হলদে রাঙা বউ
হলদে রাঙা বউ
পর্ব -১
আজ ঐশীর প্রথম দিন অফিসে। আর আজকেই ওর ঘুম ভেঙেছে দেরিতে! তাই ও মার উপর সব দায় চাপিয়ে দিয়ে ইচ্ছে মত বকছে -
ঐশী - ঈশ , মা তোমার জন্য আজ প্রথম দিনেই আমার অফিসে দেরি হয়ে যাবে। ওই বুইড়া ব্যাটা টাকলা টা আজ আমাকে প্রথম দিনেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করবে। মুখের উপর রেজিকনেশন লেটারটা ছুঁয়ে দিয়ে সিনেমার ডায়লগের মত বলবে- ইউ আর ফায়ার।
মা - কী কথার ছিরি! আমি তোকে সেই ৫টা থেকে ডাকছি । কিন্তু, মহারানী উঠলে তো! এখন যত দোষ আমার , যেমন বাবা তেমন হয়েছে তার মেয়ে।
ঐশী - মাআআআআআআ..! কী সব বলো । আমি কী তোমার মেয়ে না !
মা - চেল্লানো বন্ধ করে অফিস যা , নয়তো সত্যি গেট থেকেই বিদেয় করে দেবে।
ঐশী- হ্যা হ্যা আজ বেঁচে গেলে । অফিস না থাকলে তোমাকে আমি দেখিয়ে দিতাম আমি কত্ত ভালো মেয়ে হুম...!
ঐশীর মা জানে মেয়ে তার বড়ো হয়েছে ঠিক তবে সয়তানি তে সে এক নম্বর। তবে মন খুব ভালো, কাছে টাকা থাকলে ছোটো বাচ্চাদের সব টাকা খাইয়ে দেবে। পথে ঘাটে কত বুড়ো বুড়ি যে ওর চেনা। তারা নাকি ওর বন্ধু বান্ধবী। মেয়ে আমার দেখতেও অনেক সুন্দর, সাজগোজ তেমন করে না , তাতেই অনেক সুন্দর লাগে। ওর বাবা কোথায় গেল , এই বুড়োকে আবার খুঁজতে যেতে হবে নাকি ধূর।
এদিকে ঐশী স্কুটি চালাচ্ছে আর আসন মনেই বকেই চলেছে। আজ প্রথম দিনেই এত দেরি , আরে ধূর ওই টাকলা পেপার ছুড়ে মারলে , আমি ও ওকে চেয়ার ছুড়ে মারবো। হু আমি ঐশী , আমাকে পেপার মারা । তবে আজ যদি চাকরি থাকে তো ! কখনো না কখনো এই বুইড়া ব্যাটার টাক তো আমি বাজাবোই , হু হু জানো না তো টাকলু কাকে তুমি চাকরি দিয়েছো। তোমার হাড় আমি নুন দিয়ে খাবো , ছিঃ কী সব বলছি , ঐশী রে তুই পাগল হয়ে গেছিস টাকলুর চিন্তায় । শালা সব অফিসের বস টাকলু হয় কেন ? হু সময় করে ভাবতে হবে!
ঐশী স্কুটি পার্ক করে লিফটের কাছে এসে দেখে লিফট খারাপ , ব্যাস ওর মাথা গরম হয়ে গেল । আজকেই সব নষ্ট হতে হল ! ধূর ছাই । ও সিড়ির দিকে একবার উঁকি দিল , ওরে এত সিড়ি। আজ কোমড় শেষ। ব্যাটা টাকলা উঠতে পারলে তুই ও পারবি ! ওকে লেটস গো ঐশী। অর্ধেক সিড়ি পার করে ওখানেই ধপ করে বসে পড়লো। ওরে টাকলা রে এত বড়ো অফিস করতে তোকে কে বলেছে । আমার কোমড় বুঝি গেছে। বুইড়া ব্যাটা উঠলো কীভাবে, হায় হায় আমার
বস মরে যায়নি তো , যাই গিয়ে দেখে আসি ! ঐশী যখন ওর কেবিনের সামনে এল ঘড়িতে তখন ১১টা বাজে। ঐশীর মাথায় বাজ পড়ল। এক ঘন্টা লেট ! এবার তো ভয় করছে টাকলার কাছে যেতে , ও রিসেপশনে গিয়ে পরিচয় দিয়ে বসের কেবিন কোনটা জানতে চালো , রিসেপশনের মেয়েটা বলল সোজা গিয়ে ডান দিকে! ঐশী ধন্যবাদ বলে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল।
ঐশী - মে আই কামিং স্যার...
বস- কামিং..
ঐশী দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকেই দেখলো একটা লোক , উল্টো দিকে মুখ করে কী যেন ভাবছে।
বস- আজ আপনার প্রথম দিন মিস ঐশী ব্যানার্জী ।
ঐশী - ইয়েস স্যার..
বস- তা আর একটু দেড়ি করে এলেই তো পারতেন , আসার সাথে সাথেই ছুটি পেয়ে যেতেন।
ঐশী- ওকে স্যার , কাল আরো পড়ে আসবো
বস- সেটাপ , এত লেট করে এসে আবার মসকরা করছেন !
ঐশী - আসলে স্যার রাস্তায় এত গাড়ি যে , হাটতেই পারছিলাম না। তাই তো দেরি হল । তাছাড়া এমন ফাঁকা জায়গায় এত বড়ো অফিস কেউ বানায় , খুজেই পাইনা।
বস- স্টপ ইট ননসেন্স।
একটু ভয় পেলাম , তবে বেশি নয় । আওয়াজ শুনে তো মনে হচ্ছে না ব্যাটা বুইড়া। তাছাড়া মাথায় এত সুন্দর চুল , তবে পেছন ফিরে করছে টা কী ?
ঐশী - স্যার আপনি পেছন ফিরে কী এত ভাবছেন বলুন তো! কাজ ফাঁকি দিচ্ছেন বুঝি। চিন্তা নেই আমি কাউকে বলবো না।
এবার চেয়ার ঘুড়লো , আর ঐশীর হার্ট অ্যাটাক হবো হবো ভাব। ওয়াও এই ব্যাটা বস, ভেব্বি দেখতে তো, পুরো ঝিঙ্কু । ঐশী বসের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে।
বস - আপনার সাহস তো কম নয়, এক তো দেরি করে এসেছেন, তার উপর ফালতু কথা বলেই চলেছেন। আপনি জানেন আপনাকে আমি ফায়ার করতে পারি!
ঐশী- হ্যা জানি তো। কিন্তু, করবেন না প্লিজ...
বস- কেন?
ঐশী - নয়তো আমাকে বলতে হবে আপনি কাজে ফাঁকি দিয়ে উদাস হয়ে , দেবদাসের মত জানলা দিয়ে আকাশ দেখেন।
বস খুব রেগে যান।
ঐশী বসকে লাল হতে দেখে , ভয় ঢোক গিলে। মিন মিন করে বলল, রাক্ষসের মতো লাল লাল চোখ।
বস- বিরবির করে কী বলছেন?
ঐশী- স্যার আমার কেবিন কোনটা।
বস- ডান দিকের টা ...
ঐশী- দৌড়ে বেড়িয়ে গিয়ে , কেবিন ঢুকে ঢক ঢক করে জল খেতে লাগল।
(ক্রমশ...)