হয়তো আবার দেখা হবে
হয়তো আবার দেখা হবে


অনামিকা আর আকাশের ডির্ভোসের প্রায় একবছর পর আজকে ওরা আবার মুখোমুখি হল মেট্রো স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে।
‘কেমন আছো আকাশ?’ প্রথমে অনামিকাই কথা বলল। ‘হুম, ভালোই আছি। আর তুমি?’ আকাশের প্রশ্নের উত্তরে অনামিকা জানালো সেও ভালো আছে।
অনামিকা আর আকাশ সাত বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তখন তারা ভাবতেও পারেনি যে বিয়ের দুবছরের মধ্যেই তাদের সর্ম্পকটা মুখ থুবড়ে পড়বে। ছোট ছোট কারণে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ক্রমশঃ বেড়ে চলতেই থাকলো। অশান্তিকর পরিস্থিতিতে তাদের মতো তাদের সর্ম্পকটাও যেন হাঁপিয়ে উঠেছিল।
একদিন রাত করে অফিস থেকে ফেরার পর অনামিকা বলল ‘তুমি রোজই আজকাল দেরি করে ফিরছো। আমার জন্য তোমার কাছে কোনো সময়ই নেই। আসলে তুমি আমাকে টেকেন ফর গ্রান্টেড ধরে নিয়েছ। আর আমি বোকার মতো তোমার জন্য চাকরি-বাকরি ছেড়ে ঘরে বসে রান্না করছি, বাসন মাজছি, কাপড় কাচচ্ছি, তোমার বাড়ির লোকেদের ফাই-ফরমাশ খাটছি। সারাদিন অপেক্ষা করছি কখন তুমি আসবে। তোমার সাথে একটু সময় কাটাবো। বিয়ের আগে আমার জন্য তোমার কত সময় ছিল আর আজ। আসলে তুমি তো ভেবেই নিয়েছ আমাকে সংসারের খাঁচায় তো বন্দি করেই ফেলেছ, আর আমি কোথায় পালাবো।’ এবার আকাশ বলল ‘এসব কি বলছ অনু? আমি যা করছি আমাদের জন্যই করছি। এখন আমাদের প্রেমিক-প্রেমিকার মত সর্ম্পক নয়। তুমি আমার স্ত্রী। তোমাকে সুখে রাখা আমার দায়িত্ব। আর তার জন্য টাকা-পয়সা কতটা দরকার সেটা তো তুমি জানোই। সামনে আমাদের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করতে হবে তাই তো একটু বেশি পরিশ্রম করছি। আর তুমি বললে আমার বাড়ির লোকেদের ফাই-ফরমাশ খাটছো, আমার বাড়ির লোকরা কি তোমার কেউ নয়?’ অনামিকা চেঁচিয়ে বলল ‘এত শত আমি জানিনা, বুঝিনা আর বুঝতেও চাই না। আমি আর পারছি না, জাস্ট পারছিনা। আমি এবার মুক্তি চাই এই সর্ম্পক থেকে।’
‘এসব কি বলছ অনু ছেলেমানুষের মতো?’ আকাশ বলল। অনু বলল ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি একদম ঠিক বলছি।’
দুবাড়ির লোকেদের বোঝানো সত্ত্বেও অনামিকা আর আকাশের সাতবছর ভালোবাসার পর গড়ে ওঠা সর্ম্পকটা একটুকরো কাগজের ওপর দুটি সইয়ের ভিত্তিতে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল।
হঠাৎ আকাশের ডাকে অনামিকা অতীতের স্মৃতি থেকে বর্তমানে এসে পড়ল। আকাশ বলল ‘টিকিট কেটেছ?’। অনু বলল ‘আমার কার্ড আছে। আমি আসছি।’ এই বলে অনু সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।
অনামিকার চলে যাওয়ার সময় আকাশের চোখ পড়ল অনামিকার সিঁথিতে পরা সিঁদুরের দিকে। অনু কতো পাল্টে গিয়েছে আমাদের এতদিনের ভালোবাসাকে ভুলে ডির্ভোসের একবছরের মধ্যেই কি সুন্দর নতুন সংসার পেতেছে—নিজের মনে এই কথাটা ভাবতে ভাবতে আকাশ নিজের প্লাটর্ফমের দিকে এগিয়ে গেল।
প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে অনামিকার চোখ আকাশকে খুঁজতে খুঁজতে লক্ষ্য করল অপরদিকের প্ল্যাটফর্মে সে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিজের মনে মনে বলল ‘তুমি হয়ত ভাবছো আমি আবার বিয়ে করেছি কিন্তু আমি আর বিয়ে করতে পারিনি আর কোনোদিন পারবোও না। তোমার সঙ্গে সর্ম্পকটা ভেঙে গেলেও কেন জানিনা আমার সিঁথি থেকে তোমার নামে পরা সিঁদুরটা মুছে ফেলতে পারলাম না। আমার জীবনের এই সত্যিটা না হয় শুধু আমারই থাক।
একটু পরেই দুজনের দুটি বিপরীতমুখী গন্তব্যস্থলের ট্রেন এলো। দুজনে হারিয়ে গেল আবার। আজ তো তাদের ঠিকানা আলাদা। হয়ত আবার কখনো দেখা হবে।