PRITTHISH SARKAR

Drama Fantasy Thriller

4.0  

PRITTHISH SARKAR

Drama Fantasy Thriller

কৃষ্ণদাসী (পর্ব-৭)

কৃষ্ণদাসী (পর্ব-৭)

7 mins
367


 বড়মার ঘরে যেতে গিয়ে হঠাৎ ই রুহানা র সঙ্গে দেখা হলো কিশোরীর ।  


রুহানা   (হেসে)   : কেমন আছো কিশোরী ?


         রুহানার এত সুমিষ্ট আচরণে বেশ অবাক হল কিশোরী । তাও মাথা নেড়ে বলল , " ভালো । আপনি লক্ষ্নৌ গেছিলেন না ? "


রুহানা         :  হ্যাঁ । ১৫ দিনের ট্রিপ ছিলো....বাট আরো ১০ দিন এক্সটেন্ড করল....আজ সকালে ই ফিরলাম .......আচ্ছা একটা কথা বলবো তোমায় ?


কিশোরী       : বলুন ?


রুহানা        :  দেখো ....আমাদের মধ্যে আগে যা হয়েছে , সেগুলো প্লিজ ভুলে যাও ।আমি চাই না আমাদের মধ্যে কোনো তিক্ততা  থাকুক ......please....friend হবে আমার ?


কিশোরী       : না না আমার কোনো খারাপ ধারণা নেই আপনার বিষয়ে । আর আপনি যদি চান তাহলে অবশ্যই বন্ধু হব ......


রুহানা      :  (মনে মনে )    সত্যি ই কিশোরী ....you are too innocent....(মুখে) thank you Kishori....আর please এই বন্ধুকে আর আপনি করে বলোনা ..... তুমি করে বলো ।


কিশোরী  (হেসে)   : আচ্ছা ....এই বাড়িতে কখন এলে তুমি ?


রুহানা       : এই তো একটু আগেই .....সবার জন্য গিফ্ট এনেছি .....নিচে সবাইকে দেওয়া হয়ে গেছে..

......তোমাদের টা এই নাও.....ওপরে আঙ্কেল আন্টিকে দিয়ে আসি...।


কিশোরী  (হেসে)   :  ধন্যবাদ....চলো আমিও বড়মার ঘরে ই যাচ্ছি ।


রুহানা         :  হুম .....let's go 


           রুহানা আগে আগে আর কিশোরী পিছনে পিছনে সিড়ি দিয়ে উঠছিল । হঠাৎ ই সিড়ি তে পড়ে থাকা তেলের উপর পা পড়ল কিশোরীর । কিশোরী কে ধরতে গিয়ে বেচারা রুহানা নিজেই disbalanced হয়ে পড়ে গেল সিড়ি থেকে । যদিও খুব বেশি চোট পায়নি .....কিন্তু তাও কিশোরীর জন্যই রুহানা র এই অ্যাক্সিডেন্ট টা হয়েছে ভেবে খুব খারাপ লাগছিল কিশোরীর ।


           ডাক্তার ডাকা হলো ....মেডিসিন দেওয়া হল রুহানা কে । ঘটনাটায় সবার ই রুহানা র জন্য সমবেদনা , মর্যাদা অনেকটা বেড়ে গেছিল । ঠিক হল রুহানা এই ক'টা দিন (সরস্বতী পুজো, কিশোরী শোভনের ওয়েডিং পার্টি ) সিংহরায় হাউসে ই থাকবে .....তাতে ওর মনটাও ভালো থাকবে ........যতই হোক এই বাড়িতেই তো অ্যাক্সিডেন্ট টা হয়েছে.......এই বাড়ির ও তো কিছু দায়িত্ব আছে । কিন্তু এটা জানা গেল না যে তেল টা পড়ে ছিল কিভাবে । 


           এই সমস্ত ঝামেলা র মধ্যে কিশোরীর আর বড়মাকে জিজ্ঞাসা করে ওঠা হয় নি শোভনের ঐ অতীতের বিষয়ে .............এদিকে শোভন ও নিজের রুড বিহেভিয়ার -এর জন্য সরি বলে মানিয়ে নিয়েছে কিশোরী কে আর শুধু request করেছে যেন কিশোরী এই বিষয়ে আর কোনো প্রশ্ন না করে ওকে ....। কিশোরী ও ভেবেই নিয়েছিল ও আর শোভন কে এই বিষয়ে প্রশ্ন করবে না ........কারণ সেদিন সত্যিই..... ঐ ঘটনা টার প্রসঙ্গ ও যে শোভন কে এখনো কতটা কষ্ট দেয় - সেটা দেখতে পেয়েছিল কিশোরী ।


       ওদিকে কিশোরীর প্রতি রুহানার এত দরদ দেখে বেশ বিরক্ত হয়েছিল পিসিমনি । সুযোগ পেতেই রুহানা র ঘরে গিয়ে প্রশ্ন করল , " What are you doing Ruhana ? কেন বাঁচাতে গেলে ঐ কিশোরী কে  ? "


রুহানা   (মুচকি হেসে )    : cool down pisimoni......cool down . আমি বাঁচাবোনা ওকে? .....ও আমার শোভন কে কেড়ে নিয়েছে ......ওকেই তো আমি বাঁচবো .......ওর কতটা ক্ষতি আমি করতে পারি সেটা ওকে দেখাবোনা ? .....আর ওর বিশ্বাস তো আমায় অর্জন করতেই হবে ..........ওদের সম্পর্কের সুতোটা ছিড়তে তো ঐ সুতোটা কে ই শক্ত করে ধরতে হবে , তাই না ??


অলঙ্কারা  (পিসিমনি)  :  কি করছো ....কি বলছো কিছু ই বুঝছি না .....আচ্ছা ঐ তেল টা কোথা থেকে এল .......জানো ?


রুহানা      :  All are part of my plan pisimoni ......... পিসিমনি কিছু বুঝতে হবে না তোমায় .....তুমি যা চাও তাই হবে।


অলঙ্কারা     : আমি শুধু চাই তুমি শোভনের বৌ হও .........ঐ মেয়েটার পরিচয় দিতে লজ্জা হয় আমার .....


রুহানা      : Your wish must be fulfilled pisimoni.......don't worry...


          সরস্বতী পুজো র দিন আর তার পরের দিন খুব ধুমধাম হল সিংহরায় হাউসে । কোনো সরস্বতী পুজোয় যে এত ধুমধাম হতে পারে তা এর আগে কিশোরী র জানা ছিল না । সত্যিই খুব আনন্দ করেই পুজোর কাজ করেছিল কিশোরী ........তার ওপর এই রাজ্যের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি ই সেদিন আমন্ত্রিত ছিল । বলা যায়, ছোট্ট মন্দিরে পালিত কিশোরী এই সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠানের হাত ধরেই জীবনে প্রথমবার বৃহত্তর পৃথিবীর সামনে এসেছিল ।


             আজ কিশোরী -শোভনের বিয়ের এক মাস পূর্ণ হবে । আগামী কাল ওদের গ্র্যান্ড ওয়েডিং পার্টি । আজ অনেক গুলো কাজ কমপ্লিট করবে বলে ঠিক করেছে কিশোরী ।তাই ভোর চারটের সময় উঠে স্নান সেরে নিয়েছে । যেহেতু একমাস আগে রাইমুরারীর সামনে ই ওদের বিয়ে হয়েছিল, তাই আজকের দিনে ই রাই মুরারি কে প্রতিষ্ঠা করবে বলে ঠিক করেছে কিশোরী । ও জানে .....হয় তো ওদের ঘরে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেনা ......কিন্তু বড়মা অনুমতি দিলে বাড়ির ঠাকুর দালানে তো প্রতিষ্ঠা করতে পারবে । বড়মার ঘরে যাবে বলে ঘর থেকে বেরিয়েই বড়মার সাথে দেখা হয়ে গেল কিশোরীর ।


কিশোরী      :  বড়মা , তুমি ও উঠে গেছো ?


বড়মা        :  না ...না ....আমি তো জল খেতে উঠেছিলাম.....তোর চান ও হয়েগেছে...???


          বড়মা কে রাইমুরারীর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সব কথা গুলো কিশোরী ।


বড়মা        :  ঠিকাছে । তুই তাই কর.....কিন্তু .....


কিশোরী       :  কি বড়মা ?


বড়মা        :    আমি তোকে পুজোর কাজে সাহায্য করতে পারব না ...... আসলে শোভন এখন নয় বুঝতে শিখেছে .......কিন্তু তখন তো খুব ছোট ছিল ...অবুঝ ছিল , আমাকে কোনো পুজোর কাজ করতে দিতে চাইত না ...... তবে থেকে আমি ঠাকুর কে মন দিয়ে ডাকি ঠিকই কিন্তু কোন পুজোর কাজ করিনা .......আমি জানি ঠাকুর পাপ দেবেনা আমায় , মায়ের মন তিনি নিশ্চয়ই বুঝবেন .....দেখলিনা তোদের মন্দিরে গিয়েও সেদিন দেবঘরে ঢুকলাম না........


কিশোরী      :  ঠিকাছে বড়মা, আমি সামলে নেবো ......... তুমি আমায় শুধু বলো যে কেন ছোট সাহেব ঈশ্বর মানেন না ?


বড়মা        : দেখ মা...আমিও এই কথাটা বলতে চাই না কারণ হয়তো এতে আমার মাতৃত্বে প্রশ্ন উঠতে পারে..... তাও তোকে যেহেতু আমি আমার মেয়ে ই ভাবি , তাই বলছি... । আমি শোভনের biological mother নই .....সমাজ কথিত সৎমা আমি । তখন শোভন আর শুভায়ন খুবই ছোট । শোভনের ৫ বছর বয়স .....ও ওর ঐ মাকেও খুব ভালোবাসত ....কিন্তু হঠাৎ ই সে মারা গেল ....শোভন অনেক ডেকেছিল ঠাকুর কে .....কিন্তু ওর মা বাঁচেনি.....তবে থেকেই .....

(আর কথা বলতে পারছিল না বড়মা, গলা ধরে আসছিল তার )।তার পরে ওর বাবা আমায় বিয়ে করে......সবাই বলে আমি ওদের কে মানুষ করতে গিয়ে নিজের ছেলে টাকেই অমানুষ বানিয়ে ফেলেছি....। আমি এখন শুধু চাই যে শোভনের মধ্যে ঈশ্বর বিশ্বাস টা যেন ফিরে আসে ।


কিশোরী     : কেঁদো না বড়মা ......আমি কথা দিচ্ছি আজ ছোট সাহেব ঠিক রাইমুরারীর পুজোর সময় ঠাকুর দালানে আসবে ....


          কিশোরী আর কাকীমণি মিলে সব জোগাড় করে নিল । সবাই উঠে ও গেছে ঘুম থেকে 

শুধু শোভন আজ ছুটি নিয়েছে বলে এখনো ঘুমোচ্ছে । ইতিমধ্যে পিতলের রাইমুরারীর মূর্তি ও আনা হয়ে গেছে । পুজো করতে করতে গান ধরল কিশোরী -


বৈষ্ণব সেই জন পাশে থাকে আজীবন

পরেরও বেদন-ব্যথা জানে রে।

পরেরও তরে তার শত উপকারে,

পরেরও তরে তার শত উপকারে

গরব থাকে না কোনোখানে রে,

বৈষ্ণব সেই জন পাশে থাকে আজীবন

পরেরও বেদনব্যথা জানে রে।

সকল লোকেরও বন্দনায় রত

নিন্দা'কথা না জানে রে।

বিশ্বাসে অবিচল, সদভাবনায় মন

জননী ধন্য ধনমানে রে....


         সকলেই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিল সেই গান । সেই সময় ঘুম থেকে উঠে স্নান করছিল শোভন, কিশোরী এই অপরূপ কন্ঠস্বর আর এইগানের অপূর্ব সুন্দর লিরিক্স শোভন কেও আকর্ষণ করছিল । ও স্নান সেরে রেডি হয়ে ই চলে এল ঠাকুর দালানে ..... । সত্যি ই কিশোরী সক্ষম হল বড়মা কে দেওয়া কথা রাখতে ।


          সন্ধ্যা বেলা য় কেক কেটে 1month of wedding, cellebrate করা হল । শোভন কিশোরী কে কেক টা খাওয়া তে যেতেই কিশোরী বলে উঠল , "  না ছোট সাহেব ......আমি তো ডিমের খাবার খাই না ..." । কেকটা যে eggless - সেটা শুভাঙ্গী আশ্বস্ত করার পর কেকটা খেল কিশোরী ।


         কিশোরী কে একটু লেগপুল করার এই সুযোগ টা ছাড়ল না শোভন , কিশোরী র কানের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বলল ," তুমি তো জানতে কেকটা আমি অর্ডার দিয়েছি .......তোমার দেখছি আমার প্রতি কোন trust ই নেই... " । কিছু একটা উত্তর দিতে যাচ্ছিল কিশোরী কিন্তু সবাই ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে দেখে আর কিছু বলতে পারল না ।


           রুমে আসার পরে শোভন আরো একটা সারপ্রাইজ দিল কিশোরী কে ....একটা হীরের নেকলেস ।


কিশোরী     :  আবার এসবের কী দরকার ছিল বলুন ? বড়মা, বাবা , বৌদিদি, কাকীমণি কত গয়না দিয়েছে ....


শোভন       : বুঝলাম Mrs. Sinha Roy এখন অনেক গয়নার মালিক হয়ে গেছে .....আমার দেওয়া gift এর কোনো দাম নেই তার ...


কিশোরী      : আমি তা একবারও বলিনি .....আপনি আমায় এত ভালোবাসেন...এত খেয়াল রাখেন - এটাই আমার সব । আমি তো নিশ্চিন্ত যে কেউ এমন আছে যে সব বিপদে আমার পাশে থাকবে.....আমায় ভালোবাসবে....


❤ শোভন       : Then....এই ভালোবাসা টাকে একটু romantic করলে কেমন হয় ? 


কিশোরী      : মানে ?


শোভন       : মানে ....I mean ....let's dance 


কিশোরী      : আমি কি নাচতে পারি নাকি ? 


শোভন       :  I shall teach you ....if you want ..


কিশোরী      : ঠিকাছে .....


       এই নাচের প্রস্তাব টা তো শোভনের শুধুমাত্র বাহানা ছিল । এই নাচের মাধ্যমে আরো কাছাকাছি এসেছিল ওরা । রাসপূর্ণিমা য় রাইমুরারীর মন্দিরে ওদের যে মনের মিলনের সূচনা হয়েছিল .....আজ প্রায় আড়াই মাস পর ওদের দেহ ও প্রাণের মিলনে তা পূর্ণতা পেয়েছিল । ❤


Background Music of ❤ marked part : 


Aj phir tum pe pyar ayaa he

Aj phir tum pe pyar ayaa he 

Behad aur beshumar ayaa he ....


       যতটাই সুন্দর করে কিশোরীর আজকের দিনটা শুরু হয়েছিল ততটাই সুন্দর করে শেষ হল আজকের রাতটা । কিন্তু অন্য দিকে গেস্ট হাউজে চলছিল ওর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র ।


অলঙ্কারা  (পিসিমনি)  : আজ কত সেলিব্রেশন হচ্ছিল .....কাল তো আবার grand wedding party.......তুমি কি এখনো সব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে ?


রুহানা     : পিসিমনি , আমিও তো চাই কালকে পার্টি টা হোক ।


অলঙ্কারা    :  মানে? Are you mad ?


রুহানা      :  No pisimoni. কাল তো কিশোরী পাগল হবে........because ....কাল শোভনের সাথে আমার বিয়ে হবে .......


                  (  .......  ক্রমশ )

এটি একটি ধারাবাহিক গল্প, যার বিষয়বস্তু  : 

মন্দিরে পালিত কিশোরী বড় হওয়ার সাথে সাথে উপলব্ধি করেছে তার ঐশ্বরিক সংযোগ ।ভাগ্য ওকে মন্দিরের আঙিনা থেকে নিয়ে এল জমিদার বাড়ির অন্দরমহলে।কিন্ত হঠাৎ ই ঘটল ওর অকালমৃত্যু।কে ছিল এই খুনের পিছনে?এই শত্রুরা লৌকিক জগতের না অলৌকিক জগতের?কে নেবে এই মৃত্যুর প্রতিশোধ?সব উত্তর পেতে পড়ুন ভালোবাসা , রহস্য আর অলৌকিকতায় ভরা এই ধারাবাহিক গল্প "কৃষ্ণদাসী"।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama