অসমাপ্ত ভালোবাসা
অসমাপ্ত ভালোবাসা
ভার্সিটির ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকে প্রিয়াংকা কাকে যেন খুঁজছিল। প্রিয়াংকার বান্ধবীরা প্রিয়াংকাকে বলল, কাকে খুঁজছিস? আবার কার পাল্লায় পরলি। প্রিয়াংকা তাদের দিকে পাত্তা দিল না। আপন মনে মাথাটা এদিক অদিক করতে লাগল। প্রিয়াংকার বান্ধবীরা একটা জিনিস খেয়াল করল যে প্রিয়াংকার বইয়ের ভিতর একটা কাগজ। প্রিয়াংকার একটা বান্ধবী বইয়ের ভিতর থেকে সেই কাগজটা বের করল। সাথে সাথে প্রিয়াংকার হুস ফিরে এল। আর সেই বান্ধবীর হাত ধরে টানাটানি আরাম্ব করল। তাড়াতাড়ি কাগজটা ফেরত দে বলছি! তার বান্ধবী হাত সরিয়ে নিল। প্রিয়াংকা নাগাল পেল না। ক্লাসের সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য প্রিয়াংকা কিছু করতে পারল না।
আসলে ওটা একটা চিঠি। চিঠিটা হল আশিকের। তার বান্ধবীরা চিঠি পড়তে লাগল। আর প্রিয়াংকা আশিককেই খুঁজছিল। আশিক আজ ভার্সিটিতে আসে নি। চিঠিতে যা লেখা ছিল,
আমার ভালোবাসার প্রিয়াংকা,
আশা করি ভাল আছ। আমিও ভাল আছি। আজকে যদি তুমি বিকেলটা আমার সাথে কাটাও তবে আমি খুব খুশি হতাম। আমি তোমাকে কিসের জন্য ডেকেছি তা তুমি মনে হয় জান। আবার মনে নাও থাকতে পারে। কারণ আমি জানি তোমার মেমোরি খুব দুর্বল। আর মনে না থাকলেও আমি সেটা মনে করে দিতে চাই না। আর বেশি কথা বলে তোমার সময় নষ্ট করব না। শুধু একটা কথা বলে রাখি বিকাল ৪ টার সময় আমি তোমার বাড়ির গেইটের সামনে অপেক্ষা করব।
ইতি
আশিক
ভালোবাসার মানুষের সাথে এতো সংক্ষেপে চিঠি দেখে প্রিয়াংকার বান্ধুবিরা দাঁত চিপকে হাসতে লাগল।
প্রিয়াংকার বাবা-মা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়। তখন প্রিয়াংকা দশম শ্রেণিতে পড়ত। তার একটা ছোট ভাই আছে। নাম হাসান। হাসান এখন দশম শ্রেণিতে পড়ে। বাড়িতে হাসান আর প্রিয়াংকা থাকে। সাথে একটা কাজের মহিলা রান্নাবান্না, ঘড়-গোছানো সহ নানা কাজ করে। সন্ধ্যা বেলা ২ টা টিউশনিতে প্রিয়াংকার খরচ কোনরকম চলে।
আশিকের মা নেই। মা মারা যাওয়ার পর আশিকের বাবা বিদেশ চলে যায়। সেখানে গিয়ে আবার বিয়ে করে।মাঝে মাঝে আশিকের সাথে যোগাযোগ করে। ভার্সিটির আগে আশিকের বাবা আশিকের জন্য টাকা পাঠাত। কিন্তু বর্তমানে আশিক অনলাইনে কাজ করে। ভার্সিটিতেই প্রথম প্রিয়াংকার সাথে প্রেমে পড়ে আশিক।
বিকাল বেলা ঠিক ৪ টার সময় আশিক প্রিয়াংকার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। হাসান স্কুল থেকে আসার পর প্রিয়াংকা বাড়ি থেকে রওনা হয়। আশিক আর প্রিয়াংকা দুজনে হাটতে থাকে। আশিক একটা রিকসা থামিয়ে তারা দুজন রিকসাতে উঠে পড়ল। আশিক প্রিয়াংকার সাথে অনেক কথা বলল। অনেক্ষন পরে আশিক প্রিয়াংকাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গেল। আশিক প্রিয়াংকাকে বলল, কি খাবে বল?
প্রিয়াংকা বলল, তুমি যা খাওয়াবে আমি তাই খাব।
প্রিয়াংকা আরো বলল, তুমিতো আমাকে একটা ফোন করতে পারতে, চিঠি লিখতে গেলে কেন?
আশিক বলল, যেটা চিঠিতে বলা যায় সেটা ফোনে বলা যায় না।
প্রিয়াংকা হাসল। আশিক কিছু খাবারের অর্ডার দিল। সবাই মিলে খাওয়ার পর আশিক বলল, হ্যাপি বার্থডে...............
প্রিয়াংকা বলল, আজকে কত তারিখ?
১৯শে জুলাই।
প্রিয়াংকা যেন অবাক হয়ে গেল। আজকে যে তার জন্মদিন সেটা তার খেয়াল ছিল না। প্রিয়াংকা বলল, এই জন্যই তুমি আমাকে ডেকেছিলে!
অনেক কথা হল। আশিক চলে যেতে চাইল কারণ তার বাসায় কেউ নেই। প্রিয়াংকাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আশিক নিজের বাড়িতে চলে গেল। প্রিয়াংকার বাসায় ৪ জন ছাত্রী পড়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। এদিকে মাগরিবের আযান হয়ে গেছে।
আশিক বিছানায় বসে আছে। কাজের বুয়া রান্না করে রেখে গেছে। গরম করে খাওয়া যাবে। মোবাইলটা হাতে নিতেই কারেন্ট চলে গেল। মোবাইলে ৩৬% চার্জ আছে। শহরে সাধারনত বেশিক্ষণ কারেন্ট যায় না। আবার কিছুক্ষণ পরে চলে আসে। আশিক মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকল। ৩০ মিনিট হয়ে গেল এখনো কারেন্ট আসছে না। আশিকের একটু ঘুম ঘুম লাগতে লাগল। এক সময় আশিক না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ল।
প্রিয়াংকার টিউশনি কেবল শেষ হল। ছাত্রীদের মায়েরা এসে তাদের নিয়ে যায়। কাজের মহিলা রান্নাবান্না করে। হাসান পড়তে বসেছে।
আশিকের ঘুম ভেঙে গেল। আশিক খেয়াল করল দরজার কলিং বেলের আওয়াজ। আশিক চোখ টলাতে টলাতে দরজার কাছে গিয়ে আওয়াজ করল, কে?
আশিকের মাথা থেকে এখনো ঘুম যায় নি। আশিক তাই কোন কথা না ভেবে দরজা খুলে দিল। দরজা খোলার সাথে সাথে কয়েকজন লোক ঘড়ে ঢুকে গেল। আশিক তাদের চিনতে পাড়ল। তারা রবিনের দল। সাথে রবিনো আছে।
রবিন বলল, শুনলাম প্রিয়াংকাকে তুই ভালবাসিস?
হ্যাঁ!
প্রিয়াংকাকে তুই ভুলে যা...
কেন?
কারণ প্রিয়াংকাকে আমি ভালোবাসি।
কিন্তু প্রিয়াংকা তো আমাকে ভালোবাসে...
আমি অত কথা বুঝতে চাই না। কাল থেকে তোকে যেন প্রিয়াংকার সামনে না দেখি।
আমি পারব না!
রবিনের প্রচণ্ড রাগ হতে লাগল। রাগের মাথায় রবিন অনেক কিছু করতে পারে। এইবারও রবিন করে ফেলল। আশিককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। কিন্তু দুর্ঘটনা বসত তার মাথাটা এমন এক জায়গায় গিয়ে লাগল যে মাথাটা ফেটে গেল। প্রচুর রক্ত বের হচ্ছে। রবিন একটু ভয় ভয় পেয়েছে। আশিক অজ্ঞান হয়ে গেছে নাকি মারা গেছে কিছু বুঝতে পারছে না। একজন তার নাকের সামনে আঙ্গুল দিয়ে দেখল দম আছে নাকি। কিন্তু যা দেখল তা দেখে শুধু রবিনই নয় বাকি সবাই বাকরূদ্ব হয়ে গেল। আশিক মারা গেছে। কারো মুখে কথা নেই। রবিনেরও ভয় লাগছে। রবিন বলল, এখন কি করব? আরেকজন বলল, কেন আবার ধাক্কা দিতে গেলি!
আরে আমি কি জানি যে একেবারে মারা যাবে!
হয়েছে! কথা বাদ দে, এখন কি করা যায় কি বল...
সবাই চুপ হয়ে আছে। এখন কি করা যায়। একজন বলল, এখান থেকে নিয়ে কোথাও পুতে দিয়ে আসি। কিন্তু রাস্তায় মানুষ আছে কারণ বেশি রাত হয় নি। লাশ নিয়ে বাইরে গেলেই ধরা পরে যাবে। রবিনের মাথায় একটা বুদ্বি এলো। রবিন সবাইকে দড়ি খুঁজতে বলল। সবাই দেরি না করে দড়ি খোঁজাখুঁজি আরাম্ব করল। রবিনের খুব চিন্তা করছিল। রবিন জানতই না যে এতো সহজেই আশিক মারা যাবে। তাছাড়া মাথার একপাশে আঘাত লাগলে এমনিতেই মারা যেতে পারে। আর সেখানেই আশিকের আঘাত লেগেছে। তার বন্ধুরা একটা মোটা দড়ি নিয়ে আসল। তারপর আশিকের গলায় তা পেঁচানো হল। ২ টা পেঁচ দিয়ে ২ জন ২ দিক থেকে টানা হল। তারপর গলা থেকে দড়িটা খুলে তা ফ্যানের সাথে শক্ত করে বেধে দেওয়া হল। তারপর ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিল আশিকের লাশ।
কিন্তু রবিনের শেষ রক্ষা হল না। আজ থেকে ১ বছর পর পুলিশেরা রবিনকে ধরে ফেলল। রবিনের ১০ বছরের জেল হয়েছে। জেলে বসে অপেক্ষা করছে ১০ বছরের জন্য । আর নিয়ত করেছে আর কোন দিন কোন খারাপ কাজ করবে না।
আশিকের সাথে প্রিয়াংকা রাতের বেলায় রিকসায় উঠেছে। তারা দুজন গল্প করছে। আশিককে কেমন যেন দেখাচ্ছে। আশিকের ফর্সা চেহারাটা কেমন যেন কুচকুচে কালো দেখাচ্ছে।
প্রিয়াংকা আশিককে বলল, এরকম চুপ করে আছ কেন?
আশিক কোন কথা বলে না। প্রিয়াংকা আশিকের হাত ধরে ঝাঁকুনি দিল। আশিক শক্ত হয়ে আছে। প্রিয়াংকা তার হাত ধরে চমকে গেল। কারণ দেখল আশিকের হাত বরফের মতো ঠান্ডা। প্রিয়াংকা বলল, তোমার হাত এতো ঠান্ডা কেন?
আশিক বলল, তুমি কি শুধু আমাকেই ভালবাস?
প্রিয়াংকা বলল, তুমি এমন কথা কেন বলছ? আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
আমি মরে গেলেও কি তুমি আমাকে ভালবাসবে?
কি হয়েছে তোমার! তুমি কেন আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? আমি মরে গেলেও তোমাকে চাই। প্রিয়াংকা খেয়াল করল আশিকের মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। আস্তে আস্তে রক্তে সারা গা ভিজে গেল। প্রিয়াংকা হটাৎ আশিকের দিকে তাকিয়ে দেখল আশিকের মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। আর সেই রক্তে সারা শরীর ভিজে গেছে। প্রিয়াংকা ভয়ে লাফ দিয়ে রিকসা থেকে নেমে গেল।
প্রিয়াংকার ঘুম ভেঙ্গে যায়।
সারা শরীর ঘেমে গেছে। প্রিয়াংকা আবারো ভয় পেয়েছে।
প্রতি রাতেই প্রিয়াংকার স্বপ্নে আশিক দেখা দেয়। আশিককে ঘুমের ভেতর নিয়েই প্রিয়াংকা চলতে থাকে। এমনকি প্রিয়াংকার বিয়ে হয়ার পরেও মাঝে মাঝে স্বপ্নে আশিককে দেখে।