কৃষ্ণদাসী [পর্ব-৬]
কৃষ্ণদাসী [পর্ব-৬]
রুহানা পিসিমনির রুমে যেতেই পিসিমনি অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে বলল , " দাদার রুমে গেছিলেনা ? কি বলল দাদা । "
রুহানা (মুখ বেঁকিয়ে ) : আঙ্কেলের কথা বাদ দাও ....পাল্টি খেয়ে গেছে ।
অলঙ্কারা : ঠিকই বলেছো । ঐ মেয়েটা কী যাদু করল কে জানে ?
রুহানা : বাদ দাও পিসিমনি ....আমার মাথায় একটা দারুণ প্ল্যান আছে .....
অলঙ্কারা : কী ...কী প্ল্যান ??
রুহানা : সেটা তো সারপ্রাইজ ।....but তার আগে আমি আর আমার ড্যাডি ১৫ দিনের জন্য লক্ষ্নৌ যাব ....business purpose এ । আর আমার না থাকা কালীন প্লিজ তুমি কিশোরী র বিরুদ্ধে কোনো কিছু করো না .....please pisimoni ,পরিবেশ যেন একদম শান্ত থাকে .....যাতে কিশোরী খুব comfort and secure feel করে ....
অলঙ্কারা : But....how can I tolerate her ?..I..I can't.....
রুহানা : Please.... please pisimoni it's my request....
অলঙ্কারা : ঠিকাছে.....তাই হবে ।
রুহানার প্ল্যানের দৌলতে শ্বশুর বাড়িতে ভালোই দিন কাটছে কিশোরীর । কয়েক দিনের মধ্যেই বাড়ির লোকেদের নিজের মতো করে চিনে আর বুঝে নিয়েছে ও। বড়মা র তো কোন তুলনাই হয় না । দাদাভাই আর বৌদিদি তো একেবারে নিজের দাদা দিদির মত । আর বড়বাবুর তো বাইরেটা একেবারে আধুনিকতায় মোড়া আর ভিতর টা ততটাই সংস্কারী । কাকীমণি আর কাকাই ও খুব ভালো আর ওদের মেয়ে মানে কিশোরীর শুভাঙ্গী দিদি তো একেবারে কিশোরীর বেস্টফ্রেন্ড । যদিও শুভাঙ্গী শোভনের বোন হয় তাও কিশোরী বয়সে ছোট বলে শুভাঙ্গী কে দিদি বলেই ডাকে । শুধু পিসিমনির সাথে ই তেমন একটা সখ্যতা হয়ে ওঠে নি কিশোরী র ।
এই বাড়ির আরো একজনের সাথে ও সম্পর্কের অভিজ্ঞতা টা ভালো নয় কিশোরীর ।সে শোভনের নিজের ভাই সৌভিক , কিশোরীর ই সমবয়সী । কিন্তু প্রথম দিন থেকেই কিশোরী দেখেছে ওর নজর , কথাবার্তার ধরণ একটু খারাপ ধরণের ।শোভন কে এই বিষয়ে বলা হয়ে ওঠেনি কিশোরী র । হয়তো ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পর্ক খারাপ করতে চায় নি বলেই আর শোভনের কানে এই কথাটা তোলেনি ও ।
এই ক'দিন রাইমুরারীর সাথে কথা হয় নি কিশোরীর ।রাইমুরারী সর্বত্র বিরাজমান , তাও হয়তো সিংহরায় হাউসে তারা প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার অভিমানেই কিশোরী কে দেখা দেননি তারা । তাই কিশোরী ভেবেছে ওর ঘরেই রাই মুরারীর একটা ছোট বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করবে । ঐ বিষয়েই বড়মা র সাথে কথা বলার জন্য বড়মার ঘরে গেল কিশোরী । গিয়ে দেখে ওখানে বৌদিদি আর শুভাঙ্গী ও রয়েছে ।
বৌদিদি : কিশোরী, আসো । ভালো হয়েছে তুমি এসেছো ।
বড়মা : আয় । শুভী কে দিয়ে তোকে ডাকতেই পাঠাচ্ছিলাম ।একটা কাজ করতে হবে তোকে ।
কিশোরী : কি কাজ বড়মা ?
বড়মা : কাল তো সরস্বতী পুজো । আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পুজো খুব বড় করে হয় । রাসের দিন তুই খুব সুন্দর রাসমঞ্চ সাজিয়েছিলিস , কাল পুজোতে বিগ্রহ ,আসন সাজানো , আলপনা দেওয়া- সব তোকে করতে হবে ।
কিশোরী : ঠিকাছে বড়মা , তুমি চিন্তা করোনা ।
শুভাঙ্গী : আমিও তোমায় হেল্প করে দেব ।
বৌদিদি : তুমি জানো, কেন এই বাড়িতে সরস্বতী পুজো এত বড় করে হয় ?
কিশোরী : না , বৌদিদি ....
শুভাঙ্গী : তোমার ছোটসাহেব ....মানে আমার ছোটদা একমাত্র সরস্বতী ঠাকুর কেই খুব বিশ্বাস করে ....আর এই পুজো তে ছোট থেকে ই ও খুব ইনভলভ্ড.....
বড়মা : ....তাই এই পুজো টা এত বড় করে হয় ......ও বিদেশে থাকা কালীন ও ওর ফ্ল্যাটে সরস্বতী পুজো করত.....
কিশোরী : ওহ ....আচ্ছা বড়মা ভাইদের মধ্যে তো সৌভিক তো সবচেয়ে ছোট , তাহলে তোমার মেজ ছেলে কে কেন ছোট সাহেব বলে সবাই ?
বড়মা : আসলে শুভায়ন আর শোভন তো পিঠোপিঠি ছিল .........সবাই ওদের বড় সাহেব আর ছোট সাহেব বলত । আর তার অনেক পরে তো সৌভিক হয়েছে........তাই অত বছর পরে ডাক টা আর বদলায় নি ।
কিশোরী : ওহ । আচ্ছা বিগ্রহ আনতে কে যাবে ?
শুভাঙ্গী : আমি আর জেঠুমনি ।তুমি যাবে ? আমি কথা বলব জেঠুমনির সাথে?
কিশোরী : হুম ।
বড়মা : আমি চাই যে কিশোরী নিজে ওর শ্বশুর মশাই কে কথাটা বলুক ।
কিশোরী : আমার তো খুব ভয় করে বড়মা ।
বড়মা : এই ভয়টাকে ই তো কাটাতে হবে ।
এমন সময় বড়বাবু ঘরে ঢুকল ।সবাই উঠে দাড়াল । এদিকে বড়মা কিশোরী কে ঈশারা করছে কথাটা বলার জন্য .........শেষমেষ কথাটা কিশোরী বলেই ফেলল - " বড়বাবু... বড়বাবু ব.....বলছিলাম যে আমি কী আপনাদের সাথে যেতে পারি বিগ্রহ আনতে? "
বড়বাবু (রেগে) : তোমার কি এই বাড়ির বৌ হয়ে থাকার ইচ্ছে নেই ?
কিশোরী : না .... ঠিকাছে .....আমি বাড়িতেই থাকবো .....
বড়বাবু : আমার ছেলের বৌ হিসেবে তো আমায় বাবা বা পাপা বলে ডাকা উচিত ছিল ......কি ভিখারি দের মত ডাক এগুলো ??
কিশোরী (মনে মনে স্বস্তি পেয়ে ) : ভুল হয়ে গেছে বাবা .....
বড়বাবু : যারা যারা যাবে ১১ টার মধ্যে রেডি হয়ে নিও .....
একটা ফাইল বার করে বড়বাবু চলে গেল ।
বড়মা : দেখলি তো.... তাহলে .....এত ভয় পাচ্ছিলিস কেন ?
কিশোরী : ওহ বড়মা , আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যেটা বলতে এসেছিলাম ...........বলছি কি .......আমি না আমাদের ঘরে রাইমুরারীর একটা বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করতে চাই.......যদি তুমি অনুমতি দাও তো ।
বড়মা : আমার কোনো অসুবিধা নেই ........কিন্তু শোভন কি রাজি হবে ?
সেদিন সন্ধ্যা বেলা শোভন বাড়ি ফিরতে না ফিরতেই কথাটা তোলে কিশোরী ।
শোভন : তুমি তো জানো ই .......আমি এসব একেবারে বিশ্বাস করি না ......so please ....এ সব করো না আমার ঘরে.....
কিশোরী (অভিমান করে ) : ওহ .....এটা আমার ঘর না...তাই তো ....
শোভন (এগিয়ে এসে ) : আমিই যখন তোমার ....আমার সবকিছুই তো তোমার ।
কিশোরী : তাহলে কেন রাজি হচ্ছেন না ? আপনি ও তো মা সরস্বতী কে বিশ্বাস করেন ....তা হলে বাকি ভগবানদের কেন না ?
শোভন : দেখো আমার কাছে সরস্বতী শুধু মাত্র ভগবান বা দেবী নয় । আমি ওকে আমার শিল্প , আমার জ্ঞান , আমার বিদ্যার প্রাণকেন্দ্র মনে করি ।আর ওকে রেসপেক্ট করার জন্য একটা স্পেশাল ডে হিসাবে ওকে পুজো করি ......
কিশোরী : আমিও তো রাই মুরারি কে আমার প্রেম , আমার জীবনীশক্তির প্রাণকেন্দ্র মনে করি .....তাহলে ? রাজি হয়ে যান না .....প্লিজ ।
শোভন : Please Kishori. আমি আজ পর্যন্ত তোমার সব কথা কে মর্যাদা দিয়েছি .....but আজ পারলাম না .....sorry .
কিশোরী (উত্তেজিত হয়ে ) : কী এমন আছে যার কারণে আপনি ভগবান কে মানতেই চান না ।
শোভন : কিশোরী আমার পাস্টে কিছু একটা আছে ......যার জন্য আমি তোমাদের এই ভগবান - দেবতা এদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারিনা । But I don't want to recall the past .
কিশোরী : কিন্তু আমি তো জানতে চাই ......সেটা কী ?
শোভন : দেখো ......past is past .আমি বারবার বলছি .........I don't want to recall that. Please জিদ করো না .......আমি সবসময় তোমার সব কথা রাখি ঠিকই ......বাট এই বারে .....I am really sorry ......
কিশোরী : না আপনাকে আজ বলতেই হবে .....
শোভন (রেগে গিয়ে ) : It's too much......please leave me alone now.......
কিশোরী (একটু রাগ করে ) : ঠিকাছে ....
রাগ করে বাইরে বেরিয়ে এল কিশোরী । কিছুক্ষণ পর ওর নিজের ই মনে হল , " না আজ আমি একটু বেশিই জিদ করে ফেলেছি......নয়তো এটা তো সত্যিই যে ছোট সাহেব কখনও আমার মনে আঘাত করতে চাননা........তবে ছোট সাহেবের ভুল ভাঙাতে আমাকে জানতেই হবে কী এমন ঘটনা আছে ছোট সাহেবের জীবনে .....কিন্তু ছোট সাহেব কে এই নিয়ে আর বিরক্ত করা ঠিক হবে না .....কে দেবে আমার প্রশ্নের উত্তর ??..."
বেশ কিছু ক্ষণ ভেবে উপায় মাথায় এল কিশোরীর .......বড়মা ....বড়মা পারবে ওর প্রশ্নের উত্তর দিতে । তক্ষনি কিশোরী বড়মা র ঘরে গেল .....ওর কাঙ্ক্ষিত উত্তর পেতে ।
( ...... ক্রমশ)
এটা একটা ধারাবাহিক গল্প,এর বিষয়বস্তু :
মন্দিরে পালিত কিশোরী বড় হওয়ার সাথে সাথে উপলব্ধি করেছে তার ঐশ্বরিক সংযোগ ।ভাগ্য ওকে মন্দিরের আঙিনা থেকে নিয়ে এল জমিদার বাড়ির অন্দরমহলে।কিন্ত হঠাৎ ই ঘটল ওর অকালমৃত্যু।কে ছিল এই খুনের পিছনে?এই শত্রুরা লৌকিক জগতের না অলৌকিক জগতের?কে নেবে এই মৃত্যুর প্রতিশোধ?সব উত্তর পেতে পড়ুন ভালোবাসা , রহস্য আর অলৌকিকতায় ভরা এই ধারাবাহিক গল্প "কৃষ্ণদাসী"।