হলদে রাঙা বউ (৫)
হলদে রাঙা বউ (৫)
সাবানের ফেনায় মাখামাখি হয়ে আদি ডাইনিং রুমে এসেছে। তর্নী মাথা নিচু করে খেয়েই যাচ্ছে ,আর ভগবান কে ডাকছে! বাবা, মা দুজনেই অবাক হয়ে গেছেন । ঐশী সবার আড়ালে মুচকি মুচকি হাসছে । সেটা কেউ না দেখলেও আদি দেখলো। আদির রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে,
ঐশী ফটকরে একবার দেখেই বড়ো ধরনের একটা ঢোক গিললো। অবস্থা খারাপ বুঝতে পেরে ঐশী আদির বাবা, মা কে খাবার টেবিলে কোনো রকম প্রনাম করেই বলল..
ঐশী- আন্টি আমাকে যেতে হবে অনেক কাজ বাকি আছে, তাছাড়া অনেক দেরি হয়ে গেছে। স্যারের তো স্নান করতেই ১০ ঘন্টা লাগছে। কাজ আর হবে না আজ তাই আমি যাই।
ঐশী একবার আদির দিকে তাকিয়ে দেখলো , শুধু গিলে খেতে বাকি ! ঐশী সুযোগ বুঝেই সবাইকে বাই বলে দে দৌড় । আদির বাবা মা দুজনেই অবাক হয়ে একবার আদির দিকে তাকায় , একবার ঐশীর যাবার দিকে তাকায় । কী যে বলে গেল মিন মিন করে , কিছু ই বুঝলাম না তো। ওনার ভাবলেন আদি হয়তো বুঝতে পেরেছে তাই দুজনেই আদির দিকে তাকায়..
আদি- হোয়াট.. এভাবে তাকাও কেন?
মা- ঐশী কী বলে গেল রে ।
আদি- আমি কী জানি, হয়তো বলল ছাগলে কি না খায় , আর ঐশী কী না বলে। মে বি এটাই বলেছে...!
আদির বাবা মা দুজনেই দুজনের দিকে তাকায়! হঠাৎ করেই হাসতে থাকে। তাদের মনে হল , দুটোই পাগল ।
ঐশী নিজের ঘরে বসে এসবই ভাবছিল । রাগে ওর শরীর জ্বলে যাচ্ছে, কোন সাহসে আদি বুদ্ধির ভামটা ওকে নিয়ে সোজা বাড়ি চলে গেল । ঐশী একটা কথাই ভাবছে এই বুদ্ধি নিয়ে এই ছাগলে এত বড়ো ব্যাবসা কীভাবে চালায়। মানলাম ও আদির পি.এ ! তাই বলে বাড়িতে নিতে হবে । আবার কোলে নেয় , অসভ্যের গাছ, উজবুক একটা লোক , অসহ্য । এই বলে ঐশী বাথরুমে চলে গেল.. ঐশী বাথরুমে যাবার কিছু পড়েই ওর ফোন বেজে উঠল.. ফ্যাইটা যায় আমার বুকটা ফ্যাইটা যায় এটা ঐশীর রিং টোন )। ঐশীর এমনেই মাথা গরম , এখন ওর সাধের রিং টোন টাও অসহ্য লাগছে, সাথে যে ব্যাটা ফোন করেছে সেও..
ঐশী- ওই কোন শালায় রে , এত রাইতে একটা মেয়েকে বিরক্ত করিস , তুই জানিস আমি কে ! শোনো হে খোকা তোমার ছাল ছাড়িয়ে আমি ডুগডুগি বাজাবো। ফোন রাখ হালার পুঁতে..!
আদি- ঐশীইইইইইইইইইইই......
ঐশী- স্যারররররর আপনি ঈঈঈঈ।
ভয়ে ঐশী লাইন কেটে দিল.. খানিক পরে আবার ফোন , সেই একই নম্বরে, নির্ঘাত আদি স্যার ..
আদি- ঐশী তোমাকে কথা বলতে বলেছি আমি , যদি কথা না বলো তোমার কপালে দুঃখ আছে ।
ঐশী- ওও প্রনাম স্যার, আপনি ভালো আছেন তো স্যার । বাড়িতে সবাই কেমন আছেন ।
আদি- একটু আগেই কী সব বলছিলে মিস ঐশী ব্যানার্জী ।
ঐশী- একটু আগে, আমি তো ফোন তুলিনি স্যার , আমি তো আপনাকে কত ভালোবাআআআ, ইয়ে মানে শ্রদ্ধা করি ..
আদি- এই এই কী বলছিলে ভালোওও , পুরোপুরি বলো ঠিক করে বলো না ঐশী।
ঐশী- কই , আমি কিছু বলিনি তো স্যার । আপনার কান গেছে ! এখনি দৌড়ে গিয়ে কানের ডাক্তার দেখান কেমন..! বাই
আদি - ওকে এখনি যাচ্ছি.. । হুম বাই ঐশী।
হঠাৎ করেই আদির মনে হল , এই মেয়ে আবার আমাকে টুপি পড়িয়ে দিল। শেম অন ইউ আদি, একটা বাচ্চা মেয়ে বারবার আমাকে হারিয়ে দিচ্ছে। আবার মনে হচ্ছে , ঐশীর দুষ্টুমি গুলো আমার এত ভাল লাগে যে কিছু বলতে পারিনা। এত কিউট কেন মেয়েটা মনে হয় তুলোর মত নরম । চুলে কী দারুণ গন্ধ ,। ঠোঁট দুটো কী গোলাপি, রাগলে লাল টমেটোর মত গাল গুলো দেখলেই টিপে দিতে ইচ্ছে করে । হঠাৎ করেই আদিকে ওর মা ডাক দেয় ..
আদি - কী হয়েছে মা এত চিৎকার করছো কেন ।
মা- কী হয়েছে তুই বু
ঝতে পারছিস না ।
আদি- নিজেকে ভালো করে দেখে নিল , না সবই ঠিক আছে, কী হয়েছে বলবে তো মা..
মা- এত বড়ো সুন্দর একটা খাট রেখে এক তো ফ্লোরে শুয়ে আছিস , দ্বিতীয়ত ফোন ভেবে যেটা টিপছিলি ওটাকে এসির রিমোট বলে বাবু।
আদি একবার মায়ের দিকে তাকায় , একবার নিজের দিকে তাকায় । ওও সিট .. আমি নিচে কখন এলাম । আর এদিকে আদির মা মুচকি হেসে চলে গেলেন। কী সব হচ্ছে আমার সাথে, না ওই মেয়ের থেকে দূরে থাকতে হবে! সব ঘেটে যায় আমার ।
পরেরদিন সকালে , প্রতিদিন কার মত ঐশীর বাবা আর মায়ের মধ্যে ৫০তম যুদ্ধ ঘোষণা হয়েছে। তাই দুজনেই গিট্টু দিয়ে নেমেছে মাঠে। ঐশী একটা জিনিষ বোঝেনা , মা বাবার সাথে সারাক্ষন ঝগড়া করে , কিন্তু বাবা মাকে আহ্লাদের সুরে কিছু বললেই মা গলে জলের চেয়েও পাতলা হয়ে যায় । এতই যখন ভাব তখন এরা ঝগড়া করে কেন তা ঐশী আজো বুঝতে পারেনি । আর বাবাটাও একটা সয়তানের হাড্ডি . ঝগড়া যখন বাড়ি ছাড়াছাড়ির পর্যায়ে চলে যাবে তখনি আহ্লাদ উথলে পড়তে শুরু করবে , আর মা জননী ও লজ্জায় লাল নীল হয়ে রান্না ঘরে দৌড় দিবে, আচ্ছা রান্না ঘর না থাকলে মা কোথায় দৌড় দিত.. , এটাও একদিন সময় করে ভাবতে হবে। ঐশী রে তোর কত দ্বায়িত্ব .. ।
ঐশী- মা আমার অফিস লেট হচ্ছে , তোমার ঝগড়া ১০ মিঃ বন্ধ রেখে আমাকে খেতে দেও..
মা - শোনো ঐশীর বাপ.. তোমার মেয়ের খাওয়া পর্যন্ত ফ্রি টাইম রইল । ও অফিস গেলেই আমি তোমাকে টাক করবো একটা একটা করে চুল ছিঁড়ে ।
বাবা- সে না হয় তখন দেখা যাবে, ঐশী তোর অফিস কেমন চলছে রে , সব ভালো তো।
ঐশী- নেও নিজের বৌকে রেখে আমাকে যে দেখেছো এতেই আমি ধন্য , আমি ঠিক আছি , আমার সবই ঠিক আছে ।
বাবা- রাগ করেছিস মা , যাহ আজ তোকে এক বাক্স চকলেট ট্রিট দিবো ।
ঐশী- হুম ঐশী ঘুস খায় না , তবে চকলেট খায়।
মা- যেমন বাপ পাগল মেয়েটাও একটা ছাগল ।
বাবা- আর তুমি একটা রাক্ষসী , যাকে বলে ধলা পেত্নী।
মা- ফ্রি টাইম যদি না হত তোমাকে আমি ছিঁড়ে ফেলতাম, ইয়ে মানে তোমার চুল গুলো ।
ঐশী এদের দুজনকে এক নজর দেখলো , সত্যি সুখি তারা । যতই ঝগড়া হোক ! কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারে না। বাবা আজ পর্যন্ত ওর মা কে একটা কু মন্তব্য করেনি। দুজনে প্রচুর পরিমাণে ঝগড়া করে, কিন্তু অগাধ বিশ্বাস ও করে । বাবা যতই বলুক , মায়ের রান্না খারাপ! তাও সে প্রতিদিন ওই রান্নাই তৃপ্তি নিয়ে খায় । সত্যি স্বামী স্ত্রী ভালোবাসা অফুরন্ত। ঐশী নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে এমন বাবা, মা পেয়ে। ঐশী মনে মনে ওর বাবা মা কে অনেক ধন্যবাদ দিল অনেক ।
ঐশী রাস্তা দিয়ে স্কুটি চালিয়ে মনের আনন্দে যাচ্ছে , তখনি একটা ৭-৮ বছরের মেয়ে দিদি দিদি বলে এগিয়ে এলো, ঐশী স্কুটি আস্তে করলো । মেয়েটা একটা গোলাপ ফুল ওর দিকে বাড়িয়ে দিল ! ঐশী ও সেটা নিল এবং একটা ১০০ টাকার নোট দিল । মেয়েটা একগাল হাসি উপহার দিয়ে বিদেয় হল। মেয়েটার হাসি যেন ঐশী কে বলছে তোমার কারনে আজ আমরা পেট ভরে খেতে পাবো , মেয়েটার এই একটা সামান্য হাসি ঐশীর পুরো মুডটাই ফ্রেস করে দিল। ঐশী খেয়াল করলো না এই ফুল আদান-প্রদান করা ঘটনা টা কেউ মুগ্ধ হয়ে দেখেছে। যে প্রতিনিয়ত ঐশীতে বিলীন হচ্ছে নিজের অজান্তেই! ঐশী আবার অফিসে রওনা দিল । আজ ঐশীর মন খুব ভালো ,এক তো বাড়িতে বাবা মা কে দেখে ,দুই এই মেয়েটার হাসি । কিন্তু , অফিসে এসেই ওর রাগে গা জ্বলে গেল! ঐশী মনে মনে বলল বেহায়া , সাতচুন্নি , ঈলবিশের মা , পচা ভেন্ডি একটা । আমার সাথে পাঙ্গা , আমি ঐশী তুমি পালাতে রাস্তা পাবে না পড়শি । এমন হাল করবো যে পা ধরে বলবে ছেড়ে দে মা ঐশীর থেকে বাঁচি ।