জীবন অঙ্ক
জীবন অঙ্ক
জীবনটা একটা অঙ্ক । হিসাব নিকাশ ঠিক না করলে সারাজীবন আফশোস করতে হয়। শ্রম বা মেধা সঠিক মূল্য পেতে বিদেশে চাকরি করেও বহু বছর কিছুই লাভ করতে পারলাম না। আমার মতো,অসফল ব্যাক্তিরা আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব কাছে অপ্রয়োজনীয় হয়।সোস্যাল মিডিয়া যুগে হঠাৎ ফটকের সামনে বাতিল ল্যাটার বাক্সে চিঠি দেখে অবাক হয়েছিলাম। চিঠী পড়া শেষ হতে আবার একটা নতুন অঙ্কের কসতে বসতে হলো।
এ প্রসঙ্গে বলতে হয় পত্র প্রেরক আমার অচেনা নয়। খলসা করে ঘটনা বলতে হয় আপনাদের ঘটনাটা। কারণ কঠিন একটা জীবনের অঙ্ক। একটা প্রশ্ন চিহ্ন হিসেবেটা সঠিক করতেই হবে আমাকে।
বছর পাঁচেক আগে তখন বিদেশে চাকুরী করে সঞ্চয় করা পয়সা দিয়ে ব্যবসা করতে শুরু করেছি। তবে লেখক হবার নেশা তখন আমার ঘাড়ে থেকে নামেনি। অন্যান্য লেখা পড়ে নিজের লেখা দূর্বলতা গুলো বেশ চোখে পড়ে আমার। নিখুঁত বর্ণনা অভাব। লোকজন বলে প্রেমে ছ্যাঁকা খালেই ভালো কবি হওয়া যায়। প্রেমে তো আমি হৃদয় মন দুই পুড়েছে অনেক বার কবি হতে পারলাম কৈ? তারপর উপলব্ধি করলাম লেখক বেশ ঘোরাঘুরি করে। তাই আমি ঠিক করলাম দেশ বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করবো। করলাম ও । তারপর একটা অচেনা গ্রাম থাকার ব্যবস্থা করে গেলাম। নদীর ধারে বসে সেই সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেলো গরম দিন বেশ লাগছিল নদীর ধারটা । কিন্তু আমার সেইদিন আবহাওয়া খবর শুনা হয় নি। ঝড় জলের পূর্বভাস দেওয়ায় ছিলো। প্রবল বৃষ্টিপাত ঝড়জল শুরু হলো। নদীর ধারে থেকে মোড়ের মাথায় এসে দেখি , যানবাহন দূরে থাক চা দোকানটাও খোলা নেই। আশ্রয় নেওয়ার মতো ঘর বাড়ি নেই ধারে কাছে। আমার বাড়িটা অনেকখানি দূরে উপরন্তু মাথায় পায়ে চোট পেয়েছি। অনেক কষ্টে হেঁটে উপস্থিত হলাম অঞ্চল প্রধানের বাড়িতে। এই নেতার বাড়িতে আশ্রয় নেবার কোন ইচ্ছা আমার ছিলো না কিন্তু নিরূপায়।
জার্সি বদল করা নেতা , বংশ পরম্পরায় এরা নেতা। এ গন্ত গ্রামেও বাড়িটা বিশাল। তবে এই বিশাল বাড়িতে চারটা মাত্র প্রানী থাকে। দুই চাকর , পঞ্চায়েত প্রধান এবং তার মেয়ের বয়সী স্ত্রী। আশ্রয় প্রার্থী শুনে দরজা থেকে সযত্নে আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো অন্তর মহলে। অন্তর মহলে গিয়ে আবিষ্কার করলাম প্রধানের স্ত্রী আসলে স্নেহা।
আপনি বলবেন স্নেহা কে ? আরো পোনের বছর পিছিয়ে যেতে হবে। ছাত্র বয়স কবিতা লেখা শুরু করেছি। কিন্তু সফলতা অর্জন করতে পারি নি। তাই ঠিক করলাম প্রেম একটা করতেই হবে। কিন্তু কোন মেয়েকে প্রস্তাব দিতে গেলে চড় থাপ্পর খাবার ঝুঁকি আছে । তাই বন্ধু বান্ধবরা বুদ্ধি দিলো মন্দির থেকে মেয়ে খোঁজ শুরু কর। এ যুগে যে মন্দিরে যায় সে মেয়ে নিশ্চিত সহজ সরল হবে, মারধর করবে না। কিন্তু স্নেহা প্রেম প্রস্তাব দিয়ে প্রথমবারে সফল হয়নি। কারণ তার নাম জিজ্ঞেস করতেই, সে আমাকে ঝাঁঝিয়ে বলে ছিলো। " আপনাকে শুধু নয়, আপানার বন্ধুদের এমন প্যাঁদাবো তারা নিজেদের নাম ভুলে যাবে।"
খোঁজ খবর নিয়ে জেনে ছিলো ও মেয়ে নাকি ক্যারাটে শেখে। তার বছর দুয়েক পর। অফিস ফিরে পথে দেখি, স্নেহা ও তার কিছু বন্ধু বান্ধব আটক করে পুলিশ মদপান করে গাড়ি চালানোর জন্য। চেনা জানা অফিসার ছিলো। তাই কথা বলে স্নেহাকে ছাড়িয়ে নিয়ে , আমি ওর বাড়িতে ছেড়ে দিয়েছিলাম। সেই থেকে বন্ধুত্ব, বন্ধুত্বটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে এগিয়েছিল , কিন্তু ঐ যে বাস্তবে অঙ্কে কাঁচা হলে জীবনে অবশিষ্ট থাকে দীর্ঘশ্বাস।
বেশ বেলা হয়ে গেলো , ঘুম থেকে উঠতে। প্রধান মশাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে, গ্রামে ঝড় জলে কতো ক্ষতি হলো তা দেখতে। আমার অসুস্থতার অজুহাতে আমাকে স্নেহা বেড় হতে দিলো , বললো প্রধানের হুকুম আমি যেনো ও দিনটা ও বাড়িতেই কাটাই।
আসলে প্রধানের ইচ্ছেটা কিছুই না স্নেহা ইচ্ছেটা শেষ কথা। স্নেহা একটা ইন্দ্রজাল। সেই না চাইতেও পাপ পুণ্য হিসেব ভুলে ওর সাথে আবার ঘনিষ্ঠ হলাম। পরে ব্যাপারটা রোজ নামচার মতো হয়ে গেছিলো। কিন্তু হঠাৎ আমি সরে এলাম যখন স্নেহা প্রধান মেয়ে অপরাজিতা দেবীর সাথে আমার বিবাহ প্রস্তাব দিলো।
ও গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে বানিজ্য মন দিলাম। কিন্তু ঋণে জর্জরিত হয়ে বসে আছি। এ অবস্থায় স্নেহার পাঠানো চিঠিটি একটি লটারির টিকিটের মতো। প্রধান মশাই মৃত্যুর সময় অপরাজিতা দেবীর থেকে কথা নিয়েছেন, সে আমাকে বিয়ে করবে। যদিও আমি জানতাম না অপরাজিতা দেবীর আমাকে বিয়ে করতে আপত্তি ছিলো। তাহলে তো এতো দিন ধরে ও গ্রাম থেকে দূরে থাকতে হতো না। আমি তো ও গ্রামে শুধু গল্প লিখতে যেতাম না। বেশ কিছু ভু সম্পত্তি কিনেছিলাম। ও গ্রামে গেলে ওই জমি জমা থেকে কিছু আয় করতে পারবো। আর জীবন সায়াহ্নে এসে পাত্রীতো জুটছে না। অপরাজিতা দেবী প্রধানের মেয়ে হলেও স্নেহার মেয়ে না। ফলে সে হিসেবে অপরাজিতাকে বিবাহ করা যেতেই পারে। তবুও অঙ্কে একটা গড় মিল থাকেই যাচ্ছে। কোথায় যেনো একটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।,,,,
