Nikhil Mitra Thakur

Classics

4  

Nikhil Mitra Thakur

Classics

জামাইষষ্ঠী

জামাইষষ্ঠী

3 mins
300


পুরানো সেই দিনের কথা, মাছ চুরি করেছিল বৌমা। দিয়ে সেই মাছ বিড়ালে দোষ, করলো পাপ। পাপের শাস্তিতে হারালো সন্তান। মনস্তাপে বনে গিয়ে তপস্যা শুরু করলো বৌমা। মা ষষ্ঠীর কৃপায় ফিরে পেল সন্তান।

দৈব কৃপা হলেও, মানব কৃপা পেল না বৌমা। বাপের বাড়ি যাওয়াতে হল লকডাউন ঘোষণা । কেঁদে আকুল মেয়ের মা শুনে লকডাউন। অগত্যা চোখের জলে জামাই নিমন্ত্রণ করে শাশু মা। জামাই এলো বৌ নিয়ে শশুর বাড়ি। সেটা ছিল জ্যোষ্ঠ মাসের শুক্লা ষষ্ঠী। শুরু হলো শশুরের ষষ্ঠী পূজো করে জামাইষষ্ঠী মানার লোকপ্রথা। এই হল জামাইষষ্ঠীর উপাখ্যান।

সমাজের নিয়ম মেনে বিয়ের পর মেয়ে যায় চলে শশুর বাড়ি। আসতে হলে বাপের বাড়ি ছিল গুচ্ছ গুচ্ছ নিয়মের কড়াকড়ি। যোগাযোগের মাধ্যম ছিল পোস্টকার্ড, আর এনভেলপ। মেয়েকে চোখের দেখা দেখতে না পেলে মিটতো না স্বাদ মায়ের মনের। তাই শাশুরির নিমন্ত্রণে যখন আসতো জামাই বৌ নিয়ে শশুরবাড়ি জামাইষষ্ঠীতে, তখন শাশুরির মন উঠতো নেচে পেখম তুলে। মেয়ের জন্য উৎকন্ঠার ঘটতো সাময়িক অবসান। জামাইষষ্ঠী পালনের মাধুর্য ছিল তাই চিত্তাকর্ষক। সব কিছুই ঘটতো তালে, শাশুরি রান্না করতো নিজে হাতে। দুই পরিবারের সম্পর্ক জড়িয়ে যেত নিবিড় বন্ধনে।

নারী এখন অনেক স্বাধীন ও স্বনির্ভর। নারী নির্যাতনের আইন খুব কঠোর। ছেলের বিয়ে দিয়ে বৌ এনে ছেলের বাড়ির লোক থাকে ত্রস্ত। যদি না হয় বৌমার সাথে মতের মিল তবে নিতে হবে নিশ্চিত জামিন। বিয়ের পর মেয়ের বাপের বাড়ি আসার কঠোরতা গেল কর্পূরের মতো উড়ে।


আমরা কি তা হলে জামাইষষ্ঠীর সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক স্লোগানে মুখরিত করে রাখবো আকাশ-বাতাস। না না ও কাজ করো না। উৎসবমুখর, খাদ্যরসিক, কর্মবিমুখ বাঙালির কষ্টের কথা ভাবো! সেই বোশেখে গেছে নববর্ষ, তারপর আষাঢ়ে রথ। মাঝে অনেকটা হয়ে যাচ্ছে গ্যাপ। অতএব, জামাইষষ্ঠী থাক চালু। সংবিধান সংশোধন করে যুগ-যুগান্তর ধরে জামাইষষ্ঠী সংরক্ষণ চালু করার আন্দোলন হোক। হাফ ছুটি দিয়ে সরকারি স্বীকৃতি তো মিলেছে।

কিন্তু, নারী ও পুরুষ তো সমান সমান। শুধু পুরুষদের আদিখ্যাতা দেখিয়ে এতো যত্ন কেন? ঠিক আছে প্রলেপ দাও! তাই,নারীবাদের কথা মাথায় রেখে অনেকে সাম্যের অধিকারের প্রলেপ দিয়ে চালু করে দিলেন বৌমাষষ্ঠী।

ধ্যুত! কি যে বকিস? যতই হোক না হোটাসআপে বা মেসেঞ্জারে ভি. ডি. ও কলে কথা মেয়ের সাথে; চোখে দেখার স্বাদ আলাদা। আজকের ব্যস্ত ইঁদুর দৌড়ের জীবনে কেউ কারো বাড়ি আসা-যাওয়া ভুলে গেছে। একটা অজুহাতে আসা-যাওয়াটা তো চালু থাকে। তাই

বৌমা ষষ্ঠী চালু হলেও জামাইষষ্ঠী নিয়ে কোন কথা বলা যাবে না।


তাছাড়া, অর্থনীতির দিকটা ভাব! যে বাড়িতে পূজোর ফল ছাড়া ফল কেনা হতো না সেই বাড়িতেও সেদিন ফল ঢোকে ঝুরি ঝুরি। ছেলের নামে পোয়াতি বাঁচে। বাড়ির অন্যদের পেটে দুকুচি ফল যায় আর কি? তাই ফলের মার্কেট চাঙ্গা দিন দুই আগে থেকে। কাপড় জামার মার্কেটের তো রমরমানি ভীড় জামাইষষ্ঠীর একমাস আগে। আকর্ষণীয় অফার দিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় জামাইষষ্ঠীর নামে। মিষ্টির দোকানে জামাই ষষ্ঠীর নামে নব নব মিষ্টির আমদানি।

এখন উৎসব মানেই বিশ্রাম;ঘরে রান্না বান্না বন্ধ। চল রেস্টুরেন্ট খাবার খেতে। কম্পিটিশনের মার্কেট। তাই রেস্টুরেন্ট গুলো আকর্ষণীয় জামাইষষ্ঠীর অফার দিয়ে বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করে অনেক আগে থেকে। ওই মহালয়া করে আর কি!

কি জামাইষষ্ঠী তে রাজনীতির গন্ধ নেই? ধ্যুত রাজনীতি ছাড়া সমাজ চলে না কি? সব কিছুর তো পেট্রোল ওই একটাই। এই সরকার দিয়েছে হাফ ছুটি।দেখো কেউ ফুল ছুটি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতাসীন হলো বলে। ব্যাস কেল্লা ফতে! আবার একটা কর্মনাশা দিন।

হালফিল, মাধ্যমিক- উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে কেমন ছেলেদের গোলাপ ফুল, পেন দেওয়া হয় দেখেছো!। বিয়ে করে ফেল তাড়াতাড়ি। ঠিক সেইরকম আর কিছুদিনের মধ্যেই মেয়ে জামাই বাড়িতে ঢোকার আগেই পাড়া থেকে গোলাপ ফুল ও মিষ্টান্ন দেওয়া হবে। কিম্বা,পাড়ার সব জামাইকে এক জায়গায় বসিয়ে ক্লাব বা কোন সংস্থার পক্ষ থেকে জামাইষষ্ঠীর গণসম্বর্ধনা দেওয়া হবে। যতই হোক দুজনের বয়স তো আঠেরো পেরিয়ে গেছে,তারা ভোটার সেটা মাথায় রাখতে হবে। তোমরা নিন্দুকেরা এটাকে জামাইষষ্ঠীর বেতাল বলতে পারো, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।


আরে না, আলো থাকলেই অন্ধকার থাকে। তাই তাল থাকলে বেতাল থাকবে। তুমি বলছো শুধু শহুরে জামাইষষ্ঠীর কথা, গ্রামে জামাইষষ্ঠীর মাধুর্য এখনো অনেকখানি অটুট আছে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics