Madhuri Sahana

Tragedy Classics

4  

Madhuri Sahana

Tragedy Classics

জীবিত-মৃত

জীবিত-মৃত

3 mins
485



হালিশহর তরুণ সংঘ ক্লাবের গা লাগোয়া একটা ছাতিম গাছের নীচে সতীশ হালদারকে একটা চায়ের কেবিন তৈরী করে দিয়েছে । একটু দূরে বাসস্ট্যান্ড তাই প্রায় রাত দশটা পর্যন্ত দোকানে লোকের আনাগোনা থাকে । সতীশ টুলে বসে থাকে । আস্তে আস্তে শহরটা ঘুমিয়ে পড়ে । রাস্তার কুকুর আর কিছু মাতাল চলাচল করে । সতীশ লাট্টুকে দোকান বন্ধ করতে বলে । লাট্টুকে সতীশ অলিখিত দত্তক নিয়েছে । আর একটা ছেলে দোকানে কাজ করে গাবলু । ও রাতে বাড়ি চলে যায় । সতীশের "দার্জিলিং টি" কেবিনে চা ছাড়াও ঘুগনী , ডিমের ওমলেট পাওয়া যায় । সতীশ উঠে দাড়ায় কাঠের পা'দুটোর‌ উপর ভর দিয়ে । লাট্টু দোকান পরিস্কার করে সতীশের ভাতের থালাটা এগিয়ে দেয় । ভাতের হোটেল থেকে দু'বেলাই ওদের খাবার আসে । রাতে বেশিরভাগ দিনই সতীশের ভাত ফেলা যায় । দোকানে টেবিল চেয়ার সরিয়ে চটের বিছানা পেতে রাতে ঘুমানোর ব্যবস্থা । লাট্টু ঘুমিয়ে পড়েছে । সতীশ চোখ বন্ধ করে আছে , যদি কোনো দিন ঘুম আসে সতীশ নিজে নিজে অবাক হয় । দোকানের দেওয়ালে একটা ছবি ক্লাবের জার্সি পরা সতীশ চুণী গোস্বামীর হাত থেকে ট্রফি নিচ্ছে । সতীশের তরুণ বয়স, মাথা ভর্তি চুল, দু'টো শক্ত পায়ে ফুটবলারদের বুট মোজা । সতীশ শুধু পা দু'টো দেখে ।


সতীশ দাদুর "দার্জিলিং টি" হালিশহর বাঙালি জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে । এই একান্ত নিরিহ পানীয়টি তার উষ্ণতা দিয়ে আপামর হালিশহরবাসির হৃদয়ে রাজত্ব করেছে । চায়ের কেবিনে চায়ের পেয়ালা হাতে বিব্যেন্দু , পল্টু , সমীর , গদা এরা যেন কোনো মধুকর সপ্তডিঙ্গা সাজিয়ে পাড়ি দেয় দেশান্তরে । সকাল- সন্ধ্যা সতীশের দোকানে আড্ডা আর চা ওদের জীবনের প্রাণ প্রবাহের প্রয়োজনীয় উৎস । হালিশহর তরুন সংঘ আর সতিশ দাদুর চায়ের দোকান দু'ই সমান গুরুত্বপূর্ণ । 


ইদানিং কালে মধ্যবিত্ত জীবনে নানান সমস্যার মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা একরকম বাধ্যতা হয়ে উঠেছে । ক্রয়ক্ষমতা এবং মূল্যস্তরের মধ্যে বিরাট ব্যবধান তৈরী হয়েছে । খবরের কাগজ খুলে প্রতিদিন পারিপার্শ্বিক ঘটনা বলির দিকে চোখ গেলে রীতিমতো শিউরে উঠতে হয় । কিন্তু মানুষের সঙ্গে মানুষের যে প্রীতির বন্ধন পরস্পরের সঙ্গে গেঁথে রাখে ; সুচিন্তনে সংঘবদ্ধতায় জ্ঞান বুদ্ধিতে হৃদয়ের বিকাশে হালিশহর তরুন সংঘ তার কৃতিত্বের পরিচয় বারংবার দিয়েছে । হালিশহর তরুন সংঘ পরিচালিত রক্তদান কর্মসূচি এবং বছরের বিভিন্ন সময় এরা লাইব্রেরীর জন্য পাঠ্য বই সংগ্রহ করে । এই সমস্ত বই সাধারণত যে সব ছাত্র ছাত্রীরা চাকরির পরীক্ষার জন্য তৈরী হয় তাদের প্রয়োজন লাগে । আর কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার অভ্যাস করা এই তরুণ সংঘ সারাবছর করে থাকে ।


প্রতি বছর হালিশহর তরুন সংঘ রেলের মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন স্মরণে এই টুর্নামেন্ট । প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । পুরস্কার বিতরণ করা সমাজের কৃতি ব্যক্তিকে সন্মাননা জ্ঞাপনের দ্বারা অভিনন্দন জানান এই সব অনুষ্ঠান হালিশহর তরুন সংঘ করে থাকে । এই ক্লাব প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই সতীশ ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত । যুবক সতীশ হালদার স্বপ্ন দেখতো ফুটবলার হওয়ার । কলকাতার ক্লাবে খেলার । সতীশ ডিফেন্ডার থাকলে বিপক্ষ টিমের গোল করা সহজ হতো না । ফুটবল সতীশের প্রাণের আরাম ছিল । ফুটবল প্লেয়ার হিসেবে বেশ খ্যাতি অর্জন করে ছিল সতীশ । একবার খড়দাহ অঞ্চলের একটা ক্লাব ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলে ফেরার সময় ভীড় ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে পা'দুটো বাদ যায় সতীশের । তারপর সতীশ শুধু বেঁচে আছে ওর শরীরে প্রাণ নেই । 






Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy