Apurba Kr Chakrabarty

Tragedy Classics Inspirational

3.8  

Apurba Kr Chakrabarty

Tragedy Classics Inspirational

জীবন যন্ত্রণা (পর্ব দুই)

জীবন যন্ত্রণা (পর্ব দুই)

8 mins
314


বেশ চলছিল, দুবছরের পর মেয়ের জন্ম হল। স্ত্রীর কথায় আস্থা বিশ্বাস ছিল। তার পরামর্শে, নবীন শহরের প্রাইভেট টিউশন পেশা ছেড়েছিল। কন্যার জন্মের পর,স্ত্রী নার্সের চাকরী,নাইট ডিউটি দিনে কন্যার দায়িত্ব একটু বাবার নেওয়া দরকার, স্ত্রী উপার্জন করলে স্বামী এইভাবে সখের পায়রা হয়ে সংসার করা অবিবেচক স্বার্থপরতা নবীনের মনে হয়েছিল তাই,শ্বশুর বাড়িতে আপাতত থাকা নিমরাজী হয়। পরে ভিন্ন ঘর ভাড়া নিয়ে বা তপতী কর্মস্থল হাসপাতালে কোয়ার্টার পেলে আর তাকে শ্বশুর বাড়ি থাকতে হবে না আশ্বাস দিয়েছিল তপতী।

একটা দোকান ঘর সেলামী নিয়ে স্ত্রীর গ্রাম সন্নিকট বাস রাস্তা সংলগ্ন গঞ্জে একটা মিষ্টির দোকান করেছিল নবীন। নবীন সরকারী লোন পেয়েছিল।কিছু ভর্তুকি ছিল,স্ত্রীর তার লোনের জামিনদার ছিল।মিষ্টির দোকান, স্ত্রীর ভাই মিষ্টির কারীগর।দিদির মত শিক্ষিত নয় পড়াশোনায় সে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেও পাস করেনি।দিদি তখন চাকরী হয়নি।বাড়ির অভাবের কারণে শহরের মিষ্টির দোকানে অনেক দিন একাজে অভিজ্ঞতা। জাতে ওরা ময়রা, হোক না! নবীন এসব জাতপাত মানে না।সে পৈতাই রাখে না।গায়েত্রী মন্ত্র কবে ভুলে গেছে । কিন্তু বাপ দাদার পূজো করাই হল মূখ্য জীবিকা।

তার এসব পেশা পছন্দ নয়,ভিক্ষার সমতুল্য মনে হয়।তবে সে নাস্তিক নয় বরং আস্তিক। কিন্তু পুরান কাহিনী পূজার মন্ত্র, আচার অনুষ্ঠান তাকে বিভ্রান্ত করে । নবীন ইদানীং কেমন উদাসীনতায় আর উদভ্রান্ত মনে প্রায় শংকরাচার্য্যের ব্রহ্ম সত্য জগত মিথ্যা,এই বানী তাকে ভীষণ প্রভাবিত করে।এর চেয়ে সত্য আর বড় বিজ্ঞান তার মনে হত হয় না। সব মায়া ! একটা ভ্রম, ভ্রান্তি বা স্বপ্ন! সংসারে থাকলেও নবীন একটু যেন প্রতিকূল পরিস্থিতির চাপে ভাববাদী হয়ে পড়েছিল।

তবে কারণ না হোক! কামিনী আর কাঞ্চনের মোহ আজও ছাড়তে পারেনি। বিশেষত কাম বাসনা আর কামিনী! হবে নাই বা কেন! স্ত্রীর উন্মত্ত যৌবন আজও মাতাল করার মত! কিন্তু নবীনের ইদানীং শারীরিক মানুষিক ভাবে ক্লান্ত অবদমিত অবসন্ন।তপতী একটা সময় সুন্দর বরে বেশ তৃপ্ত ছিল,এখন নবীন তার স্ত্রীর বাঁধ ভাঙ্গা উন্মত্তে ভরাযৌবনের ঢেউ যখন তার উপর আছড়ে পড়ত, দিশেহারা নবীন যেন সাঁতার কাটত , তল পেতো না, হাঁপিয়ে যেত।তপতী যেন আরও চায় তৃপ্ত হতে পারত না। ত্রিশ পরে শারীরিক ক্ষুধা যেন তপতীর দিন দিন বাড়ছিল, অন্তত নবীনের তাই মনে হত। আপ্রান তপতীকে তৃপ্ত করার সে চেষ্টাও করত।

তার মিষ্টির দোকানে এক পুজারী বামুন প্রতিদিন আসে,গণেশ আর লক্ষ্মীর ছোট মূর্তিতে ফুল ছুড়ে বিড়বিড় করে কিছু মন্ত্র বলে ।একটা চন্দন ফোঁটা তার কপালে দেয়। আর নবীন বামুনের হাতে সঙ্গে আনা ঘটের জলে দুটাকার কয়েন একটা ভরে দেয় কোন ভক্তি শ্রদ্ধা নয় যেন একটা অভ্যাসজনিত প্রথা। ভিক্ষার সমতুল্য।

ঐ বামুন নাকি সকালে সাইকেলে চেপে ডাক পিয়নের গতিতে গঞ্জের ষাটটা দোকান তিন চার ঘণ্টায় পুজো সাড়ে। কোন বড় দোকান দৈনিক পাঁচ টাকার কয়েনও দেয়,আবার ছোট চা পান বিড়ি বা চপ, ফল ,সব্জির ফুটের অস্থায়ী দোকানীরা এক টাকার কয়েন দেয়।


কোন অনুষ্ঠানে নতুন খাতা বা বিশ্বকর্মা পূজোতে বামুনের কপাল ফেরে। এছাড়া বছরে দূর্গাপুজো কালী লক্ষ্মী সরস্বতী আরও কত যে পূজো পার্বন উৎসব সারা বছর লেগেই আছে।বিবাহ,উপনয়ন আর শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে তো পোয়া বারো। তার সংসার চলে যায়, সচ্ছল না হোক খাওয়া পরার অভাব হতো না।

নবীন এসব পেশা পছন্দ করে না। যদিও এই পেশাতেই তার বাবা তাদের বড় করেছে।তবে নিজের চিন্তাধারা নিজের মনে রাখত,অন্যের ইচ্ছার বা বিশ্বাসে আঘাত করা তার বিচারে নির্বোধের দাম্ভিকতা। সত্যিটা জানে কে! সব তো বিশ্বাস! তর্ক যুক্তিতে কিছু টিকবে না। তাই গতানুগতিকে আস্থা থাক না থাক মানা ছাড়া বিকল্প কী!

মিষ্টির দোকানে লাভ তেমন হচ্ছিল না,কারীগর শালার তৈরী মিষ্টি উৎকৃষ্ট মানের নয়।খদ্দের বা ক্রেতাদের এমন অভিযোগ। তাই খদ্দের কম।তারপর তৈরী মিষ্টি দুদিন গেলেই নষ্ট । ছোট গঞ্জ তিন চারটে মিষ্টির দোকান। নিজের টাকায় হয় তবু উৎপাদন কমিয়ে সামলানো যায়। লোনের টাকা, সুদ বেড়ে বেড়ে দিন দিন ঋন বাড়ছিল। উৎপাদন বন্ধ করা সম্ভব নয়। সুদ তো থামবে না। এই নিয়ে গিন্নির সাথে অশান্তি। শালার কারীগরী দক্ষতার দোষ দিলেই রাগ ! সে নাকী শহরে নামী দামী দোকানে কাজ করেছে।

তপতীর স্বভাব চরিত্রে ইদানিং নবীনের সন্দেহ হয়, যতই হোক স্বামী,তেমন আয় না হোক হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম সে করে। তাকে স্ত্রী এখন সঙ্গ দেয় না।নানা অছিলায় নিজেকে পৃথক রাখে। নবীন আবার জোর জবরদোস্তি কখনও করে না,এটা তার স্বভাব বিরুদ্ধ।আর তার দরকার হত না।তপতী যেন এ বিষয়ে বেশী আগ্রাসী।কিন্তু তপতী মানসিক দিকে আগের মত নয়।বিছানায় উঠে যেন তার ঝাঁপিয়ে পড়ার মত সেই যে আবেগ উন্মাদনা সব গায়েব হয়েছিল।

 নবীন কানা ঘুষো শুনত , হাসপাতালের নতুন তার এক সহকর্মী না এক ডাক্তার তাদের হাসপাতালে বদলী হয়ে এসেছে, কোয়ার্টারে থাকে। তার সাথে তপতীর খুব ঢলাঢলি। তার কোয়ার্টারেও চলে যায়। বহুক্ষন সময় দুজন নির্জন কোয়ার্টার কী করে! নবীন অনেক সহ্য করেছে।

গতরাতে স্ত্রীর তার প্রতি এই দাম্পত্য জীবনের অনীহা আর নবীনের অসহ্য হয়ে ওঠে। তার চরিত্র বিয়ষে সন্দেহ আর অন্য মানুষের কানা ঘুষো নিয়ে সে প্রশ্ন তোলে।পরস্পরের পরস্পর তপ্ত বাদানুবাদ চরম সীমায় যায়। নবীনের সহ্য সীমা অতিক্রম করেছিল আর আপোষ সম্ভব নয়। একটা সময়ে তপতী রাগে ক্রোধে পাগল হয়ে ওঠে এটা তার স্বভাব নবীন অন্য সময় চুপ করে যায়,আজ সে অনড় বলে,

গঞ্জের তোমার চরম বদনাম,ভাবছ কেউ কিছু বোঝে না!

কি বুঝবে! আমি কি করব না করব লোকে ঠিক করবে!

এটা সভ্য সমাজ তোমার হাসপাতাল এত দুর নয় সবাই ছি ছি করে! আমার গঞ্জের কত দোকানী খদ্দের আমাকে বলে ,তোমার নিন্দা করে,আমাকে কঠোর হতে বলে!

কেন কি হয়েছে কী! কি বলে!

বলে তোমার আচরণ বেশ্যাদের মত এক পুরুষে মন ভরে না।

"আর তাতে তুমি সায় দাও! আমি বেশ্যা ! ইতর ছোটলোক, নিজে নপুংসক, বৌয়ের অন্নে খাস, শ্বশুর বাড়িতে থাকিস! তুই পুরুষ! হারামী দুর হ ঘর থেকে,বেশ্যার ঘরে কেন! টাকা এনেছিস! আমি তো বেশ্যা ! "

তপতী যেন ক্রোধে আগুন ,হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে পাগলের মত,নবীন কে টেনে বিছানা থেকে নামিয়ে ধাক্কাধাক্কির করে ঘর থেকেই বের করে দিয়েছিল। দরজার ঠিক বাইরেই নবীন কেমন হতভম্ব হয় দাঁড়িয়েছিল। 

শারীরিক ক্ষমতা আর মনোবল তপতী বোধহয় নবীনের চেয়েও বেশী, ঘর জামাই নবীনকে চরম হেনস্থা করে,তপতী রেগে বলে,

 " এরপর কোন দিন আমার ঘরে ঢুকলে পুলিশে নালিশ করবে।তোকে জেলে ভরব,থানার বড়বাবু জানবি আমার চেনা জানা!" যেন হুমকির সুর!

 সজোরে নবীনের মুখের সামনেই তপতী তার শোবার ঘরের কপাট বন্ধ করে দিল। 

 তপতীর রাগ বেশী,অল্পে রাগ তার স্বভাব, কিন্তু তাই বলে এতটা বাড়াবাড়ি!


শান্ত নিরীহ নবীনের এই অপমান আর সহ্য হয়নি।

এক তো শ্বশুরবাড়ি, দুটো শালা,শ্বশুর শাশুড়ি, নবীন থাকত একটু সংকোচে। তপতী তাকে বিয়ের সময় কথা দিয়েছিল আলাদা থাকবে। কিন্তু বাড়ির আর্থিক অভাব।সে যেন বিয়ের পর নবীনকে গুরুত্ব দেয়নি।বলেছিল নিজের ব্যাবসা বাড়িয়ে আয় করো।এসব তখন চিন্তা করব,আমার আয়ে দুটো সংসার চালানো সম্ভব নয়।বাবা মাকে আঘাত দিয়ে ভিন্ন হবো না। 

তোমার আয় ভালো হলে ভিন্ন হলেও বাবা মাকে মাসে একটা টাকা আমাকে দিতেই হবে, বাবা অসুস্থ, ভাই দুটো একটা বেকার আর একটা মিষ্টির দোকানে সামান্য বেতন সংসার চলবে না।তোমায়, তো আমার জামিনদারিতে ব্যাঙ্ক লোন দিয়েছে, নিজের যোগ্যতা দেখাও। 

এ যেন শাখের করাত দশা।ব্যাঙ্ক লোন দিন দিন বাড়ছিল, আর শালাকে লাভ না হলেও বেতন দিতে হয়। আবার গিন্নির তাচ্ছিল্য ভাবটা মাস ছয় হল বেড়েছে। যা দিন দিন তার কাছে অসহ্য লাগছিল। আর সংসারেই দরকার নেই। ঘৃণা ধিক্কার নিজেই দিচ্ছিল। কেন বেকার হয়ে চাকুরে মেয়ে বিয়ে করলাম ! এ সমাজে তাকেই সবাই দোষ দেবে। ব্যঙ্গ তাচ্ছিল্য করবে। নবীন ছিল ভীষণ অনুতপ্ত।

মানুষকে বিশ্বাস করে আর সে ঠকবে না। ছোট বাচ্চা মেয়েটার কথা ভেবে দঃখ হচ্ছিল। ভাবছিল আমি অযোগ্য বাপ, মা তো সরকারী চাকরী করে। আর কোন দিন যদি যোগ্য হই তখন ভাবব। এই ভাবে থাকা তো কুকুরের তুল্য ,এত বড় তাচ্ছিল্য অবজ্ঞা ঘর থেকেই রাতে বের করে দিল!

ঐ রাতেই নবীন শ্বশুর বাড়ি ছেড়েছিল, যদি কোন দিন স্ত্রী অনুতপ্ত হয়,আলাদা ঘর ভাড়া নেয় তবু সে আর সংসার করবে না।বাড়িতে এ বিয়ে মত ছিল না। তারা একটু জাতপাত মানে, নচেৎ তার দাদার যে পুরোহিত পেশার ক্ষতি! নবীন তপতীকে খুব বিশ্বাস করেছিল, তপতী সাতাশ বয়সে চাকরীটা পেয়েছিল,আর তার একবছর পর বিয়ের প্রস্তাব নবীনকে দেয়।বলেছিল তুমিও চাকরীর চেষ্টা করো, প্রাইভেট টিউশন কোন স্থায়ী ব্যবস্থা নয়,তেমন তোমার আয় তো হয় না!


নাম ডাক এই ক বছরে হয়নি, অন্যের বাড়িতে গিয়ে পড়াও , শহরে ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যাচে পড়ালে অন্য কথা।এক দুবছর দেখো, যদি চাকরী না হয়, তুমি ব্যবসা করো। ব্যাঙ্ক লোন দরকার হলে আমি গ্রান্টার হব। আর ব্লকের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অফিসার ভালো মানুষ, আমার পরিচিত, অনেক সরকারী স্মীম আছে,বেকার লোন, সাবসিডি সব পাওয়া যায়।

কথাগুলো নবীনের ঠিক মনে হচ্ছিল।তার জানা শোনা কজন সিনিয়র প্রাইভেট টিউটরকে সে জানে।  বাড়ি বাড়ি টিউশন আয়ে সংসার করা অসম্ভব। নিত্য অভাব অশান্তি আর জ্বালা। নবীনের বয়সের বেশ দোষ ছিল ,একটু নারী সঙ্গ,একটু ঘনিষ্ঠতা, একটু কাছাকাছি। আর তপতীকে সে দীর্ঘদিন চেনে সেই কলেজ জীবন থেকেই।আর তপতীর লাস্যময়ী উগ্র শারীরিক আবেদনে সেছিল পাগল। 


তপতী যখন কাজ পায়নি,নবীনের সমান্য টিউশন পড়ানোর টাকায়,তপতীর সখে তার সাথে সিনেমা রেস্টুরেন্ট যেত আনন্দ করত, খুব ঘনিষ্ঠতা বলতে যা বোঝায় দুজনের বেশ কটা বছর বিরতি হীন ছিল। অবিবাহিত জীবনে চরমতম দুষ্টুপনা বলতে যা বোঝায়, পার্কে সন্ধ্যার আঁধারে তারা অনেক কিছুই করেছে, পুলিশের তাড়া খেয়েছে। 

তপতী যেন একটু চালকের আসনে থাকত আর তার যৌবনের উন্মাদনা একটু বেশী। তপতীকে নবীনের তাই বেশ ভালো লাগত। তার আবেগ উষ্ণতার উত্তাপ খুব সে উপভোগ করত।তপতীও নবীনকে ভীষণ পছন্দ করত চাকরী পেয়েও তপতী তাই বেকার নবীনকেই স্বামী হিসাব গ্রহন করতে দ্বিধা করেনি।

কিন্তু গত ছ মাস আগে থেকেই যেন তাল কাটাল, আগে তবু সমঝোতা সব চেয়ে বড় কথা দাম্পত্য জীবনের মুল বন্ধন রাতের বিছানায় কোন অস্বস্তির অসম্মান তাচ্ছিল্য বা দুরত্ব নবীন অনুভব করেনি।দিন দিন অসহ্য আর কানা ঘুষো নবীনকে প্রতি মুহূর্ত দগ্ধ করত পৌরুষে লাগত।সঙ্গে হীনমনত্যা, ব্যাবসায় মন্দা আর ঋণের ফাঁস,ব্যাঙ্কের ভাষায় এন পি এ, কবে না দোকান টাই ব্যাঙ্ক সীল করে দেয়,কিন্তু শালা যেন দায় হীন,বেতন প্রতি মাসে দিতে হবে।ছাড়ানো যাবে না।এক জুলুম।

 রাত এগারোটা অতিক্রান্ত,  নির্জন।হেঁটে হেঁটে নবীন চলে এসেছিল দামোদর ধারে।গ্রীষ্মের সময়, চাদঁনী রাত, মৃদু দখিন ফুর ফুরে হাওয়া আজ নবীনকে সুখ দিচ্ছিল না ,বেশ জোরেই হাঁটছিল, ঘামে শরীর ভিজে যাচ্ছিল ।

সে সবার থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়।শ্বশুরের গ্রামের উত্তরে দামোদর তিন কিমি ,তার পর পশ্চিম দিকে কত কিমি দামোদরের পাড় ধরে সারা রাতে সে হেঁটেছে তার হিসাব নেই। 

এক বস্ত্রে ,হাতে কানা কড়ি নেই। এসবে তার হুস নেই। এত অপমান অসম্মান এত তাচ্ছিল্য! বুকের ভিতরটা হালকা হয়ে ভাবছিল সেই এ তপতী ! তাকে একদিন না দেখলে কলেজ জীবনে পাগল হত! মানুষের স্বভাব আচরণ এতটাই পাল্টায় !

নবীনের নিজে প্রতি ঘৃনা ধিক্কারে মনে হচ্ছিল যদি কোন বিষধর সাপ তাকে এই নদীর ধারে বন জঙ্গলে ভরা সংকীর্ণ মাঠাল পথে দংশন করে সে মুক্তি পাবে।কিন্তু সে সৌভাগ্য তার কপালে ছিল না।সামনে একটা দামোদর নদের উপর ব্রীজ দেখা যাচ্ছিল। একটু ভোরের আবছা আলো তখন ফুটেছিল। নবীন দামোদরের চরায় নেমে জলহীন বালুভুমি দিয়ে দক্ষিণ ধার চেপে হাঁটতে লাগল। মানুষের নজরে সে আসতে চায় না।তাই আর নদীর বাঁধ বরাবর হাঁটছিল না। আরও একঘন্টা বালির উপরে হাঁটা ,বেশ ক্লান্ত অবসন্ন শরীর আর শরীর বইছিল না।

গ্রীষ্মের দামোদর মাঝ বরাবর ক্ষীণ জলধারা আর বাদবাকী নদের খাত শুধুমাত্র বালিরাশি শুন্য প্রান্তর। নির্জন নিঃশব্দ একাকী কোন মানুষের দেখা নেই। বর্ষায় বন্যার সময় এই বিশাল খাত ভয়াল আকার নেয়।এখন শুখনো। পূর্ব আকাশে রাঙ্গা হয়ে উঠছে, সূর্য সদ্য পূর্ব দিগন্তে উঠছিল, হঠাৎই নবীনের নজর পড়ল এক সাধু বা সন্ন্যাসী মাঝ দামোদরের সংকীর্ণ বহমান জলে দাঁড়িয়ে সূর্যদেবকে উদ্দেশ্য করে প্রণাম করছেন। কোমরের নিচে অবধি জল, গায়ে ভিজে গেরুয়া বসন। এত সকালে এই খানে ঐ সাধুকে দেখে নবীন দাঁড়িয়ে দেখছিল।

প্রণাম শেষে সাধু জল থেকে উঠে দীর্ঘ বালুপথ হেঁটে পাড়ের দিকে আসতেই নবীন তার নজরে এল।

সাধু তার নিকটে এসে বললেন,

"এত সকালে তুমি এখানে কি করছ!"


নবীন ইতস্তত করেছিল।

সাধু বললেন , 

"দেখে অনুমান হচ্ছে তুমি ভীষণ হতাশগ্রস্ত , খুব পরিশ্রান্ত !তোমার বাড়ি কোথায়?"

নবীন মুখ নামিয়ে বলল, 

"বাবা আমার বাড়ি অনেক দুর আমার আর সংসারে আস্থা নেই। সারারাত ধরে আমি হেঁটেছি, দুচোখ যেদিকে যায় সে দিকেই যাব।"


"এটা কোন লক্ষ্য হল ! তুমি সারারাত হেঁটেছ মনে হচ্ছে ভীষন ক্লান্ত, আমার সাথে চল।"

"আপনার সাথে! কোথায়!"


" নিকটেই আমার আশ্রম, তুমি ইচ্ছা করলে আমার কাছে কিছুদিন থাকতে পারো,পরে সিদ্ধান্ত বদল হলে গৃহে ফিরতে ইচ্ছা হলে ফিরে যাবে।"


"নবীন বলল ,আর আমার গৃহে ফেরার ইচ্ছা নেই,।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy