STORYMIRROR

Md Awal

Abstract Tragedy Fantasy

3  

Md Awal

Abstract Tragedy Fantasy

কিশোরের মুখে ২১

কিশোরের মুখে ২১

5 mins
201

শ্যামল,আজাদ,আসিফ,সাজিদ সবাই মিলে গল্প করছে। আগামীকাল একুশে ফেব্রুয়ারি। শ্যামল দলের মধ্যে সবচেয়ে বড়। আর সবচেয়ে ছোট হল সাজিদ। আগামিকাল স্কুলে যেতে বলেছে ফুল নিয়ে ও ভাল কাপর পড়ে। 

শ্যামল তাদের বলল, আমরা নিজেরাই তো একটা শহিদ মিনার বানাতে পারি। 

আজাদ বলল, আমরা কি দিয়ে শহিদ মিনার বানাব? 

শ্যামল একটু ভাবতে লাগল। 

আসিফ বলল, আগে বল কত বড় শহিদ মিনার বানাবি। শ্যামল হাত দিয়ে দেখাল (একজন মানুষের উচ্চতার সমান) । 

আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। 

শ্যামল বলল , কি আইডিয়া? 

কলা গাছ দিয়ে। কলা গাছ দিয়েই তো আমার মনে হয় খুব ভাল হবে। 

সাজিদ বলল, কলা গাছ পাবি কোথায়? 

এটা তাদের সবার সমস্যা। আসলেই গ্রামের সবার কাছেই কলা গাছ থাকে না। আবার যাদের কাছে থাকে তারা দিতেও চায় না। সব মিলিয়ে তাদের আরো ভেজাল বাড়তে লাগল। 

আজাদ বলল, দরকার পড়লে কলা গাছ টাকা দিয়ে কিনে আনব। 

শ্যামলের কাছে টাকা পয়সা কোন ব্যাপার না। এখন পকেটে ৭০ টাকার মতো আছে। শ্যামল এ ব্যাপারে রাজি হল। আসলে গ্রামে অনেক পোলাপান (ছেলেমেয়ে) আছে। যেমন, রাফি,ইমদাদ,আলামিল আরো অনেকে। বিকাল বেলা সবার সাথে একসাথে খেলাধুলা করে।

 সাজিদ বলল, আমাদের কাছে তো বেশি সময় নেই। কালকেই একুশে ফেব্রুয়ারি। যদি শহিদ মিনার বানাতে চাস তবে আজকেই বানাতে হবে। 

আজাদ বলল, কোথায় শহিদ মিনার বানাবি। 

শ্যামল বলল, রাস্তার পাশে বানানো যাবে। 

রাস্তা বলতে তাদের গ্রামের রাস্তা। কাঁচা রাস্তা , শুধু মানুষ যাতায়াত করার জন্য। রাস্তার চারদিকে প্রচুর গাছপালা। 

আজাদ বলল, তাহলে জায়গাটা ঠিক করি। সবাই মিলে একসাথে কাজ করলে ভাল হবে। বন্ধুরা মিলে রাস্তায় গেল। 

শ্যামল বলল, এখানে আমি বানাতে চাইছি। 

আজাদ বলল, কিছু মাটি ফালালে ভাল হত না! 

শ্যামল বলল, মাটি কোথায় পাবি। 

আজাদ বলল, আমাদের পুকুর থেকে। এই সময় পুকুর শুকনো থাকে। তাই মাটি আনা সহজ হবে। 

সাজিদ বলল, আজাদের বাবা কি আমাদের মাটি নিতে দেবে? 

আজাদ বলল, কেন! আমাদের পুকুর থেকে না সবাই মাটি তুলে নেয়। কাউকে তো বাবা কিছু বলে না। 

তাহলে এখন কলা গাছ নিয়ে চিন্তা। সবাই মিলে করিম চাচার বাড়িতে গেল। করিম চাচার কাছে কলা গাছ আছে। করিম চাচা বাড়িতেই আছেন। আজাদ করিম চাচাকে বলল, চাচা তুমি কি আমাদের ৩ টা কলা গাছ দিতে পাড়বে। 

করিম চাচা বললেন, কেন,কি করবি? আমারা শহিদ মিনার বানাব। করিম চাচা তাদের একটা দিতে রাজি হল। আজাদ চাচার কাছে আরেকটা কলা গাছ চাইল। করিম চাচা বলল, আমার তো অত কলা গাছ নেই। তোদের সব কলা গাছ দিলে আমরা কি খাব? 

সাজিদ বলল, চাচা দুইটা দাও , আরেকটা আমারা যোগার করে নেব। চাচা বললেন, ঠিক আছে। কিন্তু ২টার বেশি কাটিস না। শ্যামল করিম চাচাকে বলল, চাচা,তোমাকে আমি টাকা দেব। তুমি আমাদের আরেকটা কলা গাছ দাও।

করিম চাচা হেসে জবাব দিলেন। তোদের টাকা খাওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। যদি সম্ভব হত তবে এমনি এমনি দিয়ে দিতাম। করিম চাচা আসলে খুব ভাল মানুষ। একটা শাবল নিয়ে করিম চাচার ওখান থেকে ২টা কলাগাছ যোগার করল। আরো একটা কলা গাছ তাদের লাগবে। 

শ্যামল আর আজাদ বলল, তোরা কলাগাছ যোগার কর আর আমরা মাটি যোগার করি। 

আসিফ আর সাজিদ আর সামাদ আলির বাড়িতে গেল। সামাদ আলিরও কলা গাছ ছিল। এখন কলা গাছ আছে কিনা তা তারা বলতে পারে না। সামাদ আলির সাথে দেখা হল। সামাদ আলির সাথে দেখা হওয়ার পর আসিফ সামাদ আলিকে বলল, তোমার কি কলাগাছ আছে। 

সামাদ আলি বলল, কেন কলা গাছ দিয়ে কি করবি? 

-শহিদ মিনার বানাব 

-শহিদ মিনার বানাতে কলা গাছ লাগে?

-কলা গাছ ছাড়া আর কি দিয়ে বানাব?

-শহিদ মিনার বানাতে ৩ টা কলাগাছ লাগবে। ৩ টা দিতে পারব না। 

-আমাদের ২ টা জোগাড় হয়ে গেছে,একটা দিলেই হবে। 

-ঠিক আছে। 

শ্যামল আর আজাদ মাটির জন্য আজাদের বাবার কাছে গেল। আজাদ তার বাবার কাছে গিয়ে বলল, 

আমরা পুকুর থেকে কিছু মাটি নেব। 

-কেন মাটি নিয়ে কি করবি? 

-শহিদ মিনার বানাব। 

-মাটি দিয়ে কেমন করে শহিদ মিনার বানাবি? 

-আমরা কলা গাছ দিয়ে শহিদ মিনার বানাব। 

-শহিদ মিনার বানাবি তো ভালো কথা কিন্তু বেশি মাটি নিবি না। বেশি মাটি নিলে কিন্তু পুকুরের পাড় ভেঙে যাবে। 

-তাহলে তুমি লোকদের না করনা কেন? 

-এখন থেকে আর মাটি নিতে দেব না।

আর তোরা মাটি তোলার পর তা নষ্ট করবি না। আবার পুকুরে রেখে আসবি। 

আজাদের বাবা একটা ভাল কথা বলেছে। আজাদ শ্যামলকে কোদাল নিয়ে আসতে বলল। শ্যামল তাদের বাড়ি থেকে কোদাল নিয়ে আসল। পুকুর থেকে রাস্তা কাছেই। মাটি ফালাতে সহজ হবে। আজাদ একটা বস্তা আরেকটা ঢিস নিয়ে গেল। আজাদ মাটি কাটতে আরাম্ব করল। আর শ্যামল বস্তা বোঝাই করল। বস্তা বোঝাই করে আবার আজাদ আর শ্যামল রাস্তায় নিয়ে যায়। এভাবে ৩ বস্তা মাটি নিল আজাদ আর শ্যামল। 

অন্য দিকে সাজিদ আর আসিফ কাঁধে করে কলাগাছ গুলো রাস্তার পাশে নিয়ে আসল। আরো কিছু পোলাপান জুটেছে। সবাই মিলে কাজ করলে তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। শ্যামল আর আজাদ মাটি নিয়ে বড় ঢিবি তৈরি করল। আর কাঁদা দিয়ে লেপে দিল। আসিফ আর সাজিদ গর্ত করছে। রাফি আর রুবেল ২ টা কলাগাছ জাগিয়ে কাছে আনল সবাই মিলে কলাগাছটা গর্তের উপর বসাল। খুব সাবধানে যেন ঢিবিতে পা না লাগে। 


সব কাজ শেষ। ঢিবিটাও শুকিয়ে যাবে। শ্যামল বাজার থেকে রঙিন কাগজ আনতে গেল। বিকার বেলা কাগজগুলো ৩ টা কলাগাছের উপর লাগিয়েছে। মাঝখানের কলাগাছটা একটু বড় করে রাখা হয়েছে। আর তার পাশের ২ টা কলা গাছ সমার করে কাটা হয়েছে। সাজিদ একটা ঝাড়ু এনে আশেপাশে পরিষ্কার করতে লাগল। এখন পরিবেশটা ভাল লাগছিল। কাগজ দিয়ে মুরিয়ে দেয়ার পর কেউ বলতেই পারবেনা যে এগুলো কলাগাছ। 

আলামিন বলল, একটা জিনিস এখনো আমাদের বাকি রয়েছে সেটা হলো লাল বৃত্ত । কিন্তু লাল বৃত্তের কথা কারো মনে নেই। শ্যামল বললো, ঠিক আছে আজকে রাতে আনব। 

শ্যামল রাতেই আবার লাল রঙের কাগজ নিয়ে এল। রাতে শ্যামল সেটা গোল করে কাটলো। রাতেই এটা লাগানো যাবেনা। না হলে নিহর পড়ে ভিজে যাবে। এটা সকালে লাগালে ভালো হবে। 


সকালবেলা খুব শীত পড়েছে, সবাই খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছে, কারণ আজকে একুশে ফেব্রুয়ারি। শহীদ মিনারে ফুল দিতে যেতে হবে।। সবাই কি ফুল দিবে তার পরিকল্পনা করছে।

 শ্যামল লাল বৃত্ত টা লাগানোর জন্য এসেছে। অনেক মানুষ আমাদের শহীদ মিনার দেখতে এসেছে। সবার মনে হয় খুব ভালো লাগছিল।

শ্যামল সাজিদ, আজাদ ,আসিফ ,আল আমিন, রুবেল সবাই আস্তে আস্তে আসতে লাগল। গ্রামের একটা সাধারণ ফুলের নাম গাঁদা। প্রায় অনেকের বাড়িতেই গাঁদা ফুল গাছ পাওয়া যায়। হাতে গোনা কয়েকজনের বাড়িতে গোলাপ গাছ পাওয়া যায়। 

সকাল বাড়ার সাথে সাথে সবাই ফুল নিয়ে আসে। কেউ গাঁদা ফুল আবার কেউ মোরগ ফুল আবার কেউ শিম গাছের ফুলের তোড়া, অনেকে ঘাস-ফুল ইত্যাদি। কিন্তু গোলাপ ফুলটা কোথাও পাওয়া গেল না।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract