Nandita Pal

Abstract Romance Others

3.6  

Nandita Pal

Abstract Romance Others

কলকাতার শীত

কলকাতার শীত

10 mins
164



দুর্গা পুজোর পর পর থেকেই চামড়া একটু টান টান লাগা, হাওয়াটা একটু শুকনো মনে হত আর সকালের দিকে গায়ে একটা আলতো কিছু দিলে যেন ভালো লাগত। ভাই ফোঁটার দিন সকাল বেলায় শিশির কুড়োনোর পালা পড়ত, ে সবের মানেই হল শীত আসছে। এখন কয়েক বছর অবশ্য পুজোতে কলকাতায় বৃষ্টি থাকছে বা আকশ মুখ ভার করে থাকছে অথবা বেশ গরম। উত্তুরের জানালা খুলতে ঠান্ডা হাওয়া সে এখন বেশ অনেক দেরি করেই আসছে। ২০২৩ এবছর নভেম্বরের মাঝ থেকে ঠান্ডার ভাব শুরু হয়েছে হাল্কা করে।

এ সি ছাড়া আমার আর আমার ছেলের চলে না এখানের গরমে। কদিন ধরে সকালের দিকে এ সি তে বেশ ঠান্ডা লাগছে, গায়ে কিছু দিতে হচ্ছে বা এ সি গিয়ে বন্ধ করে দিতেহচ্ছে। উলের জামা কাপড় সারা বছর বাক্স বন্দি থাকে, লেবেল করে আলাদা আলাদা বাক্সে সব জামা থাকে। একদিন কাজের লোক কে নিয়ে সব সে সব জামা কাপড় বের করে রোদে দিতে বললাম। বের করতে গিয়ে দেখলাম গতবার একটা সোয়েটার কিনেছিলাম পড়ার সুযোগ ই হয় নি। অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক থেকে আনা জ্যকেট গুলো এত সুন্দর কিন্তু কলকাতায় এক দিন ও অমন ঠান্ডা পড়ে না যে এরা বের হয়। তাই এই রোদে দেওয়াটা একমাত্র সুযোগ এদের বের হবার। সাথে সাথে কম্বল বের করলাম। আমার ভারি প্রিয় তূলো দিয়ে বানানো লাল রঙের লেপ তাতে সাদা ঢাকনা। বেশ কয়েকটা আছে আমার কিন্তু এখন কম্বল এত নরম আর হাল্কা হয় যে এবছর থেকে আমি লেপ না নিয়ে ভাবলাম আমার জন্য একটা কম্বল কিনে আনব। জামা কাপড় বের করার সময় আর একটি কাজ আমি প্রতি বছর করি তা হল কিছু শীতের জামা কাজের লোক, ড্রাইভার, জামাদার, মালী এদের বা এদের পরিবারের লোকেদের দিয়ে দেওয়া। এবারে তো বেশ কিছু শীতের জামা দিয়ে দিলাম ধরে ধরে। অমরনাথ থেকে ঘুরে এসে আমি বুঝেছি নিজের করে একদম খালি জমিয়ে বস্তু জাতীয় জিনিসের মায়া ধরে রেখে কোন লাভ নেই। নিজে ভোগ কর, যদি বোঝ যার আরো দরকার তাকে দিয়ে দাও। তাতে তোমার কোন ক্ষতি হবে না বরং ভালো লাগলে। এই ভাবনায় আমার একান্ত আপনার এবং সত্যি খুব ভাল লাগল যখন এদের শীতের বেশ কিছু জামা কাপড় দিলাম তাদের হাসি মুখ দেখে।

শীত এখানে আসা মানে সব্জির বাজারে বিশাল পরিবর্তন। কদিন আগেও ঝিঙ্গে, ঢেঁড়স আর পটল এই নিয়ে ছিল বাজার, হঠাৎ করে কত রকমের সবজি। ফুলকপি তো রাজা, তার সাথে মটরশুঁটি, বীন্স, মোটা কালো বেগুন, সাদা ধবধবে আবার সাদা লালচে মুলো, বাঁধাকপি, ওল কপি, কত রঙের ক্যপ্সিকম, মেথি শাক, আরো কত রকমের সবজি। নতুন আলু বাজারে, নতুন আলুর খোসা ছাড়ানো যায় না, বটি তে রগড়ে নিতে হয়। উত্তরবঙ্গে বড় হয়েছি, তারপর কলকাতায় পড়াশুনো করে দেশে বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় থেকে এখন এক যুগ পেরিয়ে গেল কলকাতায়। এখানে বিয়ে বাড়ি হোক, পিকনিক হোক সবেতে শীতে স্পেশাল হল মটরসুটির কচুরি আর নতুন আলুর দম, তার সাথে নলেন গুড়ের পায়েস, মিস্টি। আহা। এদিকে খেজুর গাছ হয় ও বেশি, এ সময় গাছের থেকে রস নামিয়ে আগুনে জ্বাল দিয়ে নলেন গুড়ের ছড়াছড়ি। মিস্টির দোকানে দশ টাকা ত্থেকে শুরু সন্দেশ, রসগোল্লা সবেতে নলেন গুড়ের ছোয়ায়- একটু লালচে হয়ে যায় মিষ্টি গুলো- কি যে অপূর্ব। কয়েক বছর ধরে বেকড মিস্টি পাওয়া যায়, তাদের তো আরো বেশি টেস্ট। ডায়াবেটিক তো কি হয়েছে, যত অনুশীলন, হাঁটা দরকার সব করেও একটু নলেন গুড়ের মিস্টি খেতেই হবে। খ্রীস্টমাসের সময় এবারে বেশ জমিয়ে ঠান্ডা পড়েছে, ফুল সোয়েটার প্রায় সারা দিন গায়ে রাখতে হচ্ছে সাথে কান চাপা। অগ্রহানএর শেষ থেকে ঠান্ডা পড়ে পৌষ, মাঘ থাকবে ঠাণ্ডাটা। এই ঠান্ডায় মাছ ধরা কমে যায়, তাই মাছের বাজারে একটু মন্দা, আগুন ও বলা চলে। তবে এই তো সময় ভেটকি, চিতল, গলদা চিংড়ি খাবার সময়। প্রায় সব দোকানেই বড় বড় ভেটকি, পাতুরি, ফিস ফ্রাই যা বলবে সেভাবে কেটে দেবে। মেয়ে এসেছিল, আমি তো মুকুন্দপুর থেকে ভেটকি, চিতলের মুঐঠার মাছ নিয়ে এসেছি। ডিম খেতেও এখন ভালো, সবজি, মাশরুম দিয়ে চাউমিন বা পাস্তা, আমি তো মাঝে মাঝেই টিফিনে নিয়ে যাই।

বাংলায় বারো মাসে তেরো পার্বণ তো লেগেই আছে, তো শীতেই বা কম কিসে। পার্ক স্ট্রিটে আলোয় আলোয় সাজিয়ে দেওয়া হয় ক্রীস্টমাসের আগে পিছে কদিন একদম নতুন বছর শুরু পর্যন্ত। পার্ক সার্কাস থেকে প্রায় পার্ক স্ট্রিটের রাস্তা একদম ধর্মতলা পর্যন্ত ওপরে চাদোয়া, আলোয় আলোয় সান্টা তৈরি, স্নো ম্যন, আলেন পার্কে কত রকমের আলো, বাচ্চাদের খেলনা গুলো ও আলোয় সাজানো। সন্ধ্যের একটা সময়ের পর থেকে গাড়ি ঘোড়া বন্ধ করে দেয় যেতে পার্ক স্ট্রিটে। তখন মানুষের ঢল নামে। খ্রীস্টমাস, নিউ ইয়ারে এবার রেকরড ভিড় হয়েছহে লক্ষ লক্ষ লোকের। যেহেতু গত দু তিন বছর করোনার ভয়ে সব বন্ধ ছিল তাই এবারে বোধহয় সবাই বেড়িয়ে পড়েছে। রাস্তায় বিভিন্ন রকমের খাবার, ফুচকা থেকে শুরু করে পিঠে সবই পাওয়া যায়। ধর্মতলায় নিউ মার্কেটে নাহুমস দোকানে এই সময় এত সুন্দর সব কেক তৈরি করে, ম ম করে গন্ধে, লোকে লাইন দিয়ে কেক কেনে তখন। আমি কদিন আগেই গিয়েছিলাম নিউ মার্কেটে তখন নাহুম থেকে কেক নিয়ে এসেছি। নিউ মার্কেটের একদম প্রথম দিকের দোকান আই নাহুমস একজন ইহুদী পরিবার কেকের দোকান শুরু করেছিলেন। এই সময় পার্ক স্ট্রিটের সন্ধ্যে বেলা কদিন রাস্তায় সান্টা সেজে অবিকল ঘুরে বেড়ায় কজন, গল্পে, আনন্দে, গানে এখন অন্যতম আকর্ষণ বাঙ্গালির এই শীতে। আমার ছেলে মেয়ে কদিন ঘুরে এসেছে, আমি একদিন যেতে পেরেছি এবার অফিস ফেরত, মন ভরে যায় একদম। কিছু খনের জন্য সব চিন্তা ভাবনা ভুলে আনন্দে মন ভরে ওঠে। তবে এখন আমার বাড়ির কাছে পাটুলি, আর বাগুইহাটি, লেক্টাউনের অদিকে আলোর সাজ দেখবার মত। বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে রাস্তার পাশে আলোয় আলো, খাওয়া দাওয়া, গান- শীতে এ মানুষ এত আনন্দ তা দেখলেই বোঝা যায়।

শীতের দেশ গুলোতে দেখেছি গরম একটু আধটু যখন পরে তখন মানুষের যে কি আনন্দ, কি করবে কি পড়বে তাল পায় না ঠিক তেমনি কলকাতায় শীতে মানুষকে ‘পৌষ ডাক দিয়েছে’, মন খুলে আনন্দ করে তখন। শীত পড়ার পরই শহরে অনেক মেলা, আলোয় আলোয় মেলা বিভিন্ন জায়গায়। তারমধ্যে যেগুলো আমি প্রতিবার যাবই হস্তশিল্প মেলা, ইকোপার্কে হয় বিশাল মেলা, মাস দুয়েক থাকে- এখানে বিভিন্ন জায়গায় হাতের তৈরি জিনিস- মাটির, পাটের, টেরাকোটা,উলের, বাঁশের কত রকমের রঙ বাহারি নিপুণ কাজের জিনিস যা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আমার কাছে এ মেলা থেকে আনা অনেক রকমের ফুলদানি, মূর্তি, বাঁশের ফুল, মাটিতে পাতার শতরঞ্চি, শান্তিনিকেতনের চামড়ার ব্যগ আর বিভিন্ন রকমের কানের গলার সেট রয়েছে। আর একটা মেলা আমার খুব ভালো লাগে সবলা মেলা, বিশেসত স্ব নির্ভর মেয়েদের হাতে তৈরি। এই মেলা রাজারহাটে হয়, একটু ছোট আকারে হয় এই মেলা, তবে খুব সুন্দর হাতের কাজ দেখবার মত। আমি এখান থেকে হাতে কাজ করা বেডসিট, গলা গানের ভারি সুন্দর সেট কিনেছি। সাউথ সিটির বিপরীতে খাদির মেলা খুব নাম করা ওখানে এক দুবার গিয়েছি, কি দারুন সব শাড়ি। কাঁথাস্টিচ সে যে কত রকমের করে শারি, বালুচরি বিভিন্ন রকমের, এ ছাড়া তো আছেই মুর্শিদাবাদের সিল্ক, বাটিক সিল্কের শারি, খাদির বিভিন্ন রকমের শারি পাঞ্জাবি – দেখে আমি পাগল হই বারেবারে কলকাতা। এ সময় প্রায় অনেক এলাকাতেই মেলা বসে। স্থানীয় লোকেরা তাদের মত করে সন্ধ্যে বেলা ঘুরে বেড়ায় মেলাতে। পৌষ মানে পিঠে, এখন শুধু সঙ্ক্রান্তি নয়, যে কোন সময়ে পিঠে খাওয়ার রেওয়াজ। পিঠে পায়েসের মেলাও বসে বিভিন্ন জায়গায়। মিস্টির দোকানেও পাটি সাপ্টা, মাল পোয়া আর খেজুর গুড়ের পায়েস পাওয়া যায়। বাড়িতে মেয়ে এসেছে বলে পিঠে হয়েছে ওর পছন্দ মত। নারকেলের পুর দিয়ে পাটিসাপ্টা, দুধ পুলি, মালপোয়া আর পায়েস। আমার এই সময় সুগারের জন্য পিঠে খাওয়া টা ভীষণ ভাবে মিস করি তবু একটু আধটু তো খেতেই হবে। গোবিন্দভোগ চালের গুড়ো, সুজি, নলেন গুড় এ সময়ের বাঙ্গালির বাড়িতে বাড়িতে পিঠে বানানোর জন্য। মার হাতে সরা পিঠে আর চসি দুধে জ্বাল দিয়ে বানাত তা ছিল আমার প্রিয়, আর একটা বানাতো মুগ ডালের পিঠে। শাশুড়ি একটা বানাত গোকুল পিঠে ভালো খেতে তবে ভারি মিষ্টি, এখন সে সব স্মৃতি হয়েই রয়ে

বারো জানুয়ারি মহাপুরুষ বিবেকানন্দের জন্মদিন সেদিন করে রামকৃষ্ণ মিশনে বিভিন্ন প্রোগ্রাম হতে থাকে।এবারেও গেলাম দুপুর বেলায় দেখতে রথিকান্ত মহাপাত্র মহাশয়ের ওড়িশি নাচ এবং হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া মহাশয়ের বাশি শুনতে গোলপার্কে মিশনে। এসব অনুষ্ঠান যখন দেখি তখন মনে হয় কলকাতায় এই অমৃতের জন্য বাঁচি। বিভিন্ন শহরে থেকেছি কিন্তু এই শহরে কালচারাল অনুষ্ঠানের যেন পীঠ স্থান। ডোভার লেনে তিন চারদিন ধরে কালচারাল অনুষ্ঠান হতে থাকে সব ক্লাসিকাল গান, নাচ এবং বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্টের। ডভার লেনের আঙ্গিকে আরো একটি অনুষ্ঠান হয় আই টি সি সঙ্গিত একাডেমী, পন্ডিত অজয় চক্রবরতী সেই প্রোগ্রামের কর্ণধার। অনেক বড় বড় শিল্পীদের গান, বাদ্য যন্ত্র, নাচ দেখেছি এই প্লাটফর্মে। সারা রাতের প্রোগ্রাম, অনেকেই অনেক রকম খাবারদাবার নিয়ে যায় তবে ওখানের স্টলে রাধা বল্লভী আলুর দমের তুলনা হয়না। এ সময় দারুদারুন প্রোগ্রাম চারিদিকে, এ বছর পুরো উদ্যমে হচ্ছে গত দুবছর বন্ধ থাকার জন্য। প্রতি বছর চেষ্টা করি একটা এমনি প্রোগ্রাম যেন দেখি, মনে হয় যা পেলাম তা দিয়ে চলে যাবে বেশ কিছুদিন। প্রজাপতি বলে একটি সিনেমা বাবা ও ছেলের সম্পর্কের ওপর তৈরি, মিঠুন চক্রবরতী আর দেবের অভিনয়, শুনেছি খুব ভালো হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ হাউস্ফুল যাচ্ছে। এখন অনলাইনে সিনেমা, ও টি টি প্লাটফর্ম এ সবের জন্য হলে গিয়ে সিনেমা দেখা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে মানুষের। মারীচ সংবাদ- রুদ্রপ্রসাদ গ্রুপের হবে নাটকটি খুব নাম করেছে, হচ্ছে ও বিভিন্ন জায়গায়।

মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমীতে সরস্বতী পুজো, সেই পুজো আমি বাড়িতে করি। কয়েকবছর ধরে ছেলে, মেয়ে, ননদের ছেলে পুজো করত, এখন আর পুরোহিত ডাকি না। প্রায় ঘরে ঘরে সরস্বতী পুজো, খিচুরি বাঁধাকপি কুলের চাটনি, কাসি কুল খাওয়া আর গুড়ের পায়েস। ভালেন্টাইন্স আর সরস্বতী পুজো অনেক বার ই একই সময়ে পরে, মেয়েদের সেদিন বাসন্তি রঙের শারি, ছেলেদের পায়জামা পাঞ্জাবি বেশ মজা লাগে দেখতে এই বয়সের স্বপ্নের দিনগুলো। এর পর পরই এবারে কলকাতায় চলে এল বইমেলা। আন্তর্জাতিক স্তরে বইমেলা, বিশাল তার পরিধি। বই নিয়ে কাড়াকাড়ি দেখতে সত্যি ভালো লাগে। প্রতিবার ই একটা দেশের থিম থাকে, যেখানে সেই দেশের সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়। ইকো পার্কে হয় বইমেলা এখন। ধানসিরি থেকে প্রকাশিত আমার দুটো বই স্বপের রামধনু আর জলছবির রঙে পাওয়া যাবে এবারের বই মেলাতে। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ যেমনি বেড়েছে তা বোঝা যায় বইমেলা তে প্রচুর বাংলা দেশের বই দেখে। কলকাতায় দুর্গা পুজো যেমন গর্ব, সারাবছর আমরা চেয়ে থাকি কবে আসবে মা, তেমনি বইমেলা ও একটি প্রানের জায়গা। খুব ভিড় হয়েছে এবারে মেলাতে, দেখেও খুব ভালো লাগল। এবারে ছেলের বারো ক্লাসের বোর্ড, তাই একদিন ই গেলাম, নাহলে মোটামুটি বেশ কদিন ঢু মেরে আসি। শীতের সময় স্কুল ছুটির সময় অনেক লোক জেলা থেকেও আসে কলকাতায়, তাই খুব ভিড় আলিপুরের চিড়িয়াখানায় দেখবার জন্য কিংবা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, বিরলা তারামণ্ডলের শো দেখবার জন্য। কদিন আগে আলিপুরে জেলখানা ওখান থেকে সরিয়ে নিয়ে নেওয়া হয়েছে, জেলখানা কে মিউজিয়াম বানানো হয়েছে। যাওয়া হয়নি, তবে শুনেছি সেখানে শনি রবিবারে লাইট ও সাউন্ড খুব সুন্দর, মনে পড়ে আন্দামানের জেলখানার সেই বটগাছের স্মৃতিচারণ।

গঙ্গার মোহনায় কাকদ্বীপ পেরিয়ে গঙ্গাসাগরে শীতে কপিল মুনির আশ্রমে পুজো আর বিশাল মেলা হয়। প্রশাসন থেকে মেলার বিভিন্ন আয়োজন করে দেওয়া হয় মকর সংক্রান্তির এই মেলাতে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা এবং অন্য রাজ্য থেকে, বাংলাদেশ দেথে প্রচুর লোক আসে গঙ্গাসাগরে পুন্যস্নান করতে। করোনার সময় ভারি ইন্টারেস্টিং ব্যপার হয়েছিল, ই স্নান। অনলাইনে টাকা পুজোর জন্য দিলে বাড়িতে গঙ্গাসাগরের জল পৌঁছে দেবার। বেশ ভালো চলেছিল শুনে ছিলাম। আমরা একবার গিয়েছিলাম কপিল মুনির আশ্রমে, অত্যন্ত সাধারণ একটা মন্দির, একদম সঙ্গমের কাছে। সেখানেই হয় এই মেলা। তবে শীতে অয়, গিয়েছিলাম গরমের সময় তাই একেবারেই ভিড় ছিল না। এই সময় দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিনি মায়ের মন্দিরে, কালীঘাটের মায়ের কাছে, তারাপীঠে মার বাড়িতে সবখানে উপচে পড়ে ভিড়।

শহরে এসময় ফুলের বাহার দেখবার মত। ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, আর বিভিন্ন রকমের সিজন ফ্লাওয়ারে এসময় রঙিন ফুলের সম্ভার। আমাদের ছাদে ও খুব সুন্দর ফুল হয়েছে, টবে যদিও কিন্তু এত রঙ দেখলে মন ভরে যায়। এসময় গোলাপ বিভিন্ন রঙের, চোখ ফেরানো যায় না। হরটিকালচারারের ফুলের মেলা বসে এইসময়, যা দেখলে চোখ ফেরানো যায় না। দুপুরবেলা হাতে সময় আর সাথে সঙ্গী থাকলে বেশ সুন্দর কাটিয়ে দেওয়া যায় দিনগুলো পিঠে রোদ লাগিয়ে। হাল্কা সোয়েটার, গলাটা একটু চাদরে জড়িয়ে নিলেই হল। বাঙালি এমনিতে ঘুরতে ভালোবাসে আর এইরকম প্রিয় শীতে তো আর ও ভালোবাসে তাদের প্রিয় জায়গাগুলোতে যেতে। দীপুদা মানে দীঘা, পুরী আর দারজিলিঙ এই সময় থাকে জমজমাট, হোটেলে জায়গা পাওয়া ভার। তার সাথে সিকিমের বিভিন্ন জায়গা, মন্দারমনি আর ঝারখন্ডের কিছু জায়গা এখন অনেকেই বেড়িয়ে পড়ে ছুটি কাটাতে। তবে এটা বোর্ড পরিখার তৈয়ারির সময় ও বটে, এক দুমাসের মধ্যে দশম ও দ্বাদশ এদের বোর্ড। এবারের দ্বাদশে আমার ছেলে রয়েছে তাই শীতে দম বন্ধ করে পড়াশুনো। মনে আছে আমরা ছোটবেলাতে লেপ গায়ে দিয়ে পড়াশুনো করতাম, এখন খুব ঠাডা এক দুদিন যখন পড়ে তখন ছেলে ঘরে পোর্টেবল হিটার চালিয়ে নেয়। তবে তার সুযোগ বড্ড কম, শীত যেন কৃপণ হয়ে পড়ছে দিন দিন। উল কাটা নিয়ে এবারের শীত খুব আনন্দে বুনেছি সোয়েটার, কি আনন্দ সৃজন মুলক কাজের। মন চায় না এই শীতকে বিদায় দিতে, মনে হয় জড়িয়ে থাক আমায়, জড়িয়ে থাক এই প্রাণের শহর কলকাতাকে। 

শীত মানেই যে বসন্ত আসছে, তাই হাওয়াতে যেন বোঝা যায় শীতের শেষের দিকে একটা শুকনো ভাব। গাছের পাতাগুলো বিবর্ণ হয়ে আসে ধীরে ধীরে। রবিন্দ্র সরোবরে এবারে অনেক পাখি এসেছে, বসন্তের হাওয়ায় এবারে ওদের ও যাবার সময় হয়ে আসবে। শীত চলে যাবার সময় যেন ভারি মন খারাপের, যত্ন করে একদিন শীতের চাদরে মানুষ ঘিরে থাকে তা যেন আসতে আসতে সরে আসে। তবু মন বলে,

এসো শীত আবার অমনি করে আদর জড়িয়ে,

চুপি পায়ে, উত্তুরের হাওয়ায় পাখনা সরিয়ে,

তোমাকে আমার প্রাণের মাঝে রাখব ধরে,

একেবারে হৃদয় মাঝে মাখামাখি গভীরে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract