ক্লান্ত ঘুড়ি
ক্লান্ত ঘুড়ি
সোনাই মেয়েটি খুব মিষ্টি। পুতুল মতো ছোট মেয়েটি কখনো কখনো এসে আমার পড়ানোর ঘরে চুপচাপ বসে আমার পড়ানো শোনে। এখানে আমি নতুন এসেছি। আসলে বিদেশে চাকরি করে কিছু টাকা উপার্জন করেছিলাম। ঐ টাকা পয়সা দিয়ে ভবিষ্যতে ভাড়া থেকে আয় পাবো এই আশা নিয়ে এই ফ্ল্যাট কিনে ছিলাম। কিন্তু সম্পত্তি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিবাদ সৃষ্টি হওয়াতে আমি এ ফ্ল্যাটে চলে আসি মা বাবাকে নিয়ে। কিছু ছাত্র পড়িয়ে মা বাবা নিয়ে ভালোই আছি। তবে এখানে আমার আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব কেউ নেই আমার ।
কিন্তু মা বাবা কোথায় থেকে ঠিক তাদের এই ছোট্ট বন্ধুটিকে জোগাড় করে নিয়েছে। আম্মা আম্মা দাদু বলে বাড়িটা মাথায় করে রাখে এই ছোট্ট সোনাই। ভালো লাগে আমাকে ওকে। ও রোজ আমার পড়ানোর সময় এসে বসে থাকে নতুন নতুন গল্প শোনার লোভে। সেই দিন যখন আমি ছাত্র দের our runaway kite পড়ালাম সেইদিন ও বাবাই বললো আমাকে একটা চিঠি লিখে দিবি আমি ছোট মাম মাম এর বরকে খুঁজে বের করে আনাবো। আমার তো তোরা বন্ধু আছিস কিন্তু ছোট মাম মাম খুব একা জানিস।
আমি ওর সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। তবে শ্যামলীর মুখে শুনেছি ওর মাম মাম ওর মা নয়। ওর মাম মাম আসলে ওর মায়ের অফিস কলিগ ছিলো। ওর বাবা অনেক ছোটবেলায় মারা যায়। মেয়েকে নিয়ে এই ফ্ল্যাটে একা থাকতো তাই ওর মাম মাম ওদের সাথে থাকতে আসছিল। হঠাৎ একদিন ওর মা ওকে ফেলে না ফেরার দেশে চলে যায়। ওর মাম মাম বিয়ে হয়েছিল কিন্তু বরএর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে ছিলো । ওর মাম মাম তাই ওকে নিয়ে নিজের একটা নতুন জগৎ তৈরি করেছেন। সেখানে কাউকে সে কাউকে প্রবেশ করতে হয়না।
সোনাই সেই আমার মা বাবা বলছিলো। ও নাকি our runaway kite গল্পের মতো ওর মাম মাম এর বর যাতে ফিরে আসে তাই একটা ঘুড়িতে চিঠি লিখেছে। তবে এখন তো কেউ ঘুড়ি কেউ ওড়ায় না। তাই ও একটা ঘুড়ি এঁকে চিঠি লিখে ওর মাম মাম এর ছবি দিয়ে সোস্যাল মিডিয়া পোস্ট করছে বাবাইদের প্রফাইল থেকে। ওর কথা শুনে কি লিখেছে দেখতে গিয়ে ওর লেখাটা পরে আমার চোখে জল এসে গেল ।
মানুষের অভিমান বড় ভয়ঙ্কর। তাঁর চেয়ে বড় ভয়ঙ্কর বোধহয় আরো তার আত্মা অহঙ্কার , আত্মমর্যাদা বোধ। প্রিয় মানুষটার খবর পেয়েও দুই জনেই দুই জনের মধ্যের দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করে না তারা। আমি অনেক দন্দ্ব হলো মনের ভিতর। পরে সোনাইকে দেখবার অজুহাতে ওদের ফ্যাল্টের বেলটা টিপলাম।দরজা খুলে দাঁড়ালো নীলাঞ্জনা। তবে আমাকে দেখে ওর চোখে ভরে গেল জলে।
