STORYMIRROR

Bula Biswas

Abstract Inspirational

4.5  

Bula Biswas

Abstract Inspirational

#কমলীমাসিরা

#কমলীমাসিরা

3 mins
260

ছোটগল্প

বিষয়: আঞ্চলিক

কলমে: বুলা বিশ্বাস 

শিরোনাম:

#কমলীমাসিরা


            বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামে আদিবাসীদের মাটির ঘর। রোদ, ঝড় জলে সমস্তরকমের প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে নিত্যদিন বেঁচে থাকে। একটু খাবারের জন্য ওরা অসহনীয় পরিশ্রম করতে দ্বিধা বোধ করে না। প্রকৃতির রুক্ষ্মতার সাথে তালমিলিয়ে ওদের দৈহিক গঠন। মাঠেঘাটে, বাড়িতে কামিন খাটতে ওরা মহিলা পুরুষ সকাল থেকে বেরিয়ে পড়ে। সবকিছুর মধ্যেও ওরা সৎ, সবল, নির্লোভ। কষ্টসহিষ্ণু কমলী মাসীদের মুখে সদাই হাসি লেগে থাকে।


কমলীমাসিরা সাঁওতাল। ওর বর ছেলে সব জন খাটে। কমলীমাসি বাবুদের বাড়ি কাজ করতে আসে। 

সেই কোন ভোরে একটা বালতি আর গরুটাকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। গাছের একটা খোঁটায় গরুটাকে বেঁধে মাসি এক হাঁটু ধুলোমাখা পা, আর শুধু একটা মোটা কাপড়ে শরীরটাকে আবৃত করে, উস্কোখুস্কো তেলবিহীন চুলে একগাল হাসি মুখে বুবাইদের ঘরে কাজে ঢোকে। শরীরের খোলা অংশ খড়িওঠা। ওর মধ্যে দিয়ে বাঁকুড়ার শুকনো পরিবেশ যেন সূচিত করছে।


মাসিকে দেখেই বুবাইএর চিৎকার, 'ও মাসি, তুমি আগে পা'টা ধোও। বাপরে কী ধুলো তোমার পায়ে।'

মাসি খিলখিল করে হেসে উঠে, বাথরুমে গিয়ে পা ধুয়ে আসে। 

মিনতি মাসিকে বসতে বলে। 'মাসি, চা, মুড়ি খেয়ে তবে কাজ শুরু করো। '

'মাসি আবার হাসে। 'দাও বৌ। একটু বেশি কইরে গরম চা দিও বৌ। জারে কাইজ কইরতে লাইরছি। তা বৌ, বাবু কাজে যাবেকতো। ঝুটা বাসনগুলা দাও আগে মেইজে দি।'

মিনতি বলে, 'না মাসি, তুমি আগে খেয়ে নাও। তারপর কাজ করবে। মাসি, তুমি গরম জামা পড়োনি কেন? কী ঠাণ্ডা পড়েছে।' বলে মাসিকে ওর খয়েরি রঙের সোয়েটারটা দিয়ে বলে, এটা পড়ো মাসি, আরাম লাগবে।'

মাসির সে কি হাসি। থামতেই চায় না। নির্লোভ মাসি, মুড়ি আর চা খেতে খেতে বলে, 'বৌ, উসব তুমাদের জন্য। শহরের লুকদের জার বেশি। উ আমরা গায়ে দিতে লাইরব।'


মিনতি আর কোনো কথা বলে না। কমলীমাসিকে বলে, 'মাসি, আজ ফ্যান একটু কম হয়ে গেল। তোমার বালতিতে ঢেলে দিয়েছি। আর সব্জির খোসা ওই প্লাস্টিকের মধ্যে দিয়ে দিয়েছি।'

মাসি কাজ করে আর বকবক করতেই থাকে। 'উ ঠিক আছে বৌ। গড়াই গিন্নির ঘর থিকা লুব। উয়াদের বেশি মানুষ। উয়ারা ভাত খায় বেশি। উ দিবেক বটে। বেশি করেই দিবেক।'


মিনতি রান্না শেষে, ঘর গোছাতে গোছাতে বলে, 'মাসি তোমার জন্য দুটো শাড়ি এনেছি। এখন একটা পড়বে, আর একটা নিয়ে যাবে। তোমাকে কতবার বলেছি মাসি, ওই নোংরা আর শতচ্ছিন্ন কাপড়টা আর তুমি পড়ো না।'


মাসি কলপাড়ে বসে আবার কলকলিয়ে হেসে ওঠে। পরণের মোটা কাপড়টা, যতোই নোংরা আর শতচ্ছিন্ন হোক না কেন, ওটাই ওর পরম আদরের, পরম সুখের। ওরা যে অল্পেই সুখী। ওরা বেশি পায় না। বেশি চায়ও না। বেশি দিলেও ওরা নেয় না। 

মিনতিকে বলে, 'অ বৌ, জালি শাড়ি লুবক লাই। তুমিতো জানো, উ শাড়ি মু পইরতে লারি।'

'জানি মাসি। পুজোর সময় যখন শাড়ি এনেছিলাম, তখনই তো তুমি বলেছিলে, মোটা শাড়ি পড়বে। পাতলা শাড়ি গা দেখা যায়। লোকেরা খারাপ বলে। আমার মনে আছে। তাইতো আমি মোটা শাড়ি এনেছি।' 

'হ বৌ। রাখো। লুবক।'

মাসি শাড়ি দুটো নিয়ে যাবার উপক্রম করলে মিনতি ওকে দুপুরের খাবারটা টিফিনবাটি করে দিয়ে দেয়। কমলীমাসি বসে খেতে চায় না। ও যা পায়, মেসো, ছেলেদের জন্য, আর ফ্যানটা ওর গরুর জন্য নিয়ে যায়। ফ্যান শুধু গরুই খায় না, বেশি হলে, কমলীমাসি দু ঢোঁক খেয়ে চড়চড়ে খিদেটাকে সামলিয়ে নেয়। বুবাই খেলতে গিয়ে অনেকবার মাসিকে গাছের নীচে বসে বিড়ি ফুঁকতে দেখেছে। মিনতি বোঝে, এতেই ও নিজেকে একটু তাঁতিয়ে নেয়।          

            ---------------


কলমে: বুলা বিশ্বাস 

ফোন নাম্বার: 7980205916

মেল আইডি:

bulabiswas60@gmail.com     


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract