STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Fantasy Inspirational

3  

Manab Mondal

Abstract Fantasy Inspirational

জয়নগর রাধাবল্লভ জিউ

জয়নগর রাধাবল্লভ জিউ

3 mins
248


“ডাহিনে অনেক গ্রাম রাখে সাধু চালা ।

ছত্রভোগ উত্তরিলা অবসান বেলা ॥

মহেশ পূজিয়| সাধু চলিল| সত্বর।

অম্বুলিঙ্গে গিয়া উত্তরিল সদাগর ॥”


বৈষ্ণব পদাবলী এই চার টি লাইন যথেষ্ট প্রমাণ দেয়, এককালে সুন্দর বন শুরু বাদ বন ছিলো না এখানে বানিজ্য সমৃদ্ধ জনপদ ছিলো। কিন্তু সুলতানদের শাসন কালে কলিকাতা যখন ইংরেজরা বন্দর তৈরি করলে, তখনই ডাচদের বানিজ্য স্বার্থ খালকেঁটে  আর সরস্বতীর সাথে যুক্ত করে দেওয়া গঙ্গার ধারাকে। গঙ্গার ধারাকে কেটে কিছুটা পশ্চিমে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাই একে কাঁটিগঙ্গা বলা হয়। প্রসঙ্গত বলি এই অংশের থেকে গঙ্গার জল কোনো পবিত্র তীর্থক্ষেত্রে লাগে না এই জন্য। কিন্তু এই কাটি গঙ্গা আদি গঙ্গার মজে যাওয়ার প্রধান করান। এবং এর সাথে গঙ্গা র অন্যান্য নদী গুলি বিপদে পরায়। নদী নির্ভর শীল, বাংলার কৃষি বানিজ্য শিল্প প্রভুত ক্ষতি হয়।

বৰ্ত্তমান হেষ্টিংসের দক্ষিণে ও খিদিরপুরের উত্তরে আদিগঙ্গা খুব প্ৰশস্ত ছিল এবং তথা হইতে শাকরাইল পৰ্য্যন্ত কোন নদী ছিল না । শাকরাইলের দক্ষিণে সরস্বতী বইতো । সে আরো দক্ষিণ গিয়ে দামোদর, রূপনারায়ণ ও হলদির নদীর সাথে মিশে সমুদ্রে মিশতো । খিদিরপুর থেকে শাকরাইল পৰ্য্যন্ত হুগলীন দা কাটিগঙ্গা নামে খ্যাত কাটিগঙ্গা আসলে ভাগীরথ খাদ নহে ; হুগলী নদী ষোড়শ শতাব্দীতে খাত হয় এবং ভাগীরথী ও সরস্বতী খাল দ্বারা যুক্ত করা হয় ক্রমশঃ মূল ভাগীরথী , আদিগঙ্গা মজিয়া গিয়ে জলপ্রবাহ ঐ খালে প্রবলবেগে প্রবাহিত হওয়ায় বৰ্ত্তমান কাটিগঙ্গার সৃষ্টি করিয়াছে। এখন “পদ্মা” গঙ্গানদীর একাংশ বলে দাবি করা হলেও কিন্তু পদ্মার বিস্তৃতি ও জলরাশির গৌরব আধুনিক। গবৰ্ণর জেনারেল ওয়ারেন হেষ্টিংসের সময়ে ( খৃঃ১ ৭৮০ ) মেজর রেনেল সাহেব যে বঙ্গদেশের নদীসমূহের নক্সা প্ৰস্তুত করেন, তাহাতেও পদ্মার এখনকার রূপ দেখা যায় নি। তৎপূর্বে নবাবদিগের আমলেই ভাগীরথী ও পদ্মার সন্ধিস্থান, ছাপাঘাটীর মোহানী, বালুকারাশিতে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল এবং গঙ্গার জল অধিকাংশই পদ্মার পথদ্বার বঙ্গীয় উপসাগরে পরছিল। ফারকা বাঁধ বানানোর পূর্বে যে খরস্রোতা পদ্মা আমাদের গঙ্গা নয়।


আদি গঙ্গা গতি পথ নিয়ে মাথা ঘামানোর কারণ আদি গঙ্গা ঘিরে আমাদের বাঙালি জাতির অনেক ঐতিহ্য লুকিয়ে আছে। কারণ যদি আদি গঙ্গা তার পূর্ব রূপটি ধরে রাখতে পারতো তাহলে, ছত্রভোগ, জয়নগর, বারুইপুর, বোড়াল , রাজপুর মতো জনপদ গুলো হয়তো আরো সমৃদ্ধ জনপদ হতো।

ধর্ম সাধারণত শাষকের অস্ত্র, শেষ কয়েকটি শতক তাই ইসলাম শুধু নয় ব্রাম্ভন সমাজও রাজ ধর্ম হবার সুবাদে , বাংলার  লোক সংস্কৃতি সহ বৌদ্ধ ধর্ম, এবং জৈন ধর্ম কে নিশ্চিহ্ন , করতে এক ভালোই ভুমিকা গ্রহণ করেছিলেন। যেমন ব্রাম্ভন দের প্রভাবেই জটার দেউল পরিনত হয়েছে শিব মন্দিরে।এই সময় বৈষ্ণব ধর্ম টিকে রক্ষা এবং সংগঠিত করার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে, এই আদি গঙ্গার ধারে ধরেই চৈতন্য মহাপ্রভু চলেছিলেন নীলাচলে। তিনি শাক্তদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। যেমন ছত্রভোগে ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির এক সময় বলি বন্ধ হয়ে যায় তার প্রভাবে। 

এবার বৈষ্ণব এবং তন্ত্র বিদ্যার মুল লাড়াইটা হয়ে ছিলো জয় নগর অঞ্চলে। তাই এই অঞ্চলের মন্দির গুলো নিয়ে অনেক মিথ বা লোক কথা শোনা যায়। জয় চন্ডী, ধনন্তরীর, ব্রম্ভময়ী কালি কে নিয়ে শুধু নয় , সমান তালে রাধা কৃষ্ণের মন্দির নিয়ে ও চালু আছে অনেক মিথ গল্প । আবার ঠিক বেশ উৎসবের মতোই জয়নগর বিভিন্ন স্থানে শ্রী কৃষ্ণের বিভিন্ন রূপের পূজা হয় । দোলের পরের দ্বিতীয় দিনের পুজো দ্বিতীয় দোল ,তৃতীয় দিনের পুজো তৃতীয় দোল এভাবে সাত দিন ধরে সাত জায়গার আলাদা আলাদা মন্দিরে চতুর্থ ,পঞ্চম ,ষষ্ঠ ,ও সপ্তম দোল নামে দোল উৎসব উৎযাপন করা হয় । এই প্রত্যেকটা পুজোরই কোনো না কোনো মিথ তবে সবচেয়ে প্রচার পেয়েছে নটঘট ঘটনা ঘটে পঞ্চম দোল কথা । রাধাবল্লভতলার রাধাবল্লভ জিউ দোল উৎসবে । 

মিথ টি একটি সেটা হলো কদম গাছ নিয়ে । বহু যুগ পুরোনো কদম গাছে পুজোর দিন ভোরে এই কদম ফুল ফুটবেই । এই ফুল দিয়েই পূজিত হবেন শ্রী রাধাবল্লভ জিউ । যা এই সময় বিরল । এই অর্পণ করে হয় শ্রী রাধাবল্লভ জিউ এর চরণে । এছাড়া আরো একটি ঘটনা হলো নটঘট শ্রী কৃষ্ণ কথা। বৈষ্ণব মতে দোল পূর্ণিমার দিন রাধা কৃষ্ণ যখন দেখা হয়েছিল তখন রাধা পোশাকের কারণে অপ্রস্তুতে পরে, তখন আবীর রঙ দিয়ে রাধার লজ্জা ঢাকে সখী রা । সেই থেকেই দোল উৎসব এর রিতীনুসারে রাধাকৃষ্ণ কে আবীর মাখানো হয়। তা এখানকার কৃষ্ণ এতই নটঘট যে পুজোর পর সকল ভক্তবৃন্দের ও দর্শনের পর আবার যখন তাঁকে স্নান করিয়ে মন্দিরে স্থাপন করা হয়। তখন যদি তাঁর বিগ্রহে একবিন্দু আবীর বা  জলের কনা  থাকে তাহলে তিনি কোনো সেবায়েতদের ঘুমোতে দেন না ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract