কৃষ্ণদাসী [পর্ব-৪]
কৃষ্ণদাসী [পর্ব-৪]
আদিনাথ (বড়বাবু/শোভনের বাবা ) : শোভন বেটা......
শোভন : হ্যাঁ পাপা । ভিতরে আসো । কিছু বলবে পাপা ?
আদিনাথ : হ্যাঁ বেটা । সেহগাল ক্রিয়েশনের সাথে আমাদের কাল দুপুরে একটা সাডেন মিটিং অ্যারেঞ্জ করা হয়েছে .....দিল্লিতে । As the meeting is fashion oriented so I want you to represent our S R Exclusive . বেটা কাল ভোরেই বেরিয়ে যাস । ৭ : ৪৮ এ ফ্লাইট । তোকে ৬ টায় বেরোতে হবে ।
শোভন : It's ok papa. বাট মিটিং টা ভার্চুয়াল হলে ....
আদিনাথ : না বেটা । মিটিং টা ওরাই অ্যারেঞ্জ করেছে , ওখানেই গিয়ে করতে হবে মিটিং টা ।
শোভন : ওকে পাপা । গুড নাইট ।
আদিনাথ : হুম । গুড নাইট বেটা ।
শোভনের ত্রকটু ও ইচ্ছে ছিল না দিল্লিতে গিয়ে মিটিং অ্যাটেন্ড করার । কারণ তাহলে কাল গোটা একটা দিন কিশোরীর সাথে ওর দেখা হবে না । বাট তাও ও ওর পাপা কে না করল না , কারণ ও চায়না যে ওর ভালোবাসা ওর কাজের বাঁধা হয়ে দাঁড়াক.......ও চায় না কেউ কিশোরী কে কোনো ভাবে দোষারোপ করুক ।
এদিকে কিশোরী ভোরবেলা উঠে জানল যে নবদ্বীপ থেকে ওর ঠাকুর বাবার ভাইপো আসবে ওকে বিয়ে করতে । লগ্ন সকাল ১০:১৩ তে , অর্থাৎ কৃষ্ণ চতুর্দশীর সূচনা লগ্নে । কিশোরীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কিশোরীর আপত্তি শুনে ঠাকুর বাবা বলল , " আচ্ছা এবার আশ্রমে তোর সিদ্ধান্তে চলবে সবকিছু ? আমি এই বিষয়ে আর কোনো কথা শুনবো না । দেবিকার মা , ওকে সাজিয়ে দাও । " বলেই ঠাকুর বাবা চলে গেল ।
কিশোরী : ঠাকুর বাবা .....ঠাকুর বাবা .....আমার কথাটা তো শোনো।
দেবিকা (খানিকটা ঢঙ্ করে ) : তোর মত নির্লজ্জ না আমি দুটো দেখিনি । লজ্জা করে না , একটা সাহেবের মত ছেলে কে দেখে ই লোভে একেবারে ...। আর কত কলঙ্ক ছড়াবি বল তো?
কিশোরী : মুখ সামলে কথা বলো। আর তোমাদের মত নিয়মের অন্ধ অনুকরণকারী রা যেটাকে অন্যায় , কলঙ্কজনক বলো , সেগুলো কে আমাদের মত কেউ না কেউ বারবার ভুল প্রমাণ করেছে ।এক সময় তো শ্রীরাধা কেও তো কলঙ্কিনী বলা হত ।কিন্তু আজ সে দেবী .......
দেবিকা : ওহ ...তুই এখন নিজেকে দেবী রাধার সমান মনে করছিস । বাহ্ ......(বামুন মার উদ্দেশ্যে)মা আমি তোমাকে অনেক বার বলে ছিলাম ঐ অনুপমা দিদিমণির কাছে ওদের পড়িও না ।কি হবে বিদ্যেধরী হয়ে? তুমি তাও ঐ ডিসটিনসে না কিসে ঐ লক্ষী আর কিশোরী কে বি এ পাশ করালে। কি ....না.....ওরা পড়তে ভালোবাসে ....নাটকের কথা ।
দেখো দুদিন পর কিশোরী ও ঐ একই রাস্তায় হাঁটবে....
বামুন মা : থাক না এসব কথা ....কিশোরী আমার ঘরে আয় .......তৈরি হতে হবে ।
কিশোরী তৈরি হচ্ছিল ঠিকই কিন্তু ওর মনে বিশ্বাস ছিল যে রোজের মত আজও ৮ টায় শোভন ওর সাথে দেখা করতে আসবে ।
ও রেডি হবার পর লক্ষী ওর ঘরে এল।
লক্ষী ( কাঁদতে কাঁদতে) : আর কিছু করা যাবে না রে কিশোরী । তোর ছোট সাহেব আজ আর আসবেন না ।
কিশোরী (খানিকটা ভয় পেয়ে ) : কেন ????
লক্ষী : এই সব কিছু ঠাকুর বাবা আর বড়বাবু র পরিকল্পনা । আজকে ঠাকুর বাবা ফোনে যখন কথা বলছিল..... সবটা শুনেছি আমি । মোটামুটি যা বুঝলাম সেটা হল যে....... আজকে ছোটসাহেব কে বড়বাবু একটা মিথ্যে মিটিং এ রাজ্যের বাইরে পাঠিয়েছে । ৭:৪৮ এ ফ্লাইট .....
কিশোরী : আজ তাহলে সব কিছু আমি রাই মুরারির ওপরই ছেড়ে দিলাম ।
আজ রাইমুরারীর সাথে একা কথা বলারও সুযোগ পায়নি কিশোরী । সাত টা বেজে গেছে ......৭ :৪৮ এ ফ্লাইট । কিশোরী ভাবছে আজ ওকে নিজের শক্তি ব্যবহার করতেই হবে ........কারণ ও জানে যে ভগবান তাকেই সাহায্য করে যে নিজেকে সাহায্য করতে পারে ।
আর দেরি না করে ও নদীর তীরে একান্তে চলে গেল । রাধাকৃষ্ণ কে স্মরণ করে কিশোরী উচ্চারণ করল , "রাধাকৃষ্ণ মহানাম মহিমা অপার, ছোট সাহেব আসুক হেথায় করি সব বাঁধা পাড় । "
এরপর দু ঘন্টা কেটে গেল । বরপক্ষ ও চলে এল কিন্তু শোভন এখনো এলো না । এবার সত্যি সত্যি
চিন্তা হচ্ছে কিশোরীর ।
দশটা বাজল । আর ১৩ মিনিট । সম্পূর্ণ আশাহত হয়ে মন্ডপে এল কিশোরী । শুধু মনে হচ্ছে ও সবাই কে বলে দিক ওর শক্তির কথা.......বলুক রাই মুরারি র সাথে ওর আত্মার টানের কথা ......... ইচ্ছে করছে রাই মুরারি কে ডেকে জবাবদিহি করতে ......ও তো বিরহ মেনেই নিচ্ছিল , তাহলে কেন রাইদিদি আর শ্রীকৃষ্ণ ওকে ভালোবাসার লড়াইয়ের দিকে ঠেলে দিল ???? .....
" কিশোরী .... " - শোভনের কন্ঠে নিজের নাম টা শুনে যেন কান কেই বিশ্বাস হচ্ছিল না কিশোরীর । কি করে সম্ভব এটা????
কিন্তু এতো সত্যি ই শোভন দাঁড়িয়ে আছে ওর চোখে র সামনে । কিশোরী লজ্জা শরম ভুলে ছুটে গিয়ে শোভনকে জড়িয়ে ধরল ।
শোভন (কিশোরী কে জড়িয়ে ধরে ) : Ok .Ok Kishori .Calm down. আমি তো এসে গেছি ।
ঠাকুর বাবা : ছোটসাহেব , আপনি ওকে ছেড়ে দিন । নয়তো আমরা বাধ্য হব আপনার গায়ে হাত দিতে ।
শোভন ( একটু হেসে ) : Oh really ?? আপনারা এখানে মাত্র ৪ - ৫ জন ছেলে আছেন । আর আপনি তো ভালো করেই জানেন যে আমি এই দেশে থাকাকালীন ই ক্যারাটে তে ব্ল্যাকবেল্ট চ্যাম্পিয়ন ..........ওকে আপনারা একসাথেই চেষ্টা করুন ........ কেউ যদি কিশোরী কে টাচ পর্যন্ত করতে পারে তাহলে আমি ছেড়ে দেব কিশোরীকে ।
শোভনের পেশীবহুল চেহারা আর তেজোদীপ্ত দৃষ্টি দেখে কেউ আর এগোতে সাহস করলো না।
শোভন : By the way.......আপনাদের মনে হতে পারে যে আপনাদের প্ল্যানিং অনুযায়ী আমার তো আজ দিল্লিতে থাকার কথা ......বাট লাকিলি আমার ৭:৪৮ এর ফ্লাইট টা ক্যান্সেল হয় । আর আমি তাই মিটিং টা একটু পিছোনোর জন্য Sehgal Creations কে ফোন করি .....আর জানতে পারি যে আজ কোন মিটিং ই নেই । তখনই আমি বুঝতে পারি .....there is something wrong .......আর এখানে এসে সবটা ক্লিয়ার হয়ে যায় ।
কিশোরী বুঝল যে ওর শক্তি প্রয়োগ তখন ব্যর্থ হয় নি ।
নিতাই (ঠাকুর বাবার ভাইপো ) : তোমার গায়ের জোরে এসব কেলেঙ্কারি করে যাবে আর কেউ কিছু বলবে না ভেবেছো । এই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দাও এদের ......যে ভাবেই হোক এই অনাচার আটকাও।
ঠাকুর বাবা : নিতাই......কি ধরণের কথা এসব।
কিশোরী : তোমরা নাকি প্রেমের পূজারী ....এই তার নমুনা .....
নিতাই এর বাড়ির লোকেরা ও নিতাই এর পক্ষে ই মত দিয়ে মশাল জ্বালানোর ব্যবস্থা করল। কিশোরী র অলরেডি একবার শক্তি প্রয়োগ হয়ে গেছে ।
কিশোরী : ঠিকাছে .....আজ প্রমাণ হয়েই যাক ঈশ্বর এই ভালোবাসার পক্ষে না বিপক্ষে .....ছোট সাহেব, আপনি আমার সাথে দেবঘরে (রাই মুরারি র মূল মন্দিরে) চলুন ...
শোভন : Ok .চলো।
শোভন : তোমার আমার উপর ভরসা নেই ??
কিশোরী : ভরসা আছে বলেই এত বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছি ..........কিন্ত আমি অনুরোধ করছি ....চলুন ।
শোভন : Ok .চলো।
ওরা দেবঘরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিতাই রাও মশাল নিয়ে হাজির হল দেবঘরের সামনে ।
নিতাই : ভালো ই হয়েছে ।আজ রাই মুরারি র সামনে ই তোরা এই অনাচারের শাস্তি পাবি.....
ওরা দেবঘরে শোভন কিশোরী কে পোড়ানোর জন্যে যেই ঢুকতে গেল ........দেবঘরের দরজা ওদের মুখের সামনে ভীষণ শব্দে বন্ধ হয়ে গেল ।ওরা হাজার চেষ্টা করেও খুলতে পারল না। এই ঘটনা টা শোভনের মন কে একটু হলেও প্রভাবিত করল ।
❤শোভন : কিশোরী, দেখো সিটুয়েশন টা এমনই যে আমার ফ্যামিলি বা তোমার সমাজ কেউ ই আমাদের বিয়ে টা দিতে চাইবে না .......আর তোমার যদি তোমার রাই মুরারি র ওপর তোমার এতটা ই বিশ্বাস থাকে ...........আমি চাই তোমার রাইমুরারীর সামনেই আমাদের বিয়ে টা হোক ।আচ্ছা সিদুর কোথায় আছে জানো ....??
কিশোরী : হুম । দেবাসনে রাই দিদি র পায়ের সামনে আছে । আসুন ।
শোভন : চলো । এই পৃথিবীর লোকেরা তো স্বীকৃতি দিল না ........স্বর্গের ভগবান রা ই স্বীকৃতি দিয়ে দিক এই ভালোবাসা কে ।
কিশোরী র সিঁথিতে সিদুর পরিয়ে দিয়ে জন্ম জন্মান্তরের জন্য আপন করে নিল শোভন ।
শোভন ( কিশোরী কে জড়িয়ে ধরে) : আর কেউ আলাদা করতে পারবে না আমাদের ।❤
[Background Music of ❤marked part :
Na Chain Se Jeene Degi
Na Chain Se Marne Degi
Aa Chal Le Chalen Tumhein
Taaron Ke Shehar Mein
Dharti Pe Ye Duniya
Humein Pyar Na Karne Degi]
কিশোরী র কথায় দুজনে মিলে প্রদীপ জ্বালাল । কিন্তু হঠাৎ ই এই বন্ধ ঘরে বিনা হাওয়ায় নিভে গেল প্রদীপ টা । " কোন অমঙ্গলের আভাস এটা ? " - মনে একটা অচেনা ভয় হতে থাকল কিশোরীর ।
( ...............ক্রমশ)
❤❤❤❤❤❤❤❤
এটা ধারাবাহিক গল্প, এর বিষয়বস্তু:
মন্দিরে পালিত কিশোরী বড় হওয়ার সাথে সাথে উপলব্ধি করেছে তার ঐশ্বরিক সংযোগ ।ভাগ্য ওকে মন্দিরের আঙিনা থেকে নিয়ে এল জমিদার বাড়ির অন্দরমহলে।কিন্ত হঠাৎ ই ঘটল ওর অকালমৃত্যু।কে ছিল এই খুনের পিছনে?এই শত্রুরা লৌকিক জগতের না অলৌকিক জগতের?কে নেবে এই মৃত্যুর প্রতিশোধ?সব উত্তর পেতে পড়ুন ভালোবাসা , রহস্য আর অলৌকিকতায় ভরা এই ধারাবাহিক গল্প "কৃষ্ণদাসী"।