তাদের ছিল না।ফুলশস্যার পরদিনেই সকালে তিন মেয়ে নিয়ে মায়া চলে আসে শরীর খারাপ আর মেয়েদের স্কুল এই বাহানায়।নতুন বৌয়ের সাথে ভালো আলাপ হয়নি।মন থেকেই ইচ্ছা হচ্ছিল না, মিতালীর বিষন্নময় স্মৃতি তাদের অন্তর জুড়ে, আর বিলাস তার জীবনের কাল স্বরূপ ওরা মনে করত ।আজ বাড়িতে এসেছিল তাই অনেকটা ভদ্রতা আর কর্তব্য পালনে আলাপ পরিচয় করতে কিছু সময় গেল।

মামাশ্বশুরের বাড়ি ঢোকার মুখে দূর্গা মন্ডবের মায়ের বাঁশখড়ের কাঠামোর একমেটে ছোঁয়া লাগা দেখেছিল শ্রাবন্তী।এত পরিশ্রমে ভাদ্রমাসের গুমোট ঘেমে সারা শরীর,অন্তর্বাস ভিজে সপসপে। কেমন অপরিস্কার অস্বস্তি সারা শরীর জুড়ে সে অনুভব করছিল। মাথা না ভিজিয়ে সুগন্ধি সাবানে বাথরুমে বহুক্ষন ধরে স্নান সেড়ে ,বাথরুমেই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন শাড়ি বদলে, ধার্মিক মা দূর্গার বড়ভক্ত শ্রাবন্তী হ্যারিকেন হাতে দূর্গা মন্ডবের উঠে মায়ের একমেটে প্রতিমার সামনে ভুমিষ্ঠ প্রনাম করে শ্রাবন্তী মামাশ্বশুরের বাড়ি ফিরছিল।

এত রাতে দূর্গা মন্ডবের পাশ দিয়ে একা কোন পুরুষ মানুষ যেতে ভয় করে। মন্ডবের উপর সিঁড়ি দিয়ে উঠে দেবী কাঠামোর কাছে গিয়ে প্রনাম সন্ধ্যার সময় কেন! দিনের বেলাতেও পাড়ার মেয়ে বৌরা সাহস পায়না। দুর্গাদাস কমিউনিস্ট নাস্তিক সাহসী মানুষ এইসব গ্রাহ্য করে না।একদিন রাত তখন দশটা, তার মোটর সাইকেল স্টার্ট ঠিক বাড়ি ঢোকার মুখেই দুর্গা মন্ডবের সামনেই এমন বন্ধ হল। অনেক চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শেষে বাধ্য হয়ে ঠেলে ঠেলে বাইক বাড়ি আনল। কিন্তু পরদিন আপনা আপনিই সেই বাইক স্টার্ট নিল।

 

দুর্গাদাসের এটা কিছু মনে হয়নি।দুদিন পর আবার একই অবস্থা! বাড়ির সদরের দরজা লাগানো থাকলেও ভিতর থেকে খিল থাকে না। বিপ্লবী মানুষ দেশ উদ্ধারে রাতে মিটিং করে মাঝে মাঝেই ফিরতে দেরী হয়।তাই ঘরের বারান্দার চাবি সঙ্গেই নিয়ে যায়। সদর খুলে সে ভিতর থেকে খিল দিয়ে ঘরের বারান্দার চাবি খুলে দোতলার বাড়ির নিচের বারান্দায় ঢোকে।বারান্দায় মোটর সাইকেল স্ট্যান্ড করে। হাত মুখ ধুয়ে একতলা রান্নার ঘরে খাবার খেয়ে দোতলায় নিজের ঘরে শোয়।

মিতালীর মৃত্যুর পর তার তিন ছোট বোনের আতঙ্ক ভয় এতটাই ছিল, মা তাদের সাথে এক ঘরেই শয়ন করে। স্বামীর প্রতি মনে ক্ষোভ ঘৃনা জন্মায়,নিজের মত চলত।দুর্গাদাসের কিছু করার ছিল না।এমনি পুলিশের তদন্ত যাই হোক! কন্যা ঘাতক বদনাম হয়েছিল, পাড়াতে সমাজে, আর পাটির মধ্যে কিছু মানুষ তাকে এড়িয়ে চলে। দুর্গাদাসের অন্তঃসত্ত্বা কুমারী মেয়েকে শুধুমাত্র এ অপরাধের জন্য হত্যা মেনে নিত না।

এছাড়াও বাড়িতে দূর্গাদাস আর কোন অশান্তি করলে স্ত্রী বলেছিল বাপের বাড়ি মেয়েদের নিয়ে চলে যাব। তার সচ্ছল বাবার এ বিষয়ে পূর্ণ সমর্থন ছিল।এমন কঠোর বার্ত্তা ভালোমানুষ স্ত্রীর কাছে পাবে দুর্গাদাসের মাথাতেই আসত না। পাটি করে বেশী রাতে এলে সে অনেক রাতে খেলেও ,স্ত্রী আগেই মেয়েদের সাথে রাত নটা হলেই খেয়ে নিতো।

স্বামীর প্রতি পূর্বে একটা দরদ থাকলেও মিতালীকে স্বামী খুন করেছে এটা মোটেও মেনে নিতে পারত না। এক সংসারে থাকা এই অবধি। ধার্মিকভাবটাই মায়ার অনেক কেটে গেছিল।তিনটে মেয়ের জন্যই তার বাঁচা। ঘৃনা দুঃখে নিজের জীবন শেষ করতে চাইত। আত্ম গ্লানিতে ধিক্কারে অনুসচোনায়, ভাবত মা হয়েও মেয়েকে বাঁচাতে পারলাম না।কেন সেদিন সে মেয়ের সাথে দৃর্গা মন্ডবে গেলাম না!কেন সেদিন সে মা দূর্গার উপর এত ভরসা করেছিলাম! 

মায়া নিজেকে ক্ষমা করতে পারত না।অহরহ তার মিতালীর মুখ আর সেদিনের করুন আবেদন বাবাকে কিছু বলো না মা! কেন সে শোনে নি ! আফসোস আর মনের হতাশা যন্ত্রণা কুঁড়ে কুঁড়ে খেতো।কেনই বা সে আজকের মত তার স্বামীর দাম্ভিকতা নাস্তিকতা আর সব কিছুতেই বিদেশের দাসত্ব অন্ধ অনুকরণ প্রথম থেকেই বিরোধ করেনি!কেন কমিউনিস্ট পার্টি সিম্বলে ভোট দিয়েছিল!সংসারের প্রতি মায়া মমতাহীন একটা বাউন্ডলে কী একটা ভ্রান্ত আদর্শের জন্য তাদের জীবন অতিষ্ঠ নরকসম করেছে মায়া মনে করত।

দুর্গাদাস পরিস্থিতির চাপে আগের জেদ দেমাক অহংভাব ছেড়েছিল। নিজের সমস্যার কথাও সে বাড়িতে বলত না।সেদিন কিন্তু পারেনি রাতে মোটর সাইকেলে আসার সময় ঐ এক স্থানেই স্টার্ট বন্ধ হল,ঠেলে ঠেলে দরজার কাছে এসে দরজা ঠেলে খোলা পায় না।অনেকক্ষণ ঠেলাঠেলির পর ভাবল স্ত্রী ভুল করে হয়ত ভিতর থেকেই খিল দিয়েছে।যদিও এমন ভুল হওয়ার কথা নয় তবু নিরুপায় হয়ে খুব জোরে কড়া নাড়তেই দরজা খুলে গেল। কিন্তু কেউ নেই। দুর্গাদাস বিভ্রান্ত তবু একটু সাহস করে দরজার খিল ভিতর থেকে লাগিয়ে ঘরের বারান্দার তালা,চবিতে খুলতে গেলে তালা খুলছে না।দুর্গাদাসের কেমন বিদ্রোহী বিপ্লবী মনে ভয় হচ্ছিল।স্ত্রীকে একটু ডাকা ডাকি করতেই স্ত্রী উঠে এসে চাবি খুলে দিল। কোন কথা বলল না।দুর্গাদাস জিজ্ঞেস করল, আমার চাবিতে খুলল না, আর তোমারটায় তালা খুলল কেন! তালাটা কী পাল্টেছ!

গিন্নি উত্তর দিল না।দুর্গাদাসের সন্দেহ হল,এ তো তার স্ত্রীর মত চলন নয়,পোষাকে উচ্চতায় কেমন ভিন্ন ভিন্ন, দুর্গাদাস ভয়ার্ত্ত জোর চিৎকার করছিল, দোতলার উপর থেকে স্ত্রী আর তিন কন্যা ছুটে নেমে এসেছিল।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy