জীবনের সেই হারানো বিকাল
জীবনের সেই হারানো বিকাল
বাস স্টপে অনেকক্ষণ দাঁড়ানোর পরে ও যখন বাস পেলো, তখন ভিড় থাকা সত্তেও উঠে পড়ল কষ্ট করেই। এমনিতেই যথেষ্ট দেরী হয়ে গেছে।আরো দেরী হলে দেরী হয়ে যাবে নার্সিং হোমে পৌঁছতে, আর গিয়েই শুনতে হবে রমাদির বকুনি।এখন ও নার্সিং হোমের সবচেয়ে জুনিয়র সিস্টার। যুবতী পেরিয়ে মহিলা হয়ে ওঠেছে পুরোপুরি ।কিছুটা সাহায্য তো হবে। প্রায় দশ মিনিট পরে খেয়াল করল কেউ যেন,পুরুষ আসন থেকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। একবার ও চেষ্টা করেছিল পিছন ফিরে দেখতে, কিন্তু ভিড়ের মধ্যে দৃষ্টিটা অনুভব করলেও দেখতে পায়নি মানুষটি কে। এমন কি সে কিশোর, যুবক, প্রৌঢ় না বৃদ্ধ তাও বুঝতে পারেনি রেশমী। একটু পরেই ওর স্টপেজ আসতে নেমে পড়ল ও।বড় রাস্তার ওপর সার সার প্রাইভেট কার দাঁড়িয়ে, একটা Ambulance দাঁড়িয়ে আছে দেখে বুঝল নতুন patient এসেছে।রাস্তা ক্রশ করে আসতে গিয়ে আবারও অনুভব করল দুটো চোখের দৃষ্টি।ফিরে দেখল একটি সুঠাম ছেলে অপলক তাকিয়ে আছে ওর দিকে। বাস থেকে ই নেমেছে নিশ্চয়ই। হয়ত ও রুক্ষ ভাবেই তাকিয়েছিল ছেলেটির দিকে। কিন্তু দেখল সে দুটি চোখে পরম মমতা আর অপার বিস্ময়।
ও তাই চ্যাচামেচি কলতে পারলো না।শুধু নরম গলায় বলতে পেরেলো।"এভাবে আমাকে অনুসরণ করছেন কেন ? ' -
----আর হারাতে পারবনা তাই -
----মানে ?
------চার বছর ধরে খুঁজছি ।
রাস্তার ওপারে নার্সিং হোম চত্ত্বরে অনেক লোকজন সবাই দেখছে ওকে। এপারে রাস্তায় পাশ দিয়ে একটু নীচে থেকে দিগন্ত বিস্তৃত সোনালী সরষে ক্ষেতের ওপর পড়ন্ত বিকেলের রোদ্দুরের আলিঙ্গনে এক রোমান্সের হাতছানি । পাশে এই সুঠাম সুন্দর পুরুষ। ঠিক কিছুই ভেবে উঠতে পারছিলনা ও।হঠাৎ দুটি সুন্দর সবল হাত স্থান কাল পরিবেশ সব ভুলে ওর হাত দুটি জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে, " প্লিজ ফিরে চলো সব অভিমান ভুলে।আর কোথাও চলে যাও না, মা বাবা দুজনই তোমাকে হারিয়ে পাগল। আমি আর তোমাকে হারাতে দেবনা কিছুতেই । "
বলতে বলতেই জ্ঞান হারায় মানে সেই ছেলেটি। ও জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে উঠলে ওপাশ থেকে লোকজন ছুটে এসে ধরাধরি করে নিয়ে যায় নার্সিং হোমে।
ও ছেলেটার নাম ঠিকানা ফোন নাম্বার সব বলে দিলো। আমরা বুঝতে পারলাম ও ওর জীবনের সেই হারানো বিকাল, জীবনের সাঁঝবেলায় ফিরে এসেছে আবার।
