হিঙ্গুল পুতুল
হিঙ্গুল পুতুল


ছোট্ট আও আও নালিশের সুরে বলল" আমাকে একটা বার্বি ডল কিনে দিলে না তুমি।"মা জিজ্ঞেস করলো "সেটা আবার কি? "আমি বললাম "পুতুল। "মা ছোট বেলায় উনুনে পুড়িয়ে মাটির পুতুল বানিয়ে দিতো । সেই স্মৃতি টা উস্কে দিলো। আমি আমার অনেক কটি পোস্ট বলার চেষ্টা করছি বাংলার বিভিন্ন স্থানে যে পুতুল পাওয়া যায় , তা তৈরিতে আমাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি অনেক অবদান আছে। অথচো আধুনিকতার চাপে বাংলার ঘরে থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার পুতুল। অথচো পুতুল কেনা বন্ধ করে নি কিন্তু বাঙালী। বাঙালি র ঘরে আসছে,জাপানের তথা বৌদ্ধ ধর্মে দারুমা।দারুমা পুতুল ঐতিহ্যবাহী জাপানি খেলনা পুতুল। এটি ছোট, বৃত্তাকার/গোলাকার, দাড়িওয়ালা মানুষ চিত্রিত, ফাঁপা ও লাল রঙের হয়। তবে অঞ্চল ভেদে দারুমা পুতুলের নকশা, ডিজাইন ভিন্ন হয়। এই পুতুল নাকি সৌভাগ্যে ফেরাবে বাঙালি র।
যাইহোক সোস্যাল মিডিয়ায় বিশিষ্ট পরিচিত নাম সায়ন রায় । সৌভাগ্য ক্রমে আমার ফোন বুকে তাঁর নাম্বার টি সেভ করা। তাঁর status দেখতে পেলাম একটা হারিয়ে যাওয়া পুতুল এর ছবি। এটা বীরভূমের পুতুল, মনে পরে গেলো,সাঁওতালি ঘরনা চাদর বাঁধনী পুতুল,বাঘরাইপুতুল , কিংবা হিঙ্গুলা পুতুল , আজ হারিয়ে যাওয়া র পথে। হিঙ্গুলা পুতুল এর কথা তাই বলতে ইচ্ছে করলো আপনাদের কাছে।পুতুলের নানা ভাগ, কি দিয়ে তৈরি হচ্ছে সেটা দিয়ে বলি সাধারণত আমরা মাটির পুতুল, কাপড়ের পুতুল,কাঠের পুতুল,পাটের পুতুল,তালপাতার পুতুল,গালার পুতুল,ধাতুর পুতুল,কাগজের পুতুল,শোলার পুতুল। এদের মধ্যে একটি বাংলার প্রবাদ প্রবচনে থাকে গেলেও হারিয়ে গেছে বোধহয় আমাদের জীবন থেকে। তালপাতার সিপাই, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায়এই খেলনা উদ্ভাব। আজও আর দেখা যায় না। তবে আদিবাসী সাঁওতাল দেবতা সিং বোঙ্গার উদ্দেশ্যে তৈরি এই পুতুলের মুখ হয় হাতির মতো।এছাড়াও তালপাতার সেপাই তৈরি হতো তালপাতা দিয়ে। এতে থাকে যোদ্ধার অবয়ব। সেখান থেকে আসতে পারে তাল পাতার সেপাই বানানোর রীতি।
এছাড়া আগেই বলেছি বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে
তৈরি শুরু হয় পুতুল বানানোর রীতি।সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে পুতুলের নানা ভাগ আছে যেমন,:টুসু পুতুল,ভাদু পুতুল,রাণী পুতুল,আহ্লাদী পুতুল,বৌ পুতুল,ষষ্ঠী পুতুল,লক্ষ্মী পুতুল,হিঙ্গুল পুতুল,ঘাড় নাড়া পুতুল,জৌ পুতুল,যাদু পুতুল বা কালো পুতুল,পুতুল,আশ্চর্য প্রদীপ,বোঙ্গা হাতি পুতুল। আধুনিক বাংলা তৈরি হচ্ছে দেওয়ালী পুতুল।

হিঙ্গুলা পুতুলের কথায় আসি এবার । কারণ সায়ণ রায়ের স্ট্যাটাসে হিঙ্গুলা পুতুল ছবিই আমি দেখেছি।বাঁকুড়ায় তৈরি হয় হিঙ্গুল রঙের হিঙ্গুলা পুতুল। কাঁচা মাটি দিয়ে তৈরি এইসব পুতুল দুর্গাপুজো, জন্মাষ্টমী ও টুসু পুজোর সময় বিক্রি হয়।ষষ্ঠীপুজো ও জিতাষ্ঠমীর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে হিঙ্গুল পুতুল কাজে লাগে। কেউ কেউ মানত করার জন্য হিঙ্গুল পুতুল ব্যবহার করে থাকেন। ঘর সাজানোর জন্য অনেকেই কেনেন। হলুদ (হরিতালি), লাল ( হিঙ্গুলা), নীল .ওপর সূক্ষ্ম কাজ, রংবেরঙের কাঠের পুতুল, চমক এর আসল আকর্ষণ। হিঙ্গুল বা হিম এক ধরনের খনিজ পদার্থ। এক সময়ে বিখ্যাত হয় বিষ্ণুপুরের হিঙ্গুল পুতুলগুলো । পুতুল গুলো রাঙিয়ে তুলতে লালচে রঙে এই হিঙ্গুল ।এই রং দিলে বেশ চকচকে হত পুতুলগুলো। এই কারণেই পুতুলগুলোর এমন নাম। কাঁচা মাটিকে হাতে টিপে পুতুলের রূপ দিয়ে রোদে শুকোনো হয়। তাতে পরে ভেষজ রঙের প্রলেপ। পুতুলের উচ্চতা হয় মোটামুটি এক আঙুলের মতো। বাচ্চাদের খেলনা হিসেবেই এই পুতুল জনপ্রিয়। পাশাপাশি, তবে এখন খানিকটা ইউরোপীয় প্রভাব এসে মিশেছে এই পুতুলের সাজসজ্জায়। হিঙ্গুল পুতুলের পরনে থাকে ফ্রক, মাথায় পাশ্চাত্য রীতির টুপিও দেখা যায়।
.এই পুতুল তৈরি শুরু হওয়ার একটি গল্প শোনা যায় যে- যখন রাজবাড়িতে শিল্পী রা রাজাদের জন্য হাতে বানানো তাস নিয়ে যেতেন, তখন রাজবাড়ির শিশু রা তাঁদের কাছে বায়না করে বলতো ‛ আমাদের জন্য কি এনেছো? আমাদের-ও পুতুল দিতে হবে।’... তখন শিল্পীদের স্ত্রী রা মাটির ছোটো ছোটো পুতুল বানিয়ে রাজবাড়ির শিশুদের জন্য নিয়েযেতো।....