তোমায় ভালবেসে ❤️❤️
তোমায় ভালবেসে ❤️❤️
তুমি কেনো এরকম সিধু দা সবসময় আমাকে দেখলে রেগে যাও কেনো বলতো । আমি কি দোষ করেছি শুধু তোমার রুমের সামনে একটু আলপনা দিয়েছি আজ সরস্বতী পুজো। জেঠিমা আমায় সারা বাড়ি জুড়ে আলপনা দিতে বলল। আর তুমি আলপনা টা ঘেঁটে তো দিলেই আবার আমাকে কথা শোনাচ্ছ। কথাগুলো বলেই থামল হলুদ শাড়ি পরা একটি মেয়ে ।
দেখ মিঠাই বেশি পাকামি করিস না । আজ আমার একটা ভালো কাজে যাওয়ার আছে দিলি তো পণ্ড করে । বেড়ালের মত রাস্তা না কাটলে হয়না তোর বল । বলেই হনহন করেই বেরিয়ে পড়লো সিধু ওরফে সিদ্ধার্থ।
পাশাপাশি বাড়ি দুজনের সিদ্ধার্থের বয়স বছর 27 আর মিঠাই এর 24 । সিদ্ধার্থের বোন শ্রীতমার বন্ধু মিঠাই । সিদ্ধার্থের মায়ের খুব পছন্দ মিঠাইকে । হবে নাই বা কেনো ছোটো থেকে পড়াশুনা নাচ সবেতেই তুখোড় মিঠাই বর্তমানে প্রাইভেট ফার্ম এ কর্ম রত মিঠাই তার মেয়েটাও পড়াশোনায় তুখোড় অঙ্কে phd করছে। ছেলেটা এরকম কেনো হলো কে জানে । মাঝারি মাপের পড়াশোনা করা সিধুর ছোটো থেকেই সপ্ন বাইক রেস করার । ক্লাস 9 থেকেই এই সব কাজে পারদর্শী । এই জন্যে তার বাবা সমরেশ মোদক ছেলেকে সবসময় শাসন করেন । বাবা ছেলের মধ্যে বিবাদ হয়ে এখন কথা বলা বন্ধ। 3 পুরুষের পারিবারিক মিষ্টির ব্যবসা এখনও দাদু সিদ্ধানন্দ মোদক ব্যাবসার হাল ধরে আছেন । 27 বছর বয়সেও কোনো চাকরি তো বাদ এমনকি পারিবারিক ব্যবসা তেও নজর নেই সিদ্ধার্থের । অবশ্য এই সব কাজে তাকে সাপোর্ট দেন ঠাকুমা সুষমা দেবী । তার এক ছেলের ঘরের প্রথম নাতি তাই তাকে একটু বেশি মাথায় করে রাখেন তিনি । টেনেটুনে ba পাশের পর সারাদিন টো টো করে ঘুরে বাইক চালানো আর আড্ডা মারা কাজ তার মাঝে মাঝে অবশ্য রেস এ গিয়ে বাহাদুরি দেখায় । মাঝে মাঝেই জখম হয়ে নার্সিং হোমে ভর্তি হয় সিধু এর জন্য অবশ্য তার মা বাবা দাদু তাকে কম বকাবকি করেন না কিন্তু ছেলে শোধরাবার নয় আবার যেই কে সেই ।
তার মা ভাবে তার মেয়ে আর ছোটো ছেলে সন্দীপ এর মত কেনো হলো না সিধু। সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকেন তিনি তার দাবি ছেলের বিয়ে যত তাড়াতাড়ি মিঠাই এর সাথে দেওয়া যায় ততই মঙ্গল ছেলেটা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। তিনি সমরেশ বাবু কে বললে তিনি বলেন প্রকাশ কখনো এরকম ছেলের সাথে বিয়ে দেবে না। তিনি জেনে বুঝে তার মেয়ের ঝুঁকি কেনো নেবেন বুঝতে পারো।
সিদ্ধার্থ মিঠাই কে কেনো জানি সহ্য করতে পারে না । সে কোথায় কি করে বেড়াচ্ছে সবসময় টিকটিকির মতন নজর মেয়েটার । ওর জন্য কম বকাঝকা খেতে হয়নি মা বাবার কাছে। যেনো ওদের কাছে খারাপ প্রমাণ করতে চাই সিদ্ধার্থ কে। এই জন্য সুষমা দেবী মিঠাই কে দেখতে পারেন না তার এই বিয়েতে প্রবল আপত্তি । কিন্তু স্বামীর মুখের ওপর কিছু বলার নেই তার ।
অবশেষে স্ত্রীর জোরাজুরি তে সমরেশ বাবু প্রকাশ বাবুর কাছে গিয়ে মিঠাই কে তার বাড়ির বউ করার আর্জি জানালেন। সিদ্ধেশ্বর বাবুদের এতো ভালো পরিবার তাছাড়া মেয়ে কাছেই থাকবে এই ভেবে বিয়েতে মত দিয়ে দেন।।
মাঘ মাসেই চার হাত এক হয়ে যায় সিদ্ধার্থ আর মিঠাই এর। প্রথমে কিছুতেই বিয়েতে রাজি ছিলনা সিধু কিন্তু দাদু তাকে তাজ্য করবে বলে জানালে তাছাড়া ওর মত ছেলের আয় কোথায় আর কে খাওয়াবে তাকে ।তার নিজের কোনো সামর্থ নেই কিছু করার । তাই নিমরাজি হয়ে বিয়ে করে ফেলে ।
ফুলসজ্জার রাতে বিছানায় বসে বসে ঢুলে পড়ছে মিঠাই ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে রাত 3 টে বাজে । মিঠাই ভাবে সিধু দা তো তাকে সহ্যই করতে পারেনা। হয়তো সেইজন্যে আসছেনা । বিয়েটা করে ভুল করেছে কি মিঠাই সে তো তার সিধু দা কে। খুব ভালো বাসে। মামনি কে কথা দিয়েছে তার ছেলেকে আগলে রাখবে। চোখে জল চলে আসে তার হটাত চিৎকার চেঁচামেচি তে বাইরে গিয়ে দেখে সুষমা দেবী চিৎকার করছেন আমার নাতি টাকে খেয়ে ফেললো ওই কাল নাগিনী টা । কি হবে গো এবার । তার শাশুড়ি মা সেন্সলেস হয়ে আছে শ্রীতমা তাকে জাগানোর চেষ্টা করছে। ওর কাছে শুনলো বাইক রেস করতে গিয়ে সিদ্ধার্থ অ্যাকসিডেন্ট করেছে। এখনো জ্ঞান ফেরেনি 72 ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছেনা। শুনেই উপরে গিয়ে সব খুলে নিচে এসে বলে আমাকে ওর কাছে নিয়ে চলো । শ্রীতমা বলে ছোটদাদা আর বাবা রয়েছে । ওর ঠাকুমা বলেন একদম আমার নাতির কাছে যাবিনা। হয়তো তুই গেলে আমার নাতির মৃত্যুর খবর শুনতে পাব ।
চুপ করো তুমি দাদা ভাই এর নিজের দোষে এই হাল ওর এতে মিঠাই এর দোষ কোথায় বলতে পারো । কারোর কথা শুনেছে ও ওকে কতবার বারণ করেছে সবাই এতদিন ছোটখাটো বিপদের উপর দিয়ে গেছে আজ দুর্ঘটনা বড়ো সরো হয়েছে । এতে কারোর দোষ নেই । তুই যা মিঠাই তোর ওখানে যাওয়া দরকার।
নার্সিং হোমের আইসিইউ এর সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরে দেখল মুখে মাস্ক পরে শুয়ে আছে তার প্রাণ প্রিয় সিধু দা। ঠাকুরের সামনে গিয়ে একটানা ঠাই বসে থাকতে থাকতে পরের দিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে মিঠাই । তিনদিনের দিন সিদ্ধার্থের জ্ঞান ফেরে। ডক্টর বলে পা আর একটা হাত ভেঙে গেছে সারতে তিন মাস লাগতে পারে। 10 দিনের দিন বাড়ি ফেরে সে । তার পুরো দায়িত্ত্ব এখন মিঠাই এর ঘাড়ে দিয়েছেন সিদ্ধেশ্বর বাবু । সিধু বলে কোনো দরকার নেই ওর করার। এর চেয়ে আমার মরণ ভাল ছিল । ওকে আমি স্ত্রী বলে মানব না আমার ডিভোর্স চাই।
মিঠাই বলল অনেক বলেছ তুমি এই তিন মাস থাকার সুযোগ দাও তারপর যদি মনে হয় আমি তোমার অযোগ্য তাহলে আমি চলে যাবো সেচ্ছায় এখান থেকে। এই তিন মাস সিদ্ধার্থের অনিচ্ছা সত্বেও ওর সেবা করে গেছে ওর তাচ্ছিল্য সহ্য করে। তার সাথে সুষমা দেবীর খোটা তো আছেই ।
তিন মাসে প্রায় সুস্থ সিধু। কাল ওর বোন শ্রীতমার পাকা দেখা ওর বিয়ের মিঠাই ওকে ছেড়ে চলে যাবে মুম্বই । মিঠাই ভেবেছিল এই তিন মাসে সিধুর ভালোবাসা পাবে কিন্তু সিদ্ধার্থ ওকে সহ্যই করতে পারে না। ওর প্রিয় বান্ধবীর বিয়ের পর চলে যাবে কত সহ্য করবে আর মেয়েটা মুখ বুঝে ওর বাবা মা ওকে ফিরে আসতে বলেছিল ওরা এই বাড়ির সাথে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। মিঠাই যেতে চায়নি। সিধু এর সেবা করতে চেয়েছে অনেক ভালোবাসে কিনা নিজের প্রাণ প্রিয় মানুষটাকে ছেড়ে কি করে যেত সে।
সন্ধ্যে বেলায় ছাদে কিছু কথা শুনতে পায় মিঠাই সন্দীপ তার দাদার গলা ।
তুই কি রে দাদা ভাই মেয়েটা এতো কষ্ট পাচ্ছে ওর বাবার কথা অমান্য করে তোর সেবা করেছে তার উপর ঠাকুমার বানবাক্য তুই কি ওর ভালো বাসা বুঝবি না তোর কি মনে হয় ও তোকে ভালো বাসেনা। এই যে তোর উপর ছোটো থেকে অধিকার ফলানো তোকে শাসন করা এগুলো ওর ভালোবাসা রে। তুই যাতে ভালো থাকিস তাই ও মা বাবাকে বলতো আর তুই ভাব তিস তোকে খারাপ প্রমাণ করতে চাইছে । তুই কি কাকৌ ভালবাসিস ।
আমি সব জানি রে স্যান্ডি আমিও কি ওকে কম ভালো বাসি । হ্যাঁ সেটা ঠিক আমি ওকে সহ্য করতে পারতাম না কিন্তু দু বছর আগে থেকে মনে যেদিন সুন্দর বন গেলাম তার দুইদিন আগে ওকে ভালোবেসে ফেলি । আমার জ্বর হয়েছিল মনে আছে তোরা কেও ছিলিনা বাড়িতে ও সারা রাত আমার সেবা করেছিল। একটা কুমারী মেয়ে নিজের কথা চিন্তা না করে আমার রুমে রাত কাটিয়েছিল।কিন্তু আমার সাথে থাকলে ওর ভবিষ্যত অন্ধকার রে । আমি এতোটাই অপধার্থ যে ওর যোগ্য নই রে । আমার সাথে থেকে কি পাবে বল হয়তো পারিবারিক ব্যাবসায় যোগ দিয়ে আমি জীবন কাটাতে পারবো কিন্তু আমি কোনোদিন বাবা হতে পারবনা । এটা ঠিক আজও সমাজে বাচ্চা না হলে মেয়েদের দোষ দেওয়া হয় তাই আমি চাইনা ও আমার সাথে থাকুক । সারাজীবন ওকে বাঁঝা অপবাদ শুনতে হবে। তাই ও এমন কাউকে জীবনসঙ্গী করুক যে ওর যোগ্য হবে ।
একমিনিট তুই কি করে জানলি যে তুই বাবা হতে পারবি না । বল দা ভাই চুপ করে থাকিস না ।
আমি সুন্দর বন যাওয়ার পর আমার একটা অ্যাকসিডেন্ট হয় তল পেটে চোট লাগে তখনই পরীক্ষা করা হয়।রিপোর্ট করে জানা যায় ইন্টারনাল কিছু ক্ষতি হয়নি আমার তবেআমি কোনোদিন বাবা হতে পারবো না ।তুই যা আমার ভালো লাগছে না। ও শুনছি মুম্বাই যাচ্ছে আমি কি করে থাকবো ওকে ছেড়ে । তাই তো ফুলসজ্জার দিন বাইক রেস এ নাম দিয়েছিলাম । ভাবলাম যদি মারা যায় তাহলে ও বেঁচে যাবে। কিন্তু না বেঁচে ফিরলাম আমি ওকে অন্য কারোর সাথে দেখতে পারবনা। যে মেয়েটা আমার জন্য সবসময় ভাবে তাকে ছাড়া আমি ভালো থাকব কি করে
দুই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে মিঠাই এর ও ভেবেছিল সিধু অন্য কাউকে ভালোবাসে তাই ওকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তাই ও যাতে আর কোনোদিন সিধুর মুখোমুখি না হয় তাই ও মুম্বই এর অফিসে শিফট হতে চেয়েছিল। ও তো পারতোনা ওর সিধু কে অন্য কারোর সাথে দেখতে সন্দীপ চলে যেতেই ও ছাদে গিয়ে পেছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো সিধু কে।
সিদ্ধার্থ বলল তোকে বললাম না একলা থাকতে দে বিরক্ত করিসনা । ঘুরে দেখল মিঠাই আরে তুই এখানে কি করছিস তোর সাহস কম না আমায় জড়িয়ে ধরলি । এখান থেকে যা তোকে আমার সহ্য হয়না ।
মিঠাই ওর কলার ধরে বলল আর কত মিথ্যে বলবে তুমি । আমাকে সহ্য করতে পারোনা কিন্তু দুই বছর ধরে ভালোবাসো । কেনো চিন্তা করছো আমার জন্য আমি তোমার কেও নয় তো। কেনো নিজের বুকে এতো যন্ত্রণা চেপে আছো ।
আমি কোনো যন্ত্রণা চেপে নেই আর ফালতু না বকে যাএখান থেকে। ঠিক আছে চলে যাচ্ছি তোমার থেকে দূরে এই বলে মিঠাই ছাদের কিনারে লাফ দিতে যাবে সিদ্ধার্থ ওকে জড়িয়ে ধরে একটা চড় মারে কি করছিলি তুই পাগল হয়ে ছিস। তোর নিজের একটা জীবন আছে । আমার জন্য কেনো স্যাক্রিফাইস করবি ।
ভালোবাসি তাই তুমি এই কারণে আমাকে দূরে রাখতে। আরে এখন প্রযুক্তি চিকিৎসা অনেক উন্নত তুমি একবার টেস্ট করেই sure হচ্ছো কি করে বল । বুদ্ধুরাম একটা এবার যদি আমাকে আর দূরে রাখো তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দেবো । আর তুমি বাবা না হতে পারলেও তোমার সাথে থেকে যাবো আরে নিজে জন্ম দিতে না পারি দত্তক তো নিতেই পারি আর লোকের কথায় আমি পরোয়া করিনা । তুমি পাশে থাকবে তো সিদ্ধার্থ।
সারাজীবন তোমায় ভালোবাসি পাগলী। আর তোমায় ভালোবেসে যাবো বলেই ওকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে আর মিঠাই ওর বুকে মুখ গুঁজে ভালোবাসার প্রহর গুনতে শুরু করলো

