STORYMIRROR

Ankita Mukherjee

Horror Romance Thriller

3  

Ankita Mukherjee

Horror Romance Thriller

জিয়াংশি

জিয়াংশি

14 mins
298

মুকডেন থেকে সরিয়ে পেকিংকে রাজধানী করা হয়েছিল। আর সেটা করেছিলেন কুইং রাজবংশের দ্বিতীয় ও পেকিংয়ের প্রথম সম্রাট, মহারাজা শুনঝি। কুইং রাজত্ব বিস্তার করেছিল উত্তর পশ্চিমে কাইরগিজস্তান, উত্তরে কাজাকিস্তান, রাশিয়া, মোংগলিয়া, পূর্বে চিন, তাইওয়ান ও পশ্চিমে তাজাকিস্টান।


সেই সময়কার রাজ-সিপাইদের পরনে থাকতো ঝোলা বড় জোব্বা ধরনের কোট ও অনেকটা উচু, গোল ঘেরাছড়া হ্যেট টুপি। সিলমোহরে লেখা আয়তক্ষেত্রের একটি কাগজের তাবিজ। সেটার একপ্রান্ত কপালে আটকানো থাকতো, আর অপর প্রান্তটি লম্বালম্বি ভাবে ঝুলত। মুখ ঢেকে যেত তাতে। অনেক সময় এর বেতিক্রমও ঘটতো। অনেকেই সর্বক্ষণ তাবিজটি ঝোলাতনা। তারা ঘোড়সওয়ার যোদ্ধা ছিল, আর অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করতো তির-ধনুক ও আগ্নেয়াস্ত্র। যুদ্ধে তারা যথেষ্ট নিপুণ ও কৌশলী ছিল। তাদের মিলিটারি বেস্ প্রচুর মজবুত ছিল; এককথায় আনবিটেবেল। তবুও ক্রমাগত ব্রিটিশ আক্রমণে ১৮৯৮ সালে সম্রাট গুয়াঙ্গসু একশত দিনের যুদ্ধ করে অবশেষে পরাজয়প্রাপ্ত হলেন স্বেতাঙ্গ যোদ্ধা দলের কাছে। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত নিজের ঘরেই নজরবন্দী করে রাখা হলো কুইং রাজবংশের দশম সম্রাট গুয়াঙ্গসুকে। তার মৃত্যুর পরে মাত্র দুবছর বয়সে সম্রাট হইছেলেন জুয়ানটং।

দূরে ঝোপটায় মস্ত গাড়িখানি দার করিয়ে ওরা নেমে পড়লো। দুই ঘুমন্ত রক্ষীদের মাঝখানের সিড়ি দিয়ে হেঁটে উঠে গিয়ে দাঁড়ালো তালাবন্ধ দরজাটার সামনে। জাদুঘরের দরজার তালার উপর হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ঢেলে দিলো ফুং লী। তালা গলতে বেশি সময় লাগলোনা। ডান হাতের তর্জনী দিয়ে অতি সন্তর্পণে দরজা ঠেলে সে ঢুকে পড়লো। বাকি তিনজনও ঢুকে পড়লো তার পিছন-পিছন। এরপর মমির চেম্বার পৌঁছতে ওদের বেশিক্ষণ লাগলোনা। ওখানেও তালার উপর হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ঢেলে দিলো। এই তালা টাও গোলে গেলো। দরজাটা খুলে তাড়াতাড়ি তুলে নিলো স্ট্যাচুটা। আবার পরো মুহূর্তেই সেটাকে নামিয়ে রাখলো ওরা। জিনিসটা যে এত ভারী হবে সেটা ওরা বুঝতে পারেনি। স্ট্যাচু তো নয় যেন গোটা একটা ছ'ফুটের মানুষ। কিন্তু স্ট্যাচু তো আগামীকালের মধ্যেই ডেলিভারি করতে হবে, নইলে বারো কোটি ইউয়ান ফসকে যাবে। ওরা এবার স্ট্যাচুটাকে কাথ করে তুলে চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলো। তারপর যখন জাদুঘরের সদর দরজা পেরোচ্ছে তখনও ওই দুই রক্ষী গভীর ঘুমে অচৈতন্য। সাবধানে মূর্তিটা গাড়িতে তুলে চাকা ছুটিয়ে দিল অতি দ্রুত গতিতে। গাড়ির আওয়াজে ভেবাচেকা খেয়ে উঠে পড়লো দুই রক্ষী। কিছু বুঝে ওঠার আগে তাদের চোখে পড়লো জাদুঘরের দরজা হাট করে খোলা, তাতে তালার চিহ্ন মাত্র নেই।


বেইজিং শহরে সকাল হতে না হতেই চীনের জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রেস-মিডিয়া হাজির। বেইজিং সরকারের সম্পত্তি চুরি হওয়ায় মিডিয়া সরকারকেই দাই থাওরাচ্ছে। তাদের বক্তব্য 'জাদুঘরে সিসিটিভি ক্যামেরার সাথে অ্যালার্ম সিস্টেমের ব্যাবস্থা রাখা উচিত ছিল সরকারের। তিনি যে একজন অকৃতজ্ঞ সরকার এটাই তার প্রমাণ। যিনি নিজের সম্পত্তি সংরক্ষণ করতে পারেননা, তিনি দেশ ও দেশবাসীর রক্ষা করবেন কিভাবে'। এত হাঙ্গামার মধ্যে ওই দুই নির্দোষ গরীব রক্ষীর কপালে গতকাল ভোর রাত থেকে পুলিশের লাঠি আর চাকরি খোয়ানো ছাড়া কিছুই জোটেনি। সেসব অবশ্য মিডিয়া কভার করতে যায়নি। তাদের যতো হাঙ্গামা সব জাদুঘরের সামনে।

বেলা বাড়তেই ব্লু প্যারাডাইস জাহাজটা খিদিরপুর বন্দরে পৌঁছালো। সোম একবার ইটালিয়ান হ্যান্ডওয়াচটায়ে চোখ বুলিয়ে নিলো। তারপর ফুং লী দের টাকা মিটিয়ে নিজের ভাড়া করা একটা মালবাহী ট্রাকে ছ'ফুটের পার্সেলটা ট্রাক চালকের সাহায্যে তুলে নিলো। মাল তোলাতে নিজেই হাত লাগিয়েছিল, কারণ সে নিজের কাজে কোনো রকম গ্যাদারিংস্ চায়না। কালো ধোঁয়া উড়িয়ে ট্রাকটা চলে গেলো। ফুং লী-রা তো দেশে এই মুহূর্তে দেশে ফিরতে পারবেনা। তাই তারা ঠিক করলো ভারতবর্ষেই কোথাও গা-ঢাকা দিয়ে কদিন কাটিয়ে বেইজিং। এখন বেইজিংয়ের আবহাওয়া গরম। আবহাওয়া ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত তাদের ধর্মগুরুর জন্মস্থানে থাকাই নিরাপদ।


গার্ডেন রীচ, কাবিতির্থ, কার্ল মার্ক্স সরণী তারপর বিজয় বসু রোড ও কনসাইপারা রোড পেরিয়ে ট্রাকটা ভবানীপুর এসে দাঁডলো। তারপর ট্রাক চালক ও সোম দুজনে মিলে আবার একসাথে হাত লাগলো আর পার্সেলটাকে তার নতুন কেনা ফোর-বি-এইচ-কে অ্যাপার্টমেন্টে তুলে নিয়ে গেলো। লিফ্টে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিল পার্সেলটা যনো নড়ছে। দুজনেই ব্যাপারটাতে অত আমল দেয়নি। ট্রাক চালকের টাকা মিটিয়ে সোম ড্রয়িং রুমের সোফাতে গা এলিয়ে দিল। ছয় কিলোমিটারে খাটুনি বলতে পার্সেলটা লিফ্টে ঢোকানো আর সেখান থেকে বের করে আ্যপার্টমেন্টে রাখা। এতেই সোম হাপিয়ে পড়েছে। সোফায়় এলিয়ে থাকতে-থাকতে একভাবে সিলিং ফ্যানের ঘুর্নাঅবয়বটা দেখে যাচ্ছে সোম। এমন সময় লোহার জিনিস ঠেলার মতো ক্যেছ করে একটা শব্দ পেয়ে চোমকে উঠলো সোম। সোফা ছেড়ে উঠে পড়লো সে। মেঝেতে পা রাখতেই তার মনে পরে গেলো বিকেলের মিটিংয়ের পর ইভনিং পার্টিতে যেতে হবে। সোম বেডরুমের লাগোয়া ওয়াশরুমে গিয়ে চটপট ফ্রেশ হয়ে মেয়টিংয়ে বেরোনোর জন্য রেডী হয়ে গেলো। দরজা খুলতে গিয়ে সোমের পার্সেলটা খুলে দেখতে ইচ্ছা করলো। পরমুহূর্তেই সে পার্সেলটা খুলেও ফেললো। সোম ছোটো থেকেই যেটা ভাবে সেটা করেই ছাড়ে। যেটা পেতে চায় সেটাও পেয়েই ছাড়ে। তাই মিটিংয়ে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে বুঝেও সে মূর্তিটাকে ছুঁয়ে দেখতে লাগলো। সোম নিজেই নিজেকে বললো, "চিন সরকারের আর চোরাচালানি গেলোনা, প্রায় এক-দেড়শো বছর আগের মূর্তি, সেটাকে মমি সেকশনে রেখে ভালোই টুরিস্টদের থেকে ক্যাশ তুলছিলো। গোটা বিশ্বকে বিপর্যয়ের সম্মুখীন করে টুরিসম ডেভেলপমেন্ট করছে। উন্নতি বলতে এরা জুতো ছাড়া কিছুই বানাতে পারেনা"। সোম নামক বক্তা ও শ্রোতাটি এবার তাড়াতাড়ি ঘর বেরিয়ে গেলো দরজাটা ভালো করে লক করে।


মিটিং শেষ করে টলিগঞ্জের দিকে যেতে যেতে তখন ঘড়ির কাঁটা সাড়ে সাতটা ছুঁয়েছে। ড্যেশবোর্ড খুলে তরল পানিয়তে গলা ভেজাতেই আবার ফোনটা বেজে উঠলো। ইনকামিং কলে কয়েলের নামটা দেখে সোম নিজের বিরক্তিটা আর দমিয়ে রাখতে পারলনা। ফোনটা রিসিভ করে বোমা ফাটার শব্দে চেচিয়ে উঠে বললো, "জ্বালানোর আর সময় পেলেনা, মিটিংয়েও জ্বালিয়েছো ফোন করে এখনও জালাচ্ছ। তোমার জ্বালায় কি শান্তিতে গাড়িও চালাতে পারবনা। চুপচাপ রেডী হয়ে ওয়েট করো, আমায় যেনো এক মিনিটও অপেক্ষা করতে না হয়। পার্টির পরে সোজা আমার সাথে ভবানীপুর যাবে"। নিজের কথা শেষ করেই ফোনটা কেটে দিলো সোম।


রাত্রি আট্টা নাগাদ টালিগঞ্জের বাড়ি থেকে কয়েলকে পিক-আপ করে তারা একসাথে ব্যাচেলর্স পার্টি উপভোগ করলো অনেক্ষণ ধরে। অনেকদিন পরে সমস্ত বন্ধুরা একত্র হয়ে দারুন মজা করেছে। শ্যামপেনের ঝর্নায় নাচ ও মদ-মাংসে ডিনার সেরে যখন ভবানীপুরের দিকে গাড়ি চালিয়ে দিলো তখন সোম মদে বুদ হয়ে গেছে। পাসের সিটে বসা কয়েল অবশ্য সজ্ঞানেই আছে। তবুও তাকে গাড়ি চালাতে না দিয়ে নিজেই অসংলগ্ন হাত দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। একটা মেয়ে ড্রাইভিং করবে আর সে হাত গুটিয়ে পাশে চুপটি করে বসে থাকবে এটা সে কিছুতেই মানতে পারবেনা, তার মেল ইগো হার্ট হবে, তাই জেদের বশে নিজের হাতেই স্টিয়ারিং রেখেছে।

ভবানীপুরের পশ এলাকাএ তখন কালো অন্ধকারের চাদরে মুড়ি দিয়ে সর্বত্র লোক গভীর ঘুমে মগ্ন। গাড়িটা অ্যাপার্টমেন্টের লং গ্যারেজে পার্ক করে ওরা নিজেদের রুমে ঢুকে গেল। সোম সোজা চলে গেলো বেডরুমের লাগোয়া ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে। ড্রয়িং রুমের আলো জ্বলতেই কয়েল আর্তনাদ করে উঠে নিজেই চুপ করে যায়। বাইরেও তখন মেঘের কর্কশ গর্জন শোনা গেলো। সোম "কি হইছে" বলে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে এলো ওয়াশরুমে থেকে। কোয়েল মূর্তিটার দিকে আঙুল দেখিয়ে সাভাবিক ভাবেই বললো, "ইস্ট টু লার্জ অ্যান্ড টলার দ্যান ইউ। প্রথমে তো একটা লম্বা মানুষ ভেবেই ভুল করেছিলাম। ব্যয় দ্যা ওয়ে, এই জিনিসটা আনলে কথা থেকে"। সোম উত্তরে বললো, "আনিনি ডিয়ার, কিনেছি। টুয়েলভ ক্রোর ইউয়ান দিয়ে"। "ইউয়ান" কোয়লের কপাল কুঁচকে গেল। "তোমার কাছে চাইনিজ টাকাও আছে, আগে বলোনি তো"। আবার বোমা ফাটল। সোম গর্জে উঠে বললো "আইঅ্যাম অ্যন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসম্যান, কতো মিটিং অ্যাটেন্ড করতে হয় জানো, এতো কম বয়সে একার পক্ষে এমন একটা ব্যাবসা চালানো কতটা রিস্কি জানো। তাতে যদি নিজের সখে দুএকটা ইউয়ান, ডলার বা রুবেল খরচা এক্সপেন্স করেই থাকি তাতে ক্ষতিটা কোথায়। তোমার বাবার পকেট থেকে ত আর নিচ্ছি না। কোয়েল বিরক্ত বোধ করলো, তাউ শান্ত ভাবে বললো, "তোমার বড় হওয়ার সখ ছিল, লাভিশ লাইফ লিড করতে তুমি চেয়েছিলে, এতে আমার বাবার দোষ কোথায়"। সোমের গর্জন থামলো না। সে আবার বললো, "সরকারি চাকরি না করলে সে তার মেয়েকে অন্য জায়গায় বিয়ে দেবে, সেটা কীকরে হতে দিতাম, তাই আমি যে পথে রোজগার করি সেটাই সঠিক। তাছাড়া তোমর বাবারও তো এখন আর কোনো আপত্তি নেই আমাদের সম্পর্ক নিয়ে। নইলে তোমার বাবা যেমন মানুষ তিনি কি আর তার মেয়েকে বিয়ের আগের রাত্রে আমার এই নতুন ফ্ল্যাটে তার মেয়েকে থাকতে অনুমতি দেয়, তাউ আবার বিয়ের আগে। তাছাড়া ব্যাবসার কাজে লাস্ট উইক আমি বেইজিং গিয়েছিলাম। ওখানকার একটা মিউজিয়ামে স্ট্যাচুটা দেখে পছন্দ হয়েছিল, তাই ডুপ্লিকেট একটা বানিয়ে নিয়েছি। তুমি তো জানোই, খুব সুন্দর জিনিস আমি নিজের কাছে রাখতে কত ভালোবাসি, আর সেগুলোকে হাতছাড়া করতে একদম ভালবাসিনা"। যদিও প্রথম আর শেষের কথাগুলো ঠিক কিন্তু ডুপ্লিকেট স্ট্যাচু বানানোর কথাটা ডাহা মিথ্যে। বিজনেসম্যান নামের পিছনে সোম যে একটা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল সেটা সে কোনদিন কোয়েলকেও বুঝতে দেয়নি। সোম নিজে যদিও এটাকে প্যাশন বলেই ভাবে।


কোনো দোষ না করেই অত করা গলার বকুনি খেয়ে মেয়েটা যেনো একটু দমে গিয়েছিল। মুখ নিচু করে কোয়েলকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সোম ওকে আলিঙ্গন করে বললো, "কোয়েল ছাড়োতো এসব, কোথা থেকে আনলাম কি আনলাম, তা জেনে তুমি কি করবে, লেস্ট সেলিব্রেট আওয়ার লাস্ট ব্যাচেলর মোমেন্ট"। কথাগুলো বলেই কোয়েলকে দুই বাহুতে তুলে নিলো সোম। বেডরুমে নিয়ে গিয়ে অতি যত্নে বিছানায় শুইয়ে দিলো তাকে, যেনো কোনো বিশেষ জিনিসকে সাজিয়ে রাখছে। তারপর নিজের শরীরটাও উপুড় করে এলিয়ে দিল কোয়েলের চিৎ হয়ে থাকা শরীরের উপর। চারটে চোখের দৃষ্টি একতৃত হলো। কোয়েলকে দুই বাহুতে ভরে নিয়ে একটা-একটা করে পোশাক সরাতে লাগলো তার শরীর থেকে। পরমুহূর্তেই তার গোলাপি ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় সোম। পরম আদরের ছোঁয়ায় কোয়েলের টানা-টানা কাজল পরা দু-চোখ বন্দ হয়ে গেলো। লালা মাখানো জিভ দুটোও তখন একে অপরকে আলিঙ্গন করে চলেছে। ঘন নিঃশ্বাসে প্রথম রিপুরুর তাপ। কোয়েলের নিশ্বাসও গভীর হতে লাগলো। ঠোঁট ছেড়ে কোয়েলের গলায় নেমে আসে সোম। অতি যত্নে কোয়েলের পিঠের তলদেশ থেকে নিজের ডান হাতটা বের করে নিল। তারপর সেটির সঠিক ব্যাবহার করলো। ডান হাতের বারবেল নিয়ে ব্যাম করা শক্ত মুষ্টিতে ধরলো তার বাঁ-পাশের পয়োধর, ততক্ষনে কোয়েলের গলা ভিজে গেছে সোমের ভালোবাসার ছোঁয়ায়। আর ডানদিকের পয়োধরে নিজের ঠোঁট দুটো ঈষৎ গতিতে বোলাতে লাগলো। কোয়েলের ঠোঁট দুটো খুলে গেলো, অস্ফুটে ক্লান্তি ভরা শব্দও বেরিয়ে এলো তার গলা দিয়ে। এমন সময় মার্বেলে লোহা রাখলে যেমন আওয়াজ হয়, তেমনি একটা ক্ষীণ আওয়াজ তাদের কান ছুঁয়ে বেরিয়ে গেলো। একজনেরও তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ হলোনা। তবে বাইরের অশ্রাব্য বর্ষণের ফলে আওয়াজটা সত্যিই ক্ষীণ শোনাচ্ছিল। কোয়েল পা-দুটো দুপাশে ছড়িয়ে রেখেছে। মাঝখানে সোমের পা-দুটি নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। সোম তার নিম্নাঙ্গ স্পর্শ করালো কোয়েলের সতিত্তে। কোয়েলের বন্ধ চোখ দিয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে গেল। নিম্নাঙ্গে রক্ত। সেই অনুযায় সোমের নিম্নাঙ্গেও কোয়েলের রক্তের রক্তিম আবরণ। পা-এর আঙ্গুল গুলো তীব্র উত্তেজনায় ভাঁজ হয়ে গেলো কোয়েলের। নিজের পা-দুটো হাঁটু থেকে ভাঁজ করে সোমের পা-দুটোকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরলো। কোয়েলের গলা দিয়ে আরো কটা অসংলগ্ন শব্দ বেরিয়ে এলো। সোমের ভালোবাসায়ে কোয়েল তার উপরের দন্তগুলির সাহায্যে নিচের ঠোঁট চেপে ধরলো। সোম অনুভব করলো কোয়েলের নখের আঁচড় তার নগ্নো পিঠে দাগের আঁকিবুকি হচ্ছে। তাদের ভালোবাসার তরলে বিছানাটি আদ্ভেজা হয়ে গেছে। কোয়েল একমুহুর্তের জন্য চোখ খুলে, চোখ বন্ধ করতে গিয়েই ভয়ে কটা হয়ে গেলো। বেডরুমের দরজায় ফ্যাকাশে রঙের হেলান দিয়ে থাকা, সামনের দিকে দুটি প্রসারিত হাতের চিনাম্যানকে দেখে। সে যেনো বাকশক্তি হারিয়েছে। সোমের পেটানো দেহটার গরম তাপ কোয়েল আর উপভোগ করতে পারছে না। সোম আবার তাকে চুম্মন করতে তার ঠোঁট ছুঁতে গেলো, কিন্তু কোয়েলের বাধা পেয়ে তার পশুসত্তা জেগে উঠলো। নিজের পছন্দের কোনো কাজে বাধা সে বরদাস্ত করেনা। তাই অনিচ্ছাসত্ত্বেও কোয়েলকে আঘাত করে সে। তার সুকোমল বাহুদুটোকে চেপে ধরে তুলে বসিয়ে ওই শক্ত বাম-হস্ত মুঠো করে কোয়েলের সুঠাম গলাটা চেপে ধরে। প্রসারিত হাতের চিনাম্যানের কথা ভুলে গিয়ে কোয়েলের এখন সোমকেই ভয় লাগছে। সে জানে সূর্যের থেকেও সোমের তেজ বেশি, এবং তার উপরেই সেই তেজের প্রভাব বহুবার পড়েছে। কিন্তু এবার যেনো সোমের মাত্রাছাড়া রাগের শিকারও হতে চলেছে কোয়েল। অতঃপর ডানহস্তেও কোয়েলের ঘাড় চেপে ধরে সোম। কোয়েলকে এখন ঠিক একটা আহত, বিষহীন সাপের মতো দেখাচ্ছে, যার বিষহীন দাঁত ভাঙ্গতে প্রস্তুত সোম। তার চাহনি দেখে মনে হচ্ছে, স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলন্ত চোখ দিয়ে কোয়েলকে ভোষ্ষ করে দিচ্ছে। রক্তিম চক্ষু দুটোয় কোয়েলের দিকে ঝলসানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে, দাঁতে দাঁত চেপে গর্জে উঠল। "কেনো বাঁধা দিতে গেলে, জানোনা কাজে বাধা আমার অপছন্দ। তুমি আমার অপছন্দের কাজ করবে এ আমি হতেই দেবোনা। তুমি সেটাই করবে যেটা আমি তোমায় করতে বলবো। আমার ইচ্ছার বাইরে তুমি একটি কাজও করবেনা। আমি করতেই দেবোনা"। সোমের মুষ্টি থেকে নিজেকে ছাড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করে কোনো লাভ না হওয়ায় কোয়েলের দুচোখ দিয়ে জলের ধার বেয়ে গেলো। ভালোবাসার মানুষটির কাছে এমন বেদনাদায়ক ব্যাবহার পেতে কোয়েলের মনটা মুচড়ে গেলো। সে শারীরিক যন্ত্রণার থেকেও মানসিক যন্ত্রণা বেশি পেয়েছে। সোম নিজেও জিনিসটা উপলব্ধি করতে পারে কোয়েলের গ্রীবা মুক্ত করে দেয়। কোয়েল তার গলার দুপাশে হাত রেখে জোর কেশে ওঠে। বন্ধ হতে থাকা সাসনলি আবার অক্সিজেনে ভরে যায়। কোয়েল বড়ো-বড়ো করে কেয়েকবার সাস নেয়। তার ফুসফুসের গতি তীব্রভাবে ওঠানামা করছে। রাগ সংবরন করতে না পারায় নিজের ওপরেই রাগ হলো সোমের। কোয়েলের এলোমেলো চুল বা-কর্ণের পশ্চাতে চালনা করতে গিয়েই সোমের আঙ্গুল কোয়েলের গাল ছুঁয়ে যায়। ভীত সন্ত্রস্ত চোখে সোমের দিকে তাকিয়ে তার থেকে দূরে সরার চেষ্টা করে খাটের ডানপাশে। যদিও সেই দিকে জায়গার অভাবে কোয়েল একচুলও সোরতে পারেনা। ফল স্বরূপ সোমের একজোড়া বাহুর আলিঙ্গনে আবার আবদ্ধ হতে হয় তাকে। কিন্তু এবার আর নিজের অনিচ্ছা স্বত্বেও সোমের আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করেনা। কোয়েলের অক্সিডাইস শোভায় সাজানো কানের কাছে মুখ নিয়ে সোম বলে, "সরি শোনা ভুল হয়ে গেছে, আর কখনো এরকম হবেনা। কালই আমাদের বিয়ে আজ আর মন খারাপ করোনা। ওয়েল, এখনই ড্রেস পরে নাও, ভর হওয়ার আগেই তোমায় টালিগঞ্জ ড্রপ করে দেবো"।

সোমের কোথায় কোয়েলের কিছুক্ষন আগের ভয়টা আবার ফিরে এলো। তার মনে হলো সোমকে তার একটু আগে দেখা বিভীষিকার কথাটা জানানো দরকার। তাতে সোম তাকে মূর্খই ভাবুক আর কটু কথাই শোনাক। কাপা গলায় সোমকে অনুরোধ করলো কোয়েল, বেডরুম ডোরটা লক করার জন্য। নাছর সোম এবার সত্যিই কোনো প্রশ্ন না করেই কোয়েলের এককথায় দরজায় ছিটকিনি তুলে দিয়ে কোয়েলের সম্মুখে বিছানায় উঠে বসলো। তারপর কোয়েলের ভিজে চোখ মোছাতে-মোছাতে বললো, "দেখো একবারতো সরি বললাম, এবার কি হতে-পায়ে না ধরলে তোমার মন আর পাবোন"। সোমের কোথায় কর্ণপাত না করে কয়েল বললো "জিয়াংশি"। সোম মূর্খের মত বলে উঠলো "কোন ভাষায় গাল দিলে আমায়"। কোয়েল যথাসম্ভব কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করে বোঝানোর চেষ্টা করে বললো, "চিনা ভাষায় জম্বিকে জীয়াংশি বলে। এরা জীবনকালে শোলোশো-চুয়াল্লিস সাল থেকে উনিশ্য বারো কি সতেরো সাল নাগাদ পেকিংয়ে, অর্থাৎ এখনকার বেইজিংয়ে, কুইং সাম্রাজ্যের সিপাই ছিল। সাদা জাতির ক্রমাগত আক্রমণে নিজেদের সাম্রাজ্যের বিলুপ্ত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তখনকার জতিশিরা বিধান দিয়েছিল অতন্ত বিপুল যোদ্ধাদের মমি করে কফিনে ভরে মাটির নিচে গোর দিয়ে প্রিসার্ব করে রাখতে, যাতে তারা সময় মতো কবর থেকে উঠে তাদের সাম্রাজ্য বিলুপ্তির বদলা নিতে পারে ও পুরনো সাম্রাজ্য নতুন রূপে স্থাপন করতে পারে। কিন্তু তারা যেমনটা ভেবেছিল তেমনটা হয়নি। বরং কৌতুহল বসতো তাদের কফিন খুলে পরবর্তী প্রজন্মের রজ্যতিশিরা অবাক হয়েছিল। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল তাদের ভবিষ্যতবাণী ঠিক কিন্তু বিধান ভুল, তথা পরিপাটি দাফনের বস্ত্রে সাজানো বিপুল যোদ্ধাদের দেহ অনন্তকালের জন্যে শুয়েই থাকবে তাই তাদের বিলুপ্তি নিশ্চিত সাদা জাতির শাসনে। আর যেকজন পরবর্তী প্রজন্মের জতিশি ও চাষী তাদের কবর খুঁড়ে তাদের অনিচ্ছাকৃত দাফন করা শরীর দেখেছিল তারা জিয়াংশি রুপে, রাতের অন্ধকারে তাদের জীবন শক্তি কেরে নিয়েছিল। মাটির নিচে থাকতে-থাকতে এদের শরীরের রং সবজিটে-সাদা হয়ে যায়, কিছুটা ফাঙ্গাসের মতো, আর শরীর এত শক্ত হয়ে যায় যে হাত-পা ভাঁজ করতে পারেনা, ফলে সাভাবিক ভাবে হাঁটতেও পারেনা, একটু লাফিয়ে চলে এরা। লম্বা-লম্বা একমাথা সাদা চুল হয় এরা ব্যাবহার সাধারণত বন্য পশুর মতোই হয়। এরা আদতে অন্ধ হয়ে আর শিকারকে গন্ধ শুকে-শুকে খোঁজে। এরা মানুষকে ছিঁড়ে-চিবিয়ে খেয়েনা, মানুষের থেকে তার জীবন শক্তি কেরে নেয় নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করার জন্যে। আর যে বা যারা তাদের মমিকে গোর থেকে তোলে তাদেরও সেই একই অভিশাপ লাগে। এদের হোপিং ভাম্পিরও বলে। এরা প্রয়োজনে উর্তেও পারে"।

সোম হা করে কোয়েলের গল্পঃ শুনছিল। কোয়েল চুপ করতেই সোম বললো, "আজকাল হররোর-ফিকশন মুভিজ গুলো মনে হয় বেশি দেখছো। ওসব অবাস্তব জিনিস দেখা কম করো, নইলে যেখানে-সেখানে দুচারটে জিয়াংশি দেখবে"। কোয়েল সোমের ডানহাতটা নিজের দুহাতের মধ্যে নিয়ে বলে, "আমি সত্যিই দেখেছি। একদম রিয়েল। রিল নয়"। সোম বিরক্ত হয়ে কোয়েলের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিলো। বিরক্ত কণ্ঠে বলল, "ধুর, যতোসব অ্যবসার্ড কথাবার্তা। শিক্ষিত মেয়ে হয়ে এসব মূর্খের মতো ভাবনা-চিন্তা তোমার। ভদকা বেশি খেয়ে ফেলেছিলে নাকি পার্টিতে"। কথাগুলো বলে ডানহাত তুলে সোম তেড়ে গেলো কোয়েলের চোয়াল লক্ষ করে। কান্না ভেজা গলায় কয়েল বলে উঠলো, "তোমার ড্রইং রুমেই একটা জিয়াংশি আছে, ওই চিন গিয়ে যেটাকে দেখে তুমি ডুপ্লিকেট বানিয়েছো, সেটাই। প্লীজ ট্রাস্ট মি, আমি মিথ্যে বলছি না, ওটা এই দরজাটার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। ওরা সূর্যের আলোয় কিছু করতে পারে না, তাই আমরা কাল সকাল ওপদি এই রুমেই থাকিনা প্লীজ। এখানেই আমরা সেফ থাকবো। আমার খুব ভয় লাগছে সোম"। কথাটা বলেই সোমের বুকে অস্ত্রয় নিলো কোয়েল। তার ছাপ্পান্ন ইঞ্চি বুকে থাকলে কোয়েল নিজেকে একশো শতাংশ সেকিওর্ড মনে করে। যদিও সোম তাকে একটু আগেই তেড়ে মারতে গিয়েছিল, তবুও সোমের এই ব্যাবহারের সাথেই তাকে মানিয়ে নিয়েছে কোয়েল। কোয়েলকে যতো যাই বলুক, সোম নিজেও খুব ভালো করে জানে যে তার ড্রয়িং রুমের মূর্তিটা ডুপ্লিকেট না। ডুপ্লিকেট হলে তার মূর্তি পাচারের ব্যাবসা চলবে কীকরে। আর কালো টাকা ছাড়া সে কোয়েলের বাবার সমকক্ষ হতেও পারতোনা।

কোয়েলের ঘনো-ঘনো গরম নিশ্বাস তার বুকে লাগছে, কিন্তু এবার সোম সেটা উপভোগ করতে পারছেনা। এই বদলা রাতে, ঘনো-ঘনো গুরুগম্ভীর মেঘের গর্জনে কোয়েলের গল্পগুলোর যেনো কোথাও একটা মিল থাকলেও থাকতে পারে। কথাগুলো মনে করে সোম কোয়েলকে তার বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো, "আই-অ্যাম-এ ম্যাচিওর্ড বিজনেসম্যান, নট অ্যন আগ্লী-আন্ডুলী স্ক্যেয়ারি ক্যেট লাইক ইউ"। এই বলে বিছানা ছেড়ে উঠে, ব্রিফ্সটা গলিয়ে একটা সিগারেট আর লাইটার নিয়ে ড্রইং রুমের দিকে যেতে-যেতে বললো, "উয়্যার দা ক্লত"। কোয়েলের ভয়টা দ্বিগুণ হয়ে গেল। সে কিছু বলার আগেই সোম দরজাটা বাইরে থেকে ভেজিয়ে দিল। কোয়েল ত্রিকোণাকার অন্তর্বাস ও বক্ষবন্ধনী পরে নিয়ে সোমের কাছে যাবে কিনা ভাবছে, এমন সময় সোমের কান ফাটানো চিৎকারে সে হতচকিত হয় গেলো। তার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো অজানা আশঙ্কায়। বেডরুম ডোরটা ঠেলে একছুটে সোমের কাছে যেতে গিয়েই, মাজপথে থমকে দাড়িয়ে পড়লো মেয়েটা। ওর শিরদাঁড়া দিয়ে বরফ জলের স্রোত বয়ে গেলো। কপাল বেয়ে ঘামের রেখা। হাত-পা জোড়ো রুগীর মতো ঠান্ডা। চোখের দৃষ্টিতে জিয়াংশির অতিকায় প্রসারিত হাতের মুঠোয় সোমের জিবনবায়ু বেরিয়ে যেতে দেখছে। এই অস্বাভাবিক দৃশ্যের আকর্ষিকতায়ে কোয়েল নিজেকে সহায়-সম্বলহীন বিদ্ধস্ত মনে করে বুঝতে পারলো তার দুচোখে নিদ্রার কালো চাদর নামছে একটু-একটু করে। আস্তে-আস্তে সে মেঝেতেই লুটিয়ে পড়লো।

সাড়ে চার-পাঁচ মাস পরে কোয়েল কোমা থেকে রিকভার হয়। হসপিটাল থেকে রিলিজ হয়ে কদিন নিজেকে একটা ঘরেই বন্ধ করে রেখেছিল কোয়েল। পরে কোনো এক বন্ধুর মুখে শুনেছিল, তাদের বিয়ের দিন কোণে বেপাত্তা হওয়ায় আর ফোনে বরকে না পাওয়ায় সোমের ভবানীপুরের নতুন ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে পুলিশ তাদের উদ্ধার করেছিল। সোমের রক্তশূন্য মৃতদেহ দেখে মনে হচ্ছিল কোনো এক অজানা উপায়ে তার শরীর থেকে সমস্ত রক্ত টেনে বের করে নেওয়া হয়েছে। এইরকমের আরো চারটে লাশ ছয় কিলোমিটার দূরে খিদিরপুরের কোনো হোটেলের একটা কামরায়ও পাওয়া গেছে। লোকগুলো চিনা পর্যটক ছিল। কোয়েলের বন্ধু তাকে আরো একটা রোমহর্ষক খবর দিল। স্যাটেলাইটে ধরা পড়েছিল তাদের বিয়ের আগের রাত্রে ভবানীপুর থেকে খিদিরপুরের দিকে মাটি থেকে অনেক উপরে কোনো এক জোব্বাধারী উড়ন্ত, হিংস্র পশু না বাদুর (ঠিক বোঝা যায়নি) দেখা গিয়েছিল।

কথাগুলো শুনে কোয়েল মুখে কিছু বললোনা ঠিকই, কিন্তু ওর যেনো স্থির ধারণা সোম সেই রাত্রে ডুপ্লিকেট মূর্তির গল্পটা তাকে মিথ্যে শুনিয়েছিল। হয়তো সেটা আসল কোনো কুইং সাম্রাজ্যের সেপাইয়ের দেহ, যেটা বর্তমান কালে এতোটাই স্টিফ হয়ে গেছে যে মূর্তির রূপ নিয়েছে, কিন্তু সেই রাত্রের ভারী বর্ষণ, বিদ্যুৎ চমকানো ও বাজ পড়ায় মূর্তিটা জীবন মৃত্যুর মাঝা-মাঝি থাকা জিয়াংশিতে পরিনত হয়েছে, যাকে আর কোনোদিন মারাও যাবেনা। 'আচ্ছা তাহলে খিদিরপুরের দিকে চিনা পর্যটক গুলোরও কি এই ঘটনার সাথে কোনো সূত্রপাত ছিল'। কথাটা মনে হতেই কোয়েল লিটনকে প্রশ্ন করলো, "অ্যাপার্টমেন্টে যে স্ট্যাচুটা ছিল সেটা কি পুলিশ নিয়ে গেছে"। লিটন কপাল কুঁচকে, মুখ বেকিয়ে বললো, "স্ট্যাচু! কই না তো, সেখানে কোনো স্ট্যাচু তো ছিল না। বরং তোরা মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে পরেছিলিস। পুলিশ যদিও অ্যাপার্টমেন্টের ওই পার্টিকুলার ফ্লোরে সোমের ফ্ল্যাটটা সিল করে দিয়েছে। তুই চাইলে আমি নিয়ে যেতে পারি, তবে ঢোকা বারণ"।

সুদূর চিনে অবশ্য সরকার আর মিডিয়া দুই শান্ত হয়ে গেছে এত দিনে। চীনের জাতীয় জাদুঘরও বহাল তবিয়তে চলছে। তাহলে কি জিয়াংশি নিজেই উড়ে চীনের জাদুঘরে মমি চেম্বারে চলে গেছে। তাই যদি হতো, তাহলে স্যাটেলাইটে ধরা পড়তো আর চিন সরকারও হটাৎ অন্তর্ধান হওয়া মূর্তির আকস্মিক আবির্ভাবে নড়েচড়ে উঠতো। আর তা যদি না হয়ে থাকে, তাহলে আর কি হতে পারে। কোথায় গেল সেই মূর্তি অরফে জিয়াংশি।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror