ঝরে পড়া ফুল
ঝরে পড়া ফুল
.... বলি বৌমা ??? কটা বাজে শুনি ??? রান্না চাপাবে কখন। আমার মেয়ে জামাই তো বেরিয়ে পড়েছে। তোমার এই অবেলায় ঘুমিয়ে থাকার কারণ টা ঠিক বুঝলাম না ??? গজ গজ করতে করতে বলেন মিনা দেবী ।
.... মা আমার পেটে অসহ্য যন্ত্রণা করছে। পিরিয়ডের দিন গুলোতে কত টা কষ্ট হয় আপনি জানেন তো মা। আজ কে মিতা দি কে বলুন না রান্না গুলো না হয় করে দেবে। আমি উঠে বসতে পারছি না মা । কোনো রকমে বলল চন্দনা এই বাড়ির একমাত্র ছেলে বিভাষ এর বউ।
.... তুমি কি সকাল সকাল নেশা করে এসেছ নাকি বৌমা ?? বলি আমার মেয়ে জামাই ওই কাজের লোক এর হাতে রান্না খাবে। আমি করতুম বাপু। কিন্তু তোমার শশুর মশাই চলে যাওয়ার পর আমি মাছ মাংসে হাত দিই না তুমি সেটা ভালো করেই জানো সেটার সুযোগ নিচ্ছ তাইনা। আর এত দামী দামী মাছ মাংস মিতা দেখেছে কখনও?? নষ্ট করে ফেলবে আর ওকে আমি হাত দিতে দেবো না। শুয়ে না থেকে রান্না ঘরে যাও । ( মিনা দেবী)
..... মিতা দিই তো অনেক বাড়িতে রান্নার জন্য সাহায্য করে মা ও নিজে আমায় বলেছে। ( করুন গলায় বলল চন্দনা )
.... তুমি যাবে না তাই তো ?? আজ আসুক খোকা তোমার একদিন কি আমার একদিন। তোমার মত অকর্মার ঢেকি কে নিয়ে পারিনা বাপু। ( রেগে বলেন মিনা দেবী)
.... কি আর করবেন ওকে দিয়ে মার খাওয়াবেন। এটাই তো হয়ে আসছে । অফিস থেকে এলেই ওর কান ভাঙ্গানো । আমি পারবো না বুঝেছেন। আপনার মেয়ে তো শশুর বাড়ী থেকে আলাদা হয়ে গেছে কারণ তার বর আপনার মেয়ের কথায় চলে। আর আপনার ছেলে তো বীর পুরুষ মায়ের কথায় বউ এর গায়ে হাত তোলে। ( রেগে বলল চন্দনা )
.... কি বললে ??? এত বড় কথা বলতে পারলে তুমি। এত তেজ দেখাচ্ছ কাকে । আজ আসুক খোকা তোমায় বাড়ি থেকে বের করে দেব তখন সব তেজ বেরিয়ে যাবে। বাপের বাড়িতে গিয়ে উঠবে তার ও ক্ষমতা নেই তোমার । বাপের বাড়ি বলে তো কিছুই নেই । ( তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল মিনা দেবী)
চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল জলের ধারা চন্দনা এর। মোক্ষম অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে ওর শাশুড়ি মা। ছোটো বেলায় মা মারা যাওয়ায় বাবা পাগলের মত হয়ে যায়। তারপর দিন থেকে চন্দনার বাবা কে খুঁজে পাওয়া যায়নি। একমাত্র মেয়ে চন্দনার আশ্রয় হয় মামা বাড়িতে। দিদা যতদিন ছিলেন ওর দুঃখ ছিলনা। তারপর মামা মামী এর গলগ্রহ তে বড় হওয়া চন্দনার ঠাঁই যে ওই বাড়িতে হবে না সেটা ও ভালো করে জানে। বিভাষ ফিরলে কান ভাঙিয়ে দেবেন উনি তখন ছেলে আর মা মিলে হাজার টা কথা হজম করতে হবে ওকে। মাঝে মাঝেই গায়ে পর্যন্ত হাত তোলে বিভাষ। বেরিয়ে যাবে কিন্তু কতদূর। উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে এই যুগে কি করবে ও। ছেলেটা এর ক্লাস সিক্স হলো । যাই হোক এই বাড়িতে খাওয়া পরা এর অভাব টুকু নেই ওর। বেরিয়ে গেলে ছেলেটা এর কি হবে ভেবেই মুখ ফুটে সহ্য করতে হয় ওকে।
চোখের জল মুছে শারীরিক যন্ত্রণার কথা ভুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল রান্না ঘরের দিকে। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে আর ওর চোখেও বাঁধ মানছে না অশ্রু। আর কতদিন কে জানে বা কত বছর ওর মতো মেয়েকে মুখ বুজে এই বোবা কান্না সয়ে যেতে হবে এটাই প্রশ্ন ??
.............. অসমাপ্ত 🙏🙏🙏🙏🙏
