হলদে রাঙা বউ (৬)
হলদে রাঙা বউ (৬)
ঐশী মনের আনন্দে হাসি মুখে অফিসে ঢুকছে! আজ ওর মন খুব ভালো। কোথা থেকে চিপকু এসে ঐশীকে রিতিমত ধাক্কা দিল! এই চিপকু এক আজব ক্যারেকটার। সব সময় নিজের বড়াই করে, আসল নাম সুমনা হলেও স্বভাব বসে নাম হয়েছে চিপকু। একবার যাকে ভালো লাগবে তার সাথে আঠার মত চিপকে থাকবে। নিজেকে খুব মডার্ন মনে করে তাই , মডার্ন হওয়ার পেছনেই অর্ধেক সেলারি চলে যায় । এমনি দেখতে ভালোই , আর খুব স্মার্ট ও ! কিন্তু ওই যে দোষ আছে একটা তাই , সুন্দর হওয়ার পরেও মুখে ৫ কেজি ময়দা ইয়ে মানে মেকাপ করে। ছোট ছোট জামা পড়ে, আর প্রধান কাজ হল আদির সাথে চিপকে থাকা। কারন উনি মনে করেন ওনার থেকে মডার্ন এই অফিসে কেউ নেই । যাই হোক, ধাক্কা দেওয়ার পর এমন ভাবে ঐশীর দিকে তাকালো যেন! ঐশীকে মানুষই মনে করে না। এদিকে ওর চাউনি দেখেই ঐশীর গা জ্বলে যাচ্ছে , মনে মনে চিপকুর গুষ্টি উদ্ধার করেছে।
চিপকু- হাও ডেয়ার টু টাচ্ মি... ইউ সিলি গার্ল । দেখে চলতে পারো না , দিনের বেলায় চোখে দেখো না কানা নাকি!
ঐশী- তুই কানা তোর চোদ্দ গুষ্টি কানা, আমি ঐশী আমার সাথে পাঙ্গা । নিজে কানার মত হাটে ,আবার আমাকে বলে কানা, তুই একটা পচা কচু, আবার কথায় কথায় ইংরেজি ঝাড়ে, এই বলতো ইংরেজি বানান কী ?
চিপকু- হাউ ডেয়ার ইউ...
ঐশী - আচ্ছা একটা কথা বল তো এই টুকু ইংরেজি ছাড়া আর কিছুই কী জানিস না । কথায় কথায় হাউ ডেয়ার ইউ বলিস। শালা ইংরেজের লেজ...
চিপকু - ডোন্ট ক্রস ইয়ের লিমিট .. তুমি আমাকে চেনো না । আমি তোমাকে দেখে নেবো
ঐশী- এই তুই কে রে ! তোর পরিচয় দিয়ে তুই ভাত খা । আমি কী করবো তোর পরিচয় জেনে .. একটা ঢেংগি বেটি , নিজেকে ইশ্বর্য রাই মনে করে । তোর থেকে আমাদের পিয়ন কাকু ঢের সুন্দর ,বুজলি পচা কচু। যা ভাগ .. বাড়ি গিয়ে দুদু খাও খুকি ।
চিপকু রাগে অপমানে ঐশীর দিকে কটমট করে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। ঐশীর এত রাগ হয়েছে যে , কী সব বলেছে ওর কিছু মনে নেই, ও যে রিতিমত তুই তুকারি করেছে তাও মনে নেই। রাগে ফর্সা গাল দুটো লাল টমেটো হয়ে গেছে, নাকটা ঘেমে গেছে, হলুদ ড্রেসটায় ঐশীকে দারুন লাগছে , তার সাথে লাল মুখখানি , নাকের বিন্দু বিন্দু ঘাম ওকে কিউটের শেষ সীমায় নিয়ে গেছে । অফিসের সবাই এতক্ষন দুজনের ঝগড়া ইনজয় করছিল! অফিসে তো আগে পিন ড্রপ সাইলেন্স থাকতো , যেন কোন কারখানা। আর আদিকে সবাই যোমরাজ ভাবতো , ভয়ে কেউ টু শব্দটি করতো না। কিন্তু, যবে থেকে ঐশী অফিসে জয়েন হয়েছে ,তবে থেকেই কিছু না কিছু হয়েই যাচ্ছে । এতে অফিসের সবার একটু হলেও হালকা লাগে। ঐশীর সাথে কজনের আলাপ হয়েছে , ওর সবচেয়ে প্রিয় হল সুচিত্রা দি। সুচিত্রা দি ডিজাইন বিভাগে কাজ করে ! ঐশীর প্রথম দিন থেকেই তাকে মনে ধরেছে। সুচিত্রা ও ঐশীকে এই কদিনে অনেক আপন করে নিয়েছে। দুজনেই ফ্রি টাইমে প্রচুর আড্ডা দেয় । সুচিত্রা অবশ্য আদিকে এড়িয়ে ভয়ে ভয়ে ঐশীর সাথে আড্ডা দেয়। কিন্তু, ঐশীর এসবে কখনো মাথা ব্যাথা নেই । তবে ঐশী যতই দুষ্টু হোক কাজের প্রতি কোন ফাঁক রাখে না। তা সবাই বুঝে গেছে! আদিও ব্যাপারটা লক্ষ করেছে।
ঐশী হন হন করে নিজের কেবিনে চলে এল। মাথা ঠাণ্ডা করতে হবে। রেলিং চেয়ারে বসে গোল গোল ঘুরছে। ওর কী যে আনন্দ লাগছে তা ওই জানে ! একাই ঘুরছে ,একাই হাসছে। ঠিক তখনি আদি সামনে দিয়ে আসছিল। ঐশীর অবস্থা দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল । আদির মাথায় ঢোকে না এই মেয়ের ভয় ডর বলে কিছু আছে নাকি নেই, ঐশী আদিকে দেখেনি! ওর এত সময় নেই । আদি কটমট চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । অফিসের সবাই উঁকি দিয়ে এদিকে তাকিয়ে কান্ড দেখছে। সবাই আদির ভাব গতি দেখে মনে মনে বলল আজ ঐশী গেল...
আদি- ঐশীইইইইইইই, হোয়াট ইউ ডু।
ঐশী- কী হল , কে রে , এত চেঁচায়.. স্যাররররর।
ঐশী আদির চিৎকারে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে , বেচারি এখন ও বুঝতে পারেনি যে আদি চেঁচায় কেনো। ঐশী অবাক হয়ে আদির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, যেন কিছু লেখা আছে মুখে ।
ঐশী- স্যার আপনি কী বাচ্চা যে এমন চেঁচামেচি
করেন, এটা তো একটা অফিস নাকি , নিজের অফিসে নিজেই আইন ভাঙেন । যতসব
আদি পুরাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে , ঐশীর সব কথা ওর মাথা ১০হাত উপর দিয়ে যাচ্ছে। আদি বুঝলো এখানে বেশিক্ষন থাকলে ,আরো যে কত কী হবে তার ঠিক নেই । এই মেয়েকে দিয়ে কোন বিশ্বাস নাই।
আদি- মিস ঐশী আপনি চেয়ার ঘুরছিলেন কেন? এটা একটা অফিস আমি খুব ভালো করে জানি। আপনি ভুলে যান বারবার। আপনার টেবিলে যে ফাইল গুলো পড়ে আছে সেগুলো কে কম্পিলিট করবে । নিজের কাজ না করে আমাকে জ্ঞান দেন কোন সাহসে। আপনি জানেন আপনাকে আমি ফায়ার করতে পারি!
ঐশী- ওকে স্যার আমি চলে যাই তবে , ভালো থাকবেন , ওই ওই কী মজা .. আমার ছুটি আমি এখন বাড়ি গিয়ে লম্বা একটা ঘুম দেবো । ওও স্যার কী যে সুখ সুখ লাগছে আপনি বুঝতে পারবেন না। অনেক ধন্যবাদ আমাকে ফায়ার করার জন্য। থ্যাঙ্কু স্যার।
আদি সুদ্ধু অফিসের সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে , এই মেয়ে বলে কী ! ফায়ার করলে কারো এত খুশি লাগে এটা শুধু আদি নয় অফিসের সবারই অজানা । ঐশী তো আদির দিকে বত্রিশটা দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে আছে । কখন ওকে ফায়ার করা হবে সেই আশায়। আদি ভ্রু কুঁচকে ঐশীর দিকে তাকিয়ে ভাবছে , ভাবখানা এমন যেন ভাজা মাছটা ও উল্টে খেতে পারেন না । না আদি না একে ফায়ার করলে তোর কী হবে , ইয়ে মানে এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া যায় নাকি ! আদিত্য চ্যাটার্জী কে চোখ রাঙানি , শিক্ষা তো দেবোই। আদি দেখলো ঐশী মুচকি হেসে ওর দিকে তাকিয়ে দুলছে। আদি ভাবে এই মেয়ে এমন কিউট কেন, আমি সব তালগোল পাকিয়ে ফেলেছি। চুপ করে দাঁড়াতে এর যে কী সমস্যা কে জানে।
আদি- মিস ঐশী আপনি তো ৩ বছর আগে অফিস থেকে বের হতে পারবেন না, যদি না আমি আপনাকে বের করি! কিন্তু আমি তো আপনাকে বের করবোনা । জয়েন করার আগে আশাকরি এগ্ৰিমেন্ট পেপারটা ভালো করে পড়েছেন।
ঐশী পড়লো মহা মুস্কিলে , চাকরি পাওয়ার খুশির ঠেলায় না পড়েই সই করে দিয়েছে। ওখানে যে এই সব লেখা আছে তা কী আর জানতো । ঐশী মনে মনে ভাবছে কীভাবে এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
আদি- আপাতত মুক্তির কোনো রকম পথ নেই মিস ঐশী ।
ঐশী অবাক হয়ে গেল , এই ব্যাটা ওর মনের কথা কীভাবে বুঝলো। জাদু জানে নাকি
আদি- না মিস ঐশী আমি কোন জাদু জানি না। সবার মনের কথা পড়তে পারি না শুধু তোমার মনের কথা পড়তে পারি। বিকজ ইউ আর মাই লা.....!
ঐশী- কী আমি কী
আদি- কই কিছু না তো , ফালতু কথা বাদ দিয়ে কাজ করুন। আর এই ফাইল গুলো সব ১ ঘন্টার মধ্যে কম্পিলিট চাই । এটাই তোমার শাস্তি ,
ঐশী- আপনি .. আপনি একটা....
আদি- কী আমি কী মিস ঐশী ব্যানার্জী..
ঐশী- না না কিছু না তো , আমি এখন কাজ করবো আপনি যান ওকে স্যার ।
আদি একটু তাকিয়ে ওর কেবিনে গিয়ে সিসিটিভি তে দেখছে ঐশী কী করছে। আদি কাজ করছে আর ঐশীর দিকে তাকিয়ে দেখছে।
এদিকে ঐশী এখন নিজেই নিজেকে গালি দিচ্ছে, কেন পেপারটা ভালো করে পড়লো না। ফাইল গুলো দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর মনে হল ওগুলো ওকে দেখে হাসছে। আর বলছে যা তোর ঘুম চলে গেল তো । ঐশীর গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে । এর মধ্যে আগুনে ঘী ঢালতে এল চিপকু, ঐশী ওকে দেখেই রাগ দ্বি গুন হয়ে গেল। এই ঢ্যাঙ্গি এখানে কী জন্য আসছে।
চিপকু- টাইম মত ফাইল না পেলে কী হবে মিস ঐশী, ঈশ রে কত কষ্ট । আহারে গাল দুটো লাল হয়ে গেছে।
ঐশী- ওই সাতচুন্নি এখনি এখান থেকে না গেলে তোর সব চুল একটা একটা করে ছিঁড়বো। আর একটা কথা বললে তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না ।
চিপকু ঐশীর রুপ দেখে ওখান থেকে সরে পরলো। ঐশী অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফাইলে মুখ গুঁজে বসে পড়লো। তবে কাজ করতে করতে ওর বোরিং ভাবটা কেটে গেল। আদি সবই লক্ষ করলো । আদি অবাক হয়ে যায় ওর কাজের প্রতি ডেডিকেশন দেখে। আজ পর্যন্ত একটা ভুল পাইনি ফাইলে।
(এই খুশি আর বেশি দিন নেই)