Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

শুভায়ন বসু

Horror Classics Thriller

3  

শুভায়ন বসু

Horror Classics Thriller

কালো গাড়ি

কালো গাড়ি

6 mins
181


মানুষের জীবনে অনেক রকম অদ্ভুত ঘটনা ঘটে ,কিন্তু এর মধ্যে এমন কিছু ঘটনা আছে যার কোন ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।

 ট্রাফিক সাবইন্সপেক্টর বালাজির ঘটনাটা সেরকমই। দক্ষিণ ভারতের উটিতে ট্রাফিক পুলিশ হিসেবে ,সে তার দায়িত্ব খুব ভালোভাবেই সামলাত। যদিও পাহাড়ী কুয়াশাময় রাস্তা, অসংখ্য গাড়ির ট্রাফিক আর পাশেই বিপদসঙ্কুল খাদ, তবুও নিষ্ঠাবান হিসেবে বালাজি উর্ধ্বতন কর্তাদের খুব বিশ্বাসভাজন ছিল।

 অক্টোবর মাসের এক সকালের শিফ্টে কমার্শিয়াল রোডের ট্র্যাফিক পোস্টে ডিউটি করছিল বালাজি। সকালের দিকে কুয়াশা সেদিন একটু কম ।গাড়ির ভিড়ও প্রায় নেই ,সেটা শুরু হবে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে। বেশ রিল্যাক্সডই ছিল বালাজি।ক’টা ট্রাক পাশ করিয়ে সবে ও রাস্তার ডান দিকে একটু সরেছে, হঠাৎই সাঁ-আ-আ করে একটা শব্দ শুনল। মুহুর্তের মধ্যে একটা কালো সেডান গাড়ি হুশশ্ করে ওর পাশ দিয়ে ওভারস্পিডে বেরিয়ে গিয়ে পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে অদৃশ্য হয়ে গেল। এত স্পিড!পরের পোস্টে জানাতে হবে ব্যাপারটা।এরকম পাহাড়ি রাস্তায় যেকোনো সময় ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। কম করে একশ' স্পিডে গেছে গাড়িটা ।ভাবতে ভাবতেই পরের পোষ্টের সিংহাকে ওয়াকিতে ধরল বালাজি।

-‘বালাবিগ টু লিম্বা, বালাবিগ টু লিম্বা, ডু ইউ কপি ?’

দু তিন বার কোড বলার পর জবাব আসল।তড়িঘড়ি ও সিংহাকে গাড়ির বর্ণনা দিল আর স্পিডট্র্যাপে গাড়িটাকে আটকানোর জন্য ব্যারিকেডের ব্যাবস্থা করতে বলল।

-‘কালো গাড়ি, সেডান। টেন সেভেন্টি থ্রি।‘

-‘রজার’।সিংহা বুঝেছে বলে জানাল।

এরপর ধীরে ধীরে স্বাভাবিকভাবেই ট্রাফিকের ভিড় বাড়তে থাকল, সকালের ঘটনাটা বালাজি প্রায় ভুলেই গেল।

হঠাৎ ওর মোবাইলে একটা ফোন আসল, ওর সার্জেন্ট কৃষ্ণার। কৃষ্ণা রেগে বলল,

-‘দারু পিয়া হ্যায় কেয়া,সুবে সুবে?’ 

-‘কেন,কি হয়েছে সাব?’  

-‘কি হয়েছে বুঝতে পারছ না? কোন্ কালো গাড়িকে স্পিডট্র্যাপে ধরতে বলেছিলে সকাল সোয়া সাতটায়?’ 

-‘হ্যাঁ সাব, বলেছি তো। একটা কালো সেডান। ওভারস্পিডে ক্রস করল আমাকে কমার্শিয়াল রোডে। প্রায় একশো স্পিড হবে।কেন,সিংহাকে বললাম যে,ও আটকায়নি?’ 

-‘মিথ্যে কথা বলার জায়গা পাওনি? ওরকম কোন কালো গাড়ি ওদিকে যায়নি।‘ 

-‘কি বলছেন সাব?’ 

-‘ঠিকই বলছি। রং রিপোর্টিং।ইউ উইল বি পেনালাইজড।‘  

বালা একটু অবাক হল ,যেভাবে গাড়িটা থোড়াইকেয়ার ভাবে পরের পোস্টের দিকে যাচ্ছিল , যা কিনা মাত্র দশ কিলোমিটার দূরে, তাতে সিংহার তা দেখার কথা।তাছাড়া কোন ডাইভার্শনও নেই মাঝখানে।গাড়িটা স্পিড কমাতে পারে, কিন্তু যেতে তাকে হবেই ওই পথে। মাঝে আর কোথায় লুকোবে !এক যদি কোন বাড়িতে ঢুকে থাকে। পথে অবশ্য হাতে গোনা কয়েকটা বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই ,খবর নিলেই সব জানা যাবে। যাই হোক সার্জেন্টকে বালা জানাল,


‘ম্যায় ঠিক হি বোলা থা সাব।আর আমি ঠিকই দেখেছিলাম।ভগবান কি কসম।গাড়িটা প্রচন্ড স্পিডে আমাকে পেরিয়ে সিংহার বারো নম্বর পোস্টের দিকেই গেল।সিংহা কেন দেখতে পেলনা বুঝতে পারছি না,অদ্ভুত ব্যাপার!’

ঘন্টা খানেক বাদে ট্রাফিকের আরো কর্তারা এসে হাজির হল জিপে করে,সঙ্গে দুজন সার্জেন্ট বাইকে করে।সবাই বালাকেই বকাঝকা করল ভুল রিপোর্ট দেবার জন্য। ওরকম কোন গাড়ি পেরোতেই পারেনা। ওর আগের, পরের গোটা পাঁচেক পোস্ট থেকে এরকম কোন গাড়ির খোঁজ পাওয়া যায়নি ,এমনকি সিসিটিভি ক্যামেরা থেকেও নয়। ডিউটি চেঞ্জ করিয়ে বালাজিকে কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে আবার চালানো হল সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যেকার সমস্ত ফুটেজ। কালো সেডানের কোন ছবি পাওয়া গেলনা, এমনকি কমার্শিয়াল রোডের সিসিটিভি ফুটেজেও নয় ।

 -‘নো বালা,আই ডিডন্ট এক্সপেক্ট দিস ফ্রম ইউ। তুমি কি আজকাল ড্রিংক করা শুরু করেছ নাকি?’ বড় সাহেবের ধমকে বালাজির মুখটা চুন হয়ে গেল মনে ভয় হল, ডিউটি অবহেলা আর ভুল রিপোর্টের জন্য না ওর বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নেয় বড়বাবু !


-‘কি বলছেন বড়সাহেব,আমি মদ খেয়েছি!’ বালা স্তম্ভিত হয়ে বলে। 

-‘না বালা, তোমার রিপোর্ট সম্পূর্ণ ভুল ছিল,তুমি কি করে এত ভুল দেখলে? ইউ মাস্ট গো থ্রু ব্রেথটেস্ট। আই অ্যাম সরি।‘

বালা কিন্তু ওর বয়ানে স্থির থাকল।ব্রেথ টেস্টে  পাশ করার পর, শেষে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার নিরুপায় হয়ে অনুসন্ধানের আদেশ দিলেন।‘ওকে, একটা চান্স নেওয়া যাক।লেটস স্টার্ট রুটিন এনকোয়্যারি।‘ 

 বালাকে নিয়ে একটা জিপে দুজন এএসআই আর সার্জেন্ট কৃষ্ণার এনকোয়ারি টিম বের হল। এত স্পিডে যদি গাড়িটা গিয়ে থাকে,  তবে কি কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হল? এনকোয়্যারি তো করতেই হবে ।বালাজি গাড়িটাকে যেদিকে যেতে দেখেছে, সেই পথে বেরিয়ে পড়ল জিপটা। কিন্তু কোন কালো গাড়ির সন্ধান পাওয়া গেলনা। এমনকি পথের বাঁক গুলোতেও কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। রাস্তায় যে কটা বাড়ি পড়ে তাতেও খোঁজ নেওয়া হল,কিন্তু কোন খবর পাওয়া গেল না। এমনকি চায়ের দোকানের লোকটাও অস্বীকার করল ঘটনাটা। বললো, ও তো সকাল ছটাতেই দোকান খুলেছিল। আকাশ থেকে পড়ল বালা,এমন হতেই পারেনা! গাড়িটা যে পথে এত স্পিডে গেল, চায়ের দোকানটাকে যেভাবেই হোক পেরোনোর কথা !একি অসম্ভব কথা শুনছে সে! ‘কি বলছ কি?তুমি মিথ্যেবাদী।‘ তর্কাতর্কি লেগে গেল দোকানীর সঙ্গে।‘আমি কেন মিথ্যে বলব, স্যার ?অত স্পিডে একটা গাড়ি চলে গেল, আমার দোকানের পাশ দিয়ে ,আর আমি দেখতে পাবো না! কোন শব্দ পাবো না! গাড়িটা কি উড়ে উড়ে গেল?’দোকানীর সাফাই। বালা তেড়ে গেল দোকানীর দিকে। ‘তুমি দেখোনি? ক’টায় দোকান খুলেছিলে আজ? মিথ্যুক কোথাকার।‘ এবার কৃষ্ণাই উল্টে রেগে গেল বালাজির ওপর।‘চুপ করো বালা, ভুল তুমি বলছো। তুমিই কি দেখতে কি না দেখেছো। এরকম কোন ওভার স্পিড গাড়ি আজ কোথাও কেউ দেখেনি,ক্যামেরাতেও ওঠেনি। একা তুমি কি করে দেখলে শুনি?’কৃষ্ণার বকুনি শুনে বালা একটু দমে গেলেও, কিছুতেই নিজের বয়ান ফিরিয়ে নিল না।ও পরিষ্কার দেখেছে, শুনেছে গাড়িটাকে চলে যেতে, অভিজ্ঞ চোখে বুঝেছেও গাড়িটার গতি কত ছিল। ও একশো শতাংশ নিশ্চিত ।এখনও চোখ বুজলে ও ঘটনাটা দেখতে পায়। কালো সেডানটা দৈত্যের মত হুস্স্ করে চলে গেল। পরের বাঁকটাও নিল প্রায় একই স্পিডে।'হে-ই-ই'চেঁচিয়ে উঠেছিল বালা।কিন্তু ততক্ষণে গাড়িটা অনেক দূরে চলে গেছে। ও নিশ্চিত, কোথাও কারও কোনো একটা ভুল হচ্ছে। অত বড় গাড়িটা কি ভোজবাজির মত উবে গেল! এতদিন ধরে এত দায়িত্ব নিয়ে ও ট্রাফিক সামলেছে, আজ ওকে প্রথমবার ব্রেথটেস্ট দিতে হয়েছে।ও নাকি মদের ঘোরে ভুল দেখেছে!না, এই বদনাম ও কিছুতেই মেনে নেবে না।


ওর কাকুতি মিনতিতে শেষে এনকোয়ারি আরও জোরদার হল। একটা জিপে রেসকিউ টিমের দুজনকে নিয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার নিজে হাজির হলেন।পাহাড়ের কোনো বাঁকে অ্যাক্সিডেন্ট হয়নি তো গাড়িটার! অভিজ্ঞ চোখে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার সবকটা শার্প টার্ন ও দুর্ঘটনাপ্রবণ জায়গাগুলো চেক করাতে থাকলেন। হঠাৎ দৌড়ে আসল এএসআই বার্মাজি।

-‘ইধার দেখো। ক্যা মিলা। ‘

 ওর দেখানো আঙ্গুলের দিকে ছুটে চলল সবাই ।পাওয়া গেছে! বড় বড় সিলভার ওক গাছের পিছনে আঙুল দেখাল বার্মাজি। কাছে যেতেই সবার চক্ষু চড়কগাছ,কালো গাড়িটা গাছের জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে গেছে ।ধাক্কাও মেরেছে একটা বড় গাছে ।কিন্তু এ কি! গাড়িটার গায়ে এত শ্যাওলা, এত আগাছা কেন? গাড়িটা তো আজই অ্যাকসিডেন্ট করেছে !তবে কেন এত পুরনো জং-ধরা অবস্থা! গাড়িটার সারা গায়ে এত আগাছাই বা জন্মালো কি করে !


 সাবধানে গাছে দড়ি বেঁধে ,ধরে ধরে খাদের গা বেয়ে নেমে গেল সবাই ,এরকম রেসকিউ মিশনে ওরা অভ্যস্ত। আগাছা পরিষ্কার করেও কালো কাচের ভেতর কিছু দেখা গেল না। দরজাও খুললো না ।গাড়ির সামনের দিক ঝুলে আছে খাদে, ওদিকে যাওয়া যাচ্ছে না। গাড়ির ভেতর কজন আটকে আছে ,তাও বোঝা যাচ্ছে না। জিপ থেকে কাঁচ ভাঙ্গার,দরজা খোলার সরন্জাম আনা হল ,ঝরঝর করে ভেঙ্গে গেল কাঁচ। তখনই পচা দুর্গন্ধে দুজন বমি করে ফেলল ।দেখা গেল একটা পচা গলা মৃতদেহ ড্রাইভার সিটে আটকে আছে।


চারিদিকে ভিড় জমে গেল।লোডার এনে গাড়িটা টেনে তোলা হল ,মৃতদেহ নিয়ে গেল পুলিশ। পুলিশের বড়কর্তারা এসে পৌছলেন।বিকেলে গোটা দুয়েক এনকোয়ারি বোর্ডেও যেতে হল বালাজিকে। জানতে পারল অ্যাক্সিডেন্টটা হয়েছে মাস ছয়েক আগে। ততদিন গাড়িটা ওখানেই গাছপালার আড়ালে থেকে গিয়েছিল, কেউ জানতে পারেনি। আগাছায় ধীরে ধীরে ঢাকা পড়ে গেছিল ।বালা প্রতিবাদ করে বলতে চাইল ,আজই তো গাড়িটা অ্যাক্সিডেন্ট করেছে, গাড়িটাকে ওভারস্পিডে যেতে ও নিজের চোখে দেখেছে । তারপরেই তো ঘটনাটা ঘটেছে। পুলিশকর্তারা হেসে উঠলেন। এপ্রিল মাস থেকেই মিসিং ছিল শ্রীনিবাসন বলে ওই লোকটা। গাড়িতে ও একাই যাচ্ছিল । প্রচণ্ড গতি সামলাতে না পেরে, বাঁকের মুখে গাছে ধাক্কা মেরে, খাদে হারিয়ে গিয়েছিল শ্রীনিবাসন সমেত গাড়িটা,কেউ জানতেও পারেনি, হয়ত গভীর রাতে ঘটনাটা ঘটেছিল। ওর ভাই কিন্তু মিসিং ডায়েরি করেছিল সেইসময়েই। 


বালাজি থম্ মেরে গেল,ওর সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যেতে লাগল, গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।কি দেখেছে তবে ও? ছ’মাস আগে অ্যাক্সিডেন্ট হওয়া গাড়ি ও কিভাবে দেখলো আজ সকালে? যে গাড়ি ও দেখেছে সেটাই যে এই অ্যাক্সিডেন্টের গাড়িটা, তা নিশ্চিত। তাহলে? ব্যাখ্যা পায়না বালা। এনকোয়ারি বোর্ডের সবাই উদ্ধারকাজের জন্য ওদের সাবাসি দেয়।

-‘ভেরি গুড জব ডান। উই আর প্রাউড অফ ইউ বালা।‘

তবু মুখে হাসি ফোটে না বালার, মনে হাজার প্রশ্ন,সব অসম্ভব মনে হচ্ছে।ফিরে যাবার সময় ওই গাড়িটার পাশ দিয়েই রাস্তা।অন্ধকার হয়ে এসেছে।ফরেন্সিক, এনকোয়ারি আজকের মত শেষ হয়ে গেছে। কালো গাড়িটা দুমড়েমুচড়ে পড়ে আছে থানার কোনটাতে। কেউ নেই আশেপাশে। এখনো কিছু শ্যাওলা, আগাছা লেগে আছে গাড়িটার গায়ে।হঠাৎ বালাজির মনে হলো গাড়ির বাঁদিকের ইন্ডিকেটরের হলুদ আলোটা একবার যেন দপ্ করে জ্বলে উঠেই চিরকালের মতো স্তব্ধ হয়ে গেল।



Rate this content
Log in

More bengali story from শুভায়ন বসু

Similar bengali story from Horror