Md Awal

Tragedy Others

3  

Md Awal

Tragedy Others

ছোট বোন

ছোট বোন

6 mins
257


রাতের বেলা চাঁদটা খুব বড় মনে হচ্ছে। রাশেদ রাস্তার ফুটপাতে শুয়ে আছে। তার পাশে শুয়ে আছে তার ছোট বোন মায়া। মায়া মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে। রাশেদের ঘুম আসছে না। রাশেদের মনে হাজার হাজার চিন্তা। কোন কারণ ছাড়াই কেন যে হাজির হয় মাথার মধ্যে। রাশেদ এপাশ ওপাশ করছিল। শীত শীত কমে এখন গরম পড়েছে। কালকে একটু বৃষ্টি হয়েছিল। রাশেদ আর মায়া বৃষ্টিতে ভিজেছিল। যার কারণে মায়ার শরীরটা একটু খারাপ। রাশেদেরও মনে হয় ঠান্ডা লাগবে। ঠান্ডা লাগলেই আরেক ভেজাল। রাশেদ খবরে শুনেছে সারা দেশে কি নাকি একটা ভাইরাস আক্রমণ করেছে। যাকে ধড়ে তার নাকি আর রক্ষা নেই। রাশেদ আরো জেনেছে ঠান্ডা থেকেই নাকি এই ভাইরাস ছড়ায়। কিন্তু রাশেদ ভালোভাবে জানে না। 

রাশেদের মা-বাবা মারা যায়। কেমন করে মারা যায় তা নাই বললাম। একটা কথা বলে রাখি রাশেদ মায়াকে খুব আদর করে। এমনকি মায়াও রাশেদকে খুব ভালোবাসে। 

সকাল বেলা মায়া রাশেদকে ডাকল। মায়ার শরীরে হাত দিয়ে দেখল খুব জ্বর। রাশেদ ভয় পেয়ে গেল। মায়াকে নিয়ে রাশেদ এখন কি করবে। শুনেছে হাসপাতালগুলোতে নাকি সবাইকে ঢুকতে দেয় না। এমনিতেই রাশেদের কাছে টাকা পয়সা নেই। তার মধ্যে মায়ার জ্বর। রাশেদ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। মায়ার অনেক শীত করছে। রাশেদের কাছে লেপ-কম্বল কিছুই নেই। জ্বর আসলে কেন যে শীত করে রাশেদ তা জানে না। মায়ার শরীরে পাতলা একটা কাপড়। এতে মনে হয় আরো বেশি শীত করছে। রাশেদ একটা রুমাল ভিজিয়ে মায়ার শরীর মুছিয়ে দিতে লাগল। তারপর রুমালটা আবার পানিতে ভিজিয়ে সেটা মায়ার কপালে দিয়ে রাখল। 

রাশেদের অনেক চিন্তা হচ্ছে। মায়াকে নিয়ে এখন কোথায় যাবে! রাশেদের কাছে টাকা থাকলে এখন মায়াকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেত। রাশেদের এখন টাকার খুব দরকার। 

মানুষ এখন ঘর থেকে বের হয় না। হাঁটে-বাজারে মানুষ নেই। বাজারের দোকানগুলো আধা-খোলা। মাঝে মাঝেই পুলিশ এসে পাহারা দিয়ে যায়। মাঝে মাঝে মানুষ আসে আবার জিনিস পত্র নিয়ে চলে যায়। রাশেদ মনে মনে ভাবল, আগে সারাদিন মানুষের ভিড়ের কারণে ঢোকা যায় নি। কিন্তু আজকে এখানে একটা মানুষও পাওয়া যাচ্ছে না। রাশেদ বাজারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সামনে দুই-একটা দোকান খোলা। রাশেদ দোকানে গিয়ে টাকা চাইল। দোকানদার বলল, আমারই কামাই নাই, তুই আবার টাকা চাইতে আসছস!


রাশেদ বলল, আমার বোনের জ্বর। ডাক্তার দেখাইতে হইবো । কয়টা টাকা দেন । আরে! কইলাম নাহ্‌ , টাকা নাই। রাশেদ চলে আসল। রাশেদ অন্য একটা দোকানে গেল। কিন্তু গিয়ে কোন লাভ হল না। ফিরে আসতে হল। রাশেদ এখন কি করবে। মায়ার তো অনেক জ্বর। রাশেদ তাই চিন্তা করল, কোন কাজ পায় কিনা। কিন্তু এই সময় কোথায় কাজ পাবে? আগে রাশেদ চায়ের দোকানে কাজ করেছে। রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করেছে। বোতল কুড়িয়েছে। মোটামুটি তাদের খাওয়ার টাকাটা জুটেছে। কিন্তু এখন কোন চায়ের দোকান খোলা নেই। রাস্তায় মানুষ থাকে না বলে ময়লাও নেই। তাছাড়া ২ দিন আগের বৃষ্টিতে সব ময়লা ধুয়ে গেছে। রাস্তায় কোনো মানুষ নেই। রাশেদ টাকা পাবে কোথায়। এমন সময় একটা পুলিশের গাড়ি এসে রাশেদের সামনে এসে থামাল। রাশেদের কাছে গাড়িটা থামিয়ে পুলিশেরা গাড়ি থেকে নামল। রাশেদকে বলল, এই! এখানে তুই কি করছিস, যাহ্‌ বাড়ি যাহ্‌ । রাশেদ চুপ করে আছে। কে যেন বলল, কানে ধরে উঠবস কর। রাশেদ ভাবতেই পারে নি যে পুলিশেরা এই কথা বলবে। রাশেদ চুপ করে আছে। হটাৎ করে একজন পুলিশ তার ভারি লাঠি দিয়ে জোরে একটা বারি মারল। রাশেদের কান্না পেয়ে গেল। পুলিশরা বলল, কানে ধর। ১০ বার উঠবস করবি। রাশেদ তার কানে ধরল। এতজন পুলিশরা মিলে তাকে অপমান করল তা রাশেদ সহ্য করতে পারল না। রাশেদ উঠবস করতে লাগল। জীবনে প্রথম কারো সামনে রাশেদ কানে ধরেছে। ১০ বার উঠবস করতে রাশেদের মনে হয় সময় লেগেছে ১০ বছর। তার পর আগের মত আরেকটা বারি দিল। রাশেদের মনে হল পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। 

রাশেদ বলল, আমি যাবো কোথায়, আমার তো ঘড় বাড়ি কিছুই নাই। পুলিশেরা রাশেদের কোনো কথা শুনল না। রাশেদকে ধাক্কায়ে ফেলে দিল। আর এখানে আসবেনা। পরের বার যদি দেখি তাহলে থানায় নিয়ে যাব। রাশেদ দৌরে চলে গেল। রাশেদ খুড়িয়ে খুড়িয়ে দৌড়চ্ছে। পায়ে প্রচুর ব্যাথা। রাশেদ মায়ার কাছে ফিরে আসল। মায়া শুয়ে আছে। জ্বর মনে হয় আরো বেড়েছে। মায়ার মনে হয় খুব খারাপ লাগছে। রাশেদ মায়ার কাছে গিয়ে রুমালটা ভিজিয়ে মায়াকে কোলে বসিয়ে শরীর মুছিয়ে দিতে লাগল। মায়া খুন খুনিয়ে কান্না করছে। রাশেদের কাছে খাবার কিছু নেই। মায়ারও অনেক ক্ষুধা লেগেছে। রাশেদ মনে মনে ভাবছে। পুলিশেরা অনেক নিষ্ঠুর হয় কিভাবে। রাশেদেরও কান্না পেয়ে গেল। মায়া বলল, ভাইয়া কান্না কর কেন। 


রাশেদ বলল, আমাদের যদি মা-বাবা বেঁচে থাকত। তবে আমাদের আর এই কষ্ট সহ্য করতে হত না। এই ভাইরাসের সময় কোন কাজ পাই না। খাবো কি?

মায়া! তুই কিছু মনে করিস না। আমি জানি তোর অনেক কষ্ট হয়। তোর জ্বরের কোন ওষুধ কিনে দিতে পারি না। হাতে কোন টাকা পয়সা নাই। এই সময় কাজ করতে গেলেই পুলিশে ধরে। পুলিশরা তো ঠিকই বেতন পায়। তারা তো আর আমাদের দুঃখ বোঝে না। আমাদের তো কাজ করে খেতে হয়। 

মায়া বলল, ভাইয়া! চিন্তা করো না। একদিন আমাদেরও সমর আসবে। 

তোর কথাই যেন সত্য হয়। এমন সময় আবার সেই পুলিশের গাড়িটা এসে থামল রাশেদের সামনে। পুলিশেরা বলল, তোকে বলেছিলাম নাহ্‌ ঘড়ের বাইরে যাবি না। তারপর টেনে রাশেদকে গাড়িতে তুলে ফেলল। রাশেদ তাদেরকে বলতে লাগল, আমার বোনের খুব জ্বর । ওর কাছে যেতে হবে। আমাকে ছেড়ে দিন। পুলিশেরা কোন কথা শুনল না। 

তোর বাবা-মার ফোন নাম্বার দে।

আমার বাবা-মা মারা গেছে।

মিথ্যা কথা বলবি না। আমরা অত বোকা না। যে তোর বাবা-মা নেই বলে ছেড়ে দিব। 

আমার বোনটার খুব জ্বর , ওষুধ কেনার টাকা নেই। তাই কাজের জন্য বের হয়েছিলাম। তুই দেশের এই অবস্থার মধ্যে বের হলি কেন?

আমাদের তো খেতে হবে। 

বেশি সাধু সাজিস না। তোর বাবা-মার নাম্বার দে......।

আমরা কথা বলব।

আমি তো বললাম যে আমার বাবা-মা নেই।

বটে, লকআপে ঢুকালেই সব হন হন করে বলে দিবে। চল থানায়।

পুলিশেরা থানায় নিয়ে যাওয়ার পর গাড়ি থামাল। গাড়ি থামিয়ে সবাই নেমে গেল। রাশেদকেও নামানো হল। রাশেদকে ধরে রেখেছে। তখন রাশেদকে জেলের ভিতর ঢুকিয়ে রাখল। আর বলল, যতক্ষণ তুই তোর বাবা-মায়ের নাম্বার না দিবি ততক্ষণ তোকে এখানেই কাটাতে হবে। রাশেদ আবার বলল, আপনাদের হাত জোড় করে বলছি আমাকে ছেড়ে দিন। আমার বাবা-মা কেউ নাই। সবাই মারা গেছে। আমার ছোট বোনটার খুব জ্বর। ও কান্না করছে। আমাকে ছেড়ে দিন। পুলিশেরা কোন কথা শুনছে না। মায়ার মনে হয় প্রচুর খুধা লেগেছে। কান্না করছে মনে হয় খুধার জ্বালায়। অথচ কোন পুলিশ তার কোন কথা শুনছে না। রাশেদের দেহে শক্তি কমে আসছে। কথাই ভালোভাবে বলতে পারছে না। রাশেদ জেলের ভিতর বসে আছে। জেলের গন্ধ রাশেদের কাছে অসহ্য লাগছে। রাশেদ তো সবার কাছে শুনেছে পুলিশেরা সবাইকে সাহায্য করে। কিন্তু এখন পুলিশেরা একি করছে। একটা পথের ছেলেকে কেন এভাবে ধরে রেখেছে। রাশেদ আর কথা বলতে পারছে না। চারদিকে কেমন জানি অন্ধকার লাগছে। সন্ধ্যা বেলা রাশেদকে ছেড়ে দেওয়া হল। একজন পুলিশ বলল, আমার মনে হয় আসলেই ছেলেটার মা-বাবা কেউ নেই। ধরে রেখে কোন লাভ নেই। বাবা-মা থাকলে টাকা পয়সা দিত। ছেড়ে দিন।

রাশেদকে ছেড়ে দেওয়া হল। রাশেদের গায়ে কোন জোড় নেই। রাশেদকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে ফেলে দেওয়া হল। মায়ারও মনে হয় একি অবস্থা। রাশেদ বাইরে বেরিয়ে এসে হাঁটতে পারল না। ধপাস করে শুয়ে পরল। রাশেদ শুয়ে ছিল। রাশেদ খেয়াল করল মায়া তার পাশে এসে বসল। 

মায়া এসে বলল, ভাইয়া! আর আমাদের কষ্ট করতে হবে না। সব দুঃখ চলে গেছে। রাশেদ মায়ার দিকে হাত বাড়াল। কিন্তু কিছুই দেখতে পেল না। রাশেদ বুঝতে পারল এটা তার মনের কল্পনা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy