Md Awal

Horror Others

2.9  

Md Awal

Horror Others

অদ্ভুতুরে রান্নাঘড়

অদ্ভুতুরে রান্নাঘড়

6 mins
249


আদিবা, আদিবার ছোট ভাই, আর তার বাবা-মা ঢাকায় এসেছে। আদিবার বাবার নাম মোসারফ সাহেব। আর তার মায়ের নাম রাবেয়া বেগম। আর তার ছোট ভাইয়ের নাম মিরাজ। আদিবার বাবা ঢাকায় চাকরি করে। যার কারণে সবার ঢাকায় চলে আসতে হয়। কয়েকদিন আগে আদিবারা বাসা পালটায়। তারা নতুন বাসায় সব মালপত্র নিয়ে আসে। আদিবার বাসাটা খুব ভালো লেগেছে। খোলামেলা রুম। জানালা দিয়ে প্রচুর আলো আসে। আদিবাদের আগের ভাড়াটেরা নাকি কোন কারণে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। তারপর বাসার মালিক আদিবাদের বাসাটা ভাড়া দেয়। এ নিয়ে তারা কেউ ভাবে নি।


ঘরটা খুব সাজানো গোছানো। মোসারফ সাহেব সাধারনত বাসায় থাকে না। রাতের বেলায় অফিস থেকে ফিরে আসে। আবার সকাল বেলায় অফিসে চলে যায়। বাসায় থাকে শুধু আদিবা, আদিবার ছোট ভাই, আর তার মা। তাছাড়া এই বাড়িতে আর কেউ থাকে না। আদিবার মা রাবেয়া একটা জিনিস খেয়াল করেছে যে তাদের রুমের চারদিকটা খুব সুন্দর ও পরিষ্কার হলেও রান্নাঘরটা কেমন যেন অপরিষ্কার ও দেয়ালে প্রচুর কালো কালো দাগ। সাথে পোড়া পোড়া গন্ধ। আদিবার মা খেয়াল করেছে গ্যাসের চুলাতে কালো মরিচা পরেছে। আদিবার মা এবার ভাবলেন কোন এক সময় এখানে আগুন ধরেছিল হয়তো। বাসার মালিক বলেছে নতুন চুলা লাগিয়ে দিয়ে যাবে। আদিবাদের সিলিন্ডারের গ্যাস রয়েছে, এখন সেটাই ব্যাবহার করছে। রাত ৯ টার সময় আদিবার বাবা অফিস থেকে ফিরে আছে। আদিবার মা রান্নাঘরে রান্না করছে। হটাৎ আদিবার মা খেয়াল করল, রুমের মেঝেতে রক্তে লাল হয়ে আছে। রাবেয়া বেগম ভয় পেয়ে গেল। রাবেয়া বেগম মোসারফ সাহেবকে ডাকলেন। মোসারফ সাহেব দৌড়ে রাবেয়ার কাছে এসে বললেন কি হয়েছে? রাবেয়া বেগম বললেন, ফ্লোরে প্রচুর রক্ত পরে আছে। মোসারফ সাহেব চারদিকে তাকালেন কিন্তু কোন রক্তের চিহ্ন দেখতে পেলেন না। মোসারফ সাহেব বললেন, কিসের রক্ত। কোথাও তো রক্তের চিহ্ন দেখতে পেলাম না।রাবেয়া বেগম আবার নিচের দিকে তাকালেন। কিন্তু এইবার তিনি ঠিকই দেখলেন ফ্লোরে কোন রক্ত নেই।


মোসারফ সাহেব বললেন, তুমি মনে হয় ভুল দেখছ। এই কম আলোতে কেউ রান্না করে নাকি। কালকে একটা নতুন বাল্ব নিয়ে আসব। রাবেয়া বেগম ভাবলেন, প্রথমবার তো সে ঠিকই দেখেছিল। রক্তে তার পা ভিজে গিয়েছিল। আর এখন সব খালি হয়ে আছে। রাবেয়া বেগমের তাও ভয় কাটল না। আর একবার মনে করলেন মাথার গণ্ডগোল । রাবেয়া বেগম রান্না করে খাওয়াদাওয়া করলেন। তারপর অনেক্ষন ধরে গল্প করলেন। নতুন বাসায় কারো সাথে পরিচয় হয় নি। এখানে আবিদার কোন বান্ধবীও নেই। সবাই রাতের বেলা টিভি দেখে রাত ১১ টা নাগাদ ঘুমাতে গেল। রাতের বেলা প্রায় রাত ২ টার সময় রাবেয়া বেগমের ঘুম ভেঙে গেল। রাবেয়া বেগমের প্রচুর পানি পিপাসা লাগে। মনে হয় গলাটা কাঠ হয়ে আছে। রাবেয়া বেগম বিছানা থেকে উঠে রান্না ঘড়ে গেল। রান্নাঘর থেকে এক গ্লাস পানি নিল। কিন্তু রাবেয়া বেগম যা দেখলেন, সেটা দেখার মত প্রস্তুতি তার ছিল না। গ্লাসের সব পানি রক্ত হয়ে আছে। রাবেয়া বেগম ভয় পেয়ে তার হাত থেকে গ্লাসটা পড়ে টুকরা টুকরা হয়ে গেল। গ্লাস ভাঙ্গার শব্দে সবার ঘুম ভেঙ্গে গেল। মোসারফ সাহেব রান্না ঘড়ে গিয়ে দেখল রাবেয়া পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি হয়েছে?রাবেয়া বলল, গ্লাসের পানিতে রক্ত।মোসারফ সাহেব নিচের দিকে তাকিয়ে দেখল ভাঙ্গা গ্লাস।


কোন রক্তের চিহ্ন নেই।মোসারফ সাহেব বললেন, কোথায় রক্ত?আমি নিজের চোখে দেখেছি?তুমি কি পাগল হয়ে গেছ নাকি?তুমি বিশ্বাস কর!আমি নিজের চোখে দেখেছি।মোসারফ সাহেব বললেন, হয়েছে, ভয় পেয়ে গ্লাসটা ভেঙ্গে ফেললে। তোমার কি হয়েছে বলতো। সন্ধ্যা বেলা রক্ত রক্ত করলে এখন আবার রক্ত রক্ত করছ। তুমি মনের ভুলে দেখেছ। চলো, পানি খেয়ে ঘুমাতে যাও।রাবেয়া বেগম পানি খেয়ে বিছানায় চলে গেলেন। সবাই আবার ঘুমিয়ে পড়ল। সকাল বেলা মোসারফ সাহেব আবার অফিসে চলে গেলেন। অফিসে যাওয়ার পর রাবেয়া বেগম ঘড় ভালোভাবে দেখে নিল। বিশেষ করে রান্না ঘরটা ভালোভাবে দেখে নিল। রান্নাঘরের চারদিকটা মনে হয় আগুনে পুড়ে গেছে। রান্নাঘরটা দেখতে কেমন জানি রাবেয়া বেগমের ভয় ভয় লাগে। আবিদা আর মিরাজ টিভি দেখছে। রাবেয়া বেগম রান্নাঘরে একলা। রাবেয়া বেগম খেয়াল করল, রান্নাঘরটা কেমন জানি গ্যাসের গন্ধ। কিন্তু চুলা চেক করে দেখলেন যে সব ঠিক ঠাক আছে। তাহলে গ্যাসের গন্ধ কোথা থেকে আসল। রাবেয়া বেগম আবিদাকে ডাকল। আবিদা দৌড়ে আসল। তার মা বলল, গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছিস না!আবিদা বলল, কোথায়, নাতো!কিন্তু রাবেয়া বেগমের নাকে প্রচুর গন্ধ আসছে। জানালা তো খোলা। এতক্ষণে তো চলে যাওয়ার কথা । রাবেয়া বেগম ভয়ে আগুন জ্বালানোর সাহস পেল না। রাতের বেলা সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েছে তখন রাবেয়া বেগমের ঘুম ভেঙ্গে গেল। রাবেয়া বেগম খেয়াল করল রান্নাঘরে কিসের যেন ঝন ঝন শব্দ হচ্ছে। রাবেয়া বেগম বিছানা থেকে উঠে রান্নাঘরে গেল। রান্নাঘরে যাওয়ার পর দেখল সব থালাবাসন উল্টাপাল্টা হয়ে আছে। হঠাৎ করে রাবেয়া বেগম কিসের সাথে হোঁচট খেয়ে যেন পড়ে গেল। রাবেয়া দেখল সে একটা লাশের উপর শুয়ে আছে। লাশটার সারা শরীর রক্তে ভেজা। গায়ে কোন চামড়া নেই। চামড়া ছাড়া একজন মানুষকে যে কেমন ভয়ংকর দেখা যায় তা দেখে রাবেয়া বেগম চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারাল। চিৎকার শুনে সবার ঘুম ভেঙ্গে গেল। মোসারফ সাহেব রান্নাঘরে গিয়ে দেখল রাবেয়া বেগম মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। রাবেয়া বেগমকে খাটে নিয়ে আসা হল। মোসারফ সাহেব খেয়াল করল, রাবেয়া বেগমের শরীর থেকে খুব খারাপ ধরনের ঘন্ধ আসছে। রাবেয়া বেগমের মাথায় পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে আনা হল। তার পর রাবেয়ার মুখ থেকে সব কথা শুনল। মোসারফ সাহেব প্রথমে মনে করেছিল এটা তার মনের ভুল। কিন্তু সারা শরীর থেকে এরকম খারাপ দুরঘন্ধ আসছে কিভাবে। মোসারফ সাহেব মনে মনে ভাবলেন, নিশ্চয়ই কোন সমস্যা আছে। রাবেয়া বেগম বললেন, তুমি দেখনা ! রান্নাঘরটা কেমন অদ্ভুত।মোসারফ সাহেব চিন্তা করলেন একজন ভাল হুজুর এনে ঘড়টা দেখাবেন। যেই চিন্তা সেই কাজ। সকাল বেলাই মোসারফ সাহেব মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে গেলেন। ইমাম সাহেবকে মোসারফ সাহেব সব কথা খুলে বললেন। ইমাম সাহেব সব কথা শুনে তাকে একটা ঠিকানা দিলেন। আর বললেন, তার সাথে গিয়ে যোগাযোগ করুন। তিনি খুব আল্লাহ্‌-ওলা মানুষ। তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি নিশ্চয়ই কিছু একটা করবেন। মোসারফ সাহেব আর দেরি না করে সেদিনই রওনা হলেন সেই লোকটার বাড়িতে। লোকটির বাড়িতে গিয়ে তিনি সালাম দিলেন। ভিতর থেকে সালামের জবাব দিলেন। তারপর বললেন দরজা খোলা আছে, ভিতরে আসুন।মোসারফ সাহেব ভিতরে গিয়ে দেখলেন তিনি কুরআন । মোসারফ সাহেব লোকটির নাম আগে থেকেই জানত। লোকটির নাম মাও: আব্দুর রহমান। তিনি বললেন , দয়া করে বলুন কিসের জন্য আমার কাছে এসেছেন । মোসারফ সাহেব সব কথা খুলে বললেন। তারপর লোকটি বলল, আমি আপনাদের বাসায় যাব। মোসারফ সাহেব বললেন, কখন যাবেন?আপনাদের এলাকায় গিয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করব। দয়া করে আপনাদের বাড়ির ঠিকানাটা দিন!মোসারফ সাহেব লোকটির কাছে ঠিকানা দিল। তার পর সালাম জানিয়ে চলে আসল। সন্ধ্যা বেলা বাড়ির সবাই মাগরিবের নামাজ আদায় করল। সবাই অপেক্ষায় আছেন কখন লোকটা আসবেন। একটু পরেই লোকটা আসল। সবাই লোকটাকে সালাম দিলেন। সবাই তাকে ঘড়ে নিয়ে আসল। রাবেয়া বেগম আবার সব ঘটনা খুলে বলল। রাবেয়া বেগম তাকে রান্নাঘরে নিয়ে গেলেন। রান্নাঘরে এখনো পোড়া পোড়া ঘন্ধ আসছিল। লোকটা বলল, এখানে কোনো খারাপ আত্মা আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে। রাবেয়া বেগম বললেন আপনার যেটাই করার ইচ্ছা হয় সেটাই করুন। লোকটা একটা কুরআন শরিফ চাইলেন। রাবেয়া বেগম আলমারি থেকে একটা কুরআন শরিফ বের করে দিলেন। লোকটি একটা চাদর চাইল। রাবেয়া বেগম তাও বের করে দিলেন। তারপর বললেন, আপনারা রান্নাঘরে কেউ আসবেন না। তারপর লোকটা সেই চাদরটা ফ্লোরে বিছিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতে লাগলেন। প্রথম ৩০ মিনিট খুব জোরে জোরে তিলাওয়াত করলেন। কিন্তু তার পরের থেকে তিলাওয়াত করার শব্দ আর পাওয়া গেল না। রাবেয়া বেগম বললেন, কি হল। আসছে না কেন লোকটা?তার পর আরো ৩০ মিনিট পর লোকটা বের হলেন। আর বললেন, আপনারা ভিতরে আসুন।রাবেয়া বেগম আর মোসারফ সাহেব রান্নাঘরে গেলেন। তারপর লোকটা বললেন। এই রান্নাঘরে একটা ভয়ানক মৃত্যু হয়েছিল। ১ বছর আগে। এখানকার এক ভাড়াটেরা একটা মহিলা কাজের লোক রেখেছিল। একদিন তাদের বাড়ি থেকে অনেক টাকা চুরি হয়ে যায়। চোরকে কোনোভাবেই ধরতে পারে না। অবশেষে সবাই সেই কাজের মহিলাটিকে সন্দেহ করতে লাগল। কিন্তু মহিলাটি আসলে টাকা চুরি করে নি। কিন্তু বাড়ির লোকগুলো তাকেই সন্দেহ করতে লাগল। একসময় সেই রান্নাঘরের জানালা, বন্ধ করে রান্নাঘরে গ্যাসের লাইন চালু করে সেই কাজের মহিলাটিকে রান্নাঘর থেকে কয়েল ধরিয়ে আনতে বলল। যখন মহিলাটি রান্নাঘরে গিয়ে আগুন জ্বালাল। তখনি সব কিছু শেষ হয়ে গেল। মহিলাটির দেহের কোন অংশই সেদিন পাওয়া যায় নি। তারপর বাসার সবাই পালিয়ে যায়। যার কারণে মহিলাটির আত্মা এখানেই রয়েছে। যতক্ষণ এই আত্মা তাদের প্রতিশোধ না নিবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই আত্মা এখান থেকে যাবে না। মহিলাটির আত্মা এখন আশেপাশেই আছে। আপনাদের কোন ক্ষতি করবে না। আমি যাই যাই বলব তাই তাই করবেন।প্রথমে সব কালো কালো দাগ মুছে ফেলতে হবে। ময়লা গুলো ঘরে রাখা যাবে না। কারণ লাশের আত্মা এই কালো দাগের মধ্যেই আছে। আর এখানে একটা আয়া-তুল কুরছি লেখা কাগজ ঝুলিয়ে রাখবেন। এতে আপনাদের আর কোন সমস্যা হবে না। লোকটি চলে যেতে চাইল। কিন্তু কোন টাকা পয়সা নিতে চাইল না। মোসারফ সাহেব বললেন, রাতের বেলা আপনি এখানে খেয়ে যাবেন।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror