শ্রাবণের মেঘ
শ্রাবণের মেঘ
রিমিঝিমি গিরে শাওন
সুলঘ সূলঘ জায়ে মন....
ভিগে আজ ইস মৌসম মে
লাগি কাইসি এ আগন.......
জানালার ধারে দাঁড়িয়ে গান গাইতে গাইতে বৃষ্টি উপভোগ করছে রুমেলা ওরফে রুমু। গানের গলা খুব মিষ্টি কিন্তু এই তার প্রশংসা করার মানুষের অভাব।
বনেদি পুরোনো আমলের চিন্তা ধারার ফ্যামিলি হওয়ার দরুন বাড়িতে মেয়েদের গান নাচ নিষিদ্ধ ছিল। তাই কোনোদিনও গান শেখা টা আর হয়ে ওঠেনি তার। স্কুল কলেজে ওই অনুষ্ঠানের সময় লুকিয়ে স্টেজে গান করত রুমু। কলেজ পাশ করার পর বাড়ির লোক পাত্র দেখে বিয়েও দিয়ে ফেলল। যদিও পাত্রের বাড়িতে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। বাবা মা আর সূর্য ছাড়া বাড়িতে আর কেউ নেই। সূর্যের এক দিদি তারও বিয়ে হয়ে গেছে।
সূর্য কোনোদিনই তার মতামত কে কোনো গুরুত্ব দেয় না । তার মতে বাড়ির বউ বাড়ির বউ এর মত থাকবে। তাই ফুলসজ্জার রাতে যখন রুমু তাকে তার গান শেখার কথা বলেছিল তখন সূর্য হাসতে হাসতে অবজ্ঞার সুরে পরিষ্কার বলে দিয়েছিল এই বাড়িতে থাকতে হলে তার মত করে থাকতে হবে এই বয়সে আর লোক না হাসালেই নয়।
সেই থেকে মেয়েটা এই বাড়ির বাধ্য বউ। তার সব স্বাধীনতা সে বিসর্জন দিয়ে ফেলেছে। ছোট থেকেই একটু ভীতু প্রকৃতির সে তাই বাড়ির অসম্মানের কথা ভেবেই এদের কথা মত বাধ্য বউ এর নাটক করে চলেছে। ওর পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ নেই । ওর বাড়ি পুরোনো আমলের চিন্তা ধারার তাই ওর কথা ওই বাড়িতে শোনার প্রয়োজন কেউ বোধ করবে না।
তখন থেকেই একটা ছেলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। ছেলেটা পাশের বাড়ির নতুন ভাড়াটে কোন একটা ব্যান্ড এর দলে গান করে শুনেছে পাশের বাড়ির কাকিমার কাছে। ওনার মেয়ে পিউ এর সাথেই ইউনিভার্সিটি তে পড়ত। এখন বিভিন্ন জায়গায় কনসার্ট এ গান করে।
জানালাটা বন্ধ করে দিল রুমু কেউ দেখলে আর রক্ষে নেই আর সূর্যের কানে গেলে ওর গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা বোধ করবেনা। একবছরের বিয়েতে ওর মত এত অসুখী বোধ করি আর কেউ নেই। সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে সূর্য আজকাল তো কথায় কথায় গায়ে হাত তোলার হুমকি দেয়। একথা সেকথা ভাবতে ভাবতে রান্না ঘরে গিয়ে রান্না চাপিয়ে ফেলল রুমু ।
আজ আপনাদের সামনে আসতে চলেছেন স্বনামধন্য গায়িকা রুমেলা দত্ত wife of
ব্রতিন দত্ত যিনি কলকাতার নামকরা ব্র্যান্ডের গায়ক । সুরের আকাশে আজ স্বামী স্ত্রী উজ্জ্বল নক্ষত্র।
পাঁচবছর আগে হটাত করেই ব্রতীন এর সাথে রুমুর পরিচয় করিয়ে দেয় পিউ । পিউ রুমুর কষ্টের ব্যাপারে সবই জানত যে মেয়েটা ওর শশুর বাড়িতে বেশিদিন থাকলে হয়তো একদিন দগ্ধে দগ্ধ এ নিজেকে শেষ করে দেবে । আর ব্রতীন ও প্রথম দেখায় ওর গানের গলা শুনে ওকে ভালো বেশে ফেলেছিল আর রুমু পড়েছিল ব্রতিনের ব্যক্তিত্বের প্রেমে। তাই একপ্রকার সূর্য কে হুমকি দিয়ে ডিভোর্স ফাইল করে নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে দুজনে বিয়ে করে। আর সূর্য অনেক হোম্বিচম্বি করলেও পুলিশের ভয় দেখিয়ে রুমু ওর থেকে ডিভোর্স নিয়ে নেয়।
আজ 22 শে শ্রাবণ সেই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গান গাইতে চলেছে রুমেলা । মাইক হাতে নিয়ে সে বলল ভাগ্যিস ব্রতীন আমার জীবনে এসেছিল নয়তো আমার জায়গা হতো কোনো পাগল খানায় বা হয়তো এতদিন আমি নিজেকে শেষ করে ফেলতাম এই ভাবে আমার পাশে থেকে যেও আজীবন।
ব্রতীন ওদের দুই বছরের মেয়ে রিমলি কে নিয়ে উপভোগ করছে ওর রুমু এর গান। আর হাত তালিতে গমগম করছে হল রুম...
শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে
তোমারি সুরটি আমার মুখের 'পরে, বুকের 'পরে ॥
পুরবের আলোর সাথে পড়ুক প্রাতে দুই নয়ানে--
নিশীথের অন্ধকারে গভীর ধারে পড়ুক প্রাণে।
নিশিদিন এই জীবনের সুখের 'পরে দুখের 'পরে
শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে।
যে শাখায় ফুল ফোটে না, ফল ধরে না একেবারে,
তোমার ওই বাদল-বায়ে দিক জাগায়ে সেই শাখারে।
যা-কিছু জীর্ণ আমার, দীর্ণ আমার, জীবনহারা,
তাহারি স্তরে স্তরে পড়ুক ঝরে সুরের ধারা।
নিশিদিন এই জীবনের তৃষার 'পরে, ভুখের 'পরে
শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে
