Sumit Darani

Comedy Romance Others

3  

Sumit Darani

Comedy Romance Others

হলদে রাঙা বউ (৩)

হলদে রাঙা বউ (৩)

8 mins
179



 

       আদিত্য চ্যাটার্জী টপ ফাইভ বিজনেসম্যান দের মধ্যে একজন। তাদের এই টেক্সটাইল বিজনেস ওর বাবা সোমনাথ চ্যাটার্জী শুরু করেন। সেই ব্যাবসা কে আদি নিজের ক্ষমতায় এই জায়গায় নিয়ে গেছে। ওর বাবা মিঃ সোমনাথ চ্যাটার্জী, মা মিসেস আরতী চ্যাটার্জী, ওর একমাত্র আদরের ছোট বোন তর্নী চ্যাটার্জী । আর একজন আছে যাকে আদি ব‌উ বলে ডাকে , সেও বর বলতে পাগল, তিনি হলেন আদির ঠাকুমা রুপালি চ্যাটার্জী। নাম রুপালি হলেও তার মধ্যে রুপের ছিটে ফোঁটা ও নেই । বুড়ো হলেও সখ ইয়ং ইয়ং। এই হল আদির পরিবার। তাছাড়া কাজের লোক , বাগানের মালি , এরা তো আছেই। বাগানটা আদি ছোটো বেলায় করেছে , এখন সেটা পুরো বাড়ির শোভা বাড়াচ্ছে । বিভিন্ন ধরনের ফুলে ফুলে এই বাগান শোভিত। প্রতিদিন সকাল শুরু হয় আদির সুন্দর কোমল , সুগন্ধি ফুলের সুবাসে । 

 

    চ্যাটার্জী বাড়ির ভেতরে -

 

 বাবা- বলি কফিটা কী কাল পাবো । আধ ঘন্টা ধরে তো বলছো দিচ্ছি , রান্না ঘর কী দশ মাইল দূরে নাকি। 

 

মা - সব সময় ষাঁড়ের মত চেঁচামেচি না করলে পেটের ভাত হজম হয় না তোমার তাই না। আমি কী তোমার এক কফি নিয়ে বসে আছি। আর কোন কাজ নেই আমার ।

 

বাবা - তোমার আর কী কাজ , সারাদিন তো শুধু টিভির মধ্যে মুখ গুঁজে বসে থাকো। কার সংসারে কী চলছে এই জানতেই তো তোমার দিন পার হয়ে যায় । কাজ করো কখন ! 

 

মা - ও তাই নাকি ! আমি শুধু টিভি দেখি , তাহলে রান্না বান্না কে করে ? তুমি। এত বড়ো বাড়ি বানিয়ে তো তুমি খালাস , এর দেখা শোনা কে করে শুনি । 

 

বাবা - তার জন্য তো খাওয়া পরা পাও , নরম বিছানায় ঘুমাতে পারো। আরো সকল সুবিধা ভোগ করো । এমনি করো নাকি ।

 

মা - কীইইইই। তুমি আমাকে চাকর বললে । আমি কী এই বাড়ির চাকর , এই বাড়ির কাজ করি খাওয়া পরার জন্য । তুমি এই কথা গুলো বলতে পারলে আমাকে । আজ আসুক বাবু আমি তোমাকে ঘর ছাড়া না করলে আমার নাম আরতী না ।

 

বাবা- তো কী নাম তোমার অরু। আর তোমার ছেলেকে আমিইই ভয়য়য় পাই নাকিঈ। 

 

মা - খবরদার ওই নামে আমাকে ডাকবে না । বুড়ো বয়সে ঢং, আর ভয় যদি না পাও তবে তোতলাচ্ছে কেন।

 

বাবা- কোকোথায় তোতলাচ্ছিই।

 

মা- হু এসেছে আমার পুরুষ মানুষ রে। ঠকঠক করে কাঁপতে শুধু বাকি , বলে কী না ভয় পাচ্ছি না ।

 

ঠাকুমা - এই তোরা আর বড়ো হলি না , এই ভাবে কেউ ঝগড়া করে । জানিস ব‌উ , তোর শশুরের সাথে যখন আমার ঝগড়া হত। আমি ওর চুল ছিঁড়ে ফেলতাম । আর তুই আমার বৌমা হয়ে মুখে মুখে ঝগড়া করছিস । না আমার নাম ডোবাবি দেখছি ।

 

বাবা - মা এসব তুমি কি বলছো । আমি তোমার ছেলে , আর সেই তুমি কী না আমার সাধের চুল ছেঁড়ার কথা বলছো।

 

মা - এ্য আছেই তো ওই এক গোছা চুল । সেই নিয়ে আবার এত বড়াই। বেশি প্যা ফু করলে এক টানে জমি পরিষ্কার করে দেবো।

 

ঠাকুমা- এই তোমার চুপ কর তো , বৌ যা আমার জন্য একটা কালো কফি নিয়ে আয়।

 

বাবা- মা ওটাকে ব্লাক কফি বলে! 

 

ঠাকুমা - চুপ থাক । আমি যা ইচ্ছে তাই বলবো। তুই আমার কথা ধরিস , অসভ্য বেয়াদপ।

 

বাবা- আরে এমন কী বললাম । তুমি এত রেগে যাচ্ছো কেন? আর এই বয়সে ব্লাক কফি কীভাবে খাও তুমি বলতো।

 

ঠাকুমা- তো এখন খাবো না তো কী বুড়ো হলে খাবো।

 

     ওনার এই কথা শুনে , দুজনেই অবাক হয়ে দুজন দুজনের দিকে তাকায় । কারো বয়স যদি ৭০ হয় , তাকে তো বুড়োই বলো । ৭০বছর বয়সে ব্লাক কফি খাচ্ছে , ৮০বছর বয়সে কী কফি মগ কামড়ে খাবে। এই মহিলা কে দিয়ে বিশ্বাস নেই।

 

ঠাকুমা- এই আমার কফি আনবি , নাকি স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকবি। রাতে দেখেও হয়না তোর । আমার সামনেও দুজনে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছিস।

 

     আদির মা একটু লজ্জা পেয়ে রান্না ঘরের দিকে দৌড় দিল । 

 

ঠাকুমা- বৌ বুঝি লজ্জা পেল। আরে লজ্জা পাওয়ার কি আছে । তোরা জানিস তোদের বাবার সাথে আমি কতত....!

 

বাবা- মাআআআআআ।

 

    আদির বাবা জানে এর মুখে কোন লাগাম নেই। কখন যে কী বলে বসবে । তখন বাড়ি সুদ্ধ লোক লজ্জা পাবে । তাই সে মা কে থামিয়ে দিল । 

 

ঠাকুমা- এই তুই সব সময় ষাঁড়ের মত চেঁচামেচি করিস কেনো রে। এত চেঁচানোর কী আছে। ওই বৌ কফি কী পাবো। নাহ, তোদের সাথে কথা বলাই আমার ভুল হয়েছে । কত টাইম নষ্ট হয়ে গেল। আমি ড্যান্স করবো কখন।

 

    আদির মা কফি নিয়ে আসছিল , ৭০বছর বয়সে নাচের কথা শুনে হাত থেকে কফির মগ পড়ে গেছে । 

 

বাবা- মা তুমি এই বয়সে নাচবে।

 

ঠাকুমা- এ আর নতুন কী প্রতিদিন ই তো এক ঘন্টা নাচি । কালকে তো কালা চশমা গানটায় নাচলাম । কেন রে কী হয়েছে, তোরা অমন হা করে তাকিয়ে আছিস কেন ।

 

মা - না মা কিছু না , আপনি ঘরে যান আমি কফি পাঠিয়ে দিচ্ছি। 

 

ঠাকুমা-ঠিক আছে পাঠিয়ে দিস! আর একটু গরম জল পাঠাস তো বৌ.!

 

মা - গরম জল দিয়ে কী করবেন মা।

 

ঠাকুমা- নাচলে কোমরটা টনটন করে, তাই সেঁক করবো ।

 

    ঠাকুমা সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল । এদিকে স্বামী স্ত্রী দুজনেই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে । এই বয়সে এত সখ সত্যি , বিচিত্র একজন লোক । আদি জানতে পারলে নাচ ছুটিয়ে দেবে। তাই মনে হয় আস্তে সাউন্ড দিয়ে নাচে। সত্যি মাএর জবাব নেই, শাশুড়ি আমার মাইকেল জ্যাকসন।

------------------------------------------------------------------------

ঐশী বাড়িতে এসে সোজা নিজের ঘরে চলে এল , খাটের উপর ব্যাগটা ছুড়ে ফেলে দিল। রাগে ওর শরীর কির মির করছে! মা,বাবা ওর এই রাগ দেখে ওকে আর কিছুই জিঞ্জেস করেনি! তারা জানে , মেয়ে যতক্ষন শান্ত না হবে তাদের কিছুই বলবে না। আর এখন যে পরিমাণ লাল হয়েছে ! তাতে কাছে গেলে কামড়ে টামড়ে দিতে পারে ।

 

ঐশী- ওই আদির বাচ্চাকে আমি করলার রসে চুবিয়ে মারবো , ওই ব্যাটা বেআক্কেল তোর এত সাহস তুমি আমাকে কোলে নিস , আমি তোর সংসার ধ্বংস করে দেবো।স্যার কী বিয়ে করেছে, , না হলে সংসার ভাঙবো কীভাবে। আমি তোর মাথায় খ‌ই ভাজবো , তবলা বাজাবো । আমাকে তুই জিঞ্জেস করেছিস যে হুট করেই ওখানে নিয়ে গেলি , কেন রে আমি কী তো বিয়ে করা বউ! আবার দাত বের করে হাসে । শীল নোরা দিয়ে তোর সুন্দর ঝকঝকে সাদা দাঁত গুলো , কী সুন্দর লাগে হাসলে। থুক্কু , ওই সুন্দর দাত আমি ভেঙে দেবো ।

 

     

       আদি কোলে নিয়ে ঐশী কে গাড়িতে বসিয়ে সিট বেল্ট বেঁধে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো। এই পর্যন্ত সব‌ই ঠিক ছিল! তারপর শুরু হলো আদির উপর অত্যাচার। আসলে আদির ঐশীকে খুব পছন্দ হয়েছে । তাই ও , ঐশীকে ঠাকুমার কাছে নিয়ে যাচ্ছে । বুড়ি বলেছে নাত বৌ পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে তবেই তার সাথে বাড়ি শেয়ার করতে পারবে। আদিও তাই ঐশীকে নিয়ে যাচ্ছে! যদিও ও এখনো ঐশীকে কিছু বলেনি। কিন্তু ও বেশ বুঝতে পারছে ঐশীকে ও ভালোবেসে ফেলেছে। Now ঝগড়া start

 

     ঐশীর রাগে গাল লাল হয়ে গেছে, এত লোকের সামনে কোলে নিয়ে আসে কোন সাহসে , আমি কী ওর ব‌উ নাকি। আদির সুন্দর জেল দিয়ে সেট করা চুলের মুঠি ধরে দিল এক টান, আদি তো হঠাৎ করেই এমন কিছু হ‌ওয়াতে হকচকিয়ে গেল , ঐশী যে এমন একটা কান্ড করতে পারে এই সময়ে । সেটা ও কল্পনাও করতে পারেনি । আদি এক পলকে তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে । আর ঐশী লাল গাল ফুলিয়ে বসে আছে, আদির চুল যে কাকের বাসা হয়ে গেছে সে কথা ওর মনে পড়ছে না । 

 

আদি- এই মেয়ে এই এত সাহস তোমার, তুমি আমার চুল ধরে টানো। যে আদিত্য চ্যাটার্জী কে দেখেই লোকে থরথর করে কাঁপে তুমি সেই আদিত্য চ্যাটার্জীর চুল ছুয়েছো কোন সাহসে ।

 

ঐশী- চোপপপপপপ, একটা আওয়াজ করলে মুখে আঁচল গুজে দেবো। ব্যাটা টাকলা তোর সাহস কত আমাকে অত লোকের সামনে কোল নিস । তোর ঠ্যাং ভাইঙ্গা হাতে ঝুলাইয়া দিমু। লুচ্চা ছেলে কোথাকার ।

 

    ঐশীর ধমকে আদি অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেছে । আদিত্য চ্যাটার্জী কে এই মেয়ে ধমক দেয় ! আবার তুই করে বলছে। মাথার তাঁর কী সব ছিঁড়ে গেল নাকি।আদি খেয়াল করলো এই ঐশী ওর কল্পনায় রোজ আসে ,এই কথাটায় আদি মুচকি হেসে ঐশীর দিকে তাকিয়ে থাকে। ঐশীকে অসম্ভব কিউট লাগছে । রাগে ফর্সা মুখখানি ঈষৎ লাল হয়ে গেছে, একটা চুলের ঢেউ গাল বেয়ে নেমে এসেছে, রক্ত রাঙা ঠোঁট আর আকাশি রঙের শাড়ি তে একদম চোখ ধাঁধানো সুন্দর লাগছে । আদি তো পুরাই গলে বরফ হয়ে গেছে ( গলে বরফ কীভাবে হয় তা আদি জানে আমি জানি না ) ঐশীর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে সব মেয়েদের ক্রাস আদিত্য চ্যাটার্জী । ঐশী দেখলো আদি ওর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে । ঐশীর হঠাৎ করেই লজ্জা পেল । শরীরে হালকা শিহরণ খেলে গেল, গাল গুলো আরো লাল বর্ন ধারন করলো । কেন এমন হচ্ছে ও বুঝতে পারছে না। তবে আদির উপর থেকে হঠাৎ রাগ উড়ে গিয়ে , আদির মুগ্ধ দৃষ্টি একঝাক লজ্জা দিয়ে ওকে ঘিরে ধরেছে ।

 

ঐশী- আদি স্যার , স্যার আমরা কোথায় যাচ্ছি..!

 

আদি‌- ....

 

ঐশী- ওওওওওও স্যারররররর।

 

আদি - কীকীইইই‌হল কী হল ঐশী।

 

ঐশী- এই তো আপনার ধ্যান ভেঙেছে ।

 

আদি- কিসের ধ্যান, কোন ধ্যান।

 

     ব্যাটা বদমাইশ , এমন ভাব করছে যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না । আহা , কচি খোকা আমার, কিছু বোঝেনা দুদু খায়। আদি আবার দেখলো ঐশী আবার কী যেন বিরবির করছে । এই মেয়ে পুরাই মেন্টাল । 

 

আদি- ভাবনা হয়ে গেলে আঁচলটা গাড়িতে তুলে ভালো করে বসুন ম্যাডাম।

 

ঐশী- সে না হয় বসছি‌, কিন্তু আমি কোথায় যাচ্ছি ! তাও আপনার সাথে।

 

আদি- কেন আমার সাথে যেতে অসুবিধা আছে কোন। আর থাকলেও বলে লাভ নেই , আমি ওসব শুনবো না। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফস করে মেন রোডে চলে এল।

 

ঐশী- আরে আস্তে চালান, কার না‌ কার গাড়ি , ভেঙে ফেলবেন‌। তারপর আমার নামে বিল গছাবেন। 

 

    কার গাড়ি মানে, আমি আদিত্য চ্যাটার্জী, অন্যের গাড়ি নিয়ে চালাবো। হাও ফানি ! 

 

ঐশী- হুম জানি জানি, হয়েছে আর ইংলিশ ঝাড়তে হবে না। কথায় কথায় খালি ইংলিশ ঝাড়ে , বেয়াক্কেল কোথাকার ।

 

আদি- এক্স কিউজ মি ? কিছু বলছো মনে হল ।

 

ঐশী- ওও স্যার , স্যার গো , আমার সোনা স্যার আমার ভালো স্যার।

 

    আদি ঐশীর। ডাক শুনে , চোখ কুঁচকে ঐশীর দিকে চোখ নাচিয়ে প্রশ্ন করে!

 

আদি- কী..! 

 

ঐশী- স্যার বলুন না আমি কোথায় যাচ্ছি, মানে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে।

 

আদি- কেন ভয় করছে নাকি , । দ্যা গ্ৰেট ঐশী ব্যানার্জী আবার ভয় ও পায় । হাউ ফানি। অত ভয় পেতে হবে না , তুমি আমার বাড়ি যাচ্ছো।

 

ঐশী- আমি আপনাদের বাড়িতে গিয়ে কী করবো।

 

আদি - কোন কাজ না থাকলে ঘর মুছবে।

 

ঐশী ,আদিকে মুখ ভেংচি কেটে, অন্য দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল, গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের সুন্দর প্রকৃতি দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ করেই কখন যেন বৃষ্টি শুরু হয়েছে , তা ও ঠিক পাইনি। আবহাওয়া শান্ত , মৃদু শীতল বাতাস ‌ ঐশীর চুলের প্রতিটি ঢেউ কে যেন ছুঁতেই বয়ে চলেছে। আর আদি সে তার স্বপ্ন সুন্দরীর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে । আদি প্রতিনিয়ত ঐশীর মায়াতে জড়িয়ে যাচ্ছে! কেমন একটা সুতো বিহীন টান অনুভব করে। দুজনেই মুগ্ধতা নিয়ে আদি দের বাড়িতে পৌঁছে গেল। আদি কলিং বেল টেপার আগেই হঠাৎ দরজা খুলে গেল , আর আদি চমকে উঠলো, সাথে ঐশীও।

 

 

#মন_সায়রের_পারে

 

 

 

 

 

 

 

 

 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy