Md Awal

Romance Tragedy Others

3  

Md Awal

Romance Tragedy Others

ফুলি

ফুলি

6 mins
251


শুকনো একটা মেয়ে। গায়ে একটা ফ্রক। তাতে প্রচুর ময়লা। বয়স ৭ বছরের মতো হবে। কিন্তু তার পরিবার বলতে কিছু নেই। তার মা-বাবা নেই। তার সাথে কি হয়েছিল সে কিছুই মনে করতে পারে না। সে বড় হওয়ার পর বুঝতে পারে যে তার মতোও ছেলেমেয়ে এই পৃথিবীতে আছে। মেয়েটির কোন দুঃখ নেই। সারাদিন সে খেলাধুলা করলেও কেউ তাকে না করবে না। তার অনেক বন্ধু রয়েছে। কিন্তু কেউ সারাদিন খেলাধুলা করলেই তার পেটে খাবার জুটবে না। যার কারণে মেয়েটি রাস্তায় রাস্তায় ফুল বিক্রি করে।

একদিন এক মেয়ে তার কাছ থেকে ফুল কিনল। ২ টা টকটকে লাল গোলাপ। 

কত দিতে হবে?

আপনি যা দিতে ভালবাসেন। 

তার পর মেয়েটি তার ব্যাগ থেকে ৩ টা ১০ টাকার নোট দিল। আর জিজ্ঞাস করল,

তোমার নাম কি?

ফুলি।

তোমার কাজ আর নামের সাথে খুব মিল রয়েছে দেখছি। তোমার বাবা-মা কি করে?

আমার বাবা-মা নেই।

মেয়েটির মনটা একটু খারাপ হয়র গেল। তারপর মেয়েটি ফুলিকে আরো ২০ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বলল, কিছু খেও?

ফুলি তার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বলল, আমার কোন সমস্যা হয় না। আমরা সবাই মিলে একসাথে থাকি।

কাদের সাথে থাক?

বন্ধুদের।

ফুলি মেয়েটিকে জিজ্ঞাস করল, " আচ্ছা আপা, আপনার নাম কি?"

মেয়েটি হেসে জবাব দিল, আমার নাম রেহানা আক্তার। তুমি আমাকে রেহানা আপু ডাকতে পার। 

আপনি কি এখানে প্রত্যেকদিন আসেন?

আসি কিন্তু কোন কোন দিন বাদে।

কোন কোন দিন?

এই ধরো, শুক্রবার ও তারপর কোন ছুটির দিন।

আপনি মনে হয় লেখাপড়া করেন!

হ্যা! তুমি লেখাপড়া করো না?

নাহ্‌ ।

তাহলে তো তোমারি ভাল, লেখাপড়ার কোন চাপ নেই। সারাদিন শুধু স্বাধীনতা আর স্বাধীনতা। 

তারপর একটি বাস এসে থামল। রেহানা আপু উঠে দাঁড়াল। বলল, আজ যাই। পরে আবার দেখা হবে। তারপর রেহানা আপু বাসে উঠে গেল। ফুলি সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। রেহানা আপুর কাছ থেকে ৫০ টাকা পেয়ে ফুলির খুব ভাল লাগছিল।

তারপর হঠাৎ করে একটা ছেলে ফুলিকে ডাকল। ছেলেটি বলল, তোমার কাছে গোলাপ ফুল আছে? 

ফুলি বলল, আছে?

ফুলির কাছ থেকে সব সময় মেয়েরা ফুল কিনে। কিন্তু এইবার প্রথম একটা ছেলে তার কাছে ফুল চাইল। 

ছেলেটি বলল, এখানকার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ফুলটা আমাকে দাও। 

ফুলি বেছে বেছে ভাল ফুলটা ছেলেকে দিল। 

ছেলেটি তাকে বলল, কত টাকা দিতে হবে?

ফুলি ছেলেটিকে বলল, আচ্ছা আপনি এই ফুল দিয়ে কি করবেন? ফুলতো কেনে মেয়েরা। 

-তাতো বলা যাবে না!

-যদি বলেন তাহলে আমি আরেকটা ফুল বেশি দেব।

ছেলেটি ফুলির মাথায় হাত রেখে বলল, তোর মতো একটা সুন্দর মেয়েকে গিফট করব। ফুলির খুব লজ্জা লাগছিল। ছেলেটি ফুলিকে ১০০ টাকার একটা নোট দিল। ফুলি মনে মনে ভাবল এদের মতো সবাই যদি ফুল ভালবাসত তবে আমি আজ লাখ লাখ টাকার মালিক হয়ে যেতাম। কিন্তু দুনিয়াটা তার উলটো। সবাই সবার টাকা পয়সা,বাড়ি,গাড়ি ভালোবাসে। ফুলকে ভালোবাসাটা একটা অনর্থক কাজ বলে মনে করে। ছেলেটা চলে যাওয়ার দিকে ফুলি তাকিয়ে ছিল। আজ সারাদিন ফুলি ২০০ টাকার মতো পেয়েছে। ফুলি আগে কোন দিন এতো টাকা পায় নি। মনে মনে ফুলির আনন্দ হচ্ছিল। ফুলি তার বন্ধুদের জন্য কিছু রুটি আর কিছু ডাল কিনে নিয়ে গেল। ফুলি তার ঘড়ে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। তার ঘর বলতে একটা ছোট্ট তাঁবু। ফুলির বন্ধুরাও সেখানে মিলেমিশে থাকে। ফুলিই তাদের মধ্যে বড়। বন্ধুরা রুটি দেখে অন্যদের মতো হুলস্থূল কাণ্ড ঘটাল না। তারা ধীরে সুস্থে চুপচাপ বসে রইল। ফুলি এক এক করে তাদের মধ্যে রুটি ভাগ করে দিল আর নিজেও সমান ভাগ নিল। ফুলি কিছু টাকা বালিশের নিচে রেখে দেয়। আগামীকাল আবার ফুল কিনতে হবে। খেয়েদেয়ে ফুলি ও তার বন্ধুরা একসাথে ঘুমিয়ে পড়ল। 

ফুলির খুব সকালে ঘুম থেকে উঠল। উঠে চারদিকে একটু তাকিয়ে দেখে। টিউবওয়েলের পানি দিয়ে হাত মুখ ধয়। তারপর সামাদ ভাইয়ের নার্সারিতে ফুল কিনতে যায়। আজকে সামাদ ভাইয়ের সাথে দেখা হওয়ার পর সামাদ ভাই ফুলিকে বলল, তোর জন্য টাটকা ফুল তুলে এনেছি। আজকে বেশি করে ফুল নিয়ে যা। প্রচুর বিক্রি হবে। 

কেন ! আজকে বেশি বিক্রি হবে কেন?

কেন তুই জানিস না? আজকে একুশে ফেব্রুয়ারি।

তা ফুল বেশি বিক্রি হবে কেন?

কারণ সবাই শহিদ মিনারে গিয়ে ফুল দিবে। তুই যাবি না?

ফুলি আগে কোন দিন শহিদ মিনারে যায় নি। ফুলি তাও জানে না যে কেন শহিদ মিনারে ফুল দিতে হয়। ফুলি মনে মনে ভাবে। সে যদি লেখাপড়া করত তাহলে অনেক কিছু জানত। নিশ্চই এটাও জানত যে কেন শহিদ মিনারে ফুল দিতে হয়। ফুলি সামাদ ভাইয়ের কাছ থেকে অনেকগুলো ফুল কিনল। তারপর বাজারের দিকে গেল। ফুলি বাজারে গিয়ে তার ফুলগুলো সাজিয়ে রাখল। ফুলি রেহানা আপুর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু আজকে আসছে না। ফুলি মনে মনে ভাবল আজকে কি কোন ছুটির দিন নাকি!

ফুলি খেয়াল করল আজকে অনেক মানুষ হাতে ফুল নিয়ে যাচ্ছে। অনেক মানুষের হাতে ফুলের তোরা। অনেকের হাতে গোলাপ,রজনীগন্ধা ইত্যাদি। ফুলি সেই লোকগুলোর পিছনে জেতে আরাম্ব করল।

 

এই মেয়ে! আমাকে কয়েকটা গোলাপ ফুল দাও!

ফুলি তাকিয়ে দেখল আজকেও একটা ছেলে ফুল চাইছে।

ফুলি মনে মনে ভাবল, ছেলেটিও মনে হয় শহিদ মিনারে ফুল দিতে যাবে। ছেলেটি বেছে বেছে ৪ টি ফুল নিল। ছেলেটি ফুলিকে ১০০ টাকার নোট দিল। তার পর ছেলেটি চলে গেল। ফুলি সেই ছেলেটির পেছনে পেছনে যেতে আরাম্ব করছিল। কিন্তু আরেকজন লোক ফুলিকে ডাকল। সেই লোকটার সাথে একটা ছোট্ট মেয়ে। ফুলির চাইতে বয়সে একটু ছোট হবে। মেয়েটি লোকটাকে বলল, বাবা! আমার এই ফুলটা চাই। লোকটিও তার হাত দিয়ে ফুলিকে দেখিয়ে দিল। ফুলি ফুলটা তার হাতে দিল। লোকটা আবার মেয়েটির হাতে ফুলটা দিল। মেয়েটি কিছুক্ষণ ফুলটি নাড়াচাড়া করল। তারপর লোকটি ফুলিকে ১০ টাকার নোট দিল। ফুলি হাতে নিল। ফুলি আবার হাঁটা আরাম্ব করল। সেই ছেলেটির পিছু আর নিতে পারল না। তবুও সে একলা একলা কিছুক্ষণ হাঁটল। ফুলির পায়ে একটু একটু ব্যাথা করছে। সারাদিন ফুলিকে ফুল নিয়ে হাটতে হয় তো , তার কারণে। হটাৎ ফুলি অনেক মানুষের হট্টগোল শুনতে পেল। অনেক মানুষ একত্রিত হয়েছে। ফুলিও সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফুলি খেয়াল করল সামনে একটা শহিদ মিনার। চারদিকে ফুল ছড়িয়ে আছে। ফুলি অনেক এগিয়ে গেল। ফুলি খেয়াল করল কারো পায়ে জুতা নেই। ফুলির মনে চাইল আমিও একটা ফুল দিয়ে আসি। ফুলি শহিদ মিনারের কাছে চলে এল। ফুলির মনে পড়ল, আমার কাছ থেকে যারা ফুল নিয়েছে তারাও মনে হয় শহিদ মিনারে ফুল দিয়েছে। সেই ফুল গুলো ফুলি খুঁজে বের করার চেষ্টা করল। 

হাজার হাজার গোলাপ ফুলের মধ্যে কি ফুলির গোলাপ খুঁজে পাওয়া যাবে?

ফুলি রেহানা আপুকে খুঁজতে লাগল। ফুলি মনে মনে ভাবল রেহানা আপুও মনে হয় এখানে এসেছে। কিন্তু ফুলি রেহানা আপুকে খুঁজে পাচ্ছে না। সবার ফুল দেওয়া দেখে ফুলির খুব ভাল লাগছিল। তারপর হটাৎ করে কে যেন ফুলিকে ডাকল। ফুলি তাকিয়ে দেখল কিছু লোক ফুল কিনতে এসেছে। 

ফুলি ভাল ভাল ফুল গুলো বেছে দিতে চাইল। কিন্তু লোকগুলো বলল, আমরা সবগুলো ফুল নিয়ে যাব। দাম কত নেবে?

ফুলি বলল, আমি কারো কাছে দাম চাই না। লোকে যা দেয় তাই নেই। এখন আপনারই ইচ্ছা। 

লোকগুলো আর কথা বাড়াল না। তারা নিজেরাই বলাবলি করছিল। আপনি কিছু দেন আর আমি কিছু দেই। 

ফুলির সব ফুল তারা কিনে নেবে। ফুলিকে তারা কত টাকা দেবে ফুলি তা মনে মনে ভাবল। সবাই সবার পকেট থেকে টাকা বের করে দিল। খুচরো টাকার নোট অনেকগুলো। ফুলি তা গুনতে পারল না । ফুলি খালি হাতে শহিদ মিনারের পাশে বসে রইল। তার পাশে একটা খালি ঝুড়ি। ফুলি দেখল শহিদ মিনারটা আস্তে আস্তে ফুলে ভরে যাচ্ছে। ফুলি রেহানা আপুকে আবার খুঁজতে লাগল। কিন্তু রেহানা আপুকে কোথাও খুঁজে পেল না। ফুলির চলে যেতে ইচ্ছা করল। রেহানা আপুকে না পেয়ে ফুলি উঠে দাঁড়াল। ফুলি চলে যাবে। ফুলি সামাদ ভাইয়ের কাছে যাবে। 

সামাদ ভাইয়ের কাছে ফুলি চলে এলো। সামাদ ভাই ফুলিকে অনেক ভালোবাসে। ফুলি সামাদ ভাইকে টাকাগুলি দিল। আর বলল গুনে দিতে। সামাদ ভাই টাকাগুলো গুনে ফুলির হাতে দিল। পুড়ো ৭০০ টাকা । 

এত টাকা দিয়ে কি করবি? পুড়ো ৭০০ টাকা । 

ফুলি আসলেই খুশি হল। এত টাকা দিয়ে ফুলি কি করবে। ফুলি মনে মনে ভাবল তার বন্ধুদের জন্য ভাল ভাল কিছু কাপড় কিনবে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance